ভাবনা: নয়শো পঁচিশ ……………………………………………………… এক। আমাদের প্রার্থনা কবুল হওয়ার সময়টা যে কখন, তা আমরা কেউই বলতে পারি না। দুই। ভাই রে, পরীক্ষায় পাশ করতে না পারাটাকে স্মার্টনেস বলে না, ওটাকে ব্যর্থতাই বলে। পরবর্তীতে সেই ব্যর্থতাকে নিজের যোগ্যতায় বুড়ো আঙুল দেখাতে পারাটাই হচ্ছে সত্যিকারের স্মার্টনেস। তিন। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর সরাসরি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে। মানুষ সেগুলির উত্তর দিলে তা সঠিক হয় না। তাই এমন প্রশ্নের উত্তরে চুপ করে থাকাই ভালো। সময় হলে ঈশ্বর নিজেই উত্তরটা খুব স্পষ্টভাবে দিয়ে দেন। চার। বিষণ্ণ হবার জন্য জীবনের হিসেব মেলানোর চেষ্টা করাই যথেষ্ট। পাঁচ। কেউ আমাকে বন্ধু ভাবে না, জাস্ট একটা দুধেল গাই ভাবে। খুবই বিরক্তিকর! Always remember, your problems mean nothing to a stranger. So, first make them your friend. The rest will follow automatically. ছয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়েছিলাম। নজরুলের জন্মবার্ষিকী খুবই চমৎকারভাবে উদ্যাপিত হচ্ছে ওখানে। বোনাস হিসেবে আছে বেশ দারুণ একটা বইমেলা। পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই একদম উৎসব উৎসব পরিবেশ চারিদিকে! বই কিনে, ছবি তুলে, আড্ডা দিয়ে, ঘোরাঘুরি করে, নাচ দেখে সত্যিই অনেক আনন্দ পেয়েছি! আয়োজন রীতিমতো মুগ্ধ করার মতন! কিছু স্টুডেন্ট জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে বসে এক জায়গায় কবিতাপাঠের আসর জমিয়েছে। বেশ উপভোগ্য! ওরা কবিতা ভালোবাসে, ওরা আমার মনের কাছাকাছি থাকে। এই ভার্সিটির মঙ্গল হোক। সাত। আমি যে এক তুমি ছাড়া আর কাউকেই পাত্তা দিই না। এখন দেখি, সবাই-ই আমাকে পাত্তা দেয়, এক তুমিই শুধু দাও না। আট। To live well, you must learn to ignore well. নয়। যারা অসীম পরিমাণে ভালোবাসতে জানে, তাদের বেশিরভাগই অসীম পরিমাণে পেইন দিতে জানে। এবং, প্রায়ই তারা ভালোবাসে এমন মানুষকে, যার কাছে ভালোবাসার তেমন কোনও দামই নেই। দশ। মানুষ ভাবে, স্রেফ সরি বললেই সব ঠিক হয়ে যায়। কী অদ্ভুত এক্সপেক্টেশন! এগারো। একটা মজার জিনিস দেখলাম। জায়গার নাম সিডস্টোর। মানুষের মুখে মুখে তা হয়ে গেছে সিস্টোর! এরকম আরও দু-একটা জায়গার নাম বলুন তো? চট্টগ্রামের যাঁরা আছেন, তাঁদের বলি। সাবএরিয়াকে ছোটোবেলায় সাইবেরিয়া বলেননি বা শোনেননি কেউ? বারো। বিরক্তিকর লোকজন এড়িয়ে চলি যথাসম্ভব। ওরা মনের আয়ু কমায়। ভালোবাসা বলতে কিছু নেই আমার কাছে। আমি শুধুই শান্তিতে বিশ্বাস করি। ...এমন কথাবার্তা যারা বলে, ওরাও আসলে দিনশেষে ভালোবাসা চায়। তবে তা এমন কারুর কাছ থেকে পেতে চায় না, যে ভালোবাসার অজুহাতে অশান্তি দেয়। শান্তি, কেবল শান্তিই এ জীবনে প্রথম ও শেষ কথা। শান্তি মিললে লোকে ভালোবাসার কথা বেমালুম ভুলে যায়। এ কারণেই ভালোবাসার মানুষের চাইতে শান্তির মানুষ সবসময়ই বেশি আদরের। তেরো। When you're having sex with your partner, you feel two bodies. When you're holding your partner tightly to your chest, you feel one body. In love, moving divides, holding unites. চৌদ্দ। বন্ধু তো সে-ই, যে তোমার সে ছবিটাই আপলোড করে, যে ছবিতে তোমাকে ভালো দেখায়, এমনকী যদি তাকে পচাও দেখায়। (আসুন, বন্ধুদের মধ্যে প্যাঁচ লাগাই, আর মজা নিই।) পনেরো। এয়ারপোর্টের রেস্টরুমে গিয়ে কমোডের দিকে তাকাতেই রবীন্দ্রনাথকে মনে পড়ল... তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি... নিজের সৃষ্টিকে যত্নে রাখার বিষয়ে আমার পূর্বসূরির ওই ঐকান্তিক চেষ্টা আমাকে যারপরনাই ঈর্ষাকাতর করে তুলল। ফলে আমি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে তার ভাসমান সকল সৃষ্টি নিমিষেই ধ্বংস করে দিলাম। পরের সৃষ্টি বিনাশের মধ্য দিয়ে আমার চোখের শান্তি এল। আহা! ঈর্ষা দুর্গন্ধ কেবল ছড়ায়ই না, তাড়ায়ও বটে! ষোলো। দুইএকজন ইনবক্সে জানতে চাইলেন, আমি রান্না করি কি না। অবশ্যই করি। জল রান্না। পাত্রে কিছু জল নিয়ে চুলোর উপর বসিয়ে দেবেন। নাড়াবেন; শুরুতে ধীরে, পরে জোরে। ফুটতে থাকলে গরম গরম পরিবেশন করবেন। ব্যস্, হয়ে গেল! পয়সা ছাড়া রেসিপি শেখালাম বলে খুশিতে আবার চুলো জ্বালাতে ভুলে যাবেন না যেন! আগুন না লাগালে কি আর কিছু হয়, ব্রাদার? সতেরো। ছুটি কীভাবে কাটালেন? আমি কাটালাম... বেশ ঘুমিয়ে, ওজন বাড়িয়ে (মনের নয়), একটু পড়ে, আধটু ঘুরে, স্ট্যাটাস প্রসব করে, বই কিনে। আরও আছে। আপনাদের হজমশক্তি দৃশ্যত অল্প, তাই থামলাম। আপনাদের কী খবর? আঠারো। Respect is a trap, so is disrespect. উনিশ। ব্রেকআপের প্রাথমিক ধাক্কাটা সহ্য করা সহজ নয়। বন্ধুর বা প্রিয় মানুষটার সাথে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন একটা কাজ। মানুষ এই সিদ্ধান্ত নেবার আগেও কাঁদে, পরেও কাঁদে। এটা স্বাভাবিক। যে নিজেই চলে গেছে কিংবা যাকে আমিই চলে যেতে দিয়েছি, তার কথা আমার মাথায় আসবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রায়ই মনে হতে থাকবে, আমরা দু-জন একসাথে থেকে গেলেও তো পারতাম। রিলেশন এমনি এমনি ভেঙে যায় না। এর পেছনে অনেক কারণ থাকে। সেই কারণগুলিই রিলেশনকে আবারও জোড়া না লাগানোর জন্য যথেষ্ট। যা ভেঙে গেছে, তা নিয়ে ভেবে ভেবে নিজেকে শেষ করে দেবার চেয়ে বড়ো বোকামি আর নেই। যা ভেঙে গেছে, তা ভেঙে যাবারই ছিল, নইলে তা ভাঙত না। থেকে যাবার জিনিস কখনও চলে যায় না। নিজেকে ভালো রাখতে চাইলে ভাঙা সম্পর্ককে জোড়া লাগাতে না চাওয়াই ভালো। এমনকী, যাকে একসময় ভালোবাসতাম, তার সাথে বিচ্ছেদপরবর্তী বন্ধুত্বের সম্পর্কও খুব একটা টেকে না। বন্ধুকে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা বানানো গেলেও এর উলটোটা করা খুব কঠিন। প্রাক্তনকে দূর থেকে শুভকামনায় ও ভালোবাসায় রাখা গেলেও তার কাছে থেকে কোনও কিছুতেই তাকে আর রাখা যায় না, উলটো সম্পর্ক আগের চেয়েও খারাপ হয়ে যায়। কী দরকার প্রিয় মানুষটির সাথে সম্পর্ক খারাপ করার! তাই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবার পর মানুষটাকে মিস করবেন, এটাই স্বাভাবিক। শত মিস করার পরও সেই সম্পর্কটাকে জোড়া লাগানোর সমস্ত ইচ্ছেকে বুকের মধ্যে পাথরচাপা দিয়ে রাখবেন, এটাও স্বাভাবিক। এই দুটো স্বাভাবিক সত্যকে মাথায় রেখে সম্পর্কের সুন্দর স্মৃতিগুলির নীরব রোমন্থন করাটা মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি। ভাবনা: নয়শো ছাব্বিশ ……………………………………………………… এক। যে দিনগুলি আমরা ভীষণ উদ্বেগের মধ্য দিয়ে পার করেছি, সেগুলি আমাদের ভেঙে ফেলতে পারেনি। আমরা শেষপর্যন্ত টিকে ছিলাম। সে সপ্তাহগুলিতে আমরা ঘুমোতেই পারিনি ভয়াবহ রকমের বিষণ্ণতায় ডুবে থাকার কারণে, সেগুলির ধকলও আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। বাঁচতে কষ্ট হয়েছে, তবু বেঁচে ছিলাম। আমাদের সবচাইতে বেশি মন খারাপের মাসগুলিতেও আমরা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি কোনও-না-কোনও উপায়ে। মন খারাপ, সময় খারাপ, তবু আয়ুর জোর ছিল অটুট। জীবন আমাদের বেঁচে থাকতে শিখিয়েছে। জীবনের সেই ক্লাসগুলিতে আমাদের মনোযোগ ও ধৈর্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। সেই কষ্টের জন্য পুরস্কার আমরা হয় ইতোমধ্যে পেয়ে গেছি, নয় খুব শিগ্গিরই পাবো। পুরস্কার আমরা পাবোই পাবো, এই বিশ্বাসে বাঁচার মতো বাঁচার নামই জীবনযাপন। দুই। যা-ই করো, ভেবেচিন্তে করো। তোমার অবচেতন মন সত্য ও অসত্যের পার্থক্য প্রায়ই বোঝে না, যার মূল্য তোমাকেই দিতে হবে আগে বা পরে। দিতে হবেই! তাই নিজেকে তুমি কীসের কাছে রাখছ কিংবা কী থেকে দূরে সরিয়ে রাখছ, তা খেয়াল করাটা খুব জরুরি। তুমি যা দেখছ, তা তোমার ভাবনার উপর প্রভাব ফেলে। তুমি যা শুনছ, তা তোমার অনুভূতির উপর প্রভাব ফেলে। তুমি যার সাথে মিশছ, সে তোমার লাইফস্টাইলে প্রভাব ফেলে। মানুষ তার পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। যা যেভাবে তৈরি, তার সংস্পর্শে মানুষ ক্রমশ সেভাবে করে তৈরি হয়ে ওঠে। সস্তার সাথে থাকা মানুষটা দিনশেষে সস্তাই। যারা নিজেকে এমন কিছুর মধ্যে রেখে দিতে পারে, যা-কিছু তার জীবনের লক্ষ্য ও প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাদের জীবনটা ঠিক পথে থাকে। ভুল লোকের সাথে থেকে ভুল কাজে সুখ খুঁজে ও পেয়ে বেড়ায় যারা, একদিন তাদের চরম মূল্য দিতে হয় ওই সুখের জন্য। তিন। এ পৃথিবীর রং শুধুই সাদা আর কালো নয়। এখানে আরও রং আছে। চোখে মেললেই ওসব রং দেখা যায়। তবে তার জন্য চোখদুটো মেলতে জানতে হয়। যারা তোমাকে বলে, সাদা আর কালো...এর বাইরে আর কোনও রং নেই, খোঁজ নিলে জানবে, ওদের জীবনটাই অমন সাদা আর কালো। ওরা চায়, তোমার জীবনেও আর কোনও রং না থাকুক। দুঃখী মানুষ তার আশেপাশে আরও দুঃখী মানুষ দেখতে চায়। এতে সে আনন্দ পায়। তুমি যদি এমন মানুষের সাথেই থাকো, যাদের জীবনে কেবলই ওই দুটো রং, তবে তোমার নিজের জীবনটাও অমন সাদা-কালো হয়ে উঠবে। কখন যে অমন হয়ে যাবে, তুমি তা টেরই পাবে না, তবে ওরকমই হবে। মনে রেখো, তুমি যা বোঝো এবং ভাবো, তা-ই সবটা নয়। এর বাইরেও জীবন আছে, এর বাইরেও রং আছে। নিজের জীবনকে তুমি কোন রঙে দেখছ, তা অনেকটাই নির্ভর করে তোমার বিশ্বাস ও ক্ষমতার উপর। বিশ্বাস বদলাও, ক্ষমতা বাড়াও। জীবন সাজাতে এটা লাগে। অন্যরা যে ঘরে নিজেকে রাখে, সেই একই ঘরে তোমারও নিজেকে আটকে রাখতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। একেক জনের ঘর একেকটা। যে ঘর তোমার নয়, সে ঘরে কখনও নিজেকে রেখো না। পুরো পৃথিবী রাখতে বললেও...রেখো না, যদি বাঁচতে চাও। জীবনটা জাদুর মতন। জাদু শিখতে চাইলে জাদুকরের কাছে যাও। এমন কারও সাথে মেশো না, যে জাদুটা জানেই না। খোঁড়ার সাথে চললে হাঁটতে শেখা যায় না। দেরি হয়ে যাবার আগেই সরে আসো। নিজের ধারণা ও বিশ্বাসকে ভেঙেচুরে নতুনভাবে তৈরি করো। যা তোমাকে ভালো রাখতে পারছে না, তা যদি তোমার পিতা ও পিতামহের আমানতও নয়, তাকে আঁকড়ে ধরে রেখে কী লাভ? চার। তুমি যদি বলতে থেকে যেতে, তাহলে চোখ বন্ধ করে থেকে যেতাম দ্বিতীয় কিছু চিন্তা না করেই। কিন্তু তুমি ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়েছ আর বুঝিয়ে দিয়েছ, চাইলেও এখানে থাকার কোনও জায়গা হবে না আমার। শুধুই শারীরিক প্রয়োজনে আমি তোমাকে এতটা ভেঙেচুরে চাইনি। তোমাকে চাওয়ার পেছনে আমার যতটা না শারীরিক কারণ ছিল, তার অনেক অনেক বেশি ছিল মানসিক আর আত্মিক কারণ। আমি সবসময় ভেতর থেকে তোমার অভাব অনুভব করেছি, আমি সব কিছুর বিনিময়ে তোমাকে চেয়েছি, এক তোমার কাছে কিংবা তোমাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছি। কিন্তু আমার জায়গা হয়নি। আমি জানি, আমি সেটার যোগ্য নই, আর কক্ষনো ছিলামও না; কিন্তু যদি ভাগ্যগুণে পেতাম, সেটাকে ধরে রাখার যোগ্যতা আমার ছিল, আছে। আমি জানি, আমি নিঃসন্দেহে তোমাকেই চাই, অথচ বাধ্য হয়ে আমাকে অন্য কোথাও যেতে হলো। মাঝে মাঝেই এই শূন্যতা আমাকে ভেতরে ভেতরে এতটা মুচড়ে ফেলে যে, তোমার উপর অনেক অভিমান চলে আসে। বারে বারে মন বলতে থাকে, কী হতো আমাকে ওর জীবনে একটুখানি জায়গা করে দিলে? অন্য কোথাও গিয়েও তোমার অভাব আমার ঠোঁটের কোণে লেগেই আছে, আর অবুঝ মন রোজই তোমাকে দোষী করে তুলছে, অপরাধী করে তুলছে। মনে হচ্ছে, ওর কাছে একটু জায়গা পেলে আমি তো আর কোত্থাও যেতাম না। তুমি হয়তো বুঝতে পারো না এখনও, কিন্তু মানুষ সম্পূর্ণ একাকী বেঁচে থাকতে পারে না। কাউকে-না-কাউকে তার লাগেই। আমি দীর্ঘবছর সম্পূর্ণ একা সকল সামাজিকতা থেকে নিজেকে আলাদা করে রেখে দেখেছি, একা থাকতে যে মানসিক শক্তির প্রয়োজন হয়, সেটা হয়তো আমার আর নেই। তা না হলে পুরোপুরি একা থাকতে হবে, এটা মনে এলেই চারপাশ থেকে এতটা গাঢ় আঁধার কেন দেখি! ভয়ে গায়ে কেন কাঁটা দিয়ে ওঠে! তৎক্ষণাৎ মনে হয়, যে আছে, হোক সে মনের অনেক দূরের কেউ, তবুও কী এসে যায়...থাকুক না! আমাকে তো তা-ও সম্পূর্ণ একা বেঁচে থাকতে হবে না! তোমার এই না-থাকা অন্য কেউ তার অপারগতায় হলেও ভুলিয়ে রাখতে পারছে, এটাই-বা কম কীসে! কিন্তু যত বারই সে সামনে এসে দাঁড়ায়, তত বারই এই অবিবেচক মন অনিচ্ছাবশত মনে মনে নিজেকে বলেই বসে, দ্যাখ্, তার কাছে এ কতটা অযোগ্য! আমি চেয়ে থাকি আর ভাবি, সত্যিই ভাগ্য বলে কিছু-একটা আছেই! যে মানুষটাকে একরকম বাধ্য হয়েই রেখে দিতে হচ্ছে কিংবা যে জায়গাটায় বাধ্য হয়েই থেকে যেতে হচ্ছে, তা একটা ভাগ্য নয় তো আর কী হতে পারে? আজকে আমি এ পর্যায়ে না এলে কিংবা এতটা বাধ্য না হলে তো কখনোই এর কাছে থাকতাম না। এ আমার নয়, স্রষ্টার ইচ্ছা, আর স্বয়ং স্রষ্টাপ্রদত্ত তার ভাগ্য। যা আমার জন্য কিংবা আমার কাছে দুর্ভাগ্য, তা-ই অন্য কারও কাছে বা অন্য কারও জীবনে সৌভাগ্য! পাঁচ। পরীক্ষা তুমি আগেও দিয়েছ, এখনও দিচ্ছ, সামনেও দেবে। যদি কখনও মনে হয়, আর পারছি না, এবার পালিয়ে যাই, তবে মাথায় এনো, আগেও এমনটা হয়েছে, যখন তোমার মনে হয়েছে, থাক্, এখন হার মেনে নিই, তবুও তুমি হার মেনে নাওনি বলেই আজকের এই জায়গায় আসতে পেরেছ। মানুষ কীভাবে তৈরি, জানো তো? মানুষ ভাবে আর প্রায়ই ভাবে, আর পারছি না, এত কষ্ট নেওয়া যায় না, তবু সে ঠিকই সব পেরে যায়। পেরে যাবার জন্যই মানুষের জন্ম হয়েছে। তুমিও মানুষ, তাই তুমিও পারবে। শুধু হাল ছেড়ে দিয়ো না, তাহলেই হবে। ভাবনা: নয়শো সাতাশ ……………………………………………………… এক। যদি মনে হয়, আপনার একটু বিশ্রামের দরকার, তবে বন্ধুদের বলে দিন, তোরা যা, আমি তোদের সাথে যাচ্ছি না। যদি মনে হয়, নিজেকে একটু রিচার্জ করা প্রয়োজন, তবে যা করতে ইচ্ছে করে তা-ই করুন, যদিও আপনার অন্য কিছু করার প্ল্যান ছিল। যদি হঠাৎ করেই কোনও একটি কাজ করতে মন না চায়, তবে কাজটি করা বন্ধ করে দিন। নিজেকে সময় দিন। এই সময়টুকু মনের খুব দরকার নিজেকে গুছিয়ে নিতে। মনের বিরুদ্ধে চলার নাম জীবন নয়। আপনি যখন মন খারাপ করে বসে থাকবেন, তখন দেখবেন, ওদের এক জনকেও পাশে পাবেন না, যাদের মন রাখতে গিয়ে আজ আপনার মন ভালো নেই। কেউ কেউ আপনাকে সেলফিশ বলবে, কেউবা রুড বলবে। বলেও যদি, কী এসে যায় ওতে? আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন তো আপনাকেই নিতে হবে। যে আপনাকে বোঝে না, তার মনের যত্ন নেবার কীসের অত দায় আপনার? আমরা যা যা করতে বাধ্য বলে আমাদের মনে হয়, তার বেশিরভাগই করতে আমরা আদৌ বাধ্য নই। ওসব বাধ্যতা আমরা নিজেরাই তৈরি করি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাবে যারা, ওরা নিজের অজান্তেই নিজেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। "না" বলতে শিখুন। মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও "হ্যাঁ" বলতে আমরা সবসময় বাধ্য নই। দুই। লোকে যা দেয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পেতে চায়। বোধ হয় এ কারণেই দিনের শেষে আমার মধ্যে কেবলই শূন্যতা এসে জমে। এই যে যত বারই বাঁচতে চেয়েছি একটু হলেও, তত বারই নিজেকে ডুবে যাওয়া মানুষ মনে হয়েছে, তার কারণও সম্ভবত ওটাই। নিজের জন্য একটু শান্তি খুঁজতে গেছি যখনই, তখনই শান্তি আরও একটু দূরে সরে গেছে। আমি ভেবেছিলাম, নিজেকে উজাড় করে দিলে বুঝি সবাই আমাকে ভালোবাসবে। আমি ভুল ভেবেছিলাম। আমার ধারণা ছিল, আমি যদি সবার জন্য করি, তবে ওরা আমাকে একটু হলেও বুঝবে। আমার ধারণা ছিল একদমই ভুল। প্রতিরাতেই, আমার জীবনপাত্র শূন্য হয়েছে পরের সুখের জন্য, নিজের বাঁচার জন্য কিছুই অবশিষ্ট ছিল না ওতে। নিজের শক্তির প্রায় পুরোটাই ক্ষয় হয়েছে এমন সব মানুষের কাজে, যারা আমাকে ভুল বুঝে দুঃখ দিয়ে গেছে দিনের পর দিন। অল্পকথায়, এটুকই আমার জীবন। তিন। যাদের হৃদয়টা খুব নরম, ওরা খুব অল্প পেলেও খুশি হয়ে ওঠে। ওদের ঠকিয়ে সবাই ভালো থাকে। সব বুঝেও ওরা চুপচাপ সব মেনে নেয়। এই ব্যাপারটা পালটানো দরকার। এ পৃথিবীর সবাই যেন প্রাপ্য ভালোবাসাটুকু পায়, কেউ যেন শুধুই ভালোবেসে না যায় কিছুই না পেয়েও। একতরফা ভালোবাসা মানুষকে ক্রমেই পাগল করে দেয়। যে মানুষটি আপনাকে ঠিক মানুষ ভেবে আপনার পাশে থেকে যাবে প্রেম, সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে, তেমন কারও জন্য অপেক্ষা করে থাকাই ভালো। আমরা যে ভুলটা করি, তা হলো, আমরা নিজেকে বোঝাই আর বোঝাতেই থাকি, আমি ভালো আছি, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আরেকটু অপেক্ষা, হ্যাঁ, আরও একটু অপেক্ষা করে দেখিই না কী হয়! ভুল কারও সাথে থাকতে থাকতে নিজের সাথে ভালো থাকার অভিনয় করে যাওয়াটা একসময় মানুষকে শেষ করে দেয়। আপনার ভালোবাসা ফেলনা নয়। আপনার ভালোবাসার দাম আছে। সেই দামটা চিনতে এবং চেনাতে শিখুন। কোমল হৃদয়ের মানুষগুলির শুধুই দুঃখ পেয়ে যাবার জন্য জন্ম হয়নি। সুখী হবার যাত্রায় নিজের আবেগ, অনুভূতি, ইচ্ছে এবং এমন আরও যা যা কিছু আছে, যা সুখী হতে লাগে, সেগুলিকে জড়ো করে সব কিছুর উপরে রাখতে হয়। অত আবেগতাড়িত হলে চলে না। যে আবেগ নিজেকেই শেষ করে দেয় ক্রমশ, তার আদৌ কি কোনও দাম আছে? যে ভালোবাসা নিজের সম্মান নষ্ট করে আর করতেই থাকে, তা হৃদয়ে ধারণ করে রাখলে সমস্ত আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না। পূর্ণ হবার জন্য যার জন্ম, সে কিনা শূন্য হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়! কোনও মানে হয়? চার। : সুশান্ত, বুঝলে, মানুষ হয়ে মানুষের বিচার করা খুব কঠিন কাজ। মাঝে মাঝে অসহায় লাগে, কিন্তু কিছু তো করার নেই, এটাই তো আমার চাকরি। এটা করেই খেতে হবে। : কী যে বলেন, স্যার! আমরা তো উঠতে-বসতে মানুষকে জাজ করি আর করতেই থাকি। চিনলেও করি, না চিনলেও করি। রীতিমতো চাকরির বাইরের চাকরি! আনপেইড ওভারটাইম! পাঁচ। একটি ফুলেল বৃক্ষ আর একটি ক্যাকটাস ধ্রুপদী নিষিদ্ধতায় জড়ানো! সরল, সুন্দর কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে খুব নিকটেই জ্যোৎস্নাবিলাস! ছয়। Unlearn to learn. সাত। Not loving is better than disturbing. আট। In the end, only what matters is, how kind or unkind you are, not how right or wrong you are. Be kind. Kindness acts like a magic. নয়। তোমার কাছে এলে নিজেকে কেন জানি মুসাফির মনে হয়, অথচ সরে যে যাব, তা ভাবলে কাউকে চোখের সামনে নিঃস্ব হতে দেখার পাপবোধ কাজ করে। যার কাছে একমাত্র ঐশ্বর্য আমিই, তার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেবার জন্য শুধু সাহস নয়, অনেক বেশি মানসিক শক্তির প্রয়োজন হয়। এ এমনই এক দোটানা, যেখানে থাকতে গেলে অনেক সুখ বিসর্জন দিতে হবে, অথচ ছেড়ে দিইও যদি, এরপর তেমন কোনও গন্তব্য তো নেই। তোমাকে নিয়ে পুরোপুরি সুখী নই, আবার তোমাকে ছাড়ার ভাবনা মাথায় এলেই অনিশ্চিত একটা গাঢ় আঁধার নেমে আসে। নিজেকে নিয়ে প্রতি মুহূর্তে এমন সব দ্বিধায় পড়ে মাঝে মাঝে নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যায়। নিজেকে তখন জিজ্ঞেস করি বারে বারে, আমি আসলে এমন কেন? নিজের কাছেই নিজে কেন এতটা কঠিন আমি? দশ। একজন প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের সম্মানকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখবে। আর যদি কেউ এটা না করে, তাহলে বুঝে নিতে হবে, সে কখনোই আপনাকে ভালোবাসেনি। আরেকটা বিষয় হতে পারে, যদি কেউ নিজের আত্মসম্মানবোধের জায়গাটা না বোঝে, তাহলে অন্যের কোথায় সম্মানহানি হচ্ছে, এটাও বোঝা অসম্ভব। যে অন্যকে সম্মান দিতে জানে না, সে হয়তো নিজের সম্মানটাও ঠিকভাবে বোঝে না। যে নিজেই সবার কাছে নিজেকে সস্তা করে রাখে, তার পক্ষে অন্যের সম্মান রক্ষা করা অসম্ভব। নিজেকে ভালো রাখতে হলে সুখে রাখতে গেলে অনেক মানুষের কাছে খারাপ হতে হয়, প্রচুর তথাকথিত স্বার্থপর হতে হয়। অন্যের চোখে ভালো থেকে কখনও নিজের অধিকার বুঝে নেওয়া যায় না। অন্যের চোখে ভালো থেকে কী হবে, যদি নিজেই খারাপ থাকেন? যেদিন যে মুহূর্ত থেকে কেউ নিজের ভালো থাকা, নিজের অধিকার নিয়ে মুখ খুলবে, সেদিন থেকেই সে নিজের অজান্তেই অনেক শত্রুর জন্ম দিয়ে ফেলবে। জীবনের ভার যার যার তার তার, সুতরাং নিজেকে ভালো রাখতে গিয়ে যদি অনেকের চক্ষুশূলও হই, তো কী করার? যে যা খুশি যা ভাবার ভেবে নিক, আমার নিজের ভালো থাকার ও নিজেকে খুশি রাখার দায়িত্ব নিজেরই নিতে হবে, তাতে করে আমার পরিবার, আত্মীয় কিংবা বন্ধুরা যে যা খুশি ভেবে নিক, তাতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। দিনশেষে নিজের কান্নাটা তো নিজেকেই কাঁদতে হয়, অন্য কেউ এসে তো আপনার জন্য কাঁদবে না। কারও যদি সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে গিয়ে সম্পূর্ণ একা হয়ে যেতে হয়, তবুও সেই একাকিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকাটাও তৃপ্তির। কারও সঙ্গে কষ্টে থাকার চেয়ে নিজের সঙ্গে ভালো থাকাটা জরুরি। সেই একাকিত্ব খুব দরকার, যে একাকিত্ব নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে লাগেই লাগে। নিজের সম্মানের স্বার্থেই, এই পৃথিবীর কাউকেই একচুল পরিমাণও ছাড় দেওয়া আত্মহত্যারই নামান্তর। ভাবনা: নয়শো আটাশ ……………………………………………………… এক। যে ভালোবাসেনি, তার কাছে সব কিছুই ভিক্ষা চেয়ে নিতে হয়। তার সময়, তার গুরুত্ব, এমনকী মনোযোগটুকুও। কাউকে ভালোবেসে এত বোকা হলে চলে না। আমি কাউকে ভালোবাসি, তাই বলে নিজের প্রতি নিজের ভালোবাসাটুকু ভুলে গেলে চলে না। কেউ অবহেলা করতেই পারে; পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অবহেলা মানুষ হয়তো তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে থেকেই পায়, তাই বলে নিজেও নিজেকে অবহেলা করলে চলে না। আমি যখন কাউকে ভালোবাসছি, তখন চেষ্টা করছি, মানুষটা কী চাইছে, তা বুঝে নিয়ে আমি তার সেই চাওয়াগুলো নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হলেও পূরণ করব। কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষ আমার ক্ষেত্রে সেটা তো করছেই না, বরং আমার প্রতি তার উদাসীনতাগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখিয়ে দিতে হচ্ছে। এতে দিন দিন পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। এটা আর যা-ই হোক, ভালোবাসা হতে পারে না। এর চেয়ে বন্ধুত্ব ভালো। সমস্যা হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষই কাজটা ইচ্ছে করে করে। ইচ্ছে করে ভালোবাসার মানুষকে ইগনোর করে কষ্ট দিতে থাকে। এটা করে সে মানসিক প্রশান্তি লাভ করে হয়তো। যে নিজেকেই অশ্রদ্ধা করে, সে এগুলো মেনে নিয়ে কিংবা না বোঝার ভান করে থেকে যেতেই পারে, কিন্তু এটা শেষমেশ মানুষটাকে সুখী করে না। জোর করে কারও অ্যাটেনশন আদায় করতে চাওয়া নিজেকে সেই মানুষটার কাছে মূল্যহীন করে দেয়। দুই। : বাবু, তুমি আজকে হাগসো? : হ্যাঁ। কেন? : তুমি আমাকে না বলে হাগতে পারলা!? ক্যামনে পারলা?! যাও, ব্রেকাপ!! অতঃপর, তাহারা ব্রেকাপের পর সুশান্ত পালকে নক করিয়া কহে, বাইয়া, আসকে আমার মন বালো নেই। তিন। ডিসকাউন্ট লাগবে না, সার্ভিস দিন। ভালোবাসা লাগবে না, শান্তি দিন। চার। If you or your problem doesn't matter to a person, never expect any help or solution from them. পাঁচ। Your body is beautiful. Never let yourself or anyone else misuse it. Remember, BODY MATTERS. ছয়। Once a friend, not always a friend. সাত। If you keep the unnecessary things that take you nowhere, those things will gradually take you to the path of destruction. আট। চেহারা দেখতে কেমন, সেটা কোনও ব্যাপার না। একেবারে কুৎসিত কদাকার মানুষটিও কাউকে নিজের মতো করে পেয়ে গেলে তাকে অবজ্ঞা করতে শুরু করে দেয়। তাই যতই ভালোবাসো না কেন, কিছুতেই কুকুরের মতো প্রভুভক্ত টাইপের হয়ে যাওয়া যাবে না। ওরকম হলেই পদে পদে লাথি খাবে আর শুধুই কাঁদবে। নয়। পদ্মা সেতু, গর্বের হেতু! আমরা পারি কি পারি না, সবই আজ হয়ে গেল জানা! দশ। যখন মাথাটা আর কাজ করে না কিছুতেই, তখনও আমি সেই মুহূর্তের একটা নাম ঠিক করে ফেলতে পারি। যখন জীবনটা একেবারেই ভেঙে ভেঙে পড়ে, তখনও আমি সেই অসহায়ত্বের একটা নাম দিয়ে দিতে পারি। যখন সব কিছুই এলোমেলো হয়ে যায় হঠাৎ করেই, তখনও আমি সেই সময়টাকে একটা নামে ডাকতে পারি। যখন এই দু-কাঁধের উপর পাহাড়সম বোঝা, মনের মধ্যে রাজ্যের হইচই, তখনও আমি সেই দুঃসহ বেদনার একটা মোলায়েম নাম দিয়ে ফেলতে পারি। ওসব নাম আসে কোথা থেকে...অমন দুঃসময়ে? দুঃখ থেকে। দুঃখ না পেয়ে সৃষ্টি করতে পেরেছে কে কবে? এগারো। অপেক্ষা করে থাকলে অপেক্ষা শুধু বেড়েই যায়। বারো। করতে জানা নয়, করতে পারাই বড়ো কথা। জানে তো সবাই-ই, পারে ক-জন?! মুখেন মারিতং জগৎ!-টাইপের মানুষগুলো বন্ধু হিসেবেও বিরক্তিকর, শত্রু হিসেবেও বিরক্তিকর। ভাবে সপ্তমী, কর্মে শূন্য! মুখে মুখে ব্লু-লেভেল, ওদিকে পকেটে বাংলা খাওয়ার পয়সাও নেই! ভাবে একে-৪৭ রাইফেল, কর্মে খেলনার পিস্তল! তেরো। জীবনে একটা সময় আসবে, যখন আপনার তেমন কোনও চাওয়া থাকবে না। প্রচণ্ড দুঃখেও কান্না পাবে না, ভীষণ আনন্দেও হাসি আসবে না। নতুন প্রাপ্তিতে আগ্রহ জন্মাবে না, নতুন কোনও হারানোতে বেদনা জাগবে না। একটা জলজ্যান্ত রোবটের মতন জীবনটা হয়ে যাবে এক বহতা রেললাইন; চলছে জীবন...চলুক না... এরকম! মানুষ ছোটো ছোটো দুঃখ পেতে পেতে পাথর হয়ে যায়, হারাতে হারাতে অনুভূতিহীন হয়ে যায়, ভেঙে টুকরো হতে হতে মানুষ একদিন কণার মতন এতই ক্ষুদ্র হয়ে যায় যে, সেই ভাঙা টুকরোগুলোকে আর ভাঙা যায় না। মানুষ একসময় নিজে চাইলেও আরও ভেঙে যেতে পারে না। তারপর? তারপর থেকেই মানুষ অনন্য শক্তির অধিকারী হয়ে যায়। চাইলেই তাকে আর ভাঙা যায় না, চাইলেই তাকে আর গড়াও যায় না। প্রচণ্ড দুঃখ, গভীর আনন্দ কিংবা নিখুঁত প্রতারণা...কোনোটাতেই মানুষ আর খুব একটা টলে না। এভাবেই জীবন বয়ে যাবে ঢেউহীন নদীর মতন, যে নদীতে জোয়ার আসে না, ভাটাও পড়ে না। চৌদ্দ। আমার জানলায় ভোর হয়ে গেছে, তুমি কোথায়! বালিশের পাশে, চশমার ফ্রেমে, আধ-খাওয়া জলের গ্লাসে, জানলার শার্সিতে কত খুঁজেছি... পনেরো। If someone cheats on you, cheat on them. Loyalty is a precious gift. Not everyone deserves it. Simple. ষোলো। আমার কাজ আমার কাছে ভালো। আপনার কাজ আপনার কাছে ভালো। আমার কাজ আপনার কাছে খারাপ। আপনার কাজ আমার কাছে কেমন, জানি না। এক নিজের বাদে আর কারও কাজ নিয়ে আমার সাধারণত কোনও মাথাব্যথা থাকে না। একটাই অনুরোধ, আমার খারাপ কাজ নিয়ে আমাকে নরকে যেতে দিন। আমার আমলনামার দায় নিশ্চয়ই আপনাকে নিতে হবে না। আমি খারাপ? আমি এভাবেই ভালো আছি, বেঁচে আছি...কারও কোনও ক্ষতি না করে। আমাকে আমার মতো খারাপ থাকতে দিন। আপনি আপনার মতো ভালো থাকুন। আমার কাজ, আমার ধর্ম। আমার কাজ, আপনার অধর্ম। অধর্মের পেছনে লেগে থাকা বন্ধ করুন। ধন্যবাদ, আবার আসবেন না। নিজের কাজে মন দিন। সতেরো। Respect is a trap. They prohibit you from enjoying your life by respecting you. আঠারো। আমার বড়ো ছেলে ক্লাস সিক্সে পড়ে, তখন টিভিতে একটা অ্যাড দিত, এইডস-এর। সেখানে বলা হতো, কীভাবে এইডস ছড়ায়! দেখাত, একটা কালো বিড়াল অন্ধকার ঘরে ঢুকছে, রক্ত দেওয়া-নেওয়া হচ্ছে সিরিঞ্জের মাধ্যমে, আর যৌন মিলনের মাধ্যমে! এদিকে একদিন আমাদের বাসায় রাতের বেলায় একটা কালো বিড়াল ঢুকেছে। দেখলাম, দু-ভাই মিলে তো বিড়ালটাকে ধরে রীতিমতো মেরে ফেলার অবস্থা করছে! 'বিড়ালের সাথে এই ব্যবহার করছ কেন?' আমার বড়ো ছেলে তখন বলে, এইডস রোগ নিয়ে এসেছে এই বিড়াল। আমার ছোটো ছেলে তখন ৪ বছর, সে বলে, দ্যাখো না, টিভিতে অ্যাড দেয়! এর কারণগুলি আমার বড়ো ছেলে যখন টিভি থেকে শিখে গড়গড় করে মুখস্থ বলতে লাগল, তখন হঠাৎ সে আমাকে প্রশ্ন করে বসে, আম্মু, যৌন মিলন কী? প্রশ্ন শুনে আমি তো থ খেয়ে গেছি! উত্তর কী দেবো! এই কাজ করি, ওই কাজ করি...দুই ভাই তো ছাড়ে না, বলতেই হবে আমাকে! বললাম, ফুলের পরাগায়ন বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছ না? ওটাকেই যৌন মিলন বলে। দেখি, তখনই বই নিয়ে বসেছে সে, কিন্তু ওই ব্যাপারটা পরাগায়ন বলে ঠিক মনে হয়নি তার। আবার শুরু হলো জ্বালাতন! কোনও উপায় না পেয়ে বললাম, এটা ডাক্তারি ভাষা, তাই আমি বুঝি না। তোমার ডাক্তার কাকা বাসায় এলে জিজ্ঞেস করব, তাহলে সঠিকভাবে জানতে পারবে! হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মাস তিনেক পর ওদের ডাক্তার কাকা এল বাসায়। গেইট খুলতেই দুই ভাই মিলে কাকাকে প্রশ্ন করে বসল, কাকা, যৌন মিলন কী? কাকা থ খেয়ে বলল, এইটা কোনও প্রশ্ন হলো! এসেছি, বসব, রেস্ট নিব, তারপর প্রশ্ন কোরো! হায় রে আমার দুই ছেলের অপেক্ষা! ওদের কাকা আমাকে জিজ্ঞেস করে চুপিচুপি, কী হয়েছে? আমি বললাম অ্যাডের কথা। উনি কী বলবেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না! ঘুমানোর ঠিক আগমুহূর্তে ওরা আবারও ওটা জিজ্ঞেস করে কাকাকে। কাকা বেচারা উত্তর দেয়, এই চ্যাপ্টারটা এখনও পড়া হয়নি। যখনই পড়া হবে, জানাব তোমাদের! 'প্রমিজ?' 'একদম পাক্কা প্রমিজ!' বেচারা চাচার এখনও পড়া হয়নি ওই চ্যাপ্টার! এদিকে ভাতিজাদের এই বিষয়ে পিএইচডি করা শেষ! হা হা হা... উনিশ। লোকের কাছে নিজেকে ভালো হিসেবে প্রমাণ করার চাইতে অনেক বেশি স্বস্তিকর হচ্ছে, ওই ধরনের জাজমেন্টাল লোকজন এড়িয়ে বাঁচা। কী দরকার সবাইকে নিয়ে চলার? যাকে নিয়ে চললে বিরক্তির মধ্যে থাকতে হয়, তার কাছ থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। অবশ্য ওদের কুকুরের স্বভাব, আপনি এড়িয়ে চললেও ঠিকই আপনার পশ্চাদ্দেশের আশেপাশে ঘুরঘুর করবে। আপনি ভাবতেও পারবেন না, আপনার পশ্চাদ্দেশ কত মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন! যারা আমাদের জাজ করে করে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের প্রায় কাউকেই আমরা চিনি না। ভাবনা: নয়শো উনত্রিশ ……………………………………………………… এক। আমার কখনও তাকে ক্ষমা করতে ইচ্ছে করে না, যে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে জানে না। দুই। রীতিমতো অধিকার নিয়ে কাউকে পেইন দেবার ক্ষেত্রে ভালোবাসার চাইতে বাজে অজুহাত আর একটিও নেই। তিন। ভালোবাসা নয়, শান্তি। চার। প্রেমিকা তো অনেকেই হতে পারে, বন্ধু হতে জানে ক-জনে! পাঁচ। একজন বিশ্বস্ত মানুষের জন্য অনেক অনেক খরচ করা যায়; কেননা বিশ্বস্ততা এমন একটা জিনিস, যার কোনও অর্থমূল্য হয় না। ছয়। কিছু শেকল দেখতে ভালোবাসার মতন, কিছু ভালোবাসা আদতে শেকলের গঠন। সাত। মির্জা গালিবের বন্ধু ও ভক্ত দিউয়ান ফজলুল্লাহ খাঁ একবার গালিবের বাসার পাশ দিয়ে আসা-যাওয়া করেছেন জেনে মির্জা গালিব খুবই কষ্ট পান। দিউয়ান ফজলুল্লাহ গালিবের সাথে দেখা করেননি, গালিব তাঁর এই আচরণে খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। তখন তিনি একটি চিঠি দিলেন দিউয়ানজিকে। তাতে লেখা ছিল: 'আজ আমার এত অনুতাপ হলো যে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছি। এর চেয়ে বেশি অযোগ্যতা আমার আর কী হতে পারে যে আপনি আমার বাসার পাশ দিয়ে আসা-যাওয়া করলেন, কিন্তু আমি আপনাকে এক বারও সেলাম জানাতে পথে হাজির হতে পারিনি। কী বদনসিব আমার!' চিঠি পেয়ে দিউয়ানজি সাথে সাথে চলে গিয়েছিলেন গালিবের বাসায় দেখা করতে। জানো, আমার কপালটাও গালিবের মতো, তুমি কাছে থেকে চলে গেলে, দেখা আর হলো না। আমার বাড়ির পাশ দিয়ে কত আসা-যাওয়া করলে, অথচ এক বারও জানালে না। আমি তোমার একটি ক্ষুদ্র বার্তারও অযোগ্য! তুমি প্রায়ই বলো, যাকে ভালোবাসো, তার কাছে প্রত্যাশা রাখতে নেই। মানলাম, তুমি ঠিক। প্রত্যাশাটা তোমার কাছে কী ছিল? শুধু তোমাকে দেখতে চাওয়া! এই সামান্য একটা আশাই তো ছিল! স্রেফ দেখতে চাওয়াও কি তবে পাপ? তোমার হৃদয়ের কণামাত্র জায়গায়ও আমাকে রাখো, তেমনটাও তো চাইনি! চেয়েছি শুধু দেখতে, চেয়েছি একটু যত্নে রাখতে কিছুটা সময়ের জন্য। যাকে ভালোবাসি না, তাকে দেখতে যেমন চাই না, তেমনি তার জন্য যত্নের বিষয়টাও মাথায় আসে না। তবে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার...ভালোবাসার মানুষটাকে দেখতে চাওয়া। এই দেখায় পাপ নেই, অশ্লীলতা নেই; আছে শুধু ভালোবাসা। হায়, তুমি বুঝলে না! আট। ছোট্ট এই জীবন, তোমার বন্ধুত্বের ভালোবাসা নিয়েও দিব্যি ভালো থাকব। আমার ভালোবাসা কেমন ভালোবাসা, ওটা ঠিক কোন ধরনের, ওসব জানি না। তবে তুমি ভালো থাকলে ভালো লাগে, তোমাকে নিয়ে অন্য কেউ প্রশংসা করলে ভালো লাগে। তোমার শূন্যতায় হঠাৎ হঠাৎ খুব বেশিই দুমড়ে-মুচড়ে নিঃস্ব হয়ে যাই, আবার তুমি ছাড়াও তোমাকে ভেবে একা একা দিব্যি ভালো থাকি। তোমার সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো মনে করে করে আমি ভীষণ ভালো থাকি। তুমি আমাকে ভালো না রেখেও ভালো রাখো। আমার কাছে ভালোবাসার মানে এটুকই। নয়। আমি কি সত্যিই একা একা বাঁচতে পারব? একা হয়ে যেতে আমার খুব ভয় লাগে, জানো! ভেতর থেকে ঠিক শক্তি পাই না। মনে হয়, আমি কিছুতেই একা একা বাঁচতে পারব না। কথা বলার জন্য অন্তত একটা মানুষ আমার লাগবে, যাকে যখন-তখন আমি আমার নিজের মানুষ ভাবতে পারব। শুধু এজন্যই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছি। আমি যে খুব ভালো আছি, সুখে আছি, তেমন কিছুই না। শুধু মনে হয়, তা-ও তো যখন-তখন ফোন করার মতো নিজের একটা জায়গা আছে; এটুকুও না থাকলে আমি কী নিয়ে থাকব? হ্যাঁ, শুধু এজন্যই অনেক বার স্টেপ নিতে গিয়েও সবকিছু মেনে নিয়ে সম্পর্কটা জোড়াতালি দিয়ে রেখেছি, কিন্তু আমি আসলে কোনও সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। আমি কিছুতেই সম্পূর্ণ একা একা থাকতে সাহস পাচ্ছি না। আমি কী করব! কাছের মানুষ চেনা খুব সহজ নয়। অনেক সাহস করে নিজের দুর্বলতা লুকিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা যাদের আমাদের কাছের মনে করি, তাদের একসময় দূরে ঠেলে দিতে হয়, কখনও কখনও অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রত্যাশিত আচরণ করতে হয়, মুখোশের আবরণে নিজেকে মুড়িয়ে দেখতে হয়...এই মানুষটা শুধু আমার ভালোটুকুই নিতে চায়? না কি খারাপটুকুও গ্রহণ করার ক্ষমতা সে রাখে? কিংবা আমার হঠাৎ পরিবর্তন আমার প্রতি মানুষটার আচরণ বদলে দেয় কি না! কখনও কখনও হারানোর ভয় দূরে ঠেলে সত্যিটা জানার সাহস সঞ্চয় করতে হয়। আর এসব করতে গিয়ে সেই মানুষটা যদি স্রোতের সাথে তলিয়ে যায়, হারিয়ে যায়, তাহলে কোনও আফসোস করতে হয় না, কেননা ঠিক মানুষ কখনও কঠিন মুহূর্ত দেখলে ভয় পায় না। সে জানে, ঠিক কখন শুধু মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকলেই চলে। আমি কি সত্যিই ঠিক মানুষটার সাথে বেঁচে আছি? দশ। জীবনটা এক বার এলোমেলো হয়ে গেলে সেটা আর ঠিক হয় না। আজ এতগুলি বছর ধরে সবকিছু ঠিক করতে আমি এত এত এফর্ট দিচ্ছি তো দিচ্ছিই...! একদিকে ঠিক হয় তো অন্যদিক বেঠিক হয়ে যায়; আবার অন্যদিকটা ঠিক করতে গেলে এদিকে এলোমেলো হয়ে যায়। স্রোতের প্রতিকূলে তীব্র স্রোতে টিকে থাকাই যেখানে দুর্বিষহ, সেখানে তীরে পৌঁছোনো এখন আমার কাছে অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না। ঠেলতে ঠেলতে আমি টায়ার্ড, নৌকার হাল ছেড়ে দেবো এখন; যেদিকে খুশি যাক। একটা ভুল পদক্ষেপ মানুষকে এভাবে তলিয়ে নেয়, জানা ছিল না। এই যে আমি তোমার সাথে চলার সময় থেকে, তোমার সম্পর্কে কিছুটা জানার পর থেকে, প্রায় সবসময়ই বলে আসছি, আমি তোমার কাছে থাকতে চাই কিংবা আমার তোমার সাথে থাকতে ইচ্ছে হয় খুউব...তোমার কি কখনও মনে প্রশ্ন এসেছে, কেন তোমার কাছে কাছে এত বেশি করে থাকতে চাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করি? প্রশ্নটা মনে আসা উচিত ছিল, তাহলে অন্তত প্রকৃত কারণটা তুমি জানতে পারতে। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই শুধু সেই ভালোবাসার টানে তোমার কাছে থাকতে চাই, ব্যাপারটা তা নয়। আমি আসলে তোমার সান্নিধ্যে থাকতে চেয়েছি। একটা বিষয় আমি জানি এবং বিশ্বাস করি: বড়ো মানুষদের সান্নিধ্যে থাকলে ছোটো মানুষ কিংবা তথাকথিত অমানুষদের ভেতরেও একটা পরিবর্তন আসে। বড়ো মানুষদের সান্নিধ্যে থাকলে মানুষের ভেতরের চিন্তাভাবনার অনেক পরিবর্তন আসে এবং বাহ্যিক জিনিসগুলো দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়। আমি, প্রকৃত অর্থে, তোমার সাথে টুকটাক কথা বলে কিংবা জীবনের কিছুটা মুহূর্ত তোমার সাথে কাটিয়ে যে অন্তর্দৃষ্টি পেয়েছি, তোমাকে জানার মধ্য দিয়ে নিজেকে যা জেনেছি, এটা হয়তো তুমি আমার জীবনে না এলে কখনোই সম্ভব হতো না। ধন্যবাদ তোমাকে! আমি চাই, আমার ভেতরে তোমার এই ছায়াটুকু অক্ষত থেকে যাক। কারণ আমি বিশ্বাস করি, তুমি একজন বড়ো মাপের মানুষ। আমার দৃষ্টিসীমায় এতটা বড়ো আর কাউকে দেখিনি আমি। বড়ো মাপের মানুষগুলোকে কাছ থেকে জানার সৌভাগ্য সবার হয় না সেই অর্থে, তোমাকে জানার সৌভাগ্য যতটা আমার হয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এই জানা নিতান্তই ক্ষুদ্র। আমার তোমাকে আরও জানতে ইচ্ছে করে, তোমাকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করে; যদিও তোমার ভেতরে মানুষটাকে প্রকাশ করার মতো সেই মাপের জ্ঞানই আমার ভেতরে নেই। আমার মনে হয়, অন্যদের নিজেকে জানতে দেওয়া এবং তাদের চোখে নিজেকে দেখতে পারাও অনেক বড়ো একটা সুযোগ...নিজেকে সব দিক থেকে বিচার করার। আমি মনে করি, একটা সময় পর গিয়ে তোমাকে মন খুলে সবকিছু বলতে পারে, তোমার বিষয়ে ভালো ধারণা রাখে, এমন কিছু মানুষের প্রয়োজন হবে। যদিও আমি তাদের কেউ হব না, কিন্তু এটা সত্যি, আমি তোমাকে তোমার মতো করে থাকতে দিয়ে আমার দৃষ্টিকোণ থেকে তোমাকে তুলে ধরতে কিছুটা হলেও পারব। আমি বর্তমানে বাঁচা একজন মানুষ। ভবিষ্যতে এই মানুষটাকে এভাবে পাবার সুযোগ আমার হয়তো আর না-ও থাকতে পারে কিংবা আমার মানসিকতার পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে যে-কোনও সময়ই। আমি এইসব দিনের আগমনে বিশ্বাস করি। এইসব দিনে আমি নিজেকে দিয়ে কী কী করিয়ে নিতে পারছি, আমি মনে করি, এটাই অনেক কিছু; এর চেয়ে ভালো কিছু আমাকে দিয়ে হবে কি না আমি জানি না, জানার ইচ্ছেও তেমন রাখি না। তোমাকে জানার মধ্যে দিয়ে আমি প্রকৃত বড়ো মানুষগুলো কেমন হয়, তা জানতে পারব, যা মহাকালের কাছে আমার সবচেয়ে বড়ো পাওয়া হবে। যুগে যুগে যেসব বড়ো মানুষ পৃথিবী থেকে নিজেদের প্রকাশ করে চলে গেছেন, তাঁদের এমন কাছ দেখার কিংবা জানার সুযোগ আমার কখনও হবে না, কিন্তু তোমার মধ্য দিয়ে আমি তাদের উচ্চতা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারব, আমার কাছে এটাই মুখ্য। কারও ভেতর থেকে যদি ইনোসেন্স জিনিসটা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আমি মনে করি, এটা একপ্রকার আত্মিক মৃত্যু। ইনোসেন্স প্রকাশ পেলে আগের ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়ে যাবে, নিজের পুরোনো ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে, এমনটা হতেই পারে না, কেননা ইনোসেন্স ইটসেল্ফ ইজ অ্যা রেয়ার পারসোনালিটি। নান ক্যান জাস্টিফাই ইট উইথ ডিগনিটি। তোমাকে যত জানি, ততই সেই নতুন ব্যক্তিত্বের দিকে নিজেকে এগিয়ে নিই। এই জার্নিটা আমার ভালো লাগে, এর বেশি কিছু পাবার প্রত্যাশা আমার সত্যিই নেই। কাছে না রাখলেও কাছে থাকতে দিয়ো, কেমন? ভাবনা: নয়শো ত্রিশ ……………………………………………………… এক। বেশিরভাগ মেয়েরই, 'আমি আর খাব না।'-র মানে হলো: 'তুমি মুখে তুলে খাইয়ে দিলে খাব।' বোকা ছেলেরা এই সহজ ইশারাটি না বুঝে মেয়েটার সামনে 'আচ্ছা!' বলে নিজেই গপাগপ খেতে থাকে। খাইয়ে দিতে জানে না যে ছেলে, তার সাথে প্রেম বা ঘর করা সুখকর কিছু নয়। দুই। আমি মানুষকে হয় বন্ধু ভাবি, নয় কিছুই ভাবি না। ভাই, বোন, স্যার, ম্যাডাম এসব ভাবি না; কেউ আমায় ওসব ভাবুক, তা-ও চাই না। আশি বছরের বৃদ্ধ কি আট বছরের শিশু, দুই-ই, হয় আমার বন্ধু, নয় কিছুই নয়। তিন। মরে যাবার চেয়ে খুব খারাপ অবস্থায় থাকাও অনেক অনেক ভালো। চার। আমরা অনেকসময় ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, ঠিক কোন মানুষটি আমাদের সবচেয়ে কাছের। হয়তো আমরা ভাবি, যে আমাদের বেশি সাপোর্ট করে, সে-ই সবচেয়ে কাছের, কেননা বিপদে-আপদে তাকে আমরা পাশে পাই। কিন্তু ঠিক সেই মানুষটাই কি সে হয়ে ওঠে, যাকে কিনা একটা ভাঙামন নিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে হালকা হওয়া যায়? কেউ কী করেই-বা বুঝবে, কে তার এতটা আত্মার? আসলে এইসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের ভেতর থেকেই একদিন বেরিয়ে আসবে। মানুষের জীবনের সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্তে যে মানুষগুলোর কথা খুব করে মনে পড়ে কিংবা ঠিক ওই কঠিন মুহূর্তে যার মুখটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, খুব করে মনে হয়, একছুটে গিয়ে এই মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি, সে মানুষটাই আসলে আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ। মানুষটা সেই মানুষ, যার কাছে নির্দ্বিধায় নির্ভার হওয়া যায়, যার থাকা জুড়ে সব ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, অপ্রাপ্তি কিংবা বিষণ্নতা সুখ হয়ে যায়। খুব কঠিন মুহূর্তগুলোতে চোখ বন্ধ করতেই যে মানুষটার চেহারা ছবির মতন আমাদের সামনে ভেসে ওঠে কিংবা খুব বেশি ইচ্ছে হয়, এই মুহূর্তে যদি তাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারতাম, তার কাছে গিয়ে কাঁদতে পারতাম, কিংবা তাকে বলতে পারতাম, এই দ্যাখো, কী যে কষ্ট হচ্ছে আমার! ঠিক সেই মানুষটাই আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ, আমাদের আত্মার মানুষ, যার সাথে আমাদের আত্মার সমস্ত যোগাযোগ হয়ে গেছে বলে আমাদের বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। সত্যিই খুব অদ্ভুত লাগে, যখন ঠিক মানুষটাই আমাদের তীব্র আঘাত করে, কষ্ট দেয়, অথচ ঠিক সেই মুহূর্তেও, তার দেওয়া কষ্ট সয়েও, তার কাছেই যেতে ইচ্ছে হয়! আহা, কী এক অসহায়ত্বের সমুদ্রে ভেসে ভেসে মানুষ বাঁচে! যে নৈঃশব্দ্যে সব ভাষা বোকা হয়ে যায়, সেখানে থেকে যায় শুধুই তরজমার ভাবার্থ, যার ভার শুধু আমাদের এই অন্তরাত্মাই জানে! পাঁচ। একসময় মেয়েদের বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। পরে দেখলাম, চেষ্টা করতে করতে, আমি যা বুঝি, তা-ই ভুলে যাচ্ছি। এরপর চেষ্টা করা বাদ দিয়ে দিয়েছি। কী করব, বাঁচতে তো হবে! মেয়েদের একটাই গ্রামার; আর তা হলো, ওদের কোনও গ্রামার হয় না। আগে ভাবতাম, মেয়েরা দুর্বোধ্য; এখন বুঝি, মেয়েরা আসলে অবোধ্য। ছেলেদের মনের গতি মাত্র দুই-একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ ও সীমিত, মেয়েদের ক্ষেত্রে যা অসীমের কাছাকাছি। মেয়েদের মন বোঝার চাইতে বরং একেক সময়ে বলা ওদের একেক রকমের সমস্ত সুকথা-অকথা-কুকথা চুপচাপ মেনে নেওয়া কিংবা মেনে না নিলেও নিরুত্তর থাকাটা সহজ। ছেলেরা বদ, আর মেয়েরা বদ না। ছয়। আমরা যেভাবে ভাবি, অন্যরা সেভাবে ভাবে না। ভাবনার এই পার্থক্য স্বাভাবিক, সুন্দর, সত্য। যদি আমি আমার বিশ্বাসকে অন্যের উপর চাপানোর চেষ্টা করি, তবে হয় আমার বিশ্বাস ঠুনকো, নয় আমি নিজেই ঠুনকো। ভিন্নমত ও ভিন্নপথ যে যত বেশি শ্রদ্ধার সাথে মেনে নেয়, মানুষ হিসেবে সে তত উন্নত মানসিকতার। সাত। যে নিজেই একটা হারেম চালানোর ক্ষমতা রাখে, সে হারেমের দ্বাররক্ষী হতে চাইবেই-বা কেন?! আট। একটা ছেলের কাছ থেকে আপনি যে ধরনের লয়ালটি চান, ঠিক সেই ধরনের লয়ালটিই পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে খুব ছোট্ট একটা শর্ত মেনে চলতে হবে; তা হলো, পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও ছেলেটার সব কথাকেই আপনার বিশ্বাস করতে হবে। নয়। আমাদের বাসাটা যে গলিতে, এখানে সব বাসার মালিকেরা আব্বুর কলিগ কিংবা বন্ধু। সবাই-ই রিটায়ার্ড। আমি ছাড়াও আরও দুই আঙ্কেলের মেয়ে ডিভোর্সি। একজনের বয়স ৩৬ হবে, আরেকজন আমার ৩/৪ বছরের জুনিয়র। জুনিয়র মেয়েটাকে ওর বাবা আলাদা ফ্ল্যাট দিয়ে দিয়েছে একা থাকার জন্য। সে বায়িং-এ জব করে; নিজের টাকায় ড্রিংক করে, স্মোক করে, ওয়েস্টার্ন পরে, মাথায় কিংবা বুকে কখনোই কাপড় দেয় না, একদম যা-তা হয়ে গেছে। সে যেহেতু একা থাকে, তাই বাসায় বসেই সে স্মোক-ড্রিংক করে, স্বাভাবিকভাবেই। আমি ভাবি, এই যে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাই আমি যখন-তখন, রাত-বিরাত নির্ঘুম কাটাই চোখে রাজ্যের ঘুম থাকা সত্ত্বেও...কেন এত কষ্ট করি? ওর মতো দু-একটা সিগারেট খেলেই তো আমি বিন্দাস থাকতে পারি। আমি মদ-গাঁজা খেলেও কার কী? কিছুই করি না আমি, তবু আমাকে নিয়ে আমার আব্বু-আম্মু'র আক্ষেপের শেষ নাই! সমাজ শুধু বলে: এক্কেবারে নষ্ট হয়ে গেছে মেয়েটা...ছিঃ ছিঃ ছিঃ!...আমি তো বুঝি, মেয়েটা কেন সিগারেট টানে, কেন ওর ঘরে রাতভর লাইট জ্বলে! সমাজের কথার জ্বালায় নিজের বাপ-মা'ও ওকে আলাদা করে দিল! তো সে কী করবে? সারা দিন-রাত এক করে কাঁদবে শুধু? কী লাভ ওতে? ওকে বাঁচতে তো হবে, তাই না? সিগারেট টেনে যদি সে অন্তত সুইসাইড অ্যাভয়েড করতে পারে তো...টানুক না! এ সমাজ কাউকে তার নিজের মতো করে বাঁচতে দেখলে তেড়ে আসে, আর সে মরে গেলে নির্বিকার হয়ে থাকে। আমার মৃত্যুতে যে সমাজের কিছুই এসে যায় না, আমার বাঁচার পথে সে সমাজের চোখ-রাঙানিকে পরোয়া করার কী আছে?! অন্যের পেছনে লেগে থাকে যারা, ওদের চাইতে অসহায় প্রাণী আর কোথাও নেই। সত্যিকারের গুড-ফর-নাথিং সম্ভবত তারাই, যারা চাইলে মরেও যেতে পারে না! এমন মানুষের বেঁচে থাকার রাস্তাটা সহজ নয়। ওদেরকে ওদের মতো বাঁচতে না দেওয়াটা পাপ। এ সমাজ কিছু পাপিষ্ট মানুষের সমাজ। সারাদিন-সারারাত ধর্মসাধনা করেও কোনও ফল হবে না, যদি আরেকজনের বাঁচার পথে আমরা বাধা হয়ে দাঁড়াই। দশ। বেশি যত্ন বিরক্তিকর। এগারো। Don't reply, just keep working hard. One day you'll become that person whose face is enough to give all the replies without replying. বারো। এ পৃথিবীতে কেউ কখনও কারও একার হয় না। তেরো। মেধা নয়, মেধা নয়...শ্রম...শ্রম! চৌদ্দ। স্যার, আপনি এত সুন্দর কেন? যত বারই দেখি, প্রেমে পড়ে যাই। স্যার, আপনাকে আজ স্বপ্নে দেখেছি, একদম ৩ সত্যি! ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক: আমি আশিক, তুমি প্রিয়া... আমি আশিক, তুমি প্রিয়া... আমি আশিকককক্... তুমি প্রিয়া... আমি প্রিয়া... তুমি প্রিয়া... আমি প্রিয়াআআআআ... পনেরো। শৃঙ্খলে ও শৃঙ্খলায়... আপনাদের সেবায়। ষোলো। তুমি শরাব-দর্শনেই তৃপ্ত, আর আমার তৃপ্তি কেবলই শরাব-পানে। দোষ তোমারও নেই, আমারও নেই। অভ্যেসে মানুষের ঐক্য কবেই-বা ছিল! তবে যদি আমার এই অভ্যেস জানার পরও তুমি আমাকে শরাবে আপ্যায়নের সেই দাওয়াতটি দাও, যেখানে শরাব-পান তো দূরস্থ, শরাব-স্পর্শও গর্হিত পাপ, তবে আমি বলব, তোমার মতন বেআক্কেলের দাওয়াত দ্বিতীয় বার কবুল করে আমি আমার মনের উপর করা অবিচারের পুনরাবৃত্তি এ জীবনে আর করতে চাই না। সতেরো। সমুদ্রের তীরে খালিপায়ে তোমার হাত ধরে হাঁটছিলাম। আমার ঠোঁটের উপরে বামপাশে ফুলে গেছে। কী করে ফুলল, সেটা নিয়ে লক্ষ্মীমন্ত ঝগড়া করছি আমরা। আমি: তোমার জন্যে এরকম হইসে। তুমি: আরে না না, কিছু একটা কামড় দিসে মনে হয়! হা হা হা… আমি: তুমি দিসো; আমার স্কিন সেনসেটিভ, একটু বেশিক্ষণ চুমু দিলেই হাঁসের মতো ঠোঁট ফুলে যায়। তুমি: হা হা হা…ভালোই তো দেখা যাচ্ছে! কিন্তু আমি কিছু করি নাই। মনে হয়, তেলাপোকা কামড় দিসে। আমি: তুমি তেলাপোকা! ঠান্ডা বাতাসের হু হু শব্দ হচ্ছে…আবারও বৃষ্টি নামবে… চোখ খুলে দেখি, এত ঠান্ডা ঠান্ডা ভোর কেন? ওহ্ আচ্ছা, রাতে তো বৃষ্টি হয়েছিল। মোবাইলের স্ক্রিনে দেখি, আবারও বৃষ্টি হবে ঘণ্টাখানেক পর। কিন্তু ওটা তো স্বপ্নে হবার কথা ছিল! এই ব্যাপারটা সত্যিই অদ্ভুত!! ভাবনা: নয়শো একত্রিশ ……………………………………………………… এক। কার জন্য পথ চেয়ে থাকি, আর কে যে আসে! আহা, এ হৃদয়ের শত আয়োজন ভোগ করে যায় উটকো লোকে! দুই। তোমরা দেখো ট্রু লাভ, আমি দেখি ট্রানজিট পয়েন্ট। তিন। প্রত্যেকেই নিজের সন্তান ও সমস্যাকে বড়ো করে দেখে ও দেখায়। চার। গরিব লোকের কাছ থেকে টাকা এবং ব্যস্ত লোকের কাছ থেকে সময়...বিনা কারণে কখনোই চেয়ো না; চাইলেও পাবে না। পাঁচ। ধর্মচর্চার চেয়ে মর্মচর্চা জরুরি। ছয়। ধরো, তুমি বেকার; এজন্য বাবার ঘাড়ে বসে খাচ্ছ। সেজন্য কি তুমি তাদের সব কিছু মেনে নিতে বাধ্য? তাদের মনমতো না চললে কিংবা যখন-তখন তাদের কথামতো কাজ করে না দিলে তারা যদি তোমাকে চড় মেরে বসে কিংবা গায়ে হাত তোলে, সেটা কি যৌক্তিক হবে? আই মিন, বাবা-মা হলেই কি আমরা এই অধিকারটা পেয়ে যাই? যদিও অবাধ্য-হওয়া কাজের বিষয়গুলো খুব গুরুতর না হয়...ধরো, খুব তুচ্ছ একটা বিষয় না করায় তুমি তোমার সন্তানের গায়ে হাত তুললে...? একটা বয়স পর শুধু ছেলেই নয়, মেয়েরাও বাবা-মা'য়ের চোখের বিষ হয়ে যায়; অর্থাৎ পৃথিবীতে আপনার জন্য আপনি নিজে ছাড়া আর কেউই আপন নয়। বাবা-মা'য়ের প্রতি সন্তানের কিংবা সন্তানের প্রতি বাবা-মা'য়ের যে স্নেহ-ভালোবাসা, এটাও আপেক্ষিক। সব কিছু একসময় ভেঙে পড়ে। সব কিছুরই শেষ আছে। মানুষ সহ্য করে মানুষ বুঝে। সন্তানের ভালো চেয়ে শাসন-বারণ করা এক জিনিস, আর সন্তানকে উঠতে-বসতে হেয় প্রতিপন্ন করা আরেক জিনিস। এগুলো কখনোই ভালোবাসার নিদর্শন হতে পারে না। আর হ্যাঁ, সব কিছুরই একটা ফিডব্যাক আছে। কারণ আমরা তো সবসময় পরিণতি বিবেচনা করে কাজ করি না। আজ গিলে ফেললাম বলে আগামীকাল জবাব দিতে পারব না, সব ক্ষেত্রে এমনটা না-ও হতে পারে। সব কিছুরই একটা সীমা আছে। মানুষ সবসময়ই ছোটো হয়ে থাকে না। মাঝে মাঝে অনেক কিছু মনে পড়ে হঠাৎ হঠাৎ। তখন নিজের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বলে ফেলি অনেক কিছু। মানুষ কখনও নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়, অপমান ভোলে না; হয়তো সাময়িকভাবে পরিস্থিতি মেনে নেয়, চুপ করে সহ্য করে যায়...এই আর কি। ভাবে, চুপ থেকে দেখিই না কী হয়! আমি এক তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কখনও কোনও কথা শোনাইনি। কিন্তু তোমাকেও আমার কথা শোনানো উচিত নয়, কিন্তু শোনাই, কারণ ভেতরে ভেতরে এগুলো জমে গেলে আমি হয়তো তোমার সাথে দূরত্ব তৈরি করে ফেলতাম কিংবা যা-ই হোক, একটা নেতিবাচক কিছু কাজ করলেও করতে পারত তোমার প্রতি। সেটা আমি হতে দিতে চাইনি, তাই যখন যা মনে এসেছে বলে দিয়েছি; ওটা ওখানেই শেষ হয়ে গেছে, আর কিছুই জমা থাকেনি এক ভালোবাসা বাদে। সাত। এমন সম্ভাবনা আছে, হঠাৎ কোনোদিন হারিয়েও যেতে পারি। ধরো, যদি হুটহাট কোনোদিন কাউকে কিছু না বলে সবার থেকে অনেক দূরে কোথাও হারিয়ে যাই...? তারপর আর যদি ফিরে না আসি? ইচ্ছে করেই হারিয়ে থাকি...ভুলে থাকি...আমার একটা পরিবার ছিল, বলার মতো অনেক কিছু ছিল আমারও... তারপর হুট করে এই আমি একা। আমার জন্য কোথাও কেউ অপেক্ষা করে নেই। সবাই একদিন এমন একা হয়ে যায়। আট। ভালো নেই আমি। মনের আকাশে মেঘ করেছে, বৃষ্টি নামবে এখুনি... যদি ধরো আলতো করে হাত, নামিয়ে নেব এক জোছনারাত। মেঘ করেছে ভীষণ কালো, আজ থাকুক, কালকে বোলো... থাকুক আজ জোছনারাত, মনের ভেতর গাঢ় আঘাত। নয়। Laziness is expensive. If you can afford it, enjoy it. দশ। কোনও একটা কাজ করার সময় দেখে নেবেন, এতে আপনি আনন্দ পাচ্ছেন কি না এবং এতে কারও কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না। যদি প্রথমটার উত্তর 'ইয়েস' হয় এবং দ্বিতীয়টার উত্তর 'নো' হয়, তবে আমি বলব, 'ডু ইট!' এগারো। তোমার কথাটা আমি বুঝতে পারছি, মোটা মেয়েদের মন ভালো। প্লিজ, আমার কথাটাও একটু বুঝতে চেষ্টা করো, মোটা মেয়েদের শরীরও মোটা। বারো। কেউ প্রেম করতে গিয়ে ছ্যাঁকা খায়, কেউবা রান্না করতে গিয়ে ছ্যাঁকা খায়। তেরো। আমি পাগল? বলো যা খুশি! নিজের জীবন গুছিয়ে নেবার পরে অন্যকে পাগল বলতে অসুবিধা তো নেই! চৌদ্দ। ঝড় থামেনি, কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমার এই নীরবতার নাম অভ্যস্ততা। পনেরো। Most of the people want a trustworthy friend with a good heart and a loose character. ষোলো। আমি জানি, বিন্দুমাত্রও অভিযোগ না করে তৃপ্তির সাথে চুপচাপ খেয়ে নেন, এমন স্বামী অনেক অনেক আছেন। আমার বাবা অসাধারণ একজন শেফ; অসুস্থ হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত প্রায় সব রান্নাই তিনি পারতেন। বাবাকে আজ পর্যন্ত কখনোই কারও রান্না নিয়ে অভিযোগ দূরে থাক, সামান্যতম নেতিবাচক কথা বলতেও দেখিনি। রান্নায় লবণ না হলেও অসুবিধে নেই, বাবা ঠিকই কৃতজ্ঞতাভরে খেয়ে নেবেন। বাবা বরাবরই একজন তুষ্ট ও তৃপ্ত মানুষ, অতএব একজন সুখী মানুষ। মা প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন, তাই রান্না করা ও বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ বাবাকেই করতে দেখেছি সেই ছোটোবেলা থেকে। অভিযোগহীন চোখে, হাসিমুখে বাবা তা করে গেছেন বছরের পর বছর। এতটা অভিযোগহীন ও ধৈর্যশীল মানুষ এ জীবনে বেশি দেখিনি। মানুষের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করাটা বাবার সহজাত---হোক তিনি আমার মা কিংবা অন্য কেউ। তরকারিতে যা-ই কম-বেশি হোক না কেন, বাবাকে কখনও কোনও কিছু নিয়েই অভিযোগ করতে দেখিনি; হাসিমুখে বিনা বাক্যব্যয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে তিনি তা খেয়ে নেন। হ্যাঁ, আমি জানি, আমার বাবার মতো অনেকেই আছেন। তাঁদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সতেরো। একটা ছেলে নিজের হাতের রান্না খাওয়ার সময় যতটা তৃপ্তি নিয়ে খায় রান্নায় টুকটাক ভুল হওয়া সত্ত্বেও, সেই একই ভুল যখন তার স্ত্রী এক দিনও করে, তখন সে বেচারিকে স্বামীর কাছ থেকে ততোধিক বকাঝকা শুনতে হয়। আঠারো। বেশিরভাগ মানুষই, প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবার পর, রেস্টুরেন্টে খেতে বসে যতটা দামি খাবার নষ্ট করে, তার দশ ভাগের এক ভাগ খাবারও ওরা ছোটোবেলায় খুব করে চেয়েও কখনও খেতে পায়নি। অবশ্য খেতে চাইবে কী, ওসব খাবার যে আছে, তা-ই হয়তো ওরা ছোটোবেলায় জানতেই পারেনি। উনিশ। আমি বিশ্বাস করি, কিছু পেতে চাইলে কিছু দিতে হয়। তাই আমি মাঝে মাঝেই এমন কিছু মানুষকে এমন কিছু দিই, যা পাবার প্রত্যাশাই তার মধ্যে ছিল না। এতে করে যে লাভটা হয়, তা হলো, আমিও কীভাবে কীভাবে যেন কখনও কখনও এমন কিছু পেয়ে যাই, যতটুকু পাবার প্রত্যাশাই আমার মধ্যে ছিল না। আরও সহজ করে বুঝিয়ে বলছি: সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে কিছু পেতে চাইলে মানুষকে কিছু দিতে হয়। বিশ। The best revenge is to keep yourself alive. একুশ। আপনার প্রতি ঈর্ষান্বিত হবে তিন রকমের ব্যক্তি: এক, আপনার যা আছে, তা যে পেতে চায়, কিন্তু চেষ্টা করেও কিংবা না করেই তা সে পাচ্ছে না। দুই, আপনার যা আছে, তা যে পেতে চায় না, কিন্তু একইসাথে আপনাকে সে পছন্দ করে না। তিন, পেছনে লাগা ও ঈর্ষা করাই যার প্রিয় স্বভাব। বাইশ। সেলডনের কলমে জন্মেছিল পল মার্টিন নামের এক নিষিদ্ধ সুন্দর। এই বয়স্ক বৃক্ষ ভোরের বাতাসে গল্প লেখে কাজল দিয়ে। ওদিকে স্যার হেনরির ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয় অনিন্দ্যসুন্দরী আয়েশার, যার গন্তব্য লিও। নীল নারী লারা ক্যামরনের আজ সুখের দিন, জোড়া কৃষ্ণচূড়া হাতে। পলের বাড়ি আজ অযাচিত সুগন্ধে ভরে আছে, অথচ আয়েশার ঠোঁটে আবদ্ধ এক সমুদ্রসম কলঙ্ক। লিও ফিরে গেল গোলাভরা সুখ নিয়ে। সে এক নষ্ট-ভ্রষ্ট-বিকট অসুন্দর! পুড়ে গেল কলি, কৃষ্ণচূড়া সেদিন ভুল ছিল! তেইশ। মেঘের বাড়ি রোদ গিয়েছিল নেমতন্ন খেতে! গিয়ে দেখে, মেঘের ঘরে চাঁদ রয়েছে কলঙ্ক মেখে গায়ে। রোদের হাতে কৃষ্ণচূড়া সূর্যচিতায় জ্বলে।