হতে চেয়েছিলাম রবীন্দ্রনাথের কলমের কালি। চাইতাম, আমার বিচরণ হোক শব্দে শব্দে, কবিতার তালে-বেতালে, কিংবা গল্পের থরে-বিথরে। হতে চেয়েছিলাম কালোরঙা বড়ো একটা পিয়ানো, সন্ধে নামলেই বেজে উঠব---কখনো বিষাদে, কখনোবা হরষে। কখনো বিষাদি সুরে গেয়ে উঠতাম আগুনের গান কিংবা হিমশীতল পঙ্ক্তিমালা, কখনোবা হরষে তাল তুলতাম মাতাল প্রেমের। হতে চাইতাম একজোড়া উচ্ছল পায়ের ঝুমুর, উচ্ছ্বাসে কিংবা বিষণ্ণতায় নেচে উঠতাম জীবনমঞ্চে। হতে চাইতাম একটা বাবুইপাখি, ঘর বাঁধতাম উঁচু কোনো মগডালে, বাতাস বইলেই নুয়ে পড়তাম প্রিয়ার কাঁধে। ডানা ঝাপটে উড়ে চলে যেতাম পৃথিবীর এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে, সাইবেরিয়া থেকে চীন, জাপান কিংবা উত্তর আফ্রিকায়। আমি শুধু মানুষ হতে চাইনি। মানুষ হবার যত দায় মেটাতে হয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, তত দায় নিয়ে বাঁচতে হয় না একটা পিঁপড়েকেও। অথচ দেখো, আমি যা হতে চাইনি, তা-ই হয়েছি; এক মানুষ বাদে আর কিছুই হতে পারিনি আমি। এ জন্মের দায় কাঁধে বয়ে চলছি আজীবন, ঠিক যেমনি করে পিঁপড়ে তার ওজনেরও দশগুণ ভারী বোঝা কাঁধে বয়ে চলে। মাঝে মাঝে ভাবি, আমি বোধ হয় মানুষরূপী কোনো পিঁপড়ে।