অভিমান কখনও জমতে দিতে নেই। অভিমান হলো জলের মতন; যতই জমতে দেবেন, ততই দেখবেন, জমতে জমতে শক্ত বরফটা ক্রমশ পাথরের মতন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘকাল জমে-থাকা নরম ধুলোটিও একসময় কঠিন পাথরকণা হয়ে যায়। পাতায় জমে-থাকা জলের ফোঁটার দিকে তাকান; একবার নাড়া দিলেই ওই ফোঁটা টুপ করে পড়ে ছিটিয়ে যায়। মানুষের জীবনেও অভিমান ব্যাপারটি ঠিক এমন। প্রিয় মানুষটির ছোটো ছোটো নানান বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখুন। খেয়াল যে রাখে না, ভালো সে কি বাসে আদৌ? তর্কে জড়িয়ে কী হয়? বন্ধুত্ব নষ্ট হয়, সময় নষ্ট হয়, দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তার চাইতে বরং চুপচাপ পরাজয় মেনে নেওয়া শান্তির। আমরা কেবল জিততেই শিখেছি, তাই বারবার সবই হারিয়ে ফেলি। তর্কে আমরা কখন জড়াই? যখন কাউকে জাজ করার চেষ্টা করি। কতটুকুই-বা চিনি তাকে যে জাজ করি? অনুমানের উপর নির্ভর করে এতটা এগোনো কি ঠিক? তর্কে জেতার চেয়ে অনেক ভালো হার মেনে নিয়ে অন্য কাজে মন দেওয়া। জয়ের চেয়ে সম্পর্ক বড়ো। আপনার আচরণে প্রিয়জন কষ্ট পেলে তাকে গিয়ে 'সরি' বলুন। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলুন, "অভিমান করলেই বরং তোমাকে বড্ড সুন্দর দেখায়।", কিংবা মানুষটার অভিমান ভাঙায়, এমন কিছু করুন। তার পাগলামিগুলোকে প্রশ্রয় দিন, আপনার সাথে করা খুনসুটিগুলোকে সমাদর করুন, আপনাকে কখনো করা ছোটো ছোটো কিছু আবদার মাঝে মাঝে মুখে না বললেও পূরণ করে দিন। দেখবেন, সম্পর্ক কাচের মতন স্বচ্ছ দেখাচ্ছে। আয়নায় চেহারা ঘোলাটে দেখা গেলে আয়নাটা যেমন মুছে পরিষ্কার করে নিতে হয়, তেমনি সম্পর্ক ব্যাপারটাও এরকম। সহ্য করতে জানলে সম্পর্ক ভালো থাকে। খুব সাধারণ কোনো একটা দিনে কোনো উপলক্ষ্য ছাড়াই একটা ফুল নিয়ে তার ড্রেসিং-টেবিলের উপরে রেখে দিন; হুট করেই ক্লান্তিকর কোনো এক দিনে একটা শাড়ি বা একপাতা টিপ কিনে তার হাতে ধরিয়ে দিন; তার ব্রণ-ওঠা মুখ, না আঁচড়ানো চুলে হাত দিয়ে বলুন, তুমি এত সুন্দর! ব্যস্, এটুকুন! এটুকুও একটা মানুষের মনে টানা ত্রিশদিন খুশির রেশ দিয়ে যেতে পারে। অফিসফেরত মানুষটির পাতে একদিন তার প্রিয় ডিশটি রান্না করে খেতে দিন। অফিসের ক্লেশ মাথায় ভর্তি করে রাখা কর্কশ মেজাজি মানুষটির মেজাজ খারাপ হবার কারণ বোঝার চেষ্টা করুন। তার হাতদুটো শক্ত করে ধরে বলুন, "ওসব অফিসের ঝামেলা না থাকলে নতুন কিছু শিখবে কী করে?" খুব বিষণ্ণ মানুষটির মাথাটা বুকে চেপে ধরে একবার বলেই দেখুন, "তুমি দিনদিন আরও ম্যাচিউরড হচ্ছ।" একটা সম্পর্ক মানে কিন্তু শুধুই একটা সম্পর্ক নয়; দুটো মানুষের জীবনও। সম্পর্ক অনেকটা নৌকার বইঠার মতন দুই দিক মিলে নৌকা টানা, দুইয়ে মিলে এক হওয়া। সম্পর্ক মানে তোমার অর্ধেক আর আমার অর্ধেক মিলে এক হয়ে যাওয়া। এখানে ঝড় থাকবে, তুফান থাকবে। কখনোবা বৃষ্টিতে ভেসে যাবে ঘরদোর, কখনো রোদের তীব্রতায় পুড়ে যাবে ঘরের ছাদ। তবুও বিকেল হলে ঝড় থামবে, সন্ধ্যা নামলে রোদ নেমে যাবে। দুই পাশে দুই শক্ত খুঁটির মতন দু-জনের সম্মিলনে দাঁড়িয়ে থাকবে একটা ঘর, যার নাম সম্পর্ক বা প্রেম; কখনোবা তার নাম সংসার। সম্পর্কের মূলকথা একটাই: এসো, আমরা পরস্পরকে সহ্য করি।