স্বাদোত্তীর্ণ ধূসরতা


আমি ভীষণ কেঁদেছি, অপমানিত হয়েছি, এমনকি ভিক্ষাবৃত্তি করেও কাটিয়েছি দিনের পর দিন।
তবুও, তোমাকে ভালোবাসতে ভুলে যাইনি।
কী করে যাই, বলো? এক তোমাকে ভালোবাসা বাদে আর কোনও কাজই যে নেই আমার!


এক তোমাকেই কল্পনার রঙে মাখিয়ে ফেলতে গিয়ে
আমার সফেদ সাদা পাঞ্জাবিতেও ছোপ ছোপ রং লেগে গেছে এই দীর্ঘ দুপুরবেলায়।
আমি জানি, তোমার এতটুকুও প্রয়োজন নেই আমাকে কিংবা আমার ভালোবাসাকে।
আমাকে ছাড়াও তোমার দিন-রাত চমৎকার কেটে যায় - যাচ্ছে, ওসব আমি খুব বুঝতে পারি।
তাই বলে তোমাকে ভালোবাসা থামিয়ে দিতে পারছি আর কই?


আমার ভালোবাসার মানুষটি আমাকে ভালোবাসে না, বুঝলাম।
তাই বলে কি আমি তাকে ভালোবাসা ছেড়ে দেবো? হয় ওরকম?
এই অথর্বতম নিয়মটা মেনে কেউ কাউকে ছেড়ে দিতে কিংবা ভুলে যেতে পেরেছে আজ অবধি?


তোমাকে ভালোবেসে যাওয়ার একমাত্র শর্তই যখন দূরত্ব,
তখন দূরেই নাহয় থাকি! এই দূরে থেকেই সাঁকোটা বাঁধি!
যে দূরত্ব চোখে দেখা যায়, ওতে কত যে মিথ্যে লুকিয়ে থাকে, জানতে যদি!
মানুষ হাত ছেড়ে দেয়, তবু দাবিটা ছাড়তে পারে কি মন থেকে এত সহজে!


এতই সহজ ভুলে যাওয়া?
তা-ই যদি হতো, তবে তো পৃথিবীর কত মানুষই দিব্যি ভালো থাকতে পারত!
রাত-বিরাতে কারুরই হুট করে ঘুম ভেঙে যেত না,
অমন বুক ধড়ফড় করত না, যখন তখন চোখের জলটা গড়িয়েও পড়ত না।
মানুষের খোঁজ মানুষ জানে না, বালিশ জানে!


তুমি তো অনেক কিছুরই হিসেব করো! এই বয়সেই কত্ত হিসেব করতে শিখে গেছ, তাই না?
অবশ্য জীবন এরকমই! না শিখিয়ে পড়িয়ে কাউকেই এমনি এমনি ছেড়ে দেয় না!
তুমি একা থাকতে শিখে গেছ, রাঁধতে শিখে গেছ, নিজেকে গুছিয়ে রাখতে শিখে গেছ।
এসব ভাবনা আমাকে খুব স্বস্তি দেয়, জানো?


তুমি কারও উপর নির্ভর করে বাঁচবে, এটা মানতে আমি পারবই না!
জানো, নির্ভরতার চেয়ে মৃত্যুও ঢের ভালো। এই শিক্ষাটাও জীবনই আমাকে দিয়েছে।
তুমি বাঁচবে মাথা উঁচু করে, নাক উঁচু করে, বুক উঁচু করে। কারও ধার কেন তুমি ধারবে!


ওসব ধার ধারার ব্যাপার-স্যাপার তো আমার কাজ! ভালো যে আমি বেসেছি!
ভালো একবার বেসে ফেললে যে মাথাটা নিচুই রাখতে হয়।
আহা, বুঝতে যদি...মাথাটা এমন নিচু রাখতে গেলে মনকে কতটা উঁচুতে তুলে ফেলতে হয়!


একদিন তুমিও মাথা নিচু রেখে ভালোবাসতে শিখে যাবে ঠিকই, আমি জানি।
মুখে এখন তুমি যা-ই বলো না কেন, ভালোবাসতে না জানলে একটা মানুষের যে বেঁচে থাকাটাই বৃথা!
ভালোবাসা না পেয়েও বেঁচে থাকা যায়,
কিন্তু ভালো না বেসে বাঁচা যায়, বলো?


তুমি অমন একটা ব্যর্থ জীবন কাটিয়ো না গো!
আমাকে না হোক, অন্য কাউকে ভালোবেসে এই জন্মেই স্বর্গের স্বাদটা নিয়ে নিয়ো।
হতেও তো পারে, পরের জন্মে আমাদের ভাগ্যে নরকই লেখা আছে!


আমাকে তৃপ্ত না রেখেই তৃপ্ত থাকছ যখন,
তখন অতৃপ্ত থেকে যাওয়ার মধ্যেই নাহয় সমস্ত তৃপ্তি খুঁজে নিয়ে বেঁচে থাকব!
তৃপ্ত না হওয়ার মধ্য দিয়েই তৃপ্ত হয়ে যাব আমৃত্যু!
ভালোবাসি যে! ভালোবাসি বলেই নিজের তৃপ্তির জন্য কারও মুখের দিকে চেয়ে আর থাকি না!