সাধারণ একজন মানুষ, ট্যাক্সি চালায়, একাকিত্বে ভোগে, একাকিত্ব কাটাতে নানান ফ্যান্টাসি নিয়ে সময় কাটায়। মেয়েদের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায়, কিন্তু একটা সুন্দরী মেয়ের জন্য সে করতে পারে না, এমন কোনো কাজ নেই। যে শহরে সে ট্যাক্সি চালায়, সে শহর নৈরাজ্যে পরিপূর্ণ। ট্যাক্সি ড্রাইভার স্বপ্ন দেখে, একদিন সে শহর থেকে অবাঞ্ছিত সব জঞ্জাল সাফ করে ফেলবে, অবাঞ্ছিত মানুষ, অবাঞ্ছিত কায়দাকানুন। এটাও তার ফ্যান্টাসির একটা অংশ। অবশ্য, এই ফ্যান্টাসিটা সে পূরণ করেও।
একদিন এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। দেখতে বেশ সুন্দরী, স্বভাবে একেবারেই টিপিক্যাল। মেয়েদের সাথে মিশতে জানে না সে, কিছু ভুল করে ফেলে, সে মেয়ে চলে যায়। মেয়েদের সাথে মেশার কিছু গ্রামার আছে, সেগুলি মেনে ওদের সাথে মিশতে হয়। মেয়েরা অকপটতা নিতে পারে না। একটা মেয়ের মন পেতে হলে সে পৃথিবীটাতে যেভাবে দেখতে চায়, ঠিক সেভাবে করেই পৃথিবীটাতে তার সামনে তুলে ধরতে হয়, আদতে পৃথিবীটা যেমনই হোক না কেন!
যা-ই হোক, ট্যাক্সি ড্রাইভার বেশ কিছু ফ্রাস্ট্রেশনে ভোগে। সবসময়ই। নিজেকে নিয়ে এবং চারপাশের জগতটাকে নিয়ে কনফিউশনে থাকে। ফ্রাস্ট্রেশন এবং কনফিউশন আধুনিক মানুষের প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য। তার উপর সে যদি একাকিত্বে ভোগে, তাহলে তো আর কথাই নেই! এক হতাশ দিকভ্রান্ত মানুষ এই ট্যাক্সি ড্রাইভার। রাতে ঘুম আসে না বলে ট্যাক্সি চালায়, জেগে থাকার সময়টা দুর্বিষহ লাগে তাই ট্যাক্সি চালায়। এই একাকী মানুষটা যারই হাত ধরে বাঁচতে চায়, সে-ই তাকে ছেড়ে চলে যায়।
গল্পের ট্যাক্সি ড্রাইভার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে কথা বলে স্বস্তি পায়। নিজের মনের কল্পনার মতো করে নিজেকে সাজিয়ে নিজের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি আমার সাথেই কথা বলছ তো, না? আমরা যারা একা, তদুপরি অসহায়, তারাও কি নিজেকে নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে নিজেকে সুপারহিরো বানিয়ে নিজের সাথে নিজে কথা বলে যাই না? অমন আনকনভেনশনাল হিরো তো আমরা সবাইই, অন্তত নিজের কাছে। সবচাইতে কুৎসিত চেহারার মানুষটিও তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সুন্দরই দেখে! এরকম নানান অমীমাংস্য মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাঁধে নিয়ে সিনেমা সামনের দিকে হেঁটে যায়।
সময়ের বিচারে সবসময়ই যা প্রাসঙ্গিক, তা-ই তো ক্লাসিক। ট্যাক্সি ড্রাইভার-এর ক্যাবে চড়তে গিয়ে হয়তো আপনারও মনে আসবে, এমন একজন নিরোর সাথে তো আমার গতকালও দেখা হল! স্কোরসেজি সার্থক এই জায়গাতেই।