: শুনেছি...ইদানীং নাকি সিগারেট ধরেছ? : শুনেছ যখন, তখন ধরেছি হয়তো। : আচ্ছা, তুমি কি সহজ করে কথা বলতেই জানো না? না কি ইচ্ছে করেই বলো না? না কি জানো, কিন্তু আমার সাথে বলো না? কোনটা? : হা হা হা...। সহজ কথা সহজ করিয়া যায় না যে বলা! জানো না? : না। : কী বলছ! তোমার মনের মানুষই তো বলে গিয়েছেন! আর তুমি কিনা জানোই না! সে কী কথা! : হুম, জানি না। : তোমার রবি জানলে কষ্ট পাবেন কিন্তু খুব। : তুমি কিন্তু আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ। : কোন ব্যাপারে, বলো তো? : এই যে তোমাকে যেটা জিজ্ঞেস করলাম। : কী জিজ্ঞেস করেছিলে, আবার একটু বলো তো, মনে করতে পারছি না! : ঢং কোরো না। : ঢং কই করলাম! কী মুশকিল! আমায় কি আর ঢং করে সং সাজলে মানায়, প্রিয়তমা! : না না, তুমি তো সুপুরুষ! নিষ্ঠুর, নির্দয় সুপুরুষ! তোমায় কি আর এসবে মানায় নাকি! আর হ্যাঁ, আমি কারও প্রিয়তমা নই। আমায় এসব বলে ডাকবে না। : হুম। সুপুরষই তো! : এই তো বুঝেছ...বাহ্! তুমি তো দেখি এখন এক বারেই সব কথা বুঝতে শিখে গেছ! বেশ বেশ! : বাচ্চা মেয়েটা দেখতে দেখতে বড়ো হয়ে গেল! : যুবতী সে এখন, তাই তো, নয় কি? : জানি না। তা, কারও প্রিয়তমা নও কেন? : তুমি জানো না, তাই না! : না তো! কী হয়েছে একটু বিশদ আকারে বলো তো দেখি? : তোমার আবার সময় আছে নাকি কিছু শুনবার! আগে তো ছিল না কখনওই! অন্তত আমার জন্য তো কখনওই ছিল না! ২৪ ঘণ্টায় আমার জন্য তোমার ১ ঘণ্টা সময়ও মেলেনি কখনও! একটু সময় চেয়েছিলাম তোমার কাছ থেকে সেবার, তা নিয়ে আমায় কত কী বললে, লিখলে...মনে নেই? : বলেছিলাম নাকি! আবার লিখেওছিলাম! সব্বোনাশ! অন্যায় করে ফেলেছি তো তাহলে! তা, কী দণ্ড দেবেন আমায়, বিচারপতি ম্যাম? : মৃত্যুদণ্ড! : যাহ্! একটুখানি সময় না দেবার অপরাধেই মৃত্যুদণ্ড! তাহলে বাকি অপরাধ করব কী করে! ভারি নিষ্ঠুর বিচারপতি দেখছি! : হুম…ভালো। তা-ই আমি! : আহা! এমন করতে আছে? পড়োনি...ওই যে...দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে...না...কী যেন...এরকমই একটা কিছু আরকি! মনে নেই। বলো তো একটু? কবে পড়েছি...তুমি তো কিছু দিন আগেই পড়লে, বলো তো দেখি? : মনে নেই। সারমর্ম মনে আছে। : হুম, মনে থাকবে না তো! পড়াশুনো তো আর করবে না। শুধু আমাকে মনে করলে চলবে? বইকেও তো একটু মনে করতে হবে, না কি! ফাঁকিবাজ মেয়ে একটা! : আমি তোমাকে এখন আর মনে করি না। : ওহ্! আচ্ছা। : কী? : না না, কিছু না। তা তুমি বললে না তো কারও প্রিয়তমা না হয়ে এরকম সন্ন্যাসিনী হলে কেমন করে? : খুব, না? ভালো লাগছে খুব আমাকে এরকম মজার একটা বস্তু বানিয়ে কথা বলতে? গুরুত্বই তো দাও না তুমি আমার কোনও কথায়! : কী বলো! তোমার কথায় আমি কখনও গুরুত্ব না দিয়ে পারি? তুমিই বলো! ভুল বুঝো না, প্লিজ! : তোমাকে আমি বুঝতেই পারি না! : হা হা হা! সব এখনই বুঝে ফেললে বাকি জীবনটা কী করবে, হুঁ? বোকা মেয়েটা! : হ্যাঁ, জানি, আমি বোকা। নাহলে কী আর... : নাহলে? নাহলে…কী? : কিছু না। : হুম! বুঝলাম। এবার উত্তরটা দাও তো। : উত্তর আর কী! অজানা তো নয় তোমার! তা-ও আবার জানতে কেন চাও! আমার প্রিয়তম হারিয়ে গেছে! : ধুউর! প্রিয়তমা হতে আবার প্রিয়তমকে থাকতেই হয় নাকি! : তুমি আবারও প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে নিলে। সিগারেট কেন খাচ্ছ, এখনও বললে না! : যাহ্! আমি অন্যের পয়সায় সিগারেট খাই, এ কথা তোমায় কে বলল? আমার পয়সায় আমি যদি খেয়ে থাকি, তাতে কি কারও কোনও সমস্যা হওয়ার কথা, বলো তো! : হঠাৎ সিগারেট কেন! তুমি তো আগে কখনওই খেতে না! : খেতাম না বলে কখনওই খাব না বা খেতে পারব না, এমন তো কিছু নয়, তাই না! : আমি যা শুনেছি, তার মানে সেটাই ঠিক? : কী জানি! কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, কিছুই জানি না! এই পৃথিবীতে কোনও ভুল ঠিক নেই। : এরকম কেন তুমি? : কীরকম! : সবসময় এরকমই করো তুমি আমার সাথে, ভালো লাগে না। তুমি সিগারেট কেন খাও? ক্ষতি ছাড়া উপকারটা কী হয় এতে? আর কীসের অত কষ্ট তোমার! যা যা চেয়েছ, সবই তো পেয়েছ! এখন তো আর আমি নেই, তোমাকে বিরক্তও করি না, তোমার তো এখন অনেক ভালো থাকবার কথা। এত সুন্দর জীবন নিয়েও কোন কষ্টে তুমি হাতে সিগারেট নিলে? : কষ্ট, ভালোথাকা এগুলোর বিভিন্ন রকমের সংজ্ঞা আছে, জানো? সবসময়, যা দেখা যায়, তা সত্যি হয় না। সবসময়, যা সত্যি, তা প্রকাশ পায় না। সবসময়, যা ভালোথাকা, তা আসলে ভালোথাকা নয়। আরও একটু বড়ো হও। মনের বয়সটা বাড়ুক, বুঝবে সবটা। এখনও তো ছোট, তোমার বয়সে আমিও এমনই ছিলাম। : আমি এত বুঝি না। বুঝতে চাইও না। আমি তোমার মতো ঘুরিয়ে কথাও বলি না। সোজাসাপটাভাবে বলে দিই। : আচ্ছা। তা-ই বলবে নাহয়। এবার একটা কথা বলো তো...এত দিন বাদে যে ফোন করলে, তার কি এই একটাই কারণ? না কি অন্য কোনও কারণও আছে? : কী কারণ থাকবে আর! : না, আগে তো একটু পর পরই বাহানা বানিয়ে এটা ওটা বলে ঠিকই ফোন করতে! থাকতেই পারতে না আমায় ছাড়া! এখন পারো নিশ্চয়ই! : হুম, খুব পারি। আগে পারিনি বলে এখনও পারব না কেন ভাবছ? সব তুমি একাই পারো নাকি! : বুঝলাম। নতুন মানুষ এল তাহলে? সে নিশ্চয়ই আমার মতো খারাপ মানুষ নয়। তোমাকে খুব ভালোবাসে, সময় দেয়, তোমার খেয়াল রাখে, তোমায় ভালো রাখে...ঠিক যেমনটা তুমি চাইতে! : তোমার কাছে আমি কিছুই চাইতাম না! আর যা চাইতাম, তা তুমি কোনওদিনই দিতে পারতে না, কারণ তুমি তা বুঝতেই কোনওদিন পারোনি। : নতুন মানুষের কথা জানতে চেয়েছিলাম। : কী দরকার? কী করবে জেনে? কিছু যায় আসে আদৌ তোমার ওতে? আমায় কেউ ভালো রাখুক না রাখুক, বা আমি ভালো থাকি না থাকি, ওসবে তোমার কী! তোমার তো শান্তি! অন্তত তোমার তো আমায় ভালোরাখার কোনও দায়বদ্ধতা নেই! মুক্ত তুমি! এটাই তো চেয়েছিলে! : হা হা হা! হ্যাঁ, শান্তিই তো! অপার শান্তি! মুক্তি দিয়ে দিয়েছ, মুক্তবিহঙ্গ হয়েছি, এখন আর কীসের অশান্তি! : ভুল বললে। আমি তোমাকে মুক্তি দিইনি, তুমি দিতে বাধ্য করেছ। তুমি এটাই চেয়েছিলে, হ্যাঁ? : ও-ই হলো আরকি! তুমি দাও, আর আমি চাই, আদতে তো ব্যাপারটা মুক্তিই! : ভালো। : হুম। : সিগারেটটা ছেড়ে দিয়ো পারলে। : কেন? ছেড়ে দেবো কেন? তুমি একথা বলছ? এই কিছুক্ষণ আগেই তোমায় ছেড়ে যেতে বলেছিলাম বলে কত কী বললে, এখন আমায় কাউকে ছেড়ে দিতে বলছ? ওর খারাপ লাগবে না? : আমি তোমায় সিগারেটটা ছাড়তে বলেছি শুধু। : আমিও তো সেটাই বললাম। : কী হয় ওটা খেয়ে? কী উপকার আছে বলো? ক্ষতি ছাড়া? : বাহ্! আমি উপকারলাভের খাতা খুলে বসেছি, সেকথা কবে বললাম! : ক্ষতির খাতা তো খুলেছ! : হা হা হা...। : হাসবে না। হাসবার মতো কিছু বলিনি আমি। : যাহ্ বাবা! হাসতেও মানা! : আমি বারণ করলেই যেন শোনো তুমি আমার সব কথা? : কোনটা শুনতাম না, বলো? : তাই নাকি? তাহলে আজ এভাবে এ সময়ে এমন একটা বিষয়ে এভাবে কথা বলতে হতো না! : হয়তো! হতে পারে কোনও রাস্তায়, কোনও হুডতোলা এক রিকশায়, আমি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে, তুমি দেখলে না। রোদে-পোড়া এ রোমিও চেহারা, তুমি বুঝলে না আমার ইশারা, মন বলে যদি থামতে, তুমি থামলে না। তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে, যদি ডাকতে ভালোবেসে, আমি তোমার চোখে তাকানোর, সাহস পেতাম না। আমার জড়সড় এই শরীরে, তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে, প্রেম, না কি পাগলামি, বলতে পারব না। লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক, আমি তোমার পিছু ছাড়ব না, তোমার পিছু ছাড়বো না। ...শুনেছ গানটা? কদিন আগেই বেরিয়েছে। : হুম শুনেছি। : ভালো না গানটা? : হুম। : ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতা পড়েছ? : পড়িনি, শুনেছি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শুনলে মনে হয়, আহা, যেন স্বর্গপ্রাপ্তি হলো! : আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকি? : রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে। : বিশ্বাস রাখি ইচ্ছে’য়, বিশ্বাস রাখি মোহে, বিশ্বাস রাখি তোমাকে চাওয়ার একরোখা বিদ্রোহে। : এই প্রেমহীন সময়ে বলছি তোমায় ভালোবাসি, এই অন্ধকারেই চলো জোনাকিকে ডেকে নিয়ে আসি। ...ভালোবাসি তোমায়! গানটা শুনেছ? কবির সুমন! : হুম। আমি তোমাকে পেয়েছি, তাই দূরে রাখি কবরের ডাক, জ্বলে জোনাকির রোশনাই, এই রাত আমাদের থাক। : ঠিক আছে। অনেক সময় নষ্ট করলাম তোমার! : হুম, অনেক! : হুম, জানি। : অনেক ভালো থেকো তুমি। : তোমায় আমায় নিয়ে ভাবতে হবে না। সিগারেটটা ছেড়ে দিয়ো। : কেন? ছেড়ে দিলে কী হবে? তুমি ফিরে আসবে? : তুমি কখনও চাওনি সেটা। : ওহ্! তাই তো! তাহলে আর ছেড়ে দিই কী করে বলো...সিগারেট! : ভালো। ক্ষতি হলে তোমার হবে, আমার কী! : কিছু না হলেই সবার মঙ্গল! : আমি তোমার মতো এত উদার নই! সবার মঙ্গল তুমি ভাবতে পারো, আমি না! : হুম। কাউকে-না-কাউকে তো ভাবতেই হতো,…বলো! : ভালো থেকো। তোমার মনের মতো এবং তোমার যোগ্য কাউকে নিয়ে খুব ভালো থেকো। : হা হা হা। পাগলি একটা! ঠিক আছে। তোমার যা ইচ্ছে...। : আমার ইচ্ছেতে আজ অবধি কিচ্ছু হয়নি। এসব বাজে না বকলেই ভালো হয়! : হুম। ঠিক আছে তাহলে। আর বকলাম না। রাখো এবার তাহলে। দেখি, আমি একটু ঘুমিয়ে নিই। কাজে বেরোতে হবে তো সক্কালবেলা আবার। তোমারও তো ক্লাস আছে, না? : তোমার এসব মনে আছে? আহা, কৃতার্থ হলাম! : হা হা হা…! পাগলি একটা! আমাকে কথা শুনিয়ে তুমি ভালো থাকলে আমার অসুবিধে নেই। সানন্দে শিরোধার্য, মহাশয়া! : আমি যা সত্যি, তা-ই বলেছি। : হ্যাঁ হ্যাঁ, যুধিষ্ঠিরের ধর্মপুত্রী! হা হা হা…! : ভালো হয়েছে। তবুও তোমার তোমার মতো মিথ্যেবাদী তো নই। : আমি মিথ্যেবাদী! : প্রতারক একটা! : আচ্ছা। তা-ই সই! : তা ছাড়া আর কী-ইবা করবে তুমি! : আমি যে অপারগ! : বাজে কথা বলে আমায় আরও রাগিয়ে দিয়ো না। : তোমায় রাগানোর মতো আর কিছুতে এত ভালো লাগে নাকি! কী করা যায় বলো তো? এখন উপায়? : তোমার মাথা! : হুম। চিবিয়ে খেয়ে ফেলো! : মেরে মাথাটা একদম ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়! : পূরণ করে ফেলো! ইচ্ছে বাকি রাখতে নেই! : ঘুমোবো। ছাড়ছি ফোন। এসব আজেবাজে বকে ঘুম নষ্ট করার ইচ্ছে নেই। : হুম। বুদ্ধিমতী মেয়ে! : শুভ রাত্রি! : অশুভ অনাগত সকাল তোমার! : তুমি বললেই হলো? : হবে না? আহা! হলে কী যে ভালো হতো! : ঘুমিয়ে পড়ছি। ভালো থেকো। : হুম। তুমি বলেছ যখন, ভালো তো তখন থাকতেই হবে! তুমিও ভালো থেকো। : টা টা...। ...কল এন্ডেড।