আজও গাঢ় রহস্যে আচ্ছাদিত দ্বীপটি।
যুগ যুগ ধরে একটা আবহসুর ভেসে আসে
সেখান থেকে—অতিপ্রাকৃত, অদ্ভুত।
সে যেন অনন্ত থেকে বিচ্ছুরিত মিহিসুরে
কারও মায়াবী আহ্বান।
আজও কেউই বলতে পারে না
কোথায়, কেমন সে দ্বীপ।
শতাব্দীর কলম্বাস আর ভাস্কো-ডা-গামাদের
সমস্ত ঔৎসুক্য আজ বিলুপ্ত। মূঢ় ভৌগোলিকের দল
আঁতিপাঁতি করে খুঁজছে ইহলৌকিক যত মানচিত্র।
অত্যাধুনিক শক্তিমান বাইনোকুলারের
অহেতুক উদাসীন ব্যস্ততা।
দ্বীপটি তবু ধরা দেয়নি।
হয়তো সেখানে ছোট্ট নদীর উজানে
চখাচখিরা খোঁজে শান্তির নীড়, অথবা
এক নির্বোধ দানব অবলীলায় চালিয়ে যায়
পৈশাচিকতার অবাধ রাজত্ব।
হয়তো নরম দূর্বাকে নিয়ে শীতল শিশিরের
উচ্ছ্বাস-ক্রীড়া অথবা বিভীষিকার কৃষ্ণযজ্ঞ,
নূপুরের নিক্কন। হয়তোবা আছে
স্বপ্নিল সবুজ প্রশান্তি অথবা তার প্রহসন।
এমনও তো হতে পারে—
আছে চাঁদ, নেই জ্যোৎস্না।
আছে সূর্য, নেই উত্তাপ।
আছে আত্মা, নেই দেহ।
হয়তো প্রেম সগর্বে অনুপস্থিত—
অশরীরী প্রেমিক তাকে খুঁজে খুঁজে মরে
চিরকাল নির্মম তৃষিত সুর ভাসে বিদ্রোহীর
…অলীক ইথারে।
অথচ সুবোধ, অবোধ অনেক তীর্থের কাকের
স্তব্ধ জটলা এপারে। এরা যাবেই সেই অদৃশ্য দ্বীপে—
চোখে এদের প্রশান্তির বর্ণিল পায়রা ধরবার
আজন্ম প্রলুব্ধতা। আবার কেউ কেউ কিছুতেই যাবে না—
ঝড়ো রাতে সংকুচিত ভয়ার্ত শিশুর মতো বলিষ্ঠ অনীহা ওদের।
অবশেষে অথর্ব লৌকিক মোহ উধাও—
জীর্ণ পিছুটান ছিঁড়ে যায়,
নোঙর উঠে চলে আসে,
পারাপারের সেই গাধা জাহাজটিতে বোঝাই
বিদগ্ধ সুকঠিন সিন্দাবাদ
নীল শীতল নৌবেশে ঢাকা পচনশীল দেহগুলো—
আত্মাতে আত্মার সঞ্চার।
জাহাজ অশান্ত বিস্ময়ে
ভেসে চলছে অসীমের দিকে
অদৃশ্য সেই দ্বীপের সন্ধানে।