আমি চেয়েছিলাম তিন-শো টাকার সাদামাটা তাঁত-পরা প্রেমিকা হতে, চেয়েছিলাম, আমাদের প্রেম যেন আমার সাদামাটা শাড়ির চেয়েও আরও বেশি সাদামাটা হয়। বছরের পর বছর দেখা না করেও সেই সত্তরের দশকের প্রেমিকাদের মতন হতে চেয়েছিলাম, যারা জানত অপেক্ষা করতে...
জীবনানন্দের "মাল্যবান" কিংবা অরুন্ধতী রায়ের "আজাদী"র মতো অত উঁচুদরের বই আমি কখনোই হতে চাইনি; শুধু চেয়েছিলাম ডেল কার্নেগির রচনাসমগ্রের মতন সাধারণ বই হতে, যে বইয়ের বাংলা অনুবাদ আমাদের দেশের প্রায় প্রত্যেকটা বাড়িতে সহজেই পাওয়া যায়।
র্যাডিসনের সেই সাড়ে সাত-শো টাকা দামের টার্কিশ কফির চেয়ে বরং কনডেন্সড-মিল্ক দিয়ে বানানো টংদোকানের পাঁচটাকার কড়া লিকারের দুধচায়ের মতন জীবন পেলেই বড্ড বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম আমি।
আমি কখনোই ভালোবাসি বলে বলে মুখে-ফেনা-তুলে-ফেলা মেয়েটি হতে চাইনি, চেয়েছিলাম রয়ে সয়ে মনের কথা বলতে পারা একজন তরুণী হতে।
অথচ...
তুমি আমাকে তাঁতগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে কাঞ্জিভরম পরতে বাধ্য করলে। সেই ভারী শাড়িগুলো হররোজ সামলাতে সামলাতে আমার মনটাও যে কখন ভারী হয়ে গিয়েছিল, তুমি টেরই পেতে দাওনি।
তুমি আমার মনকে সত্তরের দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর অস্থির মেয়েগুলোর মতন কথায় কথায় সম্পর্ক ভেঙে-দেওয়া নারীর মনে পরিণত করেছ একটানে!
আমার মন থেকে সুনীলের সোজাসাপটা ঢঙে লেখা কবিতা মুছতে তুমি আমারই কানের কাছে ছুটির দিনগুলোতে বোদলেয়ার আওড়াতে শুরু করলে, আমার কবিতার জগতে পোশাকি সমৃদ্ধিটা তুমি এনেই ছাড়লে!
আমাদের টি-পটে এক ব্ল্যাককফি ছাড়া আর কিছুই জায়গা করতে পারল না, ভুলে গেলাম, আসরের নামাজের পর চা খাওয়ার আমার পুরোনো অভ্যাসের কথা। তুমি আমাকে দিয়ে সকাল-বিকেল ভালোবাসি বলাতে বলাতে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেলে যে, এখন এই ভালোবাসি'টা লিখতে পর্যন্ত মুখে থুতু আসছে।
হ্যাঁ, এটা ঠিক, তুমি আমাকে মেমসাহেব বানাতে পেরেছ, হতে পেরেছ আমার যোগ্য সাহেবও।
কিন্তু আমি চেয়েছিলাম, আমার কিছু কিছু জিনিস বদলে গেলেও মূল ভিতটা যেন না বদলায়; চেয়েছিলাম, তুমিও যেন তোমার স্বকীয়তা নিয়ে একজন সাদামাটা মানুষই হয়ে ওঠো।
আমি চেয়েছিলাম আমি আর তুমি মিলে সুখী জীবন রচনা করতে, অথচ তুমি আমাকে তোমার পছন্দসই একটা পুতুল বানিয়ে সুতো দিয়ে নাচাতে থাকলে, আর বলতে থাকলে..."এই কাঠের পুতুলটা আমার তৈরি, ও শুধু তা-ই ভালোবাসবে, যা আমি ওকে ভালোবাসতে দেবো।"