কোন ১০%?




বলা হয়—বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের জন্য যে-অর্থ খরচ করা হয়, তার প্রকৃত রিটার্নটা আসে মাত্র ১০% থেকে। কিন্তু সেই ১০% কোনটা, তা কেউ জানে না। তাই বাধ্য হয়ে ১০০% বাজেটই খরচ করতে হয়। ব্যাবসা বা খুচরা বিক্রিতে যারা কাজ করেছে, তারা জানে—বিজ্ঞাপনের খরচ কত বড়ো বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

এই ভাবনাটা আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা বা জাগরণের প্রসঙ্গে আনলে বোঝা যায়—একজন শিক্ষক, গুরু বা আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষক আসলে তাঁর নিজের যাত্রাপথটিই শেয়ার করতে পারেন, যদি তিনি সত্যিই সৎ উদ্দেশ্য রাখেন। কেউ যদি গুরু-শিষ্য সম্পর্কের মধ্যে থেকে প্রতিদিন সৎসঙ্গ করে, নিরামিষ খায়, ইন্দ্রিয়সুখ থেকে বিরত থেকে ধ্যান করতে করতে জাগরণের কৃপা লাভ করে, তবে সেই অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করেই গড়ে তোলে নিজের শিক্ষা-পদ্ধতি।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আসলেই কি পুরো প্রক্রিয়ার সব অংশ জরুরি? হয়তো ধ্যানই আসল উপাদান। অথবা হয়তো সৎসঙ্গই যথেষ্ট। হয়তো শরীর হালকা রাখার জন্য আহারই মূল ভূমিকা রাখে। আবার হয়তো কোনো শিক্ষক সত্যিই তাঁর জাগ্রত শক্তি যথার্থ শিষ্যের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পারেন।

তাহলে আধ্যাত্মিক সাধনাতেও একই প্রশ্ন—“কোন ১০% আসল?” কারণ দেখা যায়, হাজার হাজার শিষ্য থাকলেও, সত্যিকারের জাগরণের দাবি তুলতে পারে মাত্র অল্প কয়েক জন। একজন যথার্থ গুরুরও হাজারো অনুসারীর মধ্যে কেবল কয়েক জন জাগরণের সন্ধান পাবার দাবি করেন। শ্রীরামকৃষ্ণ কিংবা রামণ মহর্ষির কথা যদি ধরি, তাঁদের শিষ্যদের মধ্যেও তাঁদের সমতুল্য চেতনা লাভ করেছেন, এমন কাউকে খুব কমই পাওয়া যায়।

তাহলে শিক্ষা কী? খুব বেশি কৌশল, মডেল বা পদ্ধতিতে আটকে না গিয়ে অন্তরের ডাক শোনা দরকার। সময় নষ্ট না করে কোন শিক্ষক বা শিক্ষায় হৃদয় অনুরণিত হয়—কেবল সেই দিকেই সাড়া দিতে হবে। এখানে ধ্যান ব্যাপারটা প্রায় সব শিক্ষকের কাছেই মূল গুরুত্ব পায়। আর সাথে যদি হালকা খাবার, সৎসঙ্গ শোনা বা আধ্যাত্মিক গ্রন্থপাঠ যোগ করা যায়, তাহলে সেটাই যথেষ্ট। তবে এই চর্চা সাধারণত তাদেরকেই টানে, যারা সত্যিই গভীর অনুসন্ধানী।

আরও সহজ স্তরে, ধ্যান অন্তত মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আর যদি সেটি আনন্দের ব্যবস্থাপনায় রূপ নেয়, তাহলে তো আরও ভালো।

শান্তি, প্রেম আর আনন্দই সকল যাত্রাপথের আসল লক্ষ্য।