শৈব কালী: সাতষট্টি



গীতার ১০.৩৮-এর বীজ ও ৭.৮-এর প্রণব, এই দুটি শ্লোকের ভাবার্থকে একত্রিত করে তৈরি একটি দার্শনিক সূত্র—“প্রণবঃ সর্ববীজানাম্‌”। এটি ঘোষণা করে যে, ওঁ-কার (প্রণব) হলো সমস্ত কিছুর মূল বীজ বা উৎস (সর্ববীজানাম্‌); অর্থাৎ প্রণব বা “ওঁ” হলো সকল বীজের আদিম উৎস। তান্ত্রিক ব্যাখ্যায়, বীজ মানে শব্দশক্তির “জেনেটিক কোড”—একটি ক্ষুদ্র মন্ত্রধ্বনির মধ্যেই সম্পূর্ণ শক্তির সম্ভাবনা নিহিত থাকে।

এই তিন স্তরের মধ্যে রয়েছে এক ধারাবাহিক প্রবাহ। নাদ হলো পরম চেতনার প্রথম আন্দোলন, বিন্দু হলো সেই আন্দোলনের কেন্দ্রীভবন, আর বীজ হলো সেই কেন্দ্রীভবনের বহির্মুখী প্রকাশ। অর্থাৎ, চেতনা প্রথমে নিজেকে স্পন্দিত করে, তারপর নিজস্ব শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে, এবং অবশেষে শব্দরূপে প্রকাশিত করে। এই প্রক্রিয়াই মহাশক্তির আত্মবিকাশ—যা একদিকে সৃষ্টি, অন্যদিকে আত্মপ্রকাশ। যোগীর ধ্যানের পথও এই উলটো ক্রমে এগোয়—সে বাহ্যিক বীজ বা শব্দ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বিন্দুর নীরব কেন্দ্রে প্রবেশ করে, এবং শেষে পৌঁছে যায় নাদের নিঃশব্দ আদি কম্পনে, যেখানে শব্দ ও নীরবতা, প্রকাশ ও অপ্রকাশ একাকার হয়ে যায়।

দার্শনিক দৃষ্টিতে “নাদ-বিন্দু-বীজ” হলো চেতনার রূপান্তরের এক পূর্ণচক্র। এটি দেখায় যে, শব্দ কোনো বাহ্যিক উপকরণ নয়, বরং চেতনার অন্তর্গত গতি। চেতনা নিজেই যখন নিজেকে অনুভব করে, তখন তা নাদরূপে স্পন্দিত হয়; যখন সেই অনুভব নিজের গভীরে নিবদ্ধ হয়, তখন তা বিন্দুরূপে কেন্দ্রীভূত হয়; আর যখন সেই নিবদ্ধ চেতনা বহির্মুখী হয়, তখন তা বীজরূপে উচ্চারিত হয়—সেই শব্দ থেকেই সৃষ্টি, ভাষা ও জগতের উদ্‌ভব।

এই ত্রিত্বে নিহিত আছে চেতনার অন্তহীন লীলা—নীরবতা থেকে স্পন্দন, স্পন্দন থেকে প্রকাশ, এবং প্রকাশ থেকে পুনরায় নীরবতায় প্রত্যাবর্তন। তাই তান্ত্রিক শাস্ত্রে বলা হয়—“নাদব্রহ্মই জগতের কারণ, বিন্দু তার স্থিতি, আর বীজ তার বিকাশ।” এই এক চক্রেই সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের রহস্য লুকিয়ে আছে। নাদ-বিন্দু-বীজ তাই কেবল সৃষ্টিতত্ত্ব নয়; এটি আত্মতত্ত্বও—যেখানে মানুষ নিজের ধ্বনি, নিজের নীরবতা, আর নিজের আদি চেতনার দীপ্তি চিনে ফেলে, এবং উপলব্ধি করে যে, সে নিজেই সেই নাদ, সেই বিন্দু, সেই বীজ—অখণ্ড ব্রহ্মের স্পন্দমান প্রতিধ্বনি।

“বত্রিশ বীজধ্বনি” কেবল ধ্বনির ক্রম নয়; এটি চেতনার পূর্ণ প্রকাশ, শব্দব্রহ্মের প্রতীক, কুণ্ডলিনী শক্তির অন্তঃস্পন্দনের ভাষা। এই বীজধ্বনিগুলির ধ্যান বা অনুধ্যানের মাধ্যমে সাধক ধীরে ধীরে শব্দ ও চেতনার ঐক্যে প্রবেশ করে—যেখানে শব্দ আর ব্রহ্ম এক হয়ে যায়।

দ্বিতীয় স্তরে, বত্রিশ বিকার—“বত্রিশ অন্তর্যামী দোষ” বা “বত্রিশ অন্তর্গত বিকৃতি” বলতে বোঝানো হয় চেতনার সেই সূক্ষ্ম বিক্ষেপ ও বিকারসমূহ, যা মানুষের অন্তঃশক্তিকে আচ্ছন্ন করে রাখে। বেদান্ত মতে এগুলি অবিদ্যার (অজ্ঞান) রূপান্তর।

চেতনা নিজের নিখিল, নিরাময় স্বরূপ ভুলে যায়, তখন তার মধ্যে নানাবিধ মানসিক, প্রাণিক ও বৌদ্ধিক বিকৃতি জন্ম নেয়। মানুষের অন্তর্নিহিত চেতনা মূলত পরিপূর্ণ, শান্ত, আলোয় ভরা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু সেই চেতনা যখন নিজের প্রকৃত রূপ, নিজের পূর্ণতা, নিজের অখণ্ডতা ভুলে যায়, তখনই জীবনে অশান্তি, বিভ্রান্তি ও অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। এই ভুলে যাওয়াই উপনিষদের ভাষায় “অবিদ্যা”—অর্থাৎ আত্মবিস্মৃতি।

চেতনা নিজেকে ভুলে গেলে সে আর নিজের অখণ্ড স্বরূপে থাকে না; তখন সে মনে করে—“আমি কেবল এই দেহ”, “আমি এই মন”, “আমি এই চিন্তা বা অনুভূতি।” এর ফলে চেতনা নিজের অসীমতা হারিয়ে সীমিত মানসিক গণ্ডির মধ্যে আটকে যায়। এই সীমাবদ্ধতা থেকেই জন্ম নেয় তিন রকম বিকৃতি—মানসিক, প্রাণিক ও বৌদ্ধিক।

মানসিক বিকৃতি হলো সেই সমস্ত অবস্থান, যেখানে মন নিজের প্রকৃত শান্তি হারায়—ভয়, রাগ, হিংসা, লোভ, উদ্বেগ, আসক্তি, অহংকার ইত্যাদি আবেগ মনকে অস্থির ও অস্বচ্ছ করে তোলে। মন তখন বাহ্যিক বস্তুতে সুখ খুঁজতে থাকে, কিন্তু কখনো তৃপ্ত হয় না। এই অস্থিরতা মনকে ক্রমে বিকৃত করে, আর চেতনার দীপ্তি সেখানে ম্লান হয়ে যায়।

প্রাণিক বিকৃতি তখন ঘটে যখন চেতনার সঙ্গে যুক্ত জীবনীশক্তি, অর্থাৎ “প্রাণ”, তার স্বাভাবিক প্রবাহ হারায়। প্রাণশক্তি হলো সেই সূক্ষ্ম শক্তি যা শ্বাস, রক্তসঞ্চালন, হরমোন, এবং মানসিক স্থিতি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। যখন মন অস্থির হয়, প্রাণের গতি অমিল হয়ে যায়—শ্বাস হয় দ্রুত, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, শরীর ও মনের মধ্যে ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। যোগশাস্ত্রে একে বলা হয় “প্রাণবিকলতা” বা প্রাণের বিভ্রান্ত প্রবাহ, যা ক্রমে শারীরিক অসুস্থতা ও শক্তিক্ষয়ে রূপ নেয়।

বৌদ্ধিক বিকৃতি ঘটে যখন চেতনা ভুলে যায় নিজের প্রকৃত বোধশক্তিকে। বুদ্ধি তখন বাস্তবকে সঠিকভাবে দেখতে পারে না—অস্থায়ীকে স্থায়ী, অশুদ্ধকে শুদ্ধ, সীমিতকে অসীম বলে ভ্রম করে। এই বিভ্রান্তি থেকে মানুষ নিজের ও বিশ্বের সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে এবং সিদ্ধান্তে ভুল করে। তখন বুদ্ধি আর আত্মবোধের প্রতিফলন নয়; বরং তা হয়ে ওঠে অহংবোধের দাস।

এই তিন স্তরের বিকৃতি—মানসিক, প্রাণিক ও বৌদ্ধিক—আসলে একই মূল রোগের লক্ষণ, আর সেই রোগ হলো চেতনার আত্মবিস্মৃতি। চেতনা নিজের নিরাময় স্বরূপ ভুলে যায় বলেই মানসিক অশান্তি, প্রাণিক ভারসাম্যহীনতা ও বৌদ্ধিক বিভ্রম জন্ম নেয়। যেমন সূর্য কখনও অন্ধকারে যায় না, কিন্তু মেঘ তাকে আড়াল করে ফেলে—তেমনি চেতনা কখনও আসলে অসুস্থ বা বিকৃত হয় না, কিন্তু মন, প্রাণ ও বুদ্ধির মেঘে তার দীপ্তি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

যখন মানুষ ধ্যান, মন্ত্র, আত্মবোধ বা অন্তর্মুখতার মাধ্যমে আবার নিজের ভিতরের আলোর দিকে ফিরে যায়, তখন এই সমস্ত বিকৃতি ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে। মন শান্ত হয়, প্রাণের ছন্দ ফিরে আসে, বুদ্ধি পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ হয়। তখন চেতনা আবার নিজের নিখিল, নিরাময়, সম্পূর্ণ স্বরূপে স্থিত হয়—যেখানে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, কোনো বিভাজন নেই, কেবল এক অনন্ত শান্তি ও ঐক্যের অনুভব।

এই অবস্থাই যোগে “চিত্তবৃত্তিনিরোধ”, বেদান্তে “আত্মজ্ঞান” এবং তন্ত্রে “চিদানন্দরূপাবস্থা” নামে পরিচিত। এর অর্থ হলো—মানুষের অন্তরে যে-চেতনা, তা মূলত শান্ত, পূর্ণ এবং অখণ্ড; কিন্তু সে যখন নিজের সেই স্বরূপ ভুলে যায়, তখনই তার মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও দুঃখের জন্ম হয়। যোগ, বেদান্ত ও তন্ত্র—এই তিনটি পথই আসলে সেই চেতনার আত্মস্মরণের তিনটি রূপ।

পতঞ্জলি যোগসূত্র (Patañjali’s Yoga Sūtras), প্রথম অধ্যায় (সমাধিপাদ), ২ নম্বর সূত্র (১.২)-এ বলা হয়েছে—“যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ”—অর্থাৎ, যোগ মানে হলো চিত্তের সকল অস্থির ভাব, চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা ও আবেগের প্রশমন। মন যখন অগণিত তরঙ্গে আন্দোলিত থাকে, তখন চেতনার প্রকৃত নিস্তরঙ্গ আলো তার ভেতরে প্রতিফলিত হতে পারে না। তাই যোগের উদ্দেশ্য হলো সেই চিন্তার তরঙ্গকে থামানো, মনকে নিস্তব্ধ করা। ধ্যান, প্রণায়াম, একাগ্রতা ও মন্ত্রের মাধ্যমে যখন মন ধীরে ধীরে শান্ত হয়, তখন মানুষের মধ্যে এক গভীর স্থিরতা নেমে আসে—সেই স্থিরতায় চেতনা নিজের মুখ দেখতে পায়। যোগীরা এই অবস্থাকেই বলেন “সমাধি”—যেখানে ব্যক্তি আর ভাবনার জগতে নয়, বরং ভাবনার উৎসে, নিজের চেতনা-সত্তায় প্রতিষ্ঠিত। তখন বোঝা যায়, সে দেহ নয়, মন নয়, চিন্তা নয়—সে সেই চেতনা, যা এই সব কিছুর সাক্ষী।

বেদান্তের দৃষ্টিতে, এই অবস্থাকে বলা হয় “আত্মজ্ঞান”—নিজেকে চেনা, নিজের প্রকৃত সত্তাকে চিনে নেওয়া। বেদান্ত বলে, মানুষের সব দুঃখের মূল হলো আত্মবিস্মৃতি। আমরা নিজের ভেতরের শুদ্ধ চেতনা ভুলে গিয়ে নিজেকে শরীর, মন, নাম ও পরিচয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এগুলো সবই পরিবর্তনশীল ও ক্ষণস্থায়ী, আর সত্য আত্মা এইসবের ঊর্ধ্বে। যখন মানুষ উপলব্ধি করে—“আমি এই দেহ নই, আমি মন নই, আমি সেই শুদ্ধ চেতনা, যা সব অভিজ্ঞতার পেছনে নীরবে বিদ্যমান”—তখন তার মধ্যে জাগে আত্মজ্ঞান। সেই জ্ঞানে সমস্ত ভয়, দ্বন্দ্ব ও আসক্তি বিলীন হয়ে যায়। তখন সে অনুভব করে, সে কখনও জন্মায় না, কখনও মরে না, সে ব্রহ্মেরই অংশ নয়—সে ব্রহ্ম নিজেই।

কঠোপনিষদ, কেনোপনিষদের বাক্যে, “আত্মানম্‌ বিদ্ধি”—নিজেকে জানাই মুক্তি। এটি হলো সেই আদেশ, যা মানুষকে বাহ্যিক জগৎ থেকে মুখ ফিরিয়ে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান (Ātma-vicāra) শুরু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। এই জ্ঞান অর্জিত হলেই ব্যক্তি বুঝতে পারে, তার প্রকৃত স্বরূপটি অসঙ্গ (Asaṅgaḥ) এবং অবিনশ্বর (Amṛtatvam) এবং সে মৃত্যু থেকে মুক্তি লাভ করে।

তন্ত্রের দৃষ্টিতে, এই একই অবস্থাকে বলা হয় “চিদানন্দরূপাবস্থা”—অর্থাৎ চেতনা ও আনন্দের অভিন্ন রূপে প্রতিষ্ঠা। তন্ত্র বলে, সৃষ্টি ও চেতনা দুটি আলাদা জগৎ নয়—শিব হলো চেতনার নিস্তরঙ্গ দিক, আর শক্তি হলো সেই চেতনার আন্দোলন। যখন মানুষ নিজের মধ্যের শক্তিকে জাগিয়ে তোলে—মন্ত্র, নাদ, কুণ্ডলিনী বা চেতনার ধ্যানের মাধ্যমে—তখন সে ধীরে ধীরে নিজের শিবস্বরূপে জেগে ওঠে। তখন সে আর আলাদা “ব্যক্তি” থাকে না; বরং সে অনুভব করে, “আমি সেই চিদানন্দ”—আমি সেই আনন্দময় চেতনা, যেখান থেকে জগতের সৃষ্টি ও বিলয় হয়। এই অবস্থায় কোনো দ্বৈততা থাকে না—না আমি ও তুমি, না ভেতর ও বাইরে। যা থাকে, তা এক অনন্ত আনন্দ, এক অখণ্ড সচেতনতা।

এই তিনটি পথ—যোগ, বেদান্ত ও তন্ত্র—আসলে একেই গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। যোগে মন শান্ত করে চেতনার দেখা পাওয়া যায়, বেদান্তে জ্ঞান দ্বারা অজ্ঞতা দূর হয়, আর তন্ত্রে শক্তির জাগরণে সেই চেতনা নিজেই দীপ্ত হয়ে ওঠে। তিনটির লক্ষ্য এক—আত্মস্মরণ, নিজের প্রকৃত সত্তায় ফিরে আসা।

তখন বোঝা যায়, জীবনের সব বিকৃতি, রোগ, ভয়, অস্থিরতা ও দুঃখ আসলে আত্মবিস্মৃতির ফল। চেতনা নিজের আলো ভুলে গেলে অন্ধকারের জন্ম হয়, আর সেই আলোয় ফিরে গেলে অন্ধকার নিজে থেকেই মিলিয়ে যায়। মুক্তি কোনো বাহ্যিক অবস্থার নাম নয়; মুক্তি হলো নিজের অন্তর্গত দীপ্তির সঙ্গে পুনর্মিলন। আত্মস্মরণ মানে সেই পুনর্মিলন—নিজেকে আবার চিনে নেওয়া, নিজের আলোয় ফিরে আসা। এই অবস্থায় মানুষ উপলব্ধি করে, সে যা খুঁজছিল, তা কখনও হারায়নি—সেই চিরন্তন শান্তি ও আনন্দ তো তার মধ্যেই ছিল, শুধু ভুলে গিয়েছিল। চেতনা যখন জেগে ওঠে, তখন সব বিভ্রম ভেসে যায়, আর থাকে শুধু এক অবিচ্ছিন্ন উপলব্ধি—“আমি চিদানন্দ, আমি চিরশান্ত, আমি সেই অখণ্ড সত্তা।”

এই বিকৃতিগুলিকে “অন্তর্যামী” বলা হয়, কারণ তারা চেতনার অন্তর্গত নিয়ন্ত্রক স্তরে কাজ করে—অর্থাৎ যেখান থেকে আমাদের চিন্তা, ইচ্ছা ও ক্রিয়া প্রবাহিত হয়। তন্ত্র ও যোগশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই ৩২টি দোষ কুণ্ডলিনীর ঊর্ধ্বগমন বা চেতনার শুদ্ধির পথে প্রতিবন্ধক; বেদান্তে বলা হয়, এগুলি অবিদ্যা ও মায়ার আচ্ছাদনশক্তি ও বিক্ষেপশক্তির প্রকাশ। এই বত্রিশ বিকৃতিকে তিন ভাগে দেখা যায়—

প্রথমত, মানসিক বিকৃতি বা মনস্তাত্ত্বিক দোষ বলতে বোঝানো হচ্ছে সেই সমস্ত অভ্যন্তরীণ প্রবণতা, যা মানুষের মনের স্বাভাবিক স্বচ্ছতা ও ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। মন মূলত চেতনার প্রতিবিম্ব—যেমন নির্মল জলে আকাশ স্পষ্ট দেখা যায়, তেমনি শান্ত ও নিস্পাপ মনে চেতনার দীপ্তিও স্বচ্ছভাবে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু যখন মন অহংকার, লোভ, রাগ, হিংসা বা ভয়ে আচ্ছন্ন হয়, তখন সেই চেতনা বিকৃতভাবে প্রতিফলিত হয়, আর মানুষ তার প্রকৃত স্বরূপকে ভুলে যায়।