বেঁচে থাকার মূল্য

আমি এখনও চিৎকার করছি শেষ বারের মতো,
অপ্রয়োজনীয় বৃক্ষের স্বাদ নিয়ে তছনছ করছি
সাজানো বাগান।




বিশ্বাস করো, কোনো কিছুই স্বাভাবিক মনে হয় না।
চোখের ক্যাপশনে সোমত্ত আইল্যান্ড ঝুলে থাকে নীলিমায়,
কচুরিপানার নিচে লুকোয় সন্ত্রস্ত জল।




যতই ঘুমের ঘোরে সমুদ্র দেখে চিৎকার করি: "ইউলিসিস! ইউলিসিস!",
ঈশ্বর নিষ্ঠুর হাতে বন্দি করে রাখেন তাকে নির্জন সেলে;
বিবর্ণ রুগীর মতো হাঁ করে তাকিয়ে দেখি ঘরের
দরোজা-জানালায় মায়ের তামসী মুখ,
চল্লিশে বেড়ে-ওঠা অসুখ আর তাঁর বিধ্বস্ত স্বপ্ন,
বাবার বুকপকেটে অস্পষ্ট পার্স,
মধ্যরাতের ক্যাসেটে বাজে কবিতাগোষ্ঠীর অফিস, ক্রিকেট খেলার মাঠ
আর ভার্সিটির মিটিং-ফেরতা নিঃস্ব হয়ে আসা অগ্রজের
সকাতর বর্ণনা।




যেন সমস্ত নগরীর গান বাজে অভাবী এক বিটোফেনের গলায়,
বোনের শাড়ির আঁচল ওড়ে কমার্শিয়াল ফার্মের বারান্দায়,
ঈশ্বর অন্ধকারের হাতে তুলে দেন অদৃশ্য তালা;
আশ্চর্য হই না দেখে অনুজের পড়ার টেবিলে
পর্নোগ্রাফির ম্যাগাজিন।




বিশ্বাস করো, পৃথিবী ক্রমশ গলে যাচ্ছে
বরফের মতো—গলে যাচ্ছে নষ্ট পানির ছোঁয়ায়।




বাবা, তোমার মাইক্রোফোনের মোরালিটি, আইডিয়োলজির কথা
লাশ হয়ে শুয়ে আছে আজ—এই অসুস্থ স্যানেটোরিয়ামে;
সমবয়সী বন্ধুদের হাতের তালুতে খেলা করে
মারিজুয়ানার বিশুদ্ধ জল;
দু-হাতকে মেগাফোন বানিয়ে চিৎকার করে জানায়
জীবনের বিশ্বাসী শেকড় খুঁজে না পাবার কথা।




কী করে, বাবা, এই দৃশ্যমান দুঃসময়ে
তোমার কথা শুনব?
বরং মাইক্রোফোনখানা আমাকে দাও।
আমি চিৎকারে-সংঘাতে বিক্ষুব্ধ করব সবাইকে,
ভেঙে ফেলব অন্ধকারের কালো হাত,
প্রতিটি লোকালয়ে জ্বালাব আলোর শিখা।




আর এই মাইক্রোফোনে…
বাজবে সেই বিশ্বস্ত গান—
বৃক্ষের ক্লোরোফিলের অনন্ত উৎস
টেনে আনার গান।
Content Protection by DMCA.com