আর-একটা জিনিস আমি শিখেছি। মানুষ চাইলেই একা থাকতে পারে। একা মানে পুরোপুরি একা। বাবা, মা, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রেম, ভালোবাসা ছাড়াও থাকা সম্ভব। যার সাথে থাকতে অস্বস্তি হয় আর হতেই থাকে, তবু মুখ ফুটে কিছু বলা যায় না, সে কাছের হলেও দূরের, আপন হলেও পর। একাকিত্ব মৃত্যুর নয়, বাঁচার উপলক্ষ্য। মানুষ হয়ে জন্মানোর কারণে মানুষের সঙ্গ প্রয়োজন, এটা ঠিক আছে। কিন্তু আত্মীয়স্বজন, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা যে-কোনো সম্পর্ককে পুঁজি করে মানুষ যখন আপনার কনফিডেন্স নষ্ট করে দেয়, নেগেটিভিটি দিয়ে আপনাকে মুড়িয়ে রাখে, জাজ করে, আপনার আড়ালে বানোয়াট কথা বলে এবং ঠিক সেই জায়গায় আঘাত করে, যেখানে কষ্ট বেশি হবে, আর এ ধরনের নানান কাজ করে, তখন, আমার মনে হয়, এরা না থাকলে আসলে কিছুই যায় আসে না, বরং লাভই হয়। আমরা কাকে সময় দিই, কার সময় পেতে চাই; কাকে ভাবনায় রাখি, কার ভাবনায় থাকতে চাই; কাকে গুরুত্ব দিই, কার কাছ থেকে গুরুত্ব আশা করি; কার কথায় বা আচরণে কষ্ট পাই, কার কষ্ট পাওয়া না পাওয়া নিয়ে পরোয়া করি—এসবে অনেক কিছুই এসে যায়। এসবই আমাদের হাসি ও কান্নার অদৃশ্য দলিল। আপনি যখন একা থাকেন, তখন সত্যিই কি সঙ্গে কেউই থাকে না? থাকে তো নিশ্চয়ই! আপনি তখন নিজের সঙ্গে থাকেন, নিজের ভেতরের মানুষটার সঙ্গে থাকেন। তার সঙ্গে আলাপ করেন, একেবারেই নিজের মতো করে থাকতে পারেন। একা থাকার সময়ে যে একদমই একা থাকে, তার চাইতে দুঃখী আর কে আছে! এর মানে কী দাঁড়াল? মানুষ যার সাথে কোনো হিসেব না করে কথা বলতে পারে, যার সঙ্গে থাকলে এবং গল্প করলে বা গল্প না করে চুপচাপ বসে থাকলেও একটুও অস্বস্তি বোধ হয় না, কিছু না ভেবেই যার সাথে আরামে নির্ভার হয়ে থেকে যাওয়া যায়, যে বোঝে এবং যাকে বুঝতেও ভালো লাগে, যে কখনও জাজ করে না…কেবলই অনুভব করে এবং বোঝার চেষ্টা করে, মনের মধ্যে কোনো সংশয় ও শঙ্কা না রেখে যার সাথে মেশা যায়, যাকে সব বলা যায় বিনা দ্বিধায় এবং যার সব শোনা যায় বিনা উদ্বেগে, যার কাছ থেকে নিজেকে লুকোতে হয় না এবং অমন কোনো লুকোচুরি খেলায় নামতে হয় না তাকেও—তেমন কারও সাথে থাকার মানেই তো নিজের আত্মার সাথে থাকা। তেমন কারও সাথে থাকলে মানুষ একা তথা নিজের সাথে থাকার সৌন্দর্য টের পায় খুবই স্পষ্ট করে। একা থাকতে হয় যাকে, সে তাই সৌভাগ্যবান। দুঃখ তো ছেয়ে ফেলে তাকেই, যে নিজের মতো করে নিজের সাথেও থাকতে পারে না। একাকিত্ব সুন্দর, যদি সেখানে নিজের আত্মা জেগে ওঠে।