বিবেকের জন্ম
এ কী অপূর্ব প্রশুভ লগন, নবযাত্রার দিন!
জীবন-প্রসূন প্রস্ফুটনের বিধাতা-বাঞ্ছিত বেলা—
হে দেবশিশু! তুমি বসুধার হলে স্নেহ-অঞ্চলাসীন,
সৃষ্টির বুকে সাধতে জীবনের নূতন নূতন খেলা!
এলে নীরবে ধূলিতলে যেই স্বপনের ছবি এঁকে,
এই জনমের বিকাশ-লগনে নবীন চেতনা বয়ে,
সেই স্বপন তোমার হলো সার্থক সূর্যপরশ মেখে,
শ্রীরামকৃষ্ণের দৃষ্টিদীপন বোধমণ্ডলে গেল রয়ে।
ফুলের ভুবনে বাজল সেদিন নব-উৎসব-বাঁশি,
শ্রাবণগগনে বিদ্যুৎরেখায় জেগে ওঠে রামধনু,
আকাশে আকাশে ঝরে উছলে গ্রহতারকার হাসি,
নিলে জনম তুমি ধরণীবুকে…ধরলে নূতন তনু!
পারেনি বাঁধতে সত্তাকে তোমার আঁধারের প্রতিবেশ,
ভবের ভ্রান্তি, অন্ধ-কামনা, বাসনার মায়াজাল,
খুঁজে পেলে তুমি পরমের মাঝে প্রিয় পরিজন-দেশ,
ঋৎ-তপনের চেতনার রঙে রাঙালে আপন ভাল।
বহু জনমের ধারা বয়ে এলে দিব্যজীবন পথে,
শরণাগতির মহামাধুর্যে ঈশ্বরে ভালোবেসে,
অতিমানসের অবতার তুমি সারথি চৈত্যরথে,
পথ তোমার পেল খুঁজে দিশা রামকৃষ্ণতলে এসে।
আলোর পিয়াসী ধন্য তুমি হে, শ্রীমায়ের পরশে,
বটের মতো হলে বিকশিত শ্রীসারদাচরণতলে,
রামকৃষ্ণজ্যোতির আবেশে হলে পূর্ণ সাধনারসে,
শরণ-সাধনে চৈত্যচেতনে তাঁদেরই কৃপার বলে।
দূর থেকে দেখি বেলুড় মঠের সাধক-মুকুলগুলি,
মুগ্ধ দু-চোখে—মায়াপৃথিবীর দেবসন্তানদল,
যাঁদের সাধনে হলো মধুময় ধূসর ধরণীধূলি,
ভাবী জগতের স্বর্ণালেখ্য তোমার দীপ্তি-সমুজ্জ্বল।
এ পূত-লগনে জাগল আমার স্মৃতিমালঞ্চে আজি,
কৃতজ্ঞতার প্রণতিকুসুম—শ্রদ্ধাসুরভি-ঢালা,
পুরো জীবনের তন্ত্রীতে সুর ভরল শৈশব-সাজি,
বৃদ্ধি-ঋদ্ধি…উৎস একই—তোমারি অসীম-মালা।
ভাবি বিস্ময়ে, ছিল ওটুক আয়ু মহাজীবনে বাঁধা!
তোমার জীবন-স্বপ্ন-সাধনা শ্রান্তি-ক্লান্তিহীন…
চিরসত্যকে দিতে দেখিয়ে; অমৃতমন্ত্রে সাধা—
ভাস্বতী গীতিছন্দে বেজেছে কর্মযোগের বীণ।
অমল হাসির সরস আনন, আঁখিতে মাধুরী মাখা,
উদারচিত্ত, বোধ মুক্ত-মরমী, স্নেহসুধা-প্রীতিময়!
প্রণাম তোমায়, হে অভীপ্সিত, সবিতাসারণ-ঢাকা!
জানুয়ারি বারো এনে দিল আহা মানুষের মহাজয়!