আত্মার নিজের কান আছে, যা এমন কথা শোনে, যা মন বুঝতে পারে না। কথা বলা কখনো কখনো যন্ত্রণা, কিন্তু যখন প্রিয় সঙ্গী মেলে, তখন নীরবতাই সবচেয়ে বেশি শান্তি আনে। প্রিয়তম তো হৃদয়ের ভেতর থেকেই প্রস্ফুটিত হয়—এক-এর সঙ্গে আর কীসের মিলনের প্রয়োজন?
হৃদয় থেকে হৃদয়ে একটি অদৃশ্য জানালা আছে; তারা আলাদা নয়, দূরেও নয়। যেমন দুটি প্রদীপ আলাদা থেকেও আলোর স্রোতে এক হয়ে যায়। প্রেমের ডাক সবসময় দুপক্ষ থেকেই আসে—প্রেমিক ডাকলে প্রেয়সীও সাড়া দেয়। একহাতে কখনও তালি বাজে না, তৃষ্ণার্ত যেমন জলের খোঁজে চিৎকার করে, তেমনি জলও ডাকে—“আমাকে কে পান করবে?” এই তৃষ্ণাই আত্মার চুম্বক, আমরা তাঁরই আর তিনি আমাদের।
চোখ-কান থেকে লুকিয়ে আত্মার গল্প বলা যায় নীরবতায়। ঠোঁটহীন গোলাপের মতো হেসে ওঠা যায়, কথা ছাড়াই ভাব বিনিময় করা যায়। হাত ধরাধরি করে হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন শোনা যায়। এভাবেই নীরবতাতেই মিলন ঘটে, যেখানে ভাগ্য আমাদের গল্প লিখে দেয় শব্দহীন ভাষায়।
এই যাত্রার জন্য দরকার তিনটি চাবি—নম্রতা, জ্ঞান আর প্রেম। এগুলো ছাড়া পথ অসম্পূর্ণ, এগুলো সঙ্গেই থাকে আশীর্বাদ হয়ে।
মানুষ সব জ্ঞান আহরণ করতে চায় বাইরের বই থেকে, অথচ নিজের ভেতরটা কখনও পড়ে না। মসজিদ, মন্দির, গির্জায় ছুটে যায়, অথচ নিজের হৃদয়ে প্রবেশ করে না। প্রতিদিন শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, অথচ নিজের অহংকারের সঙ্গে যুদ্ধ করে না। আকাশের অদৃশ্যকে ধরতে চায়, অথচ ভেতরের সত্যকে ধরে না।
প্রেম মানে হৃদয়ের চাবি খুঁজে পাওয়া। সেই চাবি দিয়ে একবার যদি অন্তরের গুপ্তকক্ষ খুলে যায়, তবে আর বাইরে ফেরার প্রয়োজন নেই। তখন প্রেমিক নিজেকে চিরদিনের জন্য বন্দি করে রাখে প্রিয়তমার হৃদয়ের ভেতরেই।