যে মানুষটি আপনার শূন্য অবস্থাতেও পাশে থেকে গিয়েছিল, একমাত্র সেই মানুষটিই আপনার পূর্ণ অবস্থাতে সাথে থাকার অধিকার রাখে। দিনের পর দিন আপনার শূন্যপকেট দেখেও যে নারী দারিদ্র্যের সহভাগিনী হয়েছিল, কেবল সেই নারীই আপনার রাজকীয় অবস্থানে রাজসিংহাসনের ভাগীদার হবার পূর্ণ অধিকার রাখে। যে পুরুষ তার আশেপাশে অহরহ সুন্দরীর ভিড়েও অন্য কারুর কাছে চলে না গিয়ে আপনাকেই বেছে নিয়েছে, সে পুরুষই বাকি সাতটা জন্ম আপনার সাথে থেকে যাবার স্পষ্ট অধিকার রাখে। শুধু মুখে মুখে দিনরাত ভালোবাসি ভালোবাসি বলে গলা ফাটালেই ভালোবাসার প্রমাণ হয় না, কখনও কখনও ভালোবাসা প্রমাণ করে দিতে হয়। ভালোবাসা প্রমাণ করে দিতে হয় দুঃসময়ে পাশে থেকে গিয়ে, মানুষটার ব্যর্থতায়ও তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে, ছেড়ে যাবার অনেক পথ খোলা থাকার পরও ছেড়ে না গিয়ে। ভালোবাসার অস্তিত্ব দু-চারটে টেক্সট, নিয়ম করে ফোনকল কিংবা নিয়মমাফিক দেখাসাক্ষাৎ করলেই প্রমাণিত হয় না। ভালোবাসার সবচাইতে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় শান্তির অনুভবেই। ভালোবাসার প্রমাণ হয় মানুষটার অবসাদ কিংবা বিষণ্ণতার মুহূর্তে তার হাতদুটো শক্ত করে ধরে রেখে তার পাশে বসে থাকায়। তার দুঃসময়ে বুকে মাথা রেখে তাকে বুঝিয়ে দিতে হয়, সবাই ছেড়ে গেলে যাকগে; এই বুক আমার ঘর, আমি কিছুতেই তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না...! একটা আশার কথা কী, জানেন? সবাই আপনাকে ছেড়ে যাবে না, কেউ কেউ বরং সব কিছু ছেড়েছুড়ে আপনাকে ধরে রাখবে। সবাই যে কেবলই সুসময়ে আপনার পাশে থাকবে, এমন না, কেউ কেউ আপনার দুঃসময়েও পাশে থেকে যাবে। আপনার দুঃসময়ে জলের স্রোতের মতন যখন সবাই ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে, তখনও কেউ কেউ স্রোতের বিপরীতে গিয়ে হলেও আটকে-যাওয়া শ্যাওলার মতন আপনার জীবন আঁকড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে জাগতিক কোনও হিসেবের তোয়াক্কা না করেই। সব নদী সাগরে মেলায় না, কিছু নদী গতিপথ পালটে মোহনায় মেশে। সবাই আপনাকে ঠকাবে না, কেউ কেউ নিজে হেরে গিয়ে হলেও আপনাকে জিতিয়ে দেবে। আমাদের জীবনে এই মানুষগুলোই সত্যিকারের আপনজন, দামি অ্যাঞ্জেল। ঝিনুক যেভাবে বুকের ভেতরে যত্ন করে মুক্তো পোষে, ঠিক তেমনি অমন মানুষকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে পুষে রেখে দিতে হয়। এদের কিছুতেই চলে যেতে দিতে নেই...শত অপরাধেও না, হাজার বাধা এলেও...না।