জনা কয়েক ক্রুদ্ধ অতি উৎসাহী তরুণ কবিকে অপমানিত, পদদলিত করতে উদ্যত। কবি বিস্ময়ে, একটু ভয়ে শুধালেন: কেন এ ক্রোধ? কী আমার অপরাধ? ওরা কেউ উত্তর দিল না; ওদের সবারই বোধ কাটা, বিবেক ছাঁটা। আবছা আঁধারে কি আলোয় কানে আসে ওদের পায়ের অসীম আস্পর্ধায় দাপুটে আওয়াজ! ওদের চোখে ঈর্ষার আগুন, মুখে সময়োচিত স্লোগান-সংক্ষুব্ধ রঙিন মুখোশ। ওরা হৃদয় আর বিবেক বর্গা দিয়ে মাঠে নেমেছে, আজ কেউ ওদের ঘরে ফেরাতে পারবে না। ধূসর রাস্তা নীরবে হেঁটে গেছে দিঘির পাড় দিয়ে, সেখানে শুয়ে বসে ঝলমলে ভাবনাদেয়াল ক্রমেই পথ হারায়, উর্বর মাঠে অতি অকস্মাৎ গজিয়ে ওঠে শব্দচাষির বধ্যভূমি। অন্তত আরও চব্বিশ নওজোয়ান ছুরি হাতে প্রস্তুত! ওদের ঘিরে হাজারো মানুষ---অথর্ব, তবে সোৎসাহে আগুয়ান। কেউ এসেছে বহুদূরের আগাছার ক্ষেতচাষে ইস্তফা দিয়ে, কেউ এসেছে আগ বাড়িয়ে বেকারত্বের দায় মেটাতে, কেউ এসেছে আড্ডাঘরের দুঃসহ ঝাঁপ ফেলে, কেউ এসেছে ছবি-তোলা মুঠোফোনের মেমোরি খালি করে, কেউ এসেছে চোখওয়ালা অন্ধের হাত ধরে ধরে, খোঁড়া মা তাঁর অসুস্থ শিশুটিকেও বাড়িতে রেখে আসেননি, যুবক এনেছে তার সকল নির্লজ্জ যুবতীকে, (ওরা ডাকলেই আসে!) ওদিকে বুড়োর পাঁজরেও দেখি ভূতুড়ে দম! সবাই এসেছে একজন কবির হত্যাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে কিংবা অজানা কোনও বৃহত্তর কল্যাণে। মানুষ মাত্রই খুন করতে ও খুন দেখতে বড়ো ভালোবাসে। ওরা সবাই মিলে সবচাইতে পুরু গাছটির সাথে বাঁধল কবিকে। যে কাজে দুজনই বেশি, সে কাজে দু-শো জোড়া হাত এগিয়ে এল। বরাবরই, বৈধ অন্যায়ে কপটরা একতাবদ্ধ। কবি নীরবে দেখলেন, ওরা চিৎকার করছে, দেরি করছ কেন হে? দাঁত উপড়ে ফেলো! এরপর নখ... মাটিতে হাত বিছিয়ে আঙুলগুলোয় একটু নেচে নিলে মন্দ হয় না, কী বলো! পরের পলক পড়ার আগেই ওরা কবির কনিষ্ঠার উপরিভাগ কেটে নিল, অনামিকা থেঁৎলে দিল, মধ্যমায় সাত-সাতটি তাজা পিন ফুটিয়ে রাখল---অন্যের আঙুলে পিন ফুটালে দেখতে বেশ লাগে, তাই... তর্জনী হাতুড়িপেটা করল ইচ্ছেমতো! বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যথায় কুঁকড়ে আছে---সেখানে ওরা ছুরির ফলায় কীসব বিজয়চিহ্ন এঁকে রেখেছে। আজকের এই মহতী আয়োজনে সবাই নেতা--- বিপন্ন মানুষকে আহত করার আয়োজনে কোনও কর্মী থাকে না। কবির ঠোঁটে তবু হাসির রেখা... একজন নেতাকে কবি দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, আঙুল কাটবে তো কেটেই নাও না! এত রক্ত জমাচ্ছ কেন এমন করে? সবটুকু রক্ত একবারেই ঝরিয়ে দাও না, ভায়া! আর শোনো...আমার হাতই ভয়ংকর, গলা তো নয়--- গলার শেকলটা খুলে দাও, একটু নিঃশ্বাস নেবো! সহস্র দর্শকের ফুর্তিতে নেতার বিবেক রবাহূত সকলের মনোরঞ্জনের পবিত্র স্বার্থে বধির রইল। সমবেত জনতার মধ্য থেকে একজন ব্যাংকার বললেন একজন বাদামওয়ালাকে, হিসেব করে দেখো তো ভায়া দশটাকার সব ঠোঙাতেই একই বাদাম ধরে কি না! একজন মসলার কারবারি দারচিনি মার্কা বিড়ি ধরিয়ে বললেন, দেখো দেখি কাণ্ড, কলিযুগে সব শালাই ভণ্ড! একজন ফেইসবুক সেলিব্রিটি এই সুযোগে কিছু ফলোয়ার বাড়িয়ে নিলেন এই বলে--- এমন বেজন্মা শুয়োরের বাচ্চাও নাকি কবিতা লেখে! মারো শালাকে! ছাপোষা একজন স্থূলবুদ্ধির কেরানি বললেন একজন কৌতূহলী মূর্খকে, বুঝলে ভায়া, এইজন্যই তো কবিতা লিখি না! নইলে আমিও তো... একজন ভিখিরি কিছু পয়সা খসিয়ে কিনে নেয় শিল্পপতিকে, একজন শয়তান হঠাৎ সন্ত হয়ে ধর্মের বুলি ছাড়ে, একজন ঘুসখোর জাতীয় অধঃপতনের চিন্তায় আকুল হয়ে পড়ে, একজন ফেইসবুক নারীবাদী তাঁর এক অনুসরণকারিণীকে টেক্সট করে বসলেন, বলছিলাম কী, আপনি যদি আজকের রাতটা... একজন নপুংসক সাত সন্তানের পিতাকে বললেন, মাত্র সাত? আমি হলে তো... এক মেয়ে আরেক মেয়েকে বলল, জানিস, ব্যাটার সব কবিতার নায়িকাই তো আমি! কখনও পাত্তা দিতাম না, তবুও...আচ্ছা, লিপস্টিকটা লেপটে গেছে কি না, একটু দেখবি? একজন নিয়োগকর্তা একজন বেকারকে পরামর্শ দেন, চাকরির জন্য এমন ফ্যা ফ্যা করে না ঘুরে স্বাধীন ব্যবসায় নামতে পারো না? একজন মানুষ আর একজন মানুষকে বলে, বুঝলেন দাদা, আজকাল মানুষগুলি সব অমানুষ হয়ে যাচ্ছে! তবু...একজন অকপট, অতএব নিঃসঙ্গ, অসহায়, অনন্দিত মানুষ কোত্থেকে যেন গলা ফাটাল, হায়, এ বেচারা তো ভুল বিচারের বলি হচ্ছে গো...! করছ কী তোমরা? ভুল বুঝছ, ভুল করছ! থামো! দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই থামো! কেউ শুনল না। বুঝলও না বোধ হয়। কপটের সমাজে অকপটের ভাষা দুর্বোধ্যই হয়। গোধূলি রক্তে ভাসে, পশ্চিমে চাঁদোয়ার নিমন্ত্রণ, দক্ষিণে মেঘের দল ব্যঙ্গে হাসে, সন্ধে দেখেও ডাকে না শেয়াল মানুষের ভয়ে, শুকনো পাতার মতন ঠুনকো জনরোষ দমকা হাওয়ায় ওড়ে, পরশু শতকের থুত্থুড়ে বুড়ির চাইতেও পুরনো অশ্বত্থের ডালে ডালে কয়েক-শো অচেনা পাখির অবিশ্রান্ত কিচিরমিচির শোনা যায়। কবি তাঁর আঙুলের উপড়ে-নেওয়া নখের সাজানো সারি থেকে চোখ তুলে তাকালেন কৃতঘ্ন আর ভণ্ডদের ঐক্যবদ্ধ ঘন মিছিলে, প্রতারক স্মৃতিতে ভর করে কোনওমতে ভাবলেন, এদের জন্যও কলম ধরেছিলাম! দুঃখিনী বর্ণের মায়া থেকে সমাসন্ন রক্তের ডাক কবিকে আলতো ছোঁয়ায় রেখে দিল নিরাপদ শৈশবের কোলে, ছেলেবেলার যত বোকা বোকা বিশ্বাস--- এই যেমন, মানুষকে ভালোবাসতে হয়, মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ, আরও কী কী যেন... ভেসে উঠল একে একে ক্লান্তদিনের শেষে নিরুদ্বিগ্ন নিঃশঙ্ক নির্ভার আলোআঁধারিতে। তিনি দেখলেন মানবতার অবসানে ঘনায়মান আঁধারজুড়ে আগুনে-পোকার মহোৎসব---যদিও অকেজো খুব, আগের মতোই! হালের হাওয়ায় অসত্যের পাল নৌকো ছোটায় সমুদ্র যেদিকে খেলে। হোক তা ভুল হিসেবের মাশুল, তবুও ছোটে আর ছোটায়! সবচাইতে সাহসী নাবিকটিও আজ ঠিকপথে জাহাজ ঘোরায় না। কবি কাঁদতে গিয়েও জল নামালেন না, পুরনো অরণ্যের অবারিত প্রান্তরের প্রতিটি অনুরত গাছও আজ বিশ্বাসঘাতক! কবির বিশ্বস্ত নিবিষ্ট ‘কৃতজ্ঞ’ পাঠকটিই সবার আগে এগিয়ে এসে সময়ের ঘণ্টায় পর পর সাত বার ঢং ঢং ধ্বনি তুললেন। সাথে সাথেই ছয় রিপুর গুণিতকে ছয়-শো কি ছয়-সহস্র বোবা কালা অন্ধ অথর্ব, অথচ দেশোদ্ধারে উৎসাহী তরুণ উঁচিয়ে ধরল ক্ষুদ্র ধারালো অসংখ্য কৃপাণ, কারওবা উদ্ধত আঙুল ট্রিগারে উদ্যত। কবির কবিতার যত পুরনো পাঠক, আজ হন্তারক হয়ে নৃত্যোৎসবে মাতে। বুঝে না বুঝে হিতৈষীর দল সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল, ধরো কবিকে! হত্যা করো! পুড়িয়ে মারো! কেন, কেউ জানে না। জনপ্রিয় অন্যায় যে ন্যায়ের চাইতে মোহনীয়, তাই তো বেশিই টানে! কবির ঠোঁটদুটো কেঁপে উঠল। তিনি অস্ফুট সংশয়ে উচ্চারণ করলেন, মানবতা বেঁচে থাকুক! মানুষের মনের মুক্তি আসুক! শপথ করে বলছি, অমরত্ব চাই না, কেবল বাঁচতে চাই! একটু বাঁচতে দেবে? কবি সে জনসমুদ্রের দিকে চেয়ে খুঁজলেন অন্তত একটি কৃতজ্ঞ মানুষ, যাকে তাঁর কবিতা সময়ে-অসময়ে সঙ্গ দিয়েছে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতন; করুণা নয়, একটু সহানুভূতি আর দু-একটি দয়ার্দ্র কথার আশায়। কবি কাউকেই পেলেন না। এখন কবির একমাত্র বন্ধু কবি নিজেই। কবি আবারও সকলের জন্য মনে মনে প্রার্থনা করলেন, জীবনের সুর অনন্তকাল ধরে বাজুক! মিলিত সকলের ও প্রত্যেকের নিজস্ব জীবন সুন্দর হোক! সবারই একটা করে শুভবুদ্ধির জীবন থাকুক! ওরা এক জন এক জন করে কবির দিকে এগিয়ে এল। প্রথম জন কবিকে সজোরে এক লাথিতে মাটিতে ফেলে দিল; কবি উঠে দাঁড়ালেন---যেমন সবাই ওঠে আর কি! কবির শান্ত চোখে নেই-অনুযোগ হাসির ছটা। দ্বিতীয় জন এসে নিপুণ ট্রিগারে বুকের মাঝ বরাবর ফুটো করে দিল। কবি তবু অনুভূতিশূন্যের মতন হেসে উঠলেন হা হা শব্দে! তৃতীয় জনের অব্যর্থ ছোরা তাঁর কণ্ঠ এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল। কবি নিঃসংশয়ে বললেন, আমি বেঁচে থাকবই! ...মিথ্যে কথা, কবির হৃদয়ও ভুল বলে। চতুর্থ জনের লাঠির ঘায়ে চৌচির হয়ে ফেটে গেল তাঁর কপাল। (কবির মনে পড়ল, ছোটোবেলায় মা বলতেন, তোমরা দেখো, আমার ছেলের রাজকপাল হবে!) পঞ্চম জন কবির চোয়ালে একলাফে উঠে সবকটা দাঁত উপড়ে ফেলল। একজন নিরীহ মানুষও কত সহজেই অন্যের দাঁত উপড়ে ফেলতে পারে---‘সময়ের ন্যায্য দাবিতে’! ষষ্ঠ জন কবির ডানহাতের প্রতিটি আঙুল এক এক করে কেটে নিল যত দ্রুত সম্ভব! কবি শেষ বারের মতো মনে করার চেষ্টা করলেন, ওই আঙুলগুলি সেই কবিতাটি উপহার দিয়েছিল, যেটি ষষ্ঠ জনকে বাঁচতে শিখিয়েছে বহু বহু বার! সপ্তম জন এসে মনখারাপ করে ফিরে গেল। “ধুউস্ শাআআলা! খতম? কিচ্ছু বাকি নেই!” খুনের উৎসবে অংশ নিতে না পারার কষ্ট অনেক! আর যায় কোথায়! এবার কবি দুলতে দুলতে পড়তে লাগলেন মাটিতে! জনতার মধ্যে হইহুল্লোড় পড়ে গেল! চারিদিকে কী এক বিজয়ের উৎসব যেন! ওরা ছুটে এল কবির রক্তবন্যায় হোলি খেলতে! সেই দলে নিপট ভদ্রলোকটিও ছিলেন, অর্থাৎ তোমরা যাকে ভদ্রলোক বলে জানো আর কি! কোনও সুখের কি কষ্টের শব্দ, কিছুই কবির কানে গেল না, কবির রক্ত, ঘিলু, মজ্জা মাটিতে ছিটকে পড়ামাত্রই আকাশ কাঁদতে শুরু করল দারুণ শোকে বা তীব্র উল্লাসে। শেষ বারের মতো অক্সিজেন-স্নানের আগ মুহূর্তে কবির ওষ্ঠযুগল আধ বারও নড়ে উঠল কি উঠল না, কেউ সেদিকে ভ্রূক্ষেপও করেনি। মৃত্যুর উৎসব যে-কোনও জন্মের উৎসবের চাইতে জাঁকালো। অজ্ঞাত সত্য হলো, কবির শেষ মুহূর্তটি সব কিছুর পরও গৌরবেই কাটল। মাটিতে পড়ে-থাকা ছিন্ন হাত, বিক্ষিপ্ত মগজ আর বিদীর্ণ কণ্ঠনালির দিকে তাকিয়ে তিনি মৃদু হেসে বললেন, আমার হাত, মগজ, কণ্ঠ...কেউ আর বাঁধতে পারল না। দুঃখ নেই। যা পেয়েছি, তা প্রাপ্যই ছিল! আমি যেমনি ‘আমি’ই আছি, তোমরাও তেমনি ‘তোমরা’ই আছ। অন্তত মানুষের ব্যাকরণ বহির্ভূত হয়ে না ওঠার জন্য ধন্যবাদ। বছর ঘুরে বছর এল। লোকের নানান অভাব আর চাহিদা বাড়ল সময়ের প্রয়োজনে। বিস্মৃতিপরায়ণ জনতা-কণ্ঠ অপ্রাপ্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার হলো: কবিতা চাই, কবিতা চাই! কবি কোথায়? কোথায় কবি? ধরে আনো, বেঁধে আনো! এক্ষুনিই! এক্ষুনিই চাই! কারও নৈঃশব্দ্য প্রয়োজন, কারওবা কোলাহল। কারও জীবন প্রয়োজন, কারওবা মৃত্যু। কারও সাহস প্রয়োজন, কারওবা ভয়। কারও হাসি প্রয়োজন, কারওবা কান্না। কারও কী যে প্রয়োজন, তা সে নিজেই জানে না। তবে, সবারই কয়েক মুঠো কবিতা প্রয়োজন। এই মুহূর্তেই! খুব জরুরি! বিনে পয়সার কবিতা। বিনে পয়সার কবিতার দাম ভালো। বাঁচতে যে কবিতা লাগে! কবিকে ডাকো! কবির ঘরের দরোজায় ধাক্কা মারো, ঘুম ভাঙাও! এই অবেলায় এত ঘুম কীসের? একজন বেশ্যা অন্তত কাপড় বদলানোর সময়টুকু পায়, কবি তা-ও পায় না। কবি হয়ে জন্মালে নিয়তি এমনই! ভাঙা মেরুদণ্ড, মৃত ফুসফুস, বন্ধ হৃৎপিণ্ড, জংধরা মগজ, অবিশ্বাসী হৃদয়, ক্ষীণদৃষ্টি নিয়ে কবি আবারও লিখতে চেষ্টা করেন---আপ্রাণ। আঙুলের সাথে কলমের যুদ্ধ চলতেই থাকে, সাদা কাগজ তবু রং বদলায় না। কবি চলে গেলে সাথে কবিতা চলে যায়---হারানোর আগে কেউ বোঝে না। আমরা কখনও কৃতজ্ঞ হতে শিখিনি---আমরা কবিকে হত্যা করি সুযোগ পেলেই! আমরা এখনও স্বার্থপর হতেও শিখিনি---কবির সাথে কবিতা হত্যা করি না বুঝেই! তবু পুনশ্চ কবি কিংবা কবিতা...জন্মে যায়ই! ওদের লেখানোর দাবি প্রবল। কবির লেখার তাগিদ প্রবলতর। তাই কবি কফিন ফুঁড়ে জেগে ওঠেন। অতীতের শিক্ষার চাইতে বর্তমানের দীক্ষা বেশি নাড়া দেয়! আবারও খুন হয়ে যাওয়ার ক্ষণটির দিকে দৃপ্তপায়ে এগিয়ে চলেন ধ্যানী-স্বাপ্নিক কবি। (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আমার স্বপ্ন’ (১৯৭০) বইয়ের ‘কবির মৃত্যু: লোরকা স্মরণে’ কবিতার ছায়ায়, প্রচ্ছায়ায়, উপচ্ছায়ায় লেখা) (এই কবিতার সাথে আমার তীব্র আবেগ জড়িয়ে আছে। এখানে কবির জীবনে যা যা ঘটেছে, আমার নিজের জীবনেও অবিকল তা-ই তা-ই ঘটেছে। এই কবিতাটি পড়লে মানুষ সম্পর্কে আপনার মধ্যে যেমন ধারণা তৈরি হবে, মানুষ মূলত তেমনই। বিপদে পড়লে এটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। ওইসময় পাশে 'তথাকথিত বিশ্বস্ত' কাউকে পাবেন না; তার চাইতে বড়ো কথা, যারা আপনার পাশে ছিল বন্ধুর বেশে, তাদের সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারা তখন দেখতে পাবেন। নৃশংসতার উৎসবে প্রায় মানুষই হয় নিজে অংশ নেয়, নতুবা নীরবে উপভোগ করে। অন্যকে পদদলিত ও নির্যাতিত দেখবার নেশা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। মানুষের ওরকম চেহারা খুব স্পষ্টভাবে দেখে ফেলেছি বলেই লোকের স্তুতি বা নিন্দা আমাকে তেমন স্পর্শ করে না। আমি বুঝে গিয়েছি, আমরা মূলত অপ্রয়োজনীয় মানুষজন নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকি।)