কাকডাকা ভোরে পাখির গুঞ্জনকেও ছাপিয়ে যায় আমার চাপাকান্না। চোখ মুছতে মুছতে পুকুরপাড়ে যাই, অশ্রুফোঁটা পুকুরে ফেলতে গিয়ে সদ্যফোটা পানাফুলে নিজের অস্তিত্ব টের পাই।
কচুরিপানার দল আমায় কল্পনার দেশে নিয়ে যায়। অনেক পরে, সম্বিত ফিরলে, নিজেরই মাথায় টোকা মেরে ধীরপায়ে বাড়ি ফিরে যাই।
বাড়িভর্তি আখের রসের মিষ্টি ঘ্রাণ।
সব ছাপিয়ে তবুও লুকোনো কান্না ফিরে ফিরে আসে, এসে বুকে চাপ দেয়; মনে হয় যেন মরেই যাচ্ছি!
আবারও চোখের জল আড়াল করে হেঁসেলপাড়ে যাই; দেখি, হেঁসেলে কেবল আগুন আর আগুন। খুব ইচ্ছে করে, নিজের চোখের জল দিয়ে সব আগুন আমি নিভিয়ে দিই। আগুনের চেয়ে চোখের জলের ক্ষমতা তো অনেক বড়ো!
শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজতে গুঁজতে লালির ভুসি মাখতে বসি। একমুঠো লবণ আর পানি দিয়ে ভুসি মাখতে মাখতে লালির দিকে চোখ পড়ে। সে বেচারা খড় চিবুচ্ছে আর দু-চোখ দিয়ে তারও টপটপ করে জল গড়াচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর নাসিমা খালাও হেঁসেলপাড়ে এলেন। 'তোর বিয়া হইয়া যাইব আইজ!" এটা বলে আমার কপাল আর গাল ছুঁয়ে হুট করে বাচ্চাদের মতন করে কাঁদতে লাগলেন। আমি শুনলাম, কিছু বললাম না। খালার চোখের জল মুছেও দিলাম না।
মুছতে যাব কেন? চোখের জলের মতন অত আপন, শান্তিময় আর পরম বিশ্বস্ত জিনিসকে মুছে লুকিয়ে ফেলতে আছে?