হন্তারক শব্দ

তমিজ সাহেবের প্রেস। সামসু সিসার অক্ষরে হাত রাখে। শব্দ গাঁথে সামসু। দুঃখের শব্দ। সুখের শব্দ। অজস্র শব্দ। শব্দের মিছিল সামসুর হাতের মুঠোয়। শব্দের গলা টিপে ধরে আছে সামসু।




সামসুর একেক বার মনে হয়, সে এখন রাজা। শব্দগুলো নিয়ে সে খেলায় মাততে চায়; অথচ তার দুঃখ...শব্দগুলো তার নিয়ন্ত্রণে নেই। হাতের আঙুল এক শব্দ থেকে অন্য শব্দের কণ্ঠ স্পর্শ করে, কিন্তু আঙুল স্থির হতে পারে না। শব্দের ওপর সামসুর আঙুল পুরো অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। কখনও আবার শব্দগুলো ঠিক উঠে আসে না! বেয়াড়া ভারি। কম্পোজিটর সামসুর মনে তাই দুঃখ।




আসলে সে কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যেমন সামসুর দুঃখ হয়, সে রাসিদার উপরও নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি। কালো মেয়ে রাসিদা সামসুকে আলো দেখিয়েছে। ছোট্ট ঘর বাঁধার স্বপ্ন জাগিয়েছে। কালো সিসার টাইপগুলো সামসুর কাছে কোনো কোনো সময় রাসিদার শরীর হয়ে পড়ে। কেইসের ওপর বসে রাসিদা যেন শরীর রাখে। সামসুর শব্দ গাঁথতে ভুল হয়ে যায়।




সামসু শব্দ শোনে।




: তুমি কবে আইবা?




: টাকা জমুক, আইমু।




: আমার বিয়া দেওনের লাইগা বাজান উইঠা-পইড়া লাগসে।




: লাগুক। ভাইঙা দিমু।




: কেমনে?




: উড়া চিঠি লিইখা দিমু। কমু, রাসিদার বিয়া অইছে।




: না, না, তা কইয়ো না। বাজান আমারে মাইরা ফালাইব।




: অ, বুঝসি। তুমি আমারে চাও না।




: কী যে কও! তোমারে ছাইড়া আমার বাঁচন নাই।




মুখ লুকোয় রাসিদা সামসুর বুকে। “আমার কপালে ম্যালা দুঃখ আছে।” রাসিদা কাঁদে।




সামসুর শব্দ গাঁথতে ভুল হয়। তমিজ সাহেবের তাড়া আসে। “কী, সামসু মিয়া, কাম ছাইড়া কি তুমিও কবি অইলা?”




সামসু নড়ে-চড়ে বসে। সামসুর কেইসে রাসিদার শরীর নেই। কোনো শব্দ নেই। সামসুর হাতের আঙুল সিসার শব্দের গলা টিপে ধরে।
Content Protection by DMCA.com