ফুলদল
ফুলদল মোরা, কাননে কাননে
নব নব সাজে ফুটি,
নেচে নেচে গেয়ে প্রীতি-অনুরাগে
মিলনমেলায় জুটি।
বয়ে আনি মোরা উদয়-আলোর বাণী,
সবারে সুধা-সৌরভ-সুষমা সতত দানি।
মোদের হিয়ার প্রীতিময় সুরধারা,
দিকে দিকে যায় ছুটি।
বারতা মোদের—হও সুন্দর, নির্মল-প্রেমময়,
দিয়ে ভালোবাসা আর আনন্দ করো হে সবারে জয়।
জেগে ওঠো সবে অমৃত-আলোকে,
ভাঙো ঘুমঘোর অরুণ-ঝলকে।
মহান হরষে, জ্যোতির পরশে
আঁধার যাক হে টুটি।
গোলাপ
আমি যে গোলাপ, মুখে মম ওগো
সদা ভাসে মধুহাসি,
সবারে আমার আপন জেনে
আমি সবারেই ভালোবাসি।
ফুটে কাঁটার মাঝেও বই সুগন্ধ,
যাই দিয়ে সবারে মধু আনন্দ;
প্রীতির মাধুরী বয়ে নীরবে,
সবারই ভুবনে ছুটে আসি,
আমি যে গোলাপ, হাসিরাশি ঢেলে
আমি সবারেই ভালোবাসি।
জবা
আমি জবা ফুল, আমি জবা ফুল,
রক্তরাঙা দেহ এক—আমি সূর্যমুকুল;
দুর্বল বুকে দানি শক্তি,
ভক্তহৃদয়ে আনি ভক্তি,
ঘায়ে আমার ভাঙে দৃঢ় পাষাণের ভুল।
মিথ্যারে আমি নাশি—
না করে সত্যরে পরবাসী,
মরমে আমার বাজে শক্তির মূল,
আমি জবা ফুল।
পদ্ম
স্নিগ্ধ সুরভি ছড়ায়ে ফুটেছি আমি যে পুষ্পরাজ,
চিরসুন্দর আমার রূপেতে পরেছে মধুর সাজ।
মূর্ত আমাতে পরম চেতনা,
আমি ধরি হৃদে সত্য-এষণা,
পরমানন্দ পেতেছে আসন আমার হৃদয়-মাঝ।
আমি পঙ্কজ, পঙ্ক ভেদে অরুণ-কিরণে ফুটি,
মহামহিমায় হয়ে প্রোজ্জ্বল আঁধারের বাধা টুটি।
গাই আমি চির অসীমের বাণী…
দেব-প্রকাশের প্রত্যয় দানি,
এনেছি বিশ্বে রূপান্তরের নবীন মন্ত্র আজ।
চাঁপা
স্বর্ণবরণ আমি, আমি চাঁপাফুল,
গন্ধে আমার ছুটে ছুটে আসে আকুল অলিকূল।
ভ্রমর কয় কথা মোর কানে কানে,
কার আগমনী ছন্দ-সুর-গীতি মরমে মম আনে—
ঢেলে প্রাণ আনন্দ সুখে করো হে হৃদয়মূল।
রজনীগন্ধা
সন্ধ্যার রাগে ফুটে উঠি আমি শুভ্র রজনীগন্ধা,
গন্ধে-সুধায় সবারে জাগাই আমি যে মধুর ছন্দা।
অস্তরবির বিদায়ের ক্ষণে,
জেগে উঠি নব সৃষ্টিস্বপনে;
আমার আবেশে জাগছে রজনী, নবীন ঊষার পন্থা।
নীরব নিশার প্রহরে প্রহরে বুকের সুরভি ঢালি,
নবজীবনের প্রদীপশিখা মানুষের প্রাণে জ্বালি।
অনাহুত সুর মম তারে সাধা,
অনাগতকাল সেই সুরে বাঁধা,
মম সুরসাধনার ধারা ধরে গতি, যেন চিরঅনন্তা।
শাপলা
শাপলা আমি…শাপলা,
করে জাতীয় প্রতীক আমায় করল বরণ
মধুময়ী এই বাংলা।
চাঁদের কিরণে আমি ফুটি,
তিমির ছায়ার মায়া টুটি।
সুজলা বাংলা-বুকে আমি চিরউজলা,
শাপলা-প্রসূন আমি…শাপলা।
বাংলার সব স্বপ্ন-সাধনা ফোটে দু-চোখে আমার,
প্রগতিতে আর মহিমায় এই বাংলা বড়ো উদার;
বুকে ধরি আমি বাংলার বিত্তরাশি,
আমায় নিয়েই সংগীত এই সোনালী-সবুজ বাংলার।
সূর্যমুখী
হলুদবরণ প্রতিদল মম,
আমি যে সূর্যমুখী,
অরুণ-আলোর শরণ পেয়ে
আমি চিরদিন সুখী।
খুলে রাখি হিয়া সূর্যের পানে,
ভরে উঠি আমি আলোকের দানে,
জীবনবেদনা আলোর পরশে
নীরবে যায় যে টুটি।
মৌমাছি
আমি মৌমাছি, আমি মৌমাছি,
গুনগুন সুরে ফুলে ফুলে দুলে
আমি নাচি, আমি নাচি।
ফুলেরে শোনাই মম প্রেমগান,
ফুলবনে আমি যাই আনন্দে
অতিথির বেশে সাজি; পরে
ফুল করে মোরে সুধামধু দান।
প্রজাপতি
আমি সুন্দর, আমি চঞ্চল প্রজাপতি,
ফুলের সুধার তিয়াশায় জাগে
আমার প্রাণের গতি।
ভালোবাসি আমি ফুলের গন্ধ,
ফুলশোভা মোরে দেয় আনন্দ,
ফুলের প্রেমেতে, ফুলের বুকেতে,
পড়ে থাকে মোর মতি।
ফুলের বারতা সবার মরমে দানে,
সবার সাথে সবার মিলন আনে।
চিরসুন্দর লীলার কাননে
খুঁজবে আমারে ব্রতী।
ভ্রমর
ফুলের গন্ধে আকুল হয়ে করি আমি ভনভন,
ফুলের পরশ লেগে মাতাল আমার ভোলামন।
প্রাণের কথাটি ফুলদলে আমি কই,
প্রীতির বারতা ফুল-কানে কানে বই।
আমারে ডাকে যে দূর-সুদূরের শত-শত ফুলবন।
দামাল ছেলে
আমি দুরন্ত-দুষ্টু-দামাল ছেলে,
নির্মম আমি, ফুলে ফুলে দিই
প্রলয় আগুন জ্বেলে।
ফুলেরে আঘাত করি বারবার,
সুন্দর যা-কিছু, করি ছারখার,
কচি পল্লব ফুলকলি সব,
দিই দু-হাতে ছিঁড়ে ফেলে।
বুঝি না আমি সৃষ্টি-মঙ্গল, ধ্বংসই আমার কর্ম,
হিংসা-বিদ্বেষ ঈর্ষা-কোন্দল—এসবই আমার ধর্ম।
আলোভরা মুখে মেখে দিই কালি,
সুধার বুকে গরল দিই ঢালি,
ভাঙি প্রীতি, জাগাই ভীতি—
অন্ধ কামনা ঢেলে।
ছিঁড়ো না
ছিঁড়ো না, ভাই, ছিঁড়ো না,
মধু-ফুলদল তুমি ছিঁড়ো না।
তারা যে ছড়ায় প্রীতির সুরভি,
তাদেরে আঘাত কোরো না।
সুন্দর তারা, বড়ো পবিত্র,
মানুষের প্রাণের তারাই মিত্র,
তাদের এমন কোমল শরীর
তোমার কঠিন হাতে ধোরো না।
ফুল যে বিলায় মধু-পরিমল সুধা,
প্রীতির মৌন বাণী,
ফুলের গন্ধে ভরে ওঠে তাই
ক্লান্ত হৃদয়খানি।
প্রাণ তুমি যারে না পারো দিতে,
কেন তবে তার চাও প্রাণ নিতে?
বিশ্বপিতার শুভ এ সৃষ্টি
ধুলায় ফেলে দোলো না।
ভুল
বুঝেছি আমার ভুল,
ছিঁড়ব না আর ফুল।
আজ জেনেছি ফুলের মহিমা,
সুধা-সুরভিতে তার কী যে গরিমা!
চিনেছি এবার, সুন্দর কারে কয়,
শুভের কোথায় মূল।
ফুলের মতো হব নির্মল,
নম্র স্নিগ্ধ নত;
সবারে মেলাব প্রীতির মিলনে,
ভালো কাজে রব রত।
কারও প্রাণেই দেবো না আঘাত,
সবার হাতেই মেলাব এ দু-হাত,
প্রীতির বাঁধনে বাঁধব পৃথিবী,
খুঁজব শান্তিকূল।