হ্যাঁ-না’র দোলাচল




ধ্যান আর তার ফলে জাগরণ মানুষের সিদ্ধান্ত নেবার ধরন বদলে দেয়। আগে যেখানে শুধু যুক্তি, হিসেব, তালিকা, “হ্যাঁ কি না” নিয়ে দ্বিধা চলত, সেখানে ধ্যান এক অদ্ভুত সহজ ভাব আনে। মনের কোলাহল থেমে যায়, আর উঠে আসে গভীর অন্তর্লীন শান্তি। এই শান্তিই খুলে দেয় বহুদিনের বিস্মৃত এক ক্ষমতার দরজা—অন্তঃপ্রেরণা বা intuition।

এটি কোনো সাধারণ আন্দাজ নয়, বরং একধরনের প্রজ্ঞাবান অন্তর্দৃষ্টি। এটি পরিস্থিতিকে একঝলকেই উপলব্ধি করতে পারে। যেখানে যুক্তি ধাপে ধাপে কারণ-প্রমাণ খোঁজে, সেখানে এই অন্তঃপ্রেরণা বৃত্তের মতো—অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ একসাথেই উপলব্ধির মধ্যে থাকে।

এখানেই অহম্‌ বা ইগোর সমস্যা। অহম্‌ চায় সব কিছু “ভাবতে” আর নিয়ন্ত্রণ করতে। ধ্যানের নির্দেশ হলো মনকে শান্ত করা—কিন্তু অহম্‌-এর কাছে শান্ত মন মানেই মৃত্যু। তাই এটি বাধা দেয়, ভয় দেখায়। তবে মজার ব্যাপার হলো—যখন অন্তঃপ্রেরণার দ্বার খুলে যায়, আর ইগো তার পুরোনো কাজ হারায়, তখন সে-ও নতুন সঙ্গীকে খুশিমনে মেনে নেয়।

এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে—“Should I or shouldn’t I?” ভাবুন, শহরের কোনো রাস্তায় হাঁটছেন। হঠাৎ একটি শিশু ছুটে গেল গাড়ির সামনে। একমুহূর্ত দেরি না করে, নিজের বিপদ না ভেবে আপনি দৌড়ে গিয়ে তাকে তুলে নিলেন। তখন কোনো হিসেব নেই, কোনো “হ্যাঁ-না” নেই। এখানে কাজ করেছে আপনার wisdom intuition—যা হচ্ছে প্রকৃত অভিজ্ঞতার মুহূর্ত।

আরেকটি দিক হলো কর্ম বা সঠিক কাজ (karma)। যখন মানুষ অন্তর্গতভাবে সুষম, জীবন-সামঞ্জস্যে থাকে, তখন প্রতিটি পরিস্থিতিতে ঠিক কাজটি কী, তা সহজেই জানা যায়। সেখানে কোনো জটিল চিন্তা, কোনো “should I or shouldn’t I” থাকে না।

ধ্যান মনের শব্দকে স্তব্ধ করে, আর সেই নীরবতায় উঠে আসে অন্তঃপ্রেরণা। তখন সিদ্ধান্ত আর দ্বিধার খেলা থাকে না—বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে যায় সঠিক কাজ।