৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (কালের কণ্ঠ)

৩৬তম বিসিএস প্রিলির আগে যে সময়টা আছে, সেটা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রিলির সাথে মিলে, রিটেনের এমনকিছু পড়াসহ প্রিলির প্রস্তুতি খুব ভালভাবে নেয়া সম্ভব। প্রিলি হচ্ছে রিটেনের পাসপোর্ট। এটাতে পাস করা শুধু নিজের যোগ্যতার উপরেই নির্ভর করে না, সেদিনের ভাগ্যের উপরেও অনেকটুকু নির্ভর করে। প্রিলিতে পাস করাটা যতটা আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, রিটেনে ভাল করাটা ততটাই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। তাই খুব হিসেব করে প্রিলির জন্য প্রস্তুতি নিন। অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের না হয়ে বাসায় অন্তত ১৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করুন। এটা এক দিনে হবে না। চেষ্টা করুন প্রতিদিনের পড়াশোনার সময়টা বাড়াতে। প্রতিদিন আগেরদিনের চাইতে অন্তত ১৫ মিনিট হলেও বেশি পড়ুন। একটা বড় পড়া শেষ করার টার্গেট পূরণ করতে পারলে নিজেকে ছোটখাটো কিছু উপহার দিন; যেমন, বই-কেনা, মুভি-দেখা, ঘুরে-আসা, ফেসবুকিং-করা, ফোনে কথা-বলা — এরকমকিছু। এতে পড়ার উৎসাহ আর গতি দুইই বাড়বে। মানুষ তো প্রণোদনায় কাজ করে। একটা পড়া পড়তে-পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে অন্য একটা সহজ পড়া হাতে নিন। আপনি যা হতে চান, কিছু সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন, সেটা হয়ে গেলে আপনার আর আপনার চারপাশের মানুষের কেমন লাগবে, জীবনটা কেমন করে বদলে যাবে। এতে পড়ার ক্লান্তি কেটে যাবে অনেকখানি। মনোযোগ নষ্ট করে, এমন কোনোকিছু হাতের কাছে না রেখে পড়তে বসুন।

অনেক কথা হল। এখন গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা নিয়ে বলছি।

গাণিতিক যুক্তি:

পরীক্ষায় যে ম্যাথস আসে, সেগুলি সহজ, আপনি নিশ্চয়ই পারবেন; কিন্তু হয়তো (গড়ে) ১ মিনিটে পারবেন না। এটার জন্য আগে থেকে প্র্যাকটিস করার সময় শর্টকাটে সলভ করা শিখতে হবে। প্রিলিতে এমন একটাও ম্যাথস আসে না, যেটা শর্টকাটে করা যায় না। পদ্ধতি শিখে নিন, নিজের পদ্ধতি নিজে বানিয়ে নিতে পারলে খুব ভাল হয়, তাহলে আর ওই ধরনের ম্যাথস ভুল হবে না। শর্টকাট পদ্ধতির কোন গ্রামার নাই, আপনার উদ্ভাবিত পদ্ধতিটা আরেক জনেরটার সাথে নাও মিলতে পারে, অংক মিললেই হল। বইয়ের পাতায়-পাতায় প্রশ্নের পাশেই শর্টকাট ফর্মুলা লিখে মান বসিয়ে সলভ করুন। শুধু ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আর প্রশ্নের পাশের ছোট জায়গাটি ব্যবহার করে আপনি যদি সব ম্যাথস সলভ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, তবে আমি বলব, আপনার প্রস্তুতি বেশ ভাল। প্রিলির প্রায় ম্যাথসই ব্যাকট্র্যাকিং মেথডে করা যায়। মানে, অপশনের উত্তরগুলি সূত্রে কিংবা প্রশ্নে বসিয়ে সলভ করা যায়। এছাড়া POE মেথড কাজে লাগাতে পারেন। এটি হল, ৪টি অপশনের মধ্যে যে ২টি উত্তর হওয়ার সম্ভাবনা কম, সেগুলি বাদ দিয়ে বাকি দুটো নিয়ে ভাবা। এই দুটি টেকনিক ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে খুব কম সময়ে ম্যাথস সলভ করতে পারবেন।

ম্যাথসের জন্য অনেকেই বোর্ডের টেক্সট বইগুলি পড়েন। এতে সমস্যা হল, বাড়তি অনেককিছু পড়া হয়ে যাবে, যেগুলি পড়ার আদৌ কোন দরকার নেই। অত সময়ও পাবেন না। তার চাইতে কমপক্ষে দুটো ভাল গাইড বইয়ের কিংবা জব সল্যুশনের একেবারে সব ম্যাথস সলভ করে ফেলতে পারেন। ভাল বই মানে, প্র্যাকটিস করার জন্য অনেকবেশি প্রশ্ন আছে, এমন বই। কোনও চ্যাপ্টার শুরু করলে শেষ না করে টেবিল থেকে উঠবেন না। প্রিলির পড়া পড়তে হয় একটানা, বাসা থেকে বের না হয়ে, টেবিল থেকে না উঠে। এরপর দুটো মডেল টেস্টের বইয়ের সব টেস্ট দিন। আপনি সব ম্যাথসই পারেন, কিন্তু খুব দ্রুত সলভ করতে পারেন না, এভাবে প্রস্তুতি নেয়া আর না-নেয়া একই কথা।

মানসিক দক্ষতা:

এ অংশের প্রশ্নগুলো একটু ট্রিকি হওয়ারই কথা। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালভাবে প্রশ্ন পড়ে, পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে উত্তর করতে হবে। এ অংশের প্রশ্ন হবে সহজ, এতটাই সহজ যে কঠিনের চাইতেও কঠিন। ৩-৪ সেট গাইড বই কিনুন, সাথে ৩-৪টা আইকিউ টেস্টের বই। এগুলি ছাড়াও আগের বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সলভ করে ফেলুন। এ অংশে ফুল মার্কস পাবেন না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন। গাইড বই, আইকিউ টেস্টের বই, আর গুগলে ইংরেজিতে ‘ভার্বাল/ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট/ মেকানিক্যাল রিজনিং/ স্পেস রিলেশনস/ নিউমারিক্যাল অ্যাবিলিটি/ স্পেলিং অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্র্যাকটিস’ কিংবা ‘ভার্বাল/ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট/ মেকানিক্যাল রিজনিং/ স্পেস রিলেশনস/ নিউমারিক্যাল অ্যাবিলিটি/ স্পেলিং অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট’ লিখে সার্চ করে বিভিন্ন সাইটে ঢুকে নিয়মিত সলভ করুন। এ অংশে প্রশ্ন ‘কমন’ আসার কথা নয়, তাই ভাল করতে হলে অনেক বেশি প্র্যাকটিস করার কোন বিকল্প নেই। এ অংশে ভাল করার জন্য নলেজের চাইতে কমনসেন্স বেশি কাজে লাগবে।

এ লেখাটি ১৬ সেপ্টেম্বর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতায় ছাপা হয়েছিল। লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:

http://www.kalerkantho.com/print-edition/chakriache/2015/09/16/269077