তুমি মরে গেলে, বিকেলবেলায় গিয়ে, ওই মোড়ে জামাল ভাইয়ের দোকানে চা খেয়ে যে শান্তিটা তুমি পাও, তা কি আর পাবে? দুপুরবেলায় নদীর পাড়ে যে হাঁটো তোমার বন্ধু বা বান্ধবীর হাত ধরে পাশাপাশি, হাঁটার সেই আনন্দটা তুমি কি আর পাবে?! পাবে না। এইসব হচ্ছে চমৎকার কিছু পিছুটান, যা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। রাতের বেলায় তোমার মা যখন ভাত রেডি করে তোমাকে ডাকে, 'বাবা, খেতে আয়।', তোমার মায়ের হাতে রান্না সে সামান্য ডাল-ভাত'টুকু খেয়ে তোমার মধ্যে যে তৃপ্তিটা কাজ করে, তা কি আর তুমি পাবে? এরই নাম পিছুটান। আমি যখন ভাবি, 'বরং চলে যাই, থেকে গিয়ে কীই-বা হবে!', তখন আমার হঠাৎ মনে হয়, 'আরে বাবা, বেঁচে থাকলে একদিন একটা ভালো লেখা হয়তো লিখতে পারব।' এমন একটা ভালো লেখা, যে লেখাটা হয়তোবা কোনও লেখার পর্যায়েই পড়ে না! কিন্তু একজন সুশান্ত পাল লেখাটা লেখার সময় তার মনে হচ্ছিল, সে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর লেখাটা লিখছে। সে যখন ওটা ফেইসবুকে পাবলিশ করছে, তখন তার তা দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর লেখাটা হচ্ছে এটা! সে যখন একটা কবিতা লিখছে, যে কবিতাটা অন্তঃসারশূন্য একটা ঘোড়ার ডিম ছাড়া আর কিছুই হয়নি, হয়তোবা সেই কবিতাটাই তাকে বাঁচিয়ে রাখছে। আমি প্রায়ই ভাবি, আরও এক-শো কবিতা লেখা পর একটা হলেও হয়তো কবিতা পদবাচ্য হবে, এবং সেই কবিতাটাকে মানুষ কবিতা বলবে। সেই কবিতাটা আমার এখনও লেখা হয়নি, কিন্তু আমি বেঁচে থাকলে কখনও-না-কখনও সেই কবিতাটা লেখা হয়ে যাবে। হ্যাঁ, আমি সেই কবিতার জন্যই বেঁচে আছি। আমি সেই, ছোট্ট লেখাটার জন্য বেঁচে আছি, যে লেখাটা পড়ার পর অনেক মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখবে। আমি মারা গেলে সেই লেখাটা আর কারও হাত দিয়ে বের হবে না। একজন সুশান্ত পাল চলে গেলে আর কারও হাত দিয়ে তা কখনোই বের হবে না, সেই লোভেই আমি বেঁচে আছি। সেই পিছুটানে আমি বেঁচে আছি। আপনার লাইফের পিছুটানগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সেই পিছুটানগুলো বের করার পর আপনারও বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করবে। যার লাইফে যত বেশি পিছুটান, সেটা হতে পারে আপনার কোনও একটা ভালোলাগার কাজ কিংবা আপনার প্রিয় মানুষটার হাসি কিংবা আপনার কোনও ব্যক্তিগত সুখ, এমনকী আপনার কোনও ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তি---যেটার জন্য আপনি ছুটছেন! হ্যাঁ, সেটার জন্য হলেও বেঁচে থাকুন। এই ব্যাপারগুলো একটা মানুষ তার লাইফে যত বেশি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারে, সে মানুষটা তত বেশি বেঁচে থাকার অর্থ আবিষ্কার করতে পারে। আমি এইভাবে ভাবি।