কেউ জানে না আমার অপেক্ষার গল্প; এর কারণ, আমি জানাই না। কী লাভ ব্যাখ্যা করে? 'টেক্সট' করে কি আর সব বোঝানো যায়! সত্যিই!! যা-ই হোক, আমি বোঝাতে পারব না। শুধু এটুকু নিশ্চয়তা ছুড়ে দিতে পারি যে, আমার মতন অপেক্ষা করতে তোমরা অনেকেই জানো না কিংবা বলা যায়, এমন সৌভাগ্য প্লাস দুর্ভাগ্য তোমাদের অনেকেরই হয়নি। অপেক্ষা করতে করতে এখন আর কান্নাও পায় না। অথচ এই আমিই কাঁদতে কাঁদতে পুরোটা রাতকে ভোর বানিয়ে-ফেলা মানুষ। কোনো অভিমান আসে না। মনে হয়, থাক না, কেন শুধু শুধু আর…! কোনো অভিযোগ করি না। চুপচাপ আলুসেদ্ধ আর গরম ভাত খাওয়ার মতন করে চুপিচুপি জীবনটাও পার করে দিচ্ছি। মানুষকে অস্থির, অধৈর্য হতে দেখলে মনে মনে বলি, "স্থির হও, এটা তো কোনো ব্যাপারই না।" এসব অবশ্য মনে মনে বলাই ভালো। নইলে শুনতে হবে… "নিজের জীবনে ঘটলে বুঝতে ব্যাপার কি না!" এটা শুনতে চাই না। শুনলেই তো হেসে ফেলব! আরে, কী ঘটেনি বলো তো? কী ঘটানো হয়নি আমার সাথে! তুমি জানো না। কেউ জানে না। আমি কি এত শান্ত, স্থির-বয়ে-চলা নদীর মতন একদিনে হয়েছি? নারে, ভাই। জীবন অত সহজ না রে! অন্তত আমার জন্য ছিল না। ওই যে একটা গানের লাইন আছে না? "জিনে ক্যে লিয়্যে স্যোচা হ্যি ন্যাহি, দার্দ সামহালনে হ্যোংগে, মুস্কুরায়ে তো, মুস্কুরানে ক্যে কার্জ উতারনে হ্যোংগে।" (চিন্তাই করতে পারিনি, বেঁচে থাকতে গেলে এত যন্ত্রণা সইতে হবে। হাসিও যদি, সেই হাসির ঋণ শুধতে হবে।) গানের এই দুটো লাইনই এখন আমার জীবনের সারমর্ম। আমি জিজ্ঞেস করার শক্তি পাই না যে, আর কত যন্ত্রণা সইতে হবে? একটু মন খুলে হাসব, সে সাধ করি না ঋণ জমার ভয়ে। শুনেছিলাম, অপেক্ষা নাকি মধুর মতন। মধুও যে এত নির্মম হতে পারে, আমি নিজে এই মধু না খেলে বুঝতেই পারতাম না। অপেক্ষায় করতে করতে ভোর হয়ে গেলে নিজেকে বলতাম, রাত হোক। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রাত হয়ে গেলে নিজেকে বলতাম, "আরেকটু দেখি, আর মাত্র কালকের সকাল পর্যন্ত।" সেই আর একটু, সেই রাত, সেই সকাল আমার আসেনি। আমি কি শুধু অপেক্ষা করতেই জন্মেছিলাম? হে ঈশ্বর, আমাকে মৃত্যু দাও, কিন্তু আর অপেক্ষা দিয়ো না।