এক। একটা সময় পর আপনি বুঝতে পারবেন, কিছু সম্পর্কের নাম দিতে নেই। কিছু মানুষকে কোনো বাঁধনে বাঁধতে নেই, এদের বরং ছেড়ে দিতে হয়; ছেড়ে দিতে হয় মুক্ত পাখির মতো। আকাশের বুকে ডানা মেলে মেঘেদের সাথে খুনসুটি শেষে এরা ঠিকই মাটিতে নেমে আসবে। এদের মুক্ত আকাশে দেখতেই যত প্রশান্তি! তবে কী, জানেন? এরা মাটিকে ভোলে না!
একটা সময় পর আপনি ঠিকই বুঝে যাবেন, পাবার আগে যা হৃদয় পোড়াত, পেয়ে যাবার পর আবার আপনার অবহেলাতেই তা হারিয়ে বসেছেন। তখন বুঝবেন, পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা যে কী! কিছুতেই তখন মনকে আর শান্ত করতে পারবেন না। পারবেনই-বা কেমন করে? অভুক্ত মন কি আর থিতু হয়!
আপনি ঠিকই বুঝে যাবেন, জিকির নয়, বরং ফিকির করাই সকলের কাম্য। বুঝে যাবেন, শব্দ থেকে একটা সময় কর্মেই ভালোবাসা উন্নীত হয়, তাই কর্মেই প্রকাশ পায় বেশি।
একটা সময় পর বুঝে যাবেন, সম্পর্কে-জড়িয়ে-পড়া দু-জন মানুষই তাদের সাথে করে নিয়ে আসে অতীতের কোনো-না-কোনো বোঝা। তাই দু-জনেরই ভালো থাকার তাগিদেই, হয় দু-জন দু-জনের বোঝা ভাগ করে নেয়, নয় একসাথেই বয়ে নিয়ে যায়।
একটা সময় পর . . .
দুই। একটা সত্যি কথা কী, জানেন? সম্পর্ক হলো প্রজাপতির মতন। একে যত্ন করতে হয়, ভালোবাসায় আগলেও রাখতে হয়।
সম্পর্ক হলো দু-দিন বয়েসি শিশুর মতন কোমল। একে ঠিকমতো সময় দিতে হয়, খেয়াল রাখতে হয়।
আগাছা না কাটলে যেমন গোলাপকে ডিঙিয়ে আগাছা বড়ো হয়ে গোলাপের গায়ে-লাগা সূর্যের আলো ছিনিয়ে নেয়, সম্পর্কও ঠিক তেমন। সম্পর্কে আগাছা জন্মালে ধীরে ধীরে সব শেষ হয়ে যায়।
জন্মদিনটা মনে রেখে ঠিক বারোটায় উইশ করতে হয়, অ্যানিভার্সারিতে একটা কেক নিয়ে প্রিয় মানুষটার সামনে হাজির হয়ে সারপ্রাইজ দিতে হয়। ভালোবাসা দিবসে একগুচ্ছ ফুল কিংবা একজোড়া নূপুর হাতে করে নিয়ে আসতে হয়।
প্রিয় মানুষটার পছন্দের কালাভুনা কিংবা হাঁসের মাংস রেঁধে বক্সে করে তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া যায়। মাঝে মাঝেই তাকে স্পেশাল ফিল করাতে হয়। সে আপনার কাছে আর আপনি তার কাছে স্পেশাল বলেই তো আপনাদের দু-জনের মাঝে থাকা একটা অদৃশ্য সুতোয় দু-জনে বাঁধা পড়ে আছেন, তাই না?
পেয়ে গেছেন বলে যত্ন করা ছেড়ে দিলে মাথার মুকুটের কোহিনুরেও জং ধরে যাবে, আপনার প্রিয় আয়নাটি কিছুদিন পর পর না মুছলে সেখানে দাগ পড়ে যায়। সে আয়নায় মুখ দেখতে গিয়ে ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়; অথচ দেখুন না, দাগগুলো আপনার মুখে নয়, আয়নাতেই। আয়নাটা মুছেই দেখুন, দেখবেন, আপনার মুখে দাগ আর দেখা যাচ্ছে না। কারণ দাগ মূলত ধুলোর কারণে হয়েছে—অযত্নে, অবহেলায়; ঠিক সম্পর্কের মতন। প্রিয় মানুষটার যত্ন না নিলে আপনি নিজেই নিজেকে ভালো থাকতে দেখবেন না।
মাঝে মাঝেই কাছে এসে হাত ধরে চুপচাপ বসে থাকতে হয়, দ্বিধা থাকলেও টুংটাং ভালোবাসি লিখে পাঠিয়ে দিতে হয়, জটলা-ধরা চুলে তেল লাগিয়ে আঁচড়ে দিতে দিতে তার কোঁকড়া চুল দেখেও বলতে হয়, জীবনানন্দ কি তবে তোমায় দেখেই ‘বনলতা সেন’ লিখেছিলেন?
সত্যি বলছি, যত্ন নিতে হয়, যত্ন নিলে নীলপদ্মও ঘরের উঠোনে ফোটানো যায়, শেকল ছাড়াও ক্ষুধার্ত বাঘকে পোষ মানিয়ে নেওয়া যায়।
মাঝে মাঝেই মানুষটার ভুঁড়িতে হাত রেখে বলুন, এইখানে মাথা রাখতে আমার আরাম লাগে; ব্রণের দাগে ভরে-ওঠা মুখে হাত বুলিয়ে বলতে শিখুন, পূর্ণিমার রাতের তারায়-ভরা আকাশের মতন লাগছে তোমার মুখটাকে।
মাঝে মাঝেই তাকে বুঝিয়ে দিতে হয়, সে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা মানুষটি, সে আপনার কাছে ভীষণ দামি সম্পদটি।
এভাবেই তো ভালোবাসা হয়, শতমাইল দূরত্বে থেকেও নিঃশ্বাসের সমান নৈকট্যে দুটো মানুষ থেকে যায়। কখনো খোঁপায়-গোঁজা ফুলের মতন, কখনোবা ঘরে ডজন ডজন চায়ের কাপ থাকার পরও দু-জন মিলে এককাপ চায়ে চুমুক দেবার মতন।