প্রিয় অরণ্য, যদি সন্ধে ঘনালে তুমি ক্লান্তশরীরে ধীরে পা ফেলে ফেলে আমার ঘরের চৌকাঠে দাঁড়াতে এসে, আর আমি ভীষণ ব্যস্ত হয়ে তোমার সমস্ত ক্লান্তি মুছে নিতাম আমার আঁচলভরে, কেমন হতো এমন হলে? বিষাদের চাদরগায়ে নির্ঘুম রাতের দুঃসহ প্রহরগুলিতে অস্থিরতায়, অবসাদে পাশফিরেই যদি তোমাকে পাওয়া যেত, যদি টবেফোটা গোলাপের মতো তোমাকে ছুঁয়ে ফেলা যেত বিনাকুণ্ঠায়, কেমন হতো এমন হলে? অরণ্য, চাতকপাখি দেখেছ কখনও? মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি বুঝি অন্যজন্মে ছিলাম চাতকপাখি। সেই জন্মের দায় মেটাতে বুঝি আরও একটা তৃষার্ত জন্ম পেলাম! যেন কয়েক যুগের তৃষ্ণা মেটাতে চাতকপাখির মতোই তোমায় এখানে খুঁজি, ওখানে খুঁজি, কেবলই হাতড়ে বেড়াই… মনে হতে থাকে, তোমায় দেখতে না পেলে এখুনিই বুঝি মরে যাব ঠায়! জানো অরণ্য, আজকাল সব কিছুতেই তোমাকে দেখি! কফির কাপ থেকে পালিয়ে-যাওয়া ধোঁয়ায় দেখি, জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশ ছুঁলে তোমায় দেখি, বইয়ের পাতায়, লেখার খাতায় তুমি থেকে যাচ্ছ প্রতিনিয়ত… এই দুচোখে তুমি সারাক্ষণই লটকে আছ, লেপটে আছ… এপাশে তুমি, ওপাশে তুমি। ভেতরে তুমি, বাইরেও তুমি। আমার যত বৃত্ত আছে, যেখানে তুমি আসোনি আজও, তার সবটা জুড়েও থাকছ এক তুমিই… তোমার তীব্র অস্তিত্ব আমাকে গ্রাস করে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তেই! অরণ্য, থই থই জলে বেড়াল পড়ে ডুবতে দেখেছ কখনও? কখনও দেখেছ, ডুবে যেতে যেতে সে কেমন করে সামান্য খড়টুকুও আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় শেষঅবধি? নিজেকে ইদানীং ওই বেড়ালটার মতোই মনে হয় খুউব! আমি ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি, অরণ্য! আমাকে একটু ধরো, বেঁচে থাকতে দাও… এই জন্মেই, আমি একবার উঠে দাঁড়াতে চাই… আমাকে ছেড়ে তুমি যেয়ো না! আমায় জীবনদানের পুণ্যফলে তোমায় নাহয় পরজন্মের ছয়টাজীবন দিয়েই দেবো! এই জন্মে, আমার কখনও বাঁচা হয়নি, অরণ্য! আমাকে একটু বাঁচাও…