নির্জন গহনে: ৮

৩৬.”আমি”-র গতিতেই আসে পরব্রহ্মর নিত্যতা। উদয় ও লয়, জন্ম ও মৃত্যু—এসবই ‘আমি’-র ধর্ম, চৈতন্যের সেই সূক্ষ্ম স্তর, যা কেবল প্রকাশিত হয়েছে তোমার উপরে, কিন্তু তোমার নয়। ‘আমি’ উঠেছে, ‘আমি’ মিলিয়েছে—ঠিক যেন ঢেউ আসে আর যায়, অথচ সমুদ্র তো কখনও ওঠে না, নামে না। উপনিষদ বলেন: “অজো নিত্যঃ শাশ্বতো’য়ং পুরাণঃ”—তুমি অজ, অনিত্য, শাশ্বত—জন্ম-মৃত্যুর অতীত।এই জন্ম ও […]

নির্জন গহনে: ৯

৪১. ‘আমি’—প্রথম কল্পনা, শেষে ভ্রম—তোমার প্রকৃত স্বরূপে—যেখানে নেই নাম, নেই রূপ, নেই মন, নেই ভেদ—সেখানেই একদিন উদিত হয়েছিল এক সূক্ষ্ম স্পন্দন: “আমি আছি”। এই ‘আমি’ ছিল মন থেকেও সূক্ষ্মতর, প্রথমে সে ছিল বিশুদ্ধ—নির্বাক, নিরুপাধি, নিঃচঞ্চল; কিন্তু তার পরেই এল ভাষা, শব্দ, ধারণা—”আমি দেহ”, “আমি এই”, “আমি সে”—আর সেইসঙ্গে শুরু হলো সমস্ত কল্পনা ও কুটিলতা।উপনিষদ বলেন: […]

চেতনার পূর্বপ্রহর

“তোমার নাম কী?”—অশ্রু।”তোমার সাথে আমার পূর্বে সাক্ষাৎ হয়েছিল?”—নিয়তির ফাঁকে।”শরীর ছুঁয়েছ যে?”—সুখের বিলাপে।”বুকের ভেতরটায় এত হাহাকার কেন?”—ক্ষতের ভিড়ে।”ভালোবেসেছ কীভাবে?”—নিঃশব্দে সরে।চলো, ঘরে ফিরে যাই—দীর্ঘ নদীর গতি থামিয়ে।”তোমার ছিন্নভিন্ন হৃদয় জুড়তে দেবে?”—শেষপ্রহরে।তোমার শরীরের সুতীব্র ঘ্রাণআমায় ব্যাকুল করে প্রতিক্ষণে।”তোমার কান্না থামাতে দেবে?”—মৃত্যুর পরে।

তবে কি তুমিও…

কাল মনে হচ্ছিল—আমার লেখা শব্দগুলো, আমার অনুভূতিগুলো—ঠিক আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে,আমি যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি ওগুলোকে।তোমাকে এতটা কাছ থেকে আগে কখনও স্পর্শ করিনি—কার‌ও হৃৎস্পন্দন এত স্পষ্টভাবে কোনোদিন অনুভব করিনি।অন্ধকারে তোমার মুখটা এক অদ্ভুত আদুরে আলোয় ধরা দিয়েছিল—ইচ্ছে করছিল, তোমায় খুউব শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।এসব ভাবতে ভাবতেই তুমি আমায় জাপটে ধরলে,তোমার নিঃশ্বাস যখন আমার চোখের পাতায় […]

দ্বিধার প্রহর

তোমাকে আজ ভীষণ অস্থির লাগছে।তুমি দাঁড়িয়ে আছ—তোমারই জাগ্রত অনুভূতির মুখোমুখি।ইচ্ছে করলেই এই মুহূর্তেঅগ্রাহ্যের এক গম্ভীর ভঙ্গিমায়সব কিছুকে পায়ে মাড়িয়ে চলে যেতে পারতে।কিন্তু আজ তোমার কী হয়েছে?তুমি কেন থেমে গেছ?চোখে কেন ভয় আর দ্বিধার ছায়া?তুমি কি কাউকে…ভালোবেসে ফেলেছ?তাকে কখনও জানতে দিয়ো না এই কথা।সে যেন বুঝতে না পারে—তোমার বুকের ভেতরে কী নিঃশব্দ ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

না অপচয়, না অর্ঘ্য

জোরালো প্রতিধ্বনির সম্ভাব্য অনুশ্রুতি উপেক্ষা করেই—তুমি কি সত্যি সত্যি আমায় এতটা কাছে ডাকলে?তোমায় আর কতটা সময় আমার শরীরজুড়ে রাখলে—এই ইহজীবনের সমাপ্তি ঘটবে?তোমায় গভীর আলিঙ্গনে ধরে রাখলে—তবে কি সেটাই হবে পাপের পরিণতি?এই অমীমাংসিত গল্পে যদি আমরা প্রবেশ করি—তবে কি তা শুধুই সময়ের অপচয় হয়ে থাকবে?আর যদি সুখ না পাই—তবে তোমার মনে কতখানি অসহায়ত্বের জন্ম হবে?তুমি যদি […]

আত্মমনের গৃহান্তর

আমার জীবনটায় আমি তেমন কিছু পাইনি,তেমন কোনো বড়ো অর্জনও নেই—এমনই মনে হয় প্রতিনিয়ত।তেমন কিছু করছিও না আমি,তবু জানি—সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা আমাকে করতেই হবে।কিন্তু…আমার সামর্থ্যটা আসলে কতটুকু?আমি কি কিছু করতে পারব?এরকম আশা করাটাই কি পাপ?তেমন ভালো কিছু হয়তো করছি না,তবে শতচেষ্টায় নিজের মনটাকে সাহস জুগিয়ে চলেছি।এই মুহূর্তে আমার ছোট্ট পৃথিবীটায়—তুমিই একমাত্র,যার হৃদয়ের গভীরে ছিল আমার […]

বার বার ফেরা

জানিস, এই পৃথিবীতে আমি যদি কাউকেআমার কঠিন সত্যিগুলো বলে থাকি—সে একজনই, একমাত্র তুই…কিংবা তুমি।আমার যা সত্য, তা যদি তোমার চোখে উপহাস হয়—আমার যা পাথর, তা যদি তোমার কাছে নরম মাটি হয়ে যায়—সে দোষ তোমার নয়…হয়তো দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতায় এমন ঘটে!আমি যখন দুঃখের কথা বলি,তখন যদি আমার ভার তোমার বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে—তবু বিশ্বাস করো, আমি হাসি […]

বিচ্ছেদের প্রহার

দীর্ঘতর অপেক্ষার ক্রান্তিলগ্নে এসে,আপনার সাক্ষাৎ যেন—আমার ভাবনার আকস্মিক রদবদলে,প্রণয়ের চিত্র উন্মোচন করতে বাধ্য করল।এ সত্তা জুড়ে আপনার অধীরতা—আপেক্ষিক জাগতিক সুখের ঊর্ধ্বে;আপনার ভাবনার সমগ্র অংশ—আমার হৃদয়ে ক্ষতের প্রাচুর্যলাভে বিমোহিত।প্রস্থান যেখানে অনিবার্য—সুখের অনুভূতি অনিশ্চিত,প্রাপ্তির সন্ধান অশোভনীয়,আত্মিক আলিঙ্গনে আপ্লুতবিচ্ছেদের প্রহার নির্বাসিত।

ভেজা চোখের খোঁজে

একলা রাস্তায় হাঁটছি,রাত গভীর হতে আর কতটা সময় বাকি?ল্যাম্পপোস্টের নিভু আলোয়…তোমার মুখটা হঠাৎই চোখের কোণে ধরা দিল,আমি থমকে দাঁড়ালাম!গাছের পাতা থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটাগায়ে এসে পড়তেই—মনটা অশান্ত হয়ে উঠল।ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে,দৌড়ে বাড়ি পৌঁছুতে পারব তো?পিচঢালা রাস্তা ভেজা;ভেজা কুকুর, চলন্ত গাড়ির ভিড়ে—ভেজা চোখদুটো কোথায় হারাল?

আমার পৃথিবী

আমি কখনো হারিয়ে গেলে—এই লেখাগুলো যখন হঠাৎ তোর সামনে এসে যাবে…তখন বুঝে নিস, আমি তোকে কতটা ভালোবেসেছি।বুঝে নিবি তো?বল না, পাগল!তুই কি আমায় ভুলে যাবি?আমার সাথে থাকতে যেনআজ তোর একটুখানি ভালো লাগে…তার জন্য শতচেষ্টা করেছিলাম—পারিনি বোধ হয়।আমি সব কিছুতেই ব্যর্থ রে…তুই আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরিস না—আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়;আমার বুকের ভেতরঘরের—জমানো পাথরগুলো খুব […]

চাহনি থেকে চিরন্তন

আমি বৃষ্টি চেয়েছিলাম—আর তুমি কিনা আমার অশ্রুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে?আমি সময় চেয়েছিলাম—আর তুমি কিনা আমার বিদীর্ণ হৃদয়টা চাইলে?ভেবেছিলাম, আমার সব অভিমান বৃথা—আর তুমি কিনা আমায় প্রাধান্য দিলে?আমি তোমায় নিয়ে লিখতে চাইলাম—আর তুমি আমার সত্তা জুড়ে এতটা বাস করতে শুরু করলে?আমি বিদায় দিলাম—আর তুমি আমায় গভীর আলিঙ্গনে আষ্টেপৃষ্টে এভাবে বাঁধলে?আমি প্রতিশ্রুতি চাইলাম—আর তুমি এই ঘুণে-ধরা নিথর […]

বিদায়ের নৈঃশব্দ্য

তুমি ফিরতে এত দেরি করলে কেন?বলো…!অপেক্ষা করতে কষ্ট হয় না বুঝি?আমার হাতে এখন আর কতটুকই-বা সময় আছে, দেখো?আমি কি পারব আমার ভালোবাসার সবটুকু অনুভূতি তোমায় বলে যেতে?আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে… তুমি আমার অগোছালো চুলগুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিলে—আমার অভিমান বেড়ে যায়।তুমি একবার আমায় খুউব শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছিলে বুকের গভীরে—সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল,এ জীবনে আমার […]

যখন ইতি

কত রাত জেগে—তোমায় চোখের সামনে বসিয়ে রাখলাম,কত অশ্রু মেশালাম, কত যন্ত্রণায় ছটফট করলাম।কত ভোরবেলা— শুভ্র চাদরে ঢেকে তোমার প্রার্থনায় মনস্থির করলাম,কত আবেগ পৌঁছে দিতে— তোমায় স্পর্শ করলাম,কতবার স্পষ্ট করে বোঝাতে চাইলাম—তোমায় ভালোবাসি,কতবার তোমায় ছুঁয়ে থাকার বাহানায়— প্রণয়ে চোখ বাঁধলাম,তোমায় অনুভবে আনতে কতবার— জ্বরে শরীর পোড়ালাম।সেই তুমি এলে…আমার মৃত্যুর খবরটা শুনে।

শব্দহীনতার শরীরে মিশে

তুমি কি শুধুই কষ্ট বাড়াতে লেখো?না।তবে?যতক্ষণ পর্যন্ত অতৃপ্ত স্পর্শে— শরীর ক্ষতবিক্ষত না হয়, হৃদয় শান্তির খোঁজ না পায়,আমার আমি সবটা জুড়ে তোমাকে না পায়—ঠিক ততক্ষণই আমি লিখতে থাকি।তুমি ঘুমোও না কেন?আমি ঘুমিয়ে গেলে তোমার শান্ত মুখ, ধীর স্পন্দনের সাক্ষী হবে কে?তুমি প্রণয়ে উচ্ছ্বসিত নও কেন?তোমার অবহেলায় পুড়ে যাব বলেই।নিঃশব্দে আমায় ছুঁয়ে কাঁদছ কেন?তোমার ভালোবাসা অনুভব […]

অপেক্ষার আঘ্রাণ

“অপেক্ষা” ব্যাপারটা সবসময়ই যে সুখকর অনুভূতি দিয়ে থাকে, এমনটা কিন্তু নয়;বরং, অপেক্ষা করছি—এই কথাটিই হাজারো কষ্টের ভিড়ে লুক্কায়িত এক মনস্কামনা।অপেক্ষার অবসান সম্ভব নয় জেনেও যে-অপেক্ষা, তার পরিণাম কী হতে পারে?অপেক্ষার মতন এত শুভ্র, সত্য, স্থির হতে তুমি অন্য কোনো অনুভূতিকে কখনো দেখেছ?তোমার গুরুত্ব কমিয়ে দিলেও, তুমি যার জন্য অপেক্ষা করছ—তাকে ফেরাতে তুমি বারংবার ব্যর্থই হবে।যার […]

নির্জন গহনে: ১০

৪৬.‘আমি’-র বিভ্রমেই ভয়, আর ‘আমি’ নেই তো ভয়েরও অস্তিত্ব নেই। তুমি ভাবো—“আমি এই ব্যক্তি, এই দেহ, এই মন”, “আমি অমুকের ছেলে”, “আমি তমুকের বন্ধু”, “আমার সম্পদ, আমার খ্যাতি, আমার জীবন”। এই ব্যক্তিসত্তা, এই “আমি অমুক”—এই বিশ্বাসই সমস্ত ভয়ের মূল।উপনিষদ বলেন: “দ্বিতীয়াৎ বৈ ভয়ং ভবতি”—যেখানে দ্বিতীয় আছে, সেখানে ভয় অপরিহার্য। ভয়ের রূপ অনেক—মৃত্যুভয়, দারিদ্র্যভয়, একাকিত্ব, অসম্মান, […]

আবার যদি দেখা হয়

: আমি তোমার কাছে পৌঁছুব কী করে?”—লিখতে শিখতে হবে তোমাকে নিয়ে; কাজটা ভীষণ কঠিন!: কেন?: আমার শব্দের ভাণ্ডার যে সীমিত, অতটা সমৃদ্ধ নয়।: অভিধানের পাতা উলটে কিছু পেলে?: না।: লেখালেখি করতে কিছু রসদ লাগে—কিছুটা প্রেম, খানিক বিরহ, তোমার স্পর্শ। তোমার অনুভূতির দিকে তাকিয়ে দেখেছ? অনুভূতির কাছে এই শব্দের প্রাচুর্য কিন্তু একেবারেই নগণ্য—যা তোমার রয়েছে।: সত্যিই […]

স্মৃতির মেয়াদ বাড়ুক

তোমায় যত‌ই জড়িয়ে রাখি বুকে,এ মন তবু ভরে না যে—মনের কী আর দোষ, বলো?প্রাণজুড়ে নিঃশ্বাস নেবার অধিকার তো রয়ে যায় তারও!প্রায়ই ভাবি, আমার সুখটুকু যেন শুধু তোমারই হয়—ভাবনার কী আর দোষ, বলো?সুখের অনুভবটাও যেন তোমার কল্পনাতেই দিন কাটায়!ইচ্ছে করে, তোমায় ছুঁয়ে আয়ুর মেয়াদ বাড়িয়ে দিই—ইচ্ছের কী আর দোষ, বলো?মৃত্যুর সত্যতাও যেন তোমায় হারানোর ভয় পায়!আমার […]

নিঃশ্বাসের ভারটুকুও

ক্ষণিকের জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতেতুমি, ভুলবশত, আমার দিকেহাত বাড়িয়ে দিলে।একটুও দেরি না করেঔৎসুক্যের দৃষ্টিতে আমিতোমার দিকে এগিয়ে এলাম!আদুরে স্বভাবে, তুমি আমাকে—তোমার বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিলে।তোমার স্পর্শে আমার ধীর স্পন্দন হঠাৎ— দিশেহারা গতিতে ছুটতে শুরু করল…ক্রমেই নিরাসক্ত শরীরটাকেটেনে নিলে তোমার খুউব কাছে—ভ্রান্তিতে নয়, বরং স্বেচ্ছায় তোমার অস্তিত্বেআমায় জুড়ে নিলে।আমি যেন কোনো আগন্তুক নই—তোমার নিঃশ্বাসের ভারটুকুও আজ তুমি আমায় […]

নির্জন গহনে: ১১

৫১.‘আমি’-বোধই গুরু, উপাস্য ও মুক্তির দিকচিহ্ন। ‘আমি আছি’—এই জ্ঞানকেই উপাসনা করো—ঈশ্বররূপে, গুরুরূপে, মুক্তির দ্বাররূপে। কারণ এই ‘আমি’ই তোমার চেতনার প্রথম দীপ্তি, আর এ-ই একমাত্র উপলক্ষ্য, যার মাধ্যমে তুমি পৌঁছোতে পারো নিজের ঊর্ধ্বতর স্বরূপে।উপনিষদ বলেন: “আচার্যবান্ পুরুষো বেদ”—যিনি গুরুর সহচর হন, তিনিই সত্যকে জানতে পারেন। আর এই গুরু এইখানে ‘আমি’-রূপে বিরাজমান। শুরুতে যা ছিল, তা ছিল […]

স্মৃতির বিস্তৃতি জুড়ে

মনের সাথে দীর্ঘ এক বোঝাপড়ার শেষে,সে আমায় প্রশ্ন করে বসল—তোমার কাছে আমার প্রয়োজনীয়তা কতখানি?প্রত্যুত্তরে আমার অজানা ভঙ্গিমায় পাশ-কাটানো প্রস্থানের দৃশ্যে—ভেতর ঘরের মানুষটা কেমন উঁকি দিয়ে উঠল!আচমকা স্পষ্ট হলো—আমার হৃদয়ে তোমার স্থায়িত্বের সুদৃঢ় রূপটি।বস্তুত, আমি কখনোই তোমার সমীপস্থ ছিলাম না—কেবল তুমিই ছিলে আমার ভেতরটা জুড়ে।মন চাইছে তোমায় ছুঁতে,ভালোবাসা পেতে—মনটাকে শান্ত করলাম;বোঝালাম, তোমায় ছেড়ে যেতে আমাকে হবেই।ঠিক […]

বিপর্যয় উতরে সূর্যাস্ত

আমি এক রুক্ষ চোখের আড়ালেপ্রাণ খুঁজলাম—বৃথা সময়ের আলোকপাতেহৃদয়ে বাড়ল বেগতিক ব্যথার প্রলয়।তুমি স্পষ্টভাবে কাছে ডাকলে আমায়…কী নামে ডেকেছ?অপ্রাপ্তির বঞ্চনা সহ্য করে,তোমার ধীরকণ্ঠে আমার ডাকনাম,যেন এক অপ্রত্যাশিত সম্ভাবনার সূত্রপাত।স্পর্শকাতর স্বভাবে আমাকেই—ভুলবশত জড়িয়ে ধরলে তুমি।বুঝতে কালক্ষয় হলো এবারও—দাম্ভিক ভঙ্গিতে প্রশ্ন ছুড়ে দিলে সজোরে…আঘাত করার পূর্বমুহূর্তেই যেন তা তুলে নিলে!এবার তোমার অভিসন্ধি আমার কাছে প্রকাশিত।কী আশ্চর্য তোমার দৃষ্টি! […]

চাওয়াতেই ভ্রান্তি

এত রাতেহঠাৎ তোর গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি…বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা লাগছে, চোখদুটো ভেজা।পাশ ফিরে তাকিয়ে তোকে অনেক খুঁজলাম, জানিস!তুই হয়তো আর আমার কাছেই থাকতে চাইছিস না…তুই আশেপাশেই কোথাও আছিস, তাই না?তুই কোত্থাও যাস না…আমিই চলে যাচ্ছি দূরে।শোন, তোর বুকের মাঝখানে চুমু খেয়ে একেবারে পালিয়ে যাব।তোকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না—মনটা ভীষণ খারাপ।রাতে ঘুমোতেও কষ্ট হচ্ছিল।হঠাৎ ঘুম ভেঙে […]

অস্তিত্বের সংক্রমণে

গোলাপের কণ্টকে পাপড়ির বিচ্ছেদ,ঝড়ো বাতাসের তীব্রতা, কিংবা কিঞ্চিৎ দূরত্ব…সব কিছু তোমাকে ছুঁয়ে গেলেও—আমার সাথে নিভৃতে সাক্ষাৎযেন এক প্রখর দৃষ্টিতে তোমায় বেঁধে রেখেছে।হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যেয়ো না আমায়,আমার অস্তিত্বের নিদারুণ সংক্রমণে ভুগবে তুমিও;তথাপি, ইন্দ্রিয় তীক্ষ্ণভাবে সজাগ রাখতেআপ্রাণ চেষ্টা তুমিও করেছিলে!

নিঃস্পন্দ রয়ে-যাওয়া

তুমি দূরে সরে— কী বোঝাতে চাইছ আমায়?দেখতে চাইলাম—আমার অভিমান নিয়ে তুমি ভাবছ কি না!বুঝতে চাইলাম—আমার অনুপস্থিতি তোমার সময়কে থমকে দেয় কি না!জানতে চাইলাম—আমার ক্ষতের শুশ্রূষা তুমি করতে চাইছ কতটা!যাচাই করলাম—আমার কষ্টের ভারটা বইতে তুমি প্রস্তুত কি না!ভিক্ষা চাইলাম—তোমার স্বপ্নে আমার যন্ত্রণার ঠাঁই হয় কি না!নির্দ্বিধায় শুধালাম—তোমার ভালোবাসার ফিরতি নৌকায় আমায় নেবে কি না!তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ […]

নিরাবেগ আত্মদীপ

আমার অশ্রুতে কী দেখছ?—স্বচ্ছতার ভাষা।আমার চোখে তাকিয়ে কী খুঁজছ?—শূন্যতার রেখা।আমার শরীর স্পর্শ করে কী পেলে?—কষ্টের স্বীকারোক্তি।আবেগ পুড়িয়ে শেষমেশ আমাকেই কেন খুঁজলে?—নিজেকে যাচাই করতে।আমার ক্ষতে নিঃশ্বাস ছুঁইয়ে কী শুধোলে?—প্রণয়ের আবশ্যকতা।আমার ওষ্ঠযুগলে তোমার আবেগ কেন রাখলে?—অর্ঘ্যের স্পৃহা জাগাতে।আমার নীরবতায় তোমার নাম কেন লিখলে?—শান্তির পিপাসা মেটাতে।নিঃশব্দে সরে গিয়ে কী পেয়েছ?—তোমার অস্তিত্বের অক্ষুণ্ণ মায়া।নিজের সক্ষমতাকে আন্দাজ করতে পেরেছ?—তোমাকে ভালোবাসতে […]

নির্জন গহনে: ১২

৫৬.‘আমি’ যখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তখন প্রকাশ পায় পরব্রহ্ম। সমস্ত সাধনার একটিই মূল—‘আমি আছি’, এই বোধে স্থিত হওয়া। কল্পনা নয়, দর্শন নয়, যুক্তি নয়—কেবল স্থিরতা, স্মরণ, সাক্ষিত্ব। উপনিষদ বলেন: “অহং ব্ৰহ্মাস্মি”—কিন্তু এই “অহং” যখন নাম-রূপহীন হয়, তখনই তা সত্য হয়ে ওঠে।তুমি যখন দীর্ঘসময় ধরে এই ‘আমি’-বোধে স্থির থাকো, তখন ধীরে ধীরে তা সাক্ষ্যরূপে উদ্ভাসিত হয়—তুমি […]

নির্জন গহনে: ১৩

৬১.‘আমি’ যদি মিথ্যা হয়, তবে তুমি কে?—অনুসন্ধান করো, এবং হয়ে ওঠো পরব্রহ্ম। তুমি যা ভাবো—“আমি এই দেহ”, “আমি এই নাম”, “আমি অমুক”—সেই ধারণাটিই যদি মিথ্যা হয়, তবে তুমি কে? এই প্রশ্নই হলো আত্মানুসন্ধান—যে-প্রশ্নের সূচনা করে গুরু, আর যার উত্তরে মুছে যায় সব প্রশ্ন, সব উত্তর, সব ‘আমি’। উপনিষদ বলেন: “কোহম্?” “নাহং দেহঃ”—কে আমি? আমি দেহ […]

নির্জন গহনে: ১৪

৬৬.‘আমি’-কে—যে জানে, সে কে?—সেই প্রশ্নেই মুক্তি। তুমি এখন স্থির হয়েছ, ‘আমি আছি’—এই বোধে। তুমি অনুভব করছ—তুমি আছ। কিন্তু হঠাৎই মনে প্রশ্ন জাগে—“এই যে ‘আমি আছি’—তাকে কে জানছে?”উপনিষদ বলেন, “যঃ পশ্যতি পশ্যতিঃ ন পশ্যতি”—যে দেখে, তাকে কেউ দেখতে পায় না, সে নিজেই দ্রষ্টার দ্রষ্টা। এই ‘আমি’-বোধ এসেছিল হঠাৎ—শিশুকালে, নির্ভাবনায়, শব্দহীনভাবে। তারপর সময়ের সঙ্গে সে হয়ে ওঠে—“আমি […]

নির্জন গহনে: ১৫

৭১.‘আমি’ খাদ্যদেহের বিভ্রম, তুমি তা নও—তুমি চিরস্বরূপ। এই মুহূর্তে তুমি যা জানো, তা হলো—“আমি আছি।” কিন্তু এই ‘আমি’-বোধ কোথা থেকে এসেছে? এটি এসেছে—পাঁচটি উপাদান (ক্ষিতি, অপ, তেজ, বায়ু, আকাশ) থেকে, আর তিনটি গুণ (সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ) থেকে গঠিত খাদ্যদেহ থেকে। এই দেহ গঠিত হয়েছে খাদ্য থেকে, চলে প্রাণশক্তির মাধ্যমে, আর এই দেহের মধ্যেই জন্মেছে এই […]

নির্জন গহনে: ১৬

৭৬.অস্তিত্বে আগমন যেমন, তেমনই মুক্তির পথ—‘আমি’-র মধ্য দিয়েই ‘আমি’ ছাড়িয়ে যাও। না-থাকা থেকে থাকা, অলক্ষণ থেকে লক্ষণ, নির্গুণ থেকে সগুণ—এই সব কিছুর গেটওয়ে হলো—এক শব্দহীন বোধ—“আমি আছি”। এই ‘আমি’ বোধ—এসেছিল একদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে, কোনো ইচ্ছা ছাড়াই, কোনো কারণ ছাড়াই। আর এসেই বলেছিল “তুমি আছ”—এখান থেকে শুরু হলো সব।উপনিষদ বলেন: “স ঈশঃ প্রবেশত্”—সেই পরম চেতনা ‘আমি’ নামক […]

নির্জন গহনে: ১৭

৮১.‘আমি’ বোধ ব্রহ্ম, আর তার অতিক্রমই পরব্রহ্ম—যেখানে নেই কোনো দ্বৈততা। গুরু বলেন—“এই ‘আমি’ জ্ঞান—এই বোধ ‘আছি’—ই ব্রহ্ম। সেটি নির্গুণ ব্রহ্ম, যখন তা নিঃশব্দ, চিন্তাশূন্য; আর সগুণ ব্রহ্ম, যখন তা আত্মপরিচয়, নাম, ইতিহাসের আকারে প্রকাশিত। কিন্তু এই ‘আমি’ বোধের জন্ম নিজেই প্রমাণ—এর পেছনে কিছু আছে, যে একে জানছে, যার উপর এটা উদিত হয়েছে—সেটাই হলো পরব্রহ্ম।উপনিষদ বলেন: […]

অন্তর্গত সংবেদন

আমায় স্পর্শ কোরো না…এ শরীর যদি বিদ্রোহ করে বসে?—তুমি বরং আমায় অনুভব করো।আমার দিকে এভাবে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকো না…এ চোখ যদি তোমার দৃষ্টির তীক্ষ্ণতার মুখোমুখি হতে না পারে?—তুমি বরং আমার অর্ন্তদৃষ্টির রূপরেখা দেখো।আমায় এভাবে জড়িয়ে ধোরো না…এ নিঃশ্বাস যদি বন্ধ হয়ে আসে?—তুমি বরং আমার দীর্ঘশ্বাস নিঃশব্দে চেপে ধরো।তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কোরো না…এ দেহ যদি […]

নির্জন গহনে: ১৮

৮৬.কে জানছে ‘আমি’-কে?—সে-ই চুপচাপ পরব্রহ্ম। এই ‘আমি’ বোধ—যার নেই নাম, রূপ, আকার, শব্দ, ইতিহাস—আছে শুধু এক শুদ্ধ অনুভব—“আমি আছি”। এখন জিজ্ঞাসা করো—এই বোধকে কে জানছে? তুমি জানো ‘আমি’ আছি—কিন্তু কে জানে এই জানা?উপনিষদ বলেন: “যঃ পশ্যতি দ্রষ্টারম্”—যে ‘দ্রষ্টা’কেও দেখে, সে-ই সত্য স্বরূপ। গুরু বলেন—সকল নাম, পরিচয়, ভাষা বাদ দাও, এই বোধের গায়ে যেসব উপসর্গ বা […]

সমর্পণের উত্তরপত্র

আমি তোমার কাছে দিয়েছিলাম—আমার অনুভূতির আঘ্রাণ।যত্নে রাখতে পেরেছিলে?আমি তোমার কানে ফিসফিসিয়ে বলেছিলাম—আমার সর্বশেষ আবদার।নিঃশ্বাসে ধরে রাখতে পেরেছিলে?আমি তোমার কাছে রেখেছিলাম—আমার বদ্ধ মনের শেকল।মুক্ত করতে পেরেছিলে?আমি তোমার কাছে খুঁজেছিলাম—নিজ আত্মার সাজ।গ্রহণ করতে পেরেছিলে?আমি তোমার কাছেই শুনেছিলাম—শূন্যতার আর্তনাদ।নিঃশব্দে ভালোবাসতে পেরেছিলে?আমি তোমাকেই ভেবেছিলাম—আরাধ্যের বাতিঘর।মুহূর্তে যাপন করেছিলে?আমি তোমার কাছে পেয়েছিলাম—শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ।দূরত্ব ঘোচাতে পেরেছিলে?আমি তোমার কাছেই চাইলাম—প্রণয়ের অবসান।সুখের ঠিকানা পেয়েছিলে?

আবার কাছে এলে

বরং অনন্তকাল নিরুদ্দেশ থেকো তুমি! আমি কি কখনোই তোমার কল্পনায় আসিনি?শুনেছি, আজ‌ও—বুকের খাঁচা শূন্যতায় ভারী,নীলাভ পাখিটির অস্থিরতাও কমেনি,অপেক্ষাও শেষ হয়নি,নীরবে বেজে-ওঠা গানটির সুরও থামেনি।আবার কাছে এলে—ভালোবাসবে তুমি?

নির্জন গহনে: ১৯

৯১.‘আমি আছি’ আর ‘আমি নেই’—এই দুইয়ের সীমানারেখা—এখানেই বুদ্ধি থেমে যায়, চিন্তা নিঃশেষ হয়;এখানেই জন্ম নেয় ‘মহাযোগ’, যেখানে ‘অস্তিত্ব’ আর ‘অনস্তিত্ব’ এক অনির্বচনীয় অভিসারে মিলিত হয়।এই ‘আমি আছি’—নির্বাক, বিশুদ্ধ, নামহীন সত্তা—এটাই প্রথম ধাপ, তোমাকে প্রথমে এখানে পৌঁছাতে হবে, তারপর এইখানে স্থিত হতে হবে বার বার অনুশীলনে।সতর্ক হও! এই স্থানটি বিপজ্জনকভাবে পিচ্ছিল, মন আর বুদ্ধি এত সহজে […]

নির্জন গহনে: ২০

৯৬.ধ্যানে ধরে রাখো—‘আমি আছি’। শব্দহীন, রূপহীন, চিন্তাহীন সেই অনুভব—যেটা প্রথম জানালে—”আমি আছি”। ফিরে যাও স্মৃতির গভীরে—যেখানে প্রথম তুমি সচেতন হলে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে, যখন কোনো নাম ছিল না, পরিচয় ছিল না—কেবল এক মৌন সত্তাবোধ ছিল—সেই আদ্যমুহূর্তের ‘আমি আছি’ ধরে রাখো।যা-কিছু এই ‘আমি’-র সঙ্গে আসে—শরীর, নাম, চিন্তা, গুণ, স্মৃতি—সব ফেলে দাও। শুধু থাকো ওই নিঃশব্দ ‘আমি’-তে।ধ্যান […]

বিষণ্নতা নামানোর সুখ

তুমি পাশ ফিরে শুয়ে— আমার যন্ত্রণা বাড়িয়ো না।আমি কি তোমার উষ্ণতাকে— নিজের করে পেতে পারি?তুমি আমার নিবিড় ঘুমে মিশে থাকো…প্রণয়ের প্রবল আগ্রহে।অপেক্ষার অধীর চুম্বনে ভরিয়ে,আজ তোমার অস্তিত্বকে— প্রগাঢ় অভিলাষে ছুঁয়ে থাকার,অনুমতিটুকু দেবে আমায়?আমার ঠোঁটে— তুমি বুনেছিলে আজন্ম সুখ…যেন বিষণ্নতা নামাতে—তোমার দীর্ঘতর নিঃশ্বাস থেকেছেনিতান্তই অনিচ্ছুক।

নির্জন গহনে: ২১

১০১.এই ‘আমি আছি’—যে-চেতনা তোমার অন্তরে উদিত হয়েছে, সেটাই হলো সেই অন্তঃস্থিত মূলতত্ত্ব—যার মাধ্যমে তুমি অনুভব করো, ভাবো, কর্ম করো, বাঁচো।একবার ভাবো—যদি ‘তুমি’ না থাকতে, তবে এই বিশ্ব, এই অনুভব, এই অভিজ্ঞতা—কিছুই কি তোমার কাছে ঘটতে পারত?তুমি আছ বলেই সবকিছু ঘটছে। এই ‘আছে’ বলেই উদ্ভূত হয় জ্ঞানের, জন্ম নেয় অভিজ্ঞতা। আর এই ‘আমি আছি’—এই জ্ঞান কোনো […]

নির্জন গহনে: ২২

১০৬.পরম বিশ্রান্তি—‘আমি’ ও ‘আমি নেই’-এরও অতীত বিশ্রাম। শ্রেষ্ঠ বিশ্রাম কী? তা হলো—যেখানে ‘আমি আছি’ এবং ‘আমি নেই’—দুই-ই ভুলে যাওয়া যায়।এই পরম বিশ্রামকেই বলে—‘পরম বিশ্রান্তি’। যেখানে সময় নেই, ব্যস্ততা নেই, আত্মপরিচয়ের ছায়াও নেই। না আছে সচেতনতা, না অচেতনতা—আছে কেবল সর্বাতীত নির্জনতা।‘বিশ্রান্তি’ শব্দটি এখানে কেবল শরীরের ক্লান্তি দূর করার বিশ্রাম নয়—এটি চেতনার এক চিরস্থায়ী শান্তি, যেখানে আর […]

ঈশ্বরের আপত্তিতে

শুনছ,আমার মাঝেমধ্যেই মনে হতে থাকে—আচমকা দমবন্ধ লাগছে,শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে,এই বুঝি আমি এক্ষুনি মারা যাব…সবাই জানে,কত কাছের মানুষ রয়েছে আমার—আমি কি তাদের আপন?আমার আপন কে?আমি চাই না, আমার জন্য কেউ একফোঁটাওচোখের জলের অপচয় করুক।তবুও, কেন জানি, তোমার মুখটাইচোখের সামনে ভেসে উঠল!তুমি এসে আমার মাথায় হাত রাখবে—এমনটা চাইতে বড়ো ইচ্ছে জাগে।আমি তো তোমার কেউই নই,আমার সাথে […]

নিঃশ্বাসে ফেরা

রাতজাগার বদভ্যেসটাই—আমার শেষসম্বল হয়ে উঠল!আমার ঘুম হয় না সারারাত…তুমি আচমকা এসে পাশে বসলে!…যেন—আমার অনুভূতির সমস্তটা-জুড়ে।এভাবে তাকিয়ে দেখছ কেন আমায়?তোমার শরীরজুড়ে উৎকণ্ঠা,চোখে বিষণ্নতার ছাপ,ঘরখানি নিকষ কালো আঁধারে নিমজ্জিত,আমাকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখছ না—আমি কি মৃত?রাতের শেষপ্রহরে—অশ্রুসিক্ত চোখদুটোর দিকে এগিয়ে এলে তুমি, আমি তোমার হাতটা একঝটকায় টেনে নিলাম—আমার শরীরের শূন্যতায়।যেন তোমার থেকে বেশি…আমার বুকের মধ্যকার এই তীব্র স্পন্দন,আর […]

তোমার স্মৃতি হাতড়ে

পরিত্যক্ত ফুলের সুঘ্রাণে বিমোহিত হলেই—একাকী অতিক্রম করা যায় না কাঁটার বাগান।কাঁটার আঘাতে জর্জরিত হয়েআমি চিৎকার করে তোমাকেই ডাকছি?নিঃশব্দে সরে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেই—বুকের ভেতরের মানুষটার কান্না থামানো যায় না।অনিশ্চয়তা ভুলেআমি তোমারই হাতটা ধরেছি?তোমাকে ভুলে থাকতে চাইলেই— এক ভীরু আততায়ীয় মতন পলায়ন সম্ভব নয়।নিঃশব্দে এখনওতোমারই স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছি?

আমি ভালো আছি

তুই শুধু ভালো থাকিস, কেমন!তোর ভালোবাসার মানুষটাকে সাথে নিয়েভীষণ আনন্দে থাকিস…আর হ্যাঁ,মনভরে হাসতে ভুলিস না।আমার সামনে তো তুই হাসিস না খুব একটা!তোর আদরমাখা কণ্ঠে— আমার নামটা কি আর শোনা হবে না?জানি, আমি তোকে সুখী করতে পারি না—আমার সামর্থ্য কম,আদৌ আছে কি না, তা-ও জানা নেই।নিয়ম করে…তোর ভালোবাসার মানুষটার সাথেমনের কথাগুলো বলিস স্পষ্ট করে।আমার যে কখনও […]

নিঃশব্দে একসাথে

যেন সব কিছুই নিস্তব্ধ, অনুভূতিরা নিশ্চুপ…কোলাহলে পর্যবসিত।তুমি জানো—আমি আজ কেন এত নীরব?তোমাকে ছুঁয়ে দেখছি না কেন?না কি তুমি আমায় ছুঁয়ে দেখছ না?সময় থমকে দাঁড়াল যেন…আঁধারেও, তোমার চোখজুড়ে—পরিপূর্ণ আবেগ।মৃদু বাতাস বইছে…দুয়ারে দাঁড়িয়ে থেকো না তুমি;এসো, নিঃশব্দে মিশে থাকি।

অপেক্ষার অতলান্ত সূর্যাস্তে

যখন, কখনো আমায় বলো…পরবর্তী সাক্ষাতে তুমি—আমার কপালে তোমার ঠোঁট ছোঁয়াবে…আমার অশ্রুতে তোমার স্মৃতি জমতে দেবে…আমার অভিমান তুমি পাশ ফিরে দেখবে…আমার দীর্ঘশ্বাস তুমি বুকে জড়িয়ে রাখবে…তোমার স্পন্দনে আমার নিঃশ্বাস রাখবে…তোমার স্পর্শ আমার আত্মায় গেঁথে দেবে…আমার শরীরজুড়ে শুধুইতোমার অধিকার থাকবে—আমি বুঝতে পারি না…তখন কী বলতে হয়!কীভাবে তাকাতে হয়!কতটা গভীর আলিঙ্গনে বাঁধতে হয়!শুধু জানি—হয়তো এটাই আমাদের শেষদেখা।তুমি দূরত্ব […]

কখনো দেখা হলে

তোমার বুকের খাঁচার আহত পাখিটি—আজ আমার কাছে এসেছিল,ঠোঁটের কোণে এক চিরকুট বাঁধা…এতক্ষণ সেই চিঠিটাই পড়ছি!শুনেছি, বদলে গেছ তুমি,শুধু মুছতে দাওনি— তোমার হদয়ে আঁকা আমার প্রতিচ্ছবি।কোনো এক ছায়াপথ ধরে—তুমি এসেছিলে আমার কাছে নীরবে,হয়তো আসন্ন মায়ায় আবদ্ধ হতে নয়…শুধুই জানাতে আমায়—ভালো আছ তুমি।ফুরিয়ে যাইনি আমি…তোমার প্রতীক্ষায় রোজ থাকি,কখনো দেখা হলে—লুকিয়ে রেখো না তোমার হাসি।

মুহূর্তবন্দি অনুভূতি

তোমাকে ফিসফিসিয়ে বললাম—তোমার হাত দিয়ে আমার হৃদয় স্পর্শ করো।খুউব আলতো করে— আমার শরীরটা ছুঁয়ে দেখবে একবার?তুমি এত অস্থির হয়ো না…তুমি থাকো কিছুক্ষণ এভাবে—আমার অনুভূতির সবটা জুড়ে,গভীর আলিঙ্গনে।আমি আছি সারাক্ষণই—আমাদের হাতে তো অনেক সময় আছে এখনও।তুমি বুঝতে চাইছ না কেন?আমাদের এই সময়টাই আর নেই।আমাকে বলোনি কেন এক বারও—তোমার কী হয়েছে?তুমি আমার হাতটা ছেড়ে দিলে—আমি সেই যন্ত্রণা […]

তোমাকে খুঁজে না পেলে

বৃষ্টিতে ভিজে তোমায় ছুঁয়ে থাকলে—ভীষণ বেপরোয়া লাগে।মনে হয়, আমার পুরো শরীরে…তোমার দেওয়া সুখটুক সাজিয়ে রাখি। তুমি যখন তোয়ালে দিয়ে খুউব যত্ন করে—আমার ভেজা চুলগুলো আলতো করে মুছে দাও…তখন মনে হয়, এই পৃথিবীরসবচেয়ে সৌভাগ্যবান মেয়েটি আমি। তুমি যখন তোমার হাতটা—ভীষণ জ্বরের ঘোরে…আমার কপালে ছোঁয়াও,মনে হয়, তোমার বুকের ভেতরটাঅজস্র বার স্পর্শ করে আসি। তোমাকে খুঁজে না পেলে…আমি […]

আমার কিছু সীমাবদ্ধতা

তোকে যে আমার কত কথা বলতে ইচ্ছে করে!অথচ, অক্ষমতার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে—ভালোবাসি-টুকু বলতেও বড্ড দ্বিধা হয়!তোকে যে কত কত বার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে!আবার মনে হয়, স্পর্শের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে—সেই আলিঙ্গন কি শুধুই সময়ের অপচয়?তোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে…তবু, অশ্রুর সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে—তোর চোখে মায়া মেশাতেভীষণ অপরাধবোধে ভুগি।তোর কণ্ঠ ছুঁয়ে আদর নিতে ইচ্ছে করে…সময়ের সীমাবদ্ধতা […]

ব্যথার মধুর প্রহার

বুকের ঠিক মাঝখানটায়,কীরকম এক ব্যথা অনুভূত হলো।শুরুর দিকে তা মধুর এক কম্পনের সূচনা করল—যেন কষ্টই চরম সত্যের উপভোগ্য বস্তু।মনের মধ্যে প্রিয় মুখের ভীষণ আসাযাওয়া…এ যেন এক অসহ্য সুখ!অনুভূতির সাথে ব্যথার এক দারুণ সহাবস্থান!যেন আকস্মিকভাবেই প্রতারণা করে বসল—বুকের খাঁচায় রাখা শীতল হৃৎস্পন্দন।সেই গভীর নৈঃশব্দ্যের রাতে…মন্থর স্পন্দন বেপরোয়া গতিতে ছুটতে থাকল,তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকল—অসহ্য ব্যথার প্রহার।শ্বাসরুদ্ধকর […]

প্রস্থানের নিভৃত সংশয়ে

বুকের ভেতরের ঝড়টা থামছে না কেন?স্থিরচিত্তেও যেন—আমি দ্বিধান্বিত।তুমি আমার অশ্রুজুড়ে থেকো না—এ স্মৃতির ভারবহনে আমি ব্যর্থ।তুমি আমায় দেখে অনুমান করতে পারছ—আমার এ ক্ষতবিক্ষত হৃদয়…আরোগ্যের অযোগ্য?তুমি আমায় আর ছুঁয়ে দেখো না—চিরস্থায়ী প্রস্থানের নিভৃত সংশয়ে,আমার অস্তিত্ব বিপন্ন।তুমি কি জানো,আমাদের আর কতটা পথএকসাথে হাঁটতে বাকি ছিল?

এই মুহূর্তে

তোর মনে আছে,আমি চলে আসার সময় তুই দৌড়ে গিয়েতোর টিশার্টটা আমাকে এনে দিয়েছিলি?এই টিশার্টটার দিকে চোখ পড়তেই আজমনের মধ্যে আসা সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।তৎক্ষণাৎ, বুকের মধ্যে টেনে নিলাম তোর দেওয়া টিশার্ট।কেন জানি মনে হয়, ওতে তোর গায়ের গন্ধ লুকিয়ে আছে,আমি জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলেই মনটা হালকা হয়ে যাবে।আমি বোধ হয় তোকে ভুলে কখনোই থাকতে পারব […]

অনুচ্চারিত

তোমাকে বলতে ইচ্ছে করছিল…ভালোবাসি!তাই আগ বাড়িয়ে বলতে গিয়েছিলাম।কী পেলাম ওতে?ব্যস্ত রাস্তায় থমকে দাঁড়ালাম—গাড়িচাপা কুকুরটির দেহ এককোণে পড়ে…আত্মগ্লানি কি জাগবে না ওতে?তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলাম—সেই সন্ধ্যায়, প্রদীপহাতে।আমি একাকী দাঁড়িয়ে…দূরত্ব কি কমেছিল ওতে?

বন্দিত্বে মুক্তির স্বাদ

আমি তোমার কাছ থেকে মুক্তি চেয়ে দেখলাম—এতখানি যন্ত্রণা আমায় আগে কক্ষনো স্পর্শ করেনি।আমি তোমার দৃষ্টিতে নিজেকে বন্দি করে দেখলাম—এতটা অসহায় আমার কখনোই লাগেনি।আমি তোমার নিঃশ্বাসের দূরত্বে বাঁচতে চাইলাম—এতটা গভীর প্রণয়ে আমি কক্ষনো ডুবিনি।আমি তোমার বুকে মাথা রেখে বুঝলাম—এতখানি নিঃসঙ্গ রাস্তায় আমি কক্ষনো হাঁটিনি।আমি তোমায় ভালোবাসতে চাইলাম—এতটা পরাজিত আমি আর কখনো হইনি।আমি তোমার ঘরে আমার আসন […]

উপেক্ষার ভাষ্য

তোমায় ভুলে যাওয়া অসম্ভব—বিচ্যুতির সহজ সমীরণেতোমার নামটি লিখতে পারিনি।তোমায় ভুলে যাব বলছি না—বরং ভুলে থাকতে চাইছি।তোমায় ভুলে থাকছি বাঁচার প্রয়োজনেই।তোমার স্মৃতি ধারণ করতেই—কষ্টে বুকের ভেতরটা তছনছ হয়ে যাচ্ছে…ভালোবাসলেই—একসাথে জীবনটাকে গোছানো যায় না;বরং একা থাকার জন্য প্রস্তুত হতে হয়।তোমার উপেক্ষায়—আমার সম্ভাব্য যন্ত্রণারা কড়া নাড়তেই,জাগতিক সকল সুখ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে…

ভালোবাসার প্রত্যুত্তরে

আমি খুব ভালো করেই জানি,সেদিন রাতে—আমি কেন তোমাকে…একমুহূর্তের জন্যও ছাড়তে চাইছিলাম না!আমার কী ফুল পছন্দ, তুমি জানো না।তবুও কৃষ্ণচূড়া সাথে নিয়ে এলে?তুমি এভাবে অনেকক্ষণ আমার অনুভূতির কবর ছুঁয়ে থাকো…তুমিও কিন্তু, এক বারের জন্যও,আমাকে ছাড়োনি…বরং, আরও বেশি শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলে!কেন করলে এমন?আমার কষ্ট কমাতে?না কি আমার ভালোবাসার প্রত্যুত্তর জানাতে?

বৃষ্টি মুছে

তুমিই কি বাঁচার শিল্প শেখাও?ভাবতে ভীষণ অবাক লাগে…তোমার মতন স্পষ্টবাদী একজন মানুষআমায় বলতে পারে নাজীবন থেকে চলে যেতে!তুমি আমায় করুণার সুরে শুধোলে,যে কয়টা দিন আছ,জীবনকে নতুন করে ভাবতে শিখবে?অট্টহাসিতে বুকের ভেতরটা ফেটে পড়ছে!তোমায় কীভাবে বলব…আমার চোখজুড়ানো ঘুম নামবে কিছুক্ষণ পরেই।বৃষ্টি মুছে বহুকাল পর…গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে চলেছি আমরা।