উপনিষদ ও তন্ত্রশাস্ত্রে নাদযোগের মূল ধারণা হলো, সমগ্র সৃষ্টির আদি হলো নাদব্রহ্ম, অর্থাৎ ধ্বনিরূপ ব্রহ্ম। এই নাদ কোনো বাহ্যিক শব্দ নয়, এটি চেতনার নিজের ভেতরে প্রথম স্পন্দন, যেখান থেকে জগৎ ও জীবের উৎপত্তি। “ওঁ” মন্ত্র এই নাদের প্রতীক, কারণ এতে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের তিন ধ্বনি (অ, উ, ম) একত্রিত হয়েছে। নাদযোগে সাধক এই “ওঁ”-এর অন্তর্গত অনুনাদ শুনতে শেখে, এবং সেই ধ্বনির মধ্য দিয়ে ব্রহ্মচেতনার অভিজ্ঞতা লাভ করে।
নাদযোগে বলা হয়, ধ্বনি দুই প্রকার—আহত নাদ ও অনাহত নাদ। আহত নাদ হলো বাহ্যিক ধ্বনি, যা দুটি বস্তুর সংঘর্ষে উৎপন্ন হয়, যেমন বাদ্যযন্ত্রের শব্দ বা কণ্ঠের উচ্চারণ। অনাহত নাদ হলো চেতনার অন্তর্গত ধ্বনি, যা কোনো সংঘর্ষে জন্মায় না। এটি হৃদয় ও সুষুম্না-নাড়ির গভীরে প্রবাহিত এক চিরন্তন অনুরণন। সাধক প্রথমে আহত শব্দের ধ্যানে মন স্থির করে, পরে সেই শব্দের অন্তর্লীন নীরবতায় অনাহত নাদের অভিজ্ঞতা লাভ করে।
যোগশাস্ত্রে নাদযোগের ধাপগুলিকে চেতনার অন্তর্মুখ যাত্রার মানচিত্র হিসেবে দেখা হয়। এই ধাপগুলি একে অপরের পরিপূরক—প্রত্যেকটি স্তর মানুষকে শব্দের স্থূল জগৎ থেকে ধীরে ধীরে চেতনার সূক্ষ্ম, নীরব কেন্দ্রে নিয়ে যায়। এখন একে একে এই চারটি ধাপ ব্যাখ্যা করা যাক।
প্রথম ধাপ: বাহ্যনাদ (বাহ্যশব্দের ধ্যান)। এই স্তরে সাধক নিজের মনোযোগকে বাইরের ধ্বনির জগতে স্থাপন করে। সংগীত, মন্ত্র, বা প্রকৃতির শব্দ—যেমন নদীর কলকল, বায়ুর গর্জন, ঘণ্টাধ্বনি বা শঙ্খধ্বনি—এসবের প্রতি একাগ্র মনোসংযোগই এর মূল উপায়। এখানে লক্ষ্য শব্দ নয়, শব্দের মধ্য দিয়ে মনকে কেন্দ্রীভূত করা। বহির্জগতের শব্দ মনের ছন্দহীন গতিকে এক সুরে বাঁধে। এই ধাপে সাধক শেখে, কীভাবে ইন্দ্রিয়বৃত্তির বহির্মুখ প্রবাহকে এক দিশায় চালিত করা যায়, যাতে চিন্তার বিচ্ছুরণ কমে আসে। এটি মনসংযম ও ধ্যানের প্রাথমিক স্তর।
দ্বিতীয় ধাপ: অন্তঃনাদ (অভ্যন্তরীণ ধ্বনির জাগরণ)। যখন মন বাহ্যশব্দে স্থির হতে শেখে, তখন ক্রমে তার সংবেদন বাইরের দিক থেকে ভিতরের দিকে সরে আসে। তখন ধীরে ধীরে মন নিজের অন্তর্গত এক সূক্ষ্ম ধ্বনি শুনতে শুরু করে—এটি কোনো বাহ্যিক শব্দ নয়, বরং চেতনার ভেতর থেকে উদ্ভূত এক তরঙ্গ। প্রাচীন গ্রন্থে একে “অন্তঃনাদ” বা “অন্তর্জাত ধ্বনি” বলা হয়েছে। সাধকের ভেতরে এই ধ্বনি কখনো মৌমাছির গুঞ্জন, কখনো বাঁশির মতো মৃদু সুর, কখনো ঘণ্টার টংটং, আবার কখনো সাগরের গর্জনের মতো শোনা যায়। এই অন্তঃনাদ আসলে প্রাণশক্তির উত্থান—চেতনা যখন কুণ্ডলিনীর গতিপথে (সুষুম্না নাড়ি) প্রবাহিত হতে থাকে, তখন তার কম্পন মনকে সূক্ষ্ম শ্রবণে নিয়ে যায়।
তৃতীয় ধাপ: অনাহত নাদ (অপ্রকাশিত চিরন্তন ধ্বনি)। অন্তঃনাদের সাধনা যত গভীর হয়, শব্দ ততই মৃদু, নিরবচ্ছিন্ন ও অসীম হতে থাকে। অবশেষে এমন এক ধ্বনি প্রকাশ পায়, যা আর কোনো সংঘর্ষ বা আঘাতে সৃষ্টি হয় না—এটিই অনাহত নাদ। “অনাহত” মানে “অ-আঘাতপ্রসূত”, অর্থাৎ কোনো স্পর্শ, সংঘর্ষ বা পদার্থের ঘর্ষণ ছাড়াই উদ্ভূত। এটি চেতনার নিজস্ব অনুরণন—ব্রহ্মের নিঃশ্বাস, জীবন ও সৃষ্টির আদিস্পন্দন। এই ধ্বনি কানে শোনা যায় না; এটি হৃদয়ের গভীরে অনুভূত হয়, যেখানে মন প্রায় স্তব্ধ। অনাহত নাদ হলো ব্রহ্মচেতনার প্রত্যক্ষ স্পর্শ—এখানে শব্দ মানে আর ধ্বনি নয়, বরং চেতনার তরঙ্গ।
চতুর্থ ধাপ: নিস্তব্ধতা বা নাদলয় (চেতনার লয়)। যখন অনাহত নাদেও মন সম্পূর্ণ স্থির হয়ে যায়, তখন সেই ধ্বনি-অভিজ্ঞতাও বিলীন হয়। শব্দ ও শ্রবণ, ভাব ও অনুভব—সব ভেদ মুছে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় “নাদলয়” বা “নাদসমাধি”—যেখানে নাদ, ধ্বনি ও চেতনা একীভূত হয়ে যায়। এই নিস্তরঙ্গ অবস্থাই পরম তুরীয় বা ব্রহ্মজ্ঞান। এখানে আর কোনো “শ্রোতা” বা “শব্দ” নেই; কেবল এক অখণ্ড চেতনা, যা নিজের অস্তিত্বে দীপ্ত। এই লয় মানে বিলোপ নয়, বরং চেতনার পূর্ণ উদ্ভাস—যেখানে সমস্ত রূপ, শব্দ, চিন্তা ও অভিজ্ঞতা এক নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতিতে মিশে যায়।
নাদযোগের এই চার ধাপ এক ক্রমবর্ধমান অন্তর-শুদ্ধির প্রক্রিয়া—বাইরের শব্দ থেকে ভেতরের নাদ, তারপর অনাহত চেতনা, এবং শেষে সেই নিস্তব্ধ ব্রহ্মরূপে স্থিতি। প্রতিটি স্তরে শব্দ ধীরে ধীরে অর্থহীন নয়, বরং অর্থাতীত হয়ে ওঠে। শেষপর্যন্ত সাধক উপলব্ধি করে, যে-শব্দকে সে শুনছিল, তা আসলে চেতনারই তরঙ্গ, আর চেতনা নিজেই সেই নীরব নাদ—যেখানে শব্দ ও নীরবতা এক হয়ে যায়, শ্রোতা ও শোনা একে অপরের মধ্যে বিলীন হয়।
দার্শনিকভাবে নাদযোগের মূল হলো নাদব্রহ্ম তত্ত্ব—চেতনা নিজেই স্পন্দনরূপে জাগ্রত। ব্রহ্ম কোনো নিস্তব্ধ শূন্যতা নয়; তিনি নিজের আনন্দে কম্পিত হন, আর সেই কম্পনেই সৃষ্টি। কাশ্মীর শৈবদর্শনের স্পন্দ তত্ত্ব এই ধারণার সঙ্গে একাত্ম—যেখানে বলা হয়েছে, “স্পন্দঃ সর্বং বিদ্যমানম্”—যা-কিছু আছে, সবই চেতনার স্পন্দনমাত্র। নাদযোগ সেই স্পন্দনের সঙ্গে আত্মার মিলনের পথ।
মনোবিজ্ঞানের আলোকে নাদযোগ একপ্রকার “শব্দধ্যান”। এখানে ধ্বনি কেবল শ্রবণের উপকরণ নয়, বরং মনকে নীরব করার এক মনস্তাত্ত্বিক কৌশল। কিছু বিশেষ শব্দ মানুষের গভীরতম মানসিক স্তরে অর্থাৎ সামূহিক অচেতনে (Collective Unconscious) এমন একটি মৌলিক অনুরণন সৃষ্টি করে, যা তাকে সমগ্র মানবজাতির আদিম অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করে। ইউং-এর মতে, মানুষের মন কেবল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দ্বারা গঠিত নয়, বরং এর একটি গভীর স্তর আছে—যা জন্মগত এবং সর্বজনীন (Universal)। এটি হলো মানবজাতির বিবর্তনীয় স্মৃতি এবং সমস্ত পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞতার ভান্ডার। এই সামূহিক অচেতনে কিছু মৌলিক প্যাটার্ন বা প্রত্নরূপ (Archetypes) সুপ্ত থাকে (যেমন—মা, বীর, ছায়া, ঈশ্বর)। এই প্রত্নরূপগুলিই মানুষের সমস্ত পুরাণ, ধর্ম ও স্বপ্নের কাঠামো তৈরি করে। যখন কোনো শব্দ বা প্রতীক (যেমন: 'ওঁ', 'মা', 'আলো', 'অন্ধকার', 'ছায়া') উচ্চ ধারণা বা আদিম ভাব বহন করে, তখন তা যুক্তির স্তর পেরিয়ে সরাসরি সেই প্রত্নরূপিক স্তরে আঘাত করে।
এই আঘাতের ফলে সৃষ্টি হয় অনুনাদ (resonance)। এই অনুনাদ হলো এমন এক গভীর অনুভূতি বা স্বীকৃতি, যা ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না, কিন্তু অনুভব করে যে এই শব্দটি একটি বৃহত্তর, অনাদি সত্যের প্রতীক। যেমন, 'মা' শব্দটি কেবল একজন মহিলাকে নয়, বরং মাতৃত্ব, আশ্রয় ও নিরাপত্তা—এই প্রত্নরূপিক ধারণার গভীর অনুরণন ঘটায়। ইউং বলতে চেয়েছিলেন যে, শব্দ শুধু তথ্য বহন করে না; কিছু শব্দ গোপন চাবিকাঠির মতো কাজ করে, যা আমাদের মনকে মানবজাতির মৌলিক এবং আদিম অভিজ্ঞতার উৎসের সঙ্গে সংযুক্ত করে।
ধ্যানের সময় মন্ত্র বা নির্দিষ্ট ধ্বনির পুনরাবৃত্তি কেন এবং কীভাবে মনকে রূপান্তরিত করে—এটি বুঝতে হলে প্রথমে জানতে হবে যে, মানবমন ও মস্তিষ্ক আসলে এক প্রকার “কম্পনময় ব্যবস্থা” (vibratory system)। প্রতিটি চিন্তা, অনুভূতি ও স্মৃতি এক একটি সূক্ষ্ম স্নায়ুতরঙ্গ সৃষ্টি করে, যা আবার মস্তিষ্কের তরঙ্গরীতির (brainwave pattern) সঙ্গে সম্পর্কিত। যখন আমরা ভয়, উদ্বেগ বা অস্থিরতায় ভুগি, তখন মস্তিষ্কে beta waves (দ্রুত ও অশান্ত তরঙ্গ) প্রবল হয়। আবার গভীর বিশ্রাম, শান্তি ও ধ্যানে alpha ও theta waves সক্রিয় হয়—যেগুলি সৃজনশীলতা, একাগ্রতা ও অন্তঃশান্তির সঙ্গে যুক্ত।
এখানেই মন্ত্র বা ধ্বনির ভূমিকা। মন্ত্র হলো এক বিশেষ ধ্বনি-কাঠামো, যা নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে কম্পিত হয়। যেমন “ওঁ”, “হ্রীং”, “নমঃ শিবায়”, “গায়ত্রী মন্ত্র”—এই শব্দগুলির ধ্বনি ও উচ্চারণশক্তি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর সূক্ষ্ম প্রভাব ফেলে। মন্ত্রোচ্চারণের ফলে শ্বাসের ছন্দ, হৃদস্পন্দন ও স্নায়ুতরঙ্গ এক নির্দিষ্ট তালে সমন্বিত হয়। এই সামঞ্জস্যই মনোসংযোগ বাড়ায় এবং মানসিক অস্থিরতা কমায়।
“ওঁ”, “হ্রীং”, “নমঃ শিবায়” এবং “গায়ত্রী মন্ত্র”—এই চারটি শব্দ বা মন্ত্র ভারতীয় আধ্যাত্মিক সাধনার মূল স্তম্ভ। এগুলি শুধুই ধর্মীয় উচ্চারণ নয়; বরং চেতনার শক্তি, স্পন্দন ও জাগরণের প্রতীক। প্রতিটি মন্ত্রের মধ্যেই একটি নির্দিষ্ট শক্তি, মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব এবং দার্শনিক অর্থ নিহিত আছে।
ওঁ (ওম্): “ওঁ” বা “ওম্” হলো আদ্য প্রণব ধ্বনি, যা শব্দব্রহ্মের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত। এটি সৃষ্টির আদি কম্পন—ব্রহ্মচেতনার প্রথম স্পন্দন। উপনিষদে বলা হয়েছে—“ওঁ ইত্যেতদক্ষরং ইদং সর্বং”—এই এক অক্ষরেই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সার নিহিত। “ওঁ” তিনটি ধ্বনিতে গঠিত—অ, উ, ম।
অ মানে সৃষ্টি, উ মানে স্থিতি, ম মানে লয় বা বিলয়। অর্থাৎ “ওঁ” ব্রহ্মার সৃষ্টি, বিষ্ণুর স্থিতি এবং মহেশ্বরের লয়—এই তিন শক্তির ঐক্য। “ওঁ” উচ্চারণে মস্তিষ্ক ও হৃদয়তন্ত্রের মধ্যে এক সূক্ষ্ম সুর সৃষ্টি হয়, যা চিন্তার বিচ্ছুরণ থামিয়ে মনকে কেন্দ্রীভূত করে। এটি ধ্যানের সর্বাধিক শক্তিশালী ধ্বনি, যা মানুষকে নিজের আদি চেতনার সঙ্গে যুক্ত করে।
হ্রীং: “হ্রীং” হলো এক বীজমন্ত্র—দেবী শক্তির ধ্বনি। এটি “মহামায়া”র প্রতীক, অর্থাৎ সেই সৃজনী শক্তি, যার মাধ্যমে ব্রহ্ম নিজের মধ্যেই জাগে ও প্রকাশিত হয়। “হ্রীং”-এর ধ্বনি তিন অংশে বিভক্ত—হ্ (চেতনার কম্পন), রী (ভালোবাসা, প্রকাশশক্তি), ঙ্ (নীরবতার বিন্দু)। এই মন্ত্র উচ্চারণ করলে হৃদয়চক্র ও কণ্ঠচক্রে অনুরণন জাগে। এতে মনের ভয়, সংশয় ও সংকোচ গলে যায়, আর জাগে আত্মবিশ্বাস, প্রেম ও উদারতা। “হ্রীং” দেবীর হৃদয়মন্ত্র—এটি শক্তির সৌন্দর্য ও চেতনার মাধুর্য প্রকাশ করে।
নমঃ শিবায়: “নমঃ শিবায়” হলো শৈব ধর্মের পবিত্র পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র। অর্থ—“আমি শিবকে প্রণাম জানাই।” কিন্তু আধ্যাত্মিক অর্থে এটি জীবচেতনার পূর্ণ আত্মসমর্পণ—সীমিত “আমি” পরম চেতনার কাছে নিজেকে সমর্পণ করছে। এই পাঁচ অক্ষর—ন (Na)—পৃথিবী তত্ত্বের প্রতীক (স্থিতিশক্তি, স্থৈর্য ও দেহের ভিত্তি)। ম (Ma)—জলের তত্ত্ব (প্রবাহ, অনুভূতি, করুণা ও প্রেম)। শি (Śi)—অগ্নিতত্ত্ব (রূপান্তর, জ্ঞান ও দীপ্তি)। বা (Vā)—বায়ুতত্ত্ব (গতি, প্রাণশক্তি, স্পন্দন)। য (Ya)—আকাশতত্ত্ব (অসীমতা, চেতনা ও মুক্তি)।—পাঁচটি মহাভূতের প্রতীক: পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ।
মন্ত্রের ধ্যানে এই পাঁচ তত্ত্বের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপিত হয়। “নমঃ” মানে আমি নত, আমি শূন্য, আমি সমর্পিত। “শিবায়” মানে সেই চিরন্তন কল্যাণময় চেতনা। তাই “নমঃ শিবায়” উচ্চারণে অহংকার বিলীন হয়, মন বিশুদ্ধ হয়, আর মানুষ নিজের মধ্যেই শিবতত্ত্বকে উপলব্ধি করে।
গায়ত্রী মন্ত্র ভারতীয় আধ্যাত্মিক ইতিহাসের হৃদস্পন্দন, এক প্রাচীনতম ও সর্বজনীন প্রার্থনা, যা মানুষের চেতনা, জ্ঞান ও নৈতিকতার সঙ্গে সূর্যালোকের প্রতীকী সম্পর্ক স্থাপন করে। এই মন্ত্র—“ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ। তৎ সবিতুর্বরেণ্যং। ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াত্”—ঋগ্বেদের (৩.৬২.১০) অন্তর্গত, এবং “গায়ত্রী” ছন্দে রচিত। “গায়ত্রী” শব্দটি এসেছে “গায়ন্তং ত্রায়তে ইতি গায়ত্রী”—অর্থাৎ যিনি গায়ন বা জপকারীর রক্ষা করেন, সেই গায়ত্রী। এখানে মন্ত্রের প্রতিটি শব্দ কেবল ভাষার নিদর্শন নয়, বরং চেতনার স্পন্দনরূপী প্রতীক।
“গায়ন্তং ত্রায়তে ইতি গায়ত্রী”—এই বিখ্যাত বাক্যটি সরাসরি কোনো ঋগ্বৈদিক সূত্রে পাওয়া যায় না, বরং এটি এসেছে পরবর্তী বৈদিক ভাষ্য ও স্মার্ত-ব্যাখ্যা ধারায়। এর উদ্দেশ্য হলো “গায়ত্রী” শব্দটির আধ্যাত্মিক ব্যুৎপত্তি ব্যাখ্যা করা—অর্থাৎ “যিনি গায়ক বা জপকারীকে রক্ষা করেন, তিনিই গায়ত্রী।” এখানে “গায়ন্তম্” মানে যে জপ করে, “ত্রায়তে” মানে রক্ষা করে। তাই মন্ত্রটির আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায়—“যিনি জপকারীকে রক্ষা করেন, সেই শক্তিকেই গায়ত্রী বলে।”