: এরকম দুম-করে-নেমে-পড়া ভাসিয়ে-দেওয়া বৃষ্টি আমার বেশ লাগে, জানো তো লক্ষ্মণ? এমন সময়ে লোকেদের নাকি খিচুড়ি, ইলিশ, বেগুন-ভাজা, উচ্ছে-ভাজা...এ…না, না, উচ্ছে-ভাজা নয়, কিন্তু ওই ক্যাটাগরিরই কী কী সব নাকি খেতে ইচ্ছে করে। আমার বাপু বৃষ্টি হলে, এই মানে, শুধু একটু মেঘ গুড়গুড়ও যদি করে, তাহলেও শুধুই এককাপ কড়া লিকারের চা খেতে ইচ্ছে করে। চিতায় উঠলেও বোধ হয় আমার এককাপ ঠিকঠাক চা লাগবে। 'ঠিকঠাক' মানে কী, জানো? ওই যে এককাপ দুধে একচামচ চা-পাতা ছেড়ে, দু-চামচ চিনি দেওয়াকে কিন্তু আমি চা বলি না, বলি শরবত...হা হা হা। তবে ঠ্যালায় পড়লে, মানে তোমার বউদি যখন “এখন চা করার সময় নেই!” বলার পরও ওরকম একটা শরবত-চা নিয়ে এসে চোখ গরম করে কাঠের টেবিলটায় রাখে, তখন ওই শরবতই আমার জন্য বেহেস্তি চা হয়ে যায়। শোনো লক্ষ্মণ, চা কী করে বানাতে হয়, বলি। তোমার বউদি আগে জানত, এখন কীভাবে যেন সব ভুলে গেল…
: অমল বাবু, আমি এই দোহানে চা বানাই সেই একাশি সাল থাইকা, আর আপনে আমারে আইজ শিখাইবেন চা বানানি!
: লক্ষ্মণ, উউউ...একাশি মানে বলতে চাইছ উনিশ-শো একাশি, না কি আঠারো-শো?
: হা হা হা...আপনে মিয়া রসিক আছেন।
: এই যাহ্, তোমার বউদির কল, নিশ্চয়ই খেপেছে...নইলে এই সময়ে ফোন করত না। দাঁড়াও, বাড়ি থেকে ঘুরে এসে চায়ের রেসিপি বলব, কেমন?
: বউদির মাথা ঠান্ডার রেসিপি আগে আবিষ্কার করেন, অমল বাবু, তার পরে অন্য কিছু ভাইবেন।
: আমাকে দেখলেই তোমার বউদির মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে। ঘর ঠিক করার রেসিপি অমল কান্তি সান্যাল খুব ভালো জানে।
: তার লিগাই কি ফোন পাইয়া ডরায় গেলেন, দাদা?
: ভয় না, ভয় না। বুকে একটা হাওয়া লাগে অসময়ে ওর ফোন এলে। ওই হাওয়াই বলে দেয়, ওর এখন আমাকে লাগবে। যাই, বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।
লক্ষ্মণ ভাবছে, অমল বাবু যে কী সব আজগুবি কতা কয় না! তার কথা হুনলেই রাগ ধরে! একবার কয় চায়ের রেসিপি, আরেকবার কয় ভালোবাসার রেসিপি।
ভালোবাসা বইলা কিছু নাই গো, অমল বাবু। ওইসব বুকে হাওয়া-টাওয়া কিচ্ছু না। মেয়েছেলে খালি ট্যাকা চেনে, ট্যাকা। এহনকার মাইয়াগো গতর আর স্বামীর সোহাগ লাগে না; লাগে খালি গয়না, লাগে খালি পয়সা।
একটা গান মনে পইড়া গেল বহুতদিন পর…মুঝছ্যে প্যাহলি সি মুহাব্বত ম্যেরে ম্যাহবুব না মাঙ্গ...
অমল বাবু আইলে এই গান নিয়া আলাপ উঠাইতে হইব। এত পুরান গান হঠাৎ কেন মনে উঁকি দিল? আমার বউ তো আর আমারে অসময়ে ফোন দেয় নাই...তাইলে কি আইজ বকুলের আমারে মনে পড়ছে?