৫. আস্বাদন বা ভোগস্পন্দন (The Fifth Pulsation: Enjoyment/Experience): পঞ্চম স্পন্দন হলো আস্বাদন বা ভোগস্পন্দন, যেখানে চেতনা নিজের সৃষ্টিতে নিজেই রমণ করে এবং তা থেকে আনন্দ পায়। এটি সৃষ্টির পরম উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি। পরম শিব কেবলমাত্র জগৎ সৃষ্টি করে এবং তাকে ধারণ করেই থাকেন না, বরং নিজের সৃষ্ট জগৎকে উপভোগও করেন। এই ভোগস্পন্দন হলো সেই প্রক্রিয়া, যেখানে জ্ঞাতা তার সৃষ্ট জ্ঞেয়কে অনুভব করে, তার সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য এবং অভিজ্ঞতা থেকে আনন্দ লাভ করে। এটি একধরনের আত্ম-প্রেম, যেখানে স্রষ্টা নিজেরই প্রকাশে মুগ্ধ হন। এই স্পন্দন সমস্ত জীবের মধ্যে আনন্দ, প্রেম এবং সৌন্দর্যের উপলব্ধিকে প্রতিফলিত করে। এটি প্রমাণ করে যে, সৃষ্টির মূলে কেবল একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়, বরং গভীর প্রেম এবং পরম আনন্দের একটি উৎস বিদ্যমান।
৬. বিভাগ বা বিকল্প (The Sixth Pulsation: Division/Differentiation): ষষ্ঠ স্পন্দন হলো বিভাগ বা বিকল্প, যেখানে ঐক্যের মধ্যে দ্বৈততার ভ্রম জন্ম নেয় এবং জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়ের সীমারেখা রচিত হয়। আস্বাদন স্পন্দনে যখন চেতনা তার সৃষ্টিতে রমণ করে, তখন এই উপভোগের গভীরতার কারণেই একটি সূক্ষ্ম বিভাজন তৈরি হয়। এই স্তরে, পরম ঐক্যের জ্ঞান কিছুটা ম্লান হয়ে আসে এবং "আমি" এবং "অন্য" এর ধারণা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই বিভাজনই সমস্ত দ্বৈত অভিজ্ঞতার মূল, যেখানে বিষয়-বস্তু, আত্মা-প্রকৃতি, শুভ-অশুভ ইত্যাদি বিপরীত ধারণাগুলি উদ্ভূত হয়। এটি কেবল একটি বিভেদ নয়, বরং লীলার অংশ, যেখানে পরম সত্তা নিজেকে বহু রূপে অনুভব করার জন্য এই বিভেদকে গ্রহণ করে। এই বিকল্প থেকেই আমাদের ব্যক্তিগত পরিচিতি এবং পার্থক্যের অনুভূতি জন্ম নেয়।
৭. সংকোচ বা সীমাবদ্ধতা (The Seventh Pulsation: Contraction/Limitation): সপ্তম স্পন্দন হলো সংকোচ বা সীমাবদ্ধতা, যেখানে চেতনা নিজের অসীম পরিসরকে সংকুচিত করে ব্যক্তিসত্তা সৃষ্টি করে। বিভাগ স্পন্দনে যে-দ্বৈততার জন্ম হয়েছিল, সংকোচ তাকে আরও দৃঢ় করে। এখানে পরম চেতনা তার অসীম এবং সর্বব্যাপী স্বরূপকে ছেড়ে একটি নির্দিষ্ট আকার বা পরিচিতি গ্রহণ করে। এই সীমাবদ্ধতাই জীবের ব্যক্তিগত "আমি" এবং তার স্বতন্ত্র জগৎ তৈরি করে। অসীম চেতনা নিজেকে একটি নির্দিষ্ট শরীর, মন এবং অভিজ্ঞতার মধ্যে আবদ্ধ করে, যা আমাদের ব্যক্তিগত সত্তার জন্ম দেয়। এই সংকোচ সত্ত্বেও, এই ব্যক্তিসত্তার মধ্যেই পরম চেতনার বীজ সুপ্ত থাকে, যা মুক্তির পথ খুলে দেয়। এই স্পন্দন হলো পরম সত্তার আত্ম-অবরোধের এক পর্যায়, যা আরও গভীর উপলব্ধির দিকে পরিচালিত করে।
৮. ত্যাগ বা বিলয় (The Eighth Pulsation: Renunciation/Dissolution): অষ্টম স্পন্দন হলো ত্যাগ বা বিলয়, যেখানে চেতনা যখন নিজ সৃষ্ট জগৎ ও সীমাকে পুনরায় নিজের মধ্যে টেনে নেয়। সৃষ্টির যে-প্রক্রিয়া উন্মেষ থেকে শুরু হয়েছিল এবং সংকোচের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সত্তা তৈরি করেছিল, এখন তা বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। এই বিলয় হলো সেই পর্যায়, যেখানে সীমাবদ্ধতা এবং দ্বৈততা ধীরে ধীরে অপসারিত হতে শুরু করে। ব্যক্তিগত সত্তা তার স্বতন্ত্রতা ত্যাগ করে বৃহত্তর চেতনার দিকে ফিরে আসতে শুরু করে। এটি একধরনের মুক্তি, যেখানে সৃষ্ট জগৎ তার উৎস অর্থাৎ পরম চেতনার দিকে ধাবিত হয়। এই স্পন্দন কেবল ধ্বংস নয়, বরং একটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া, যেখানে অপ্রয়োজনীয় স্তরগুলি অপসারিত হয় এবং মূল সত্তার দিকে ফিরে আসা হয়।
৯. সংহার (The Ninth Pulsation: Destruction/Reabsorption): নবম স্পন্দন হলো সংহার–এটি সেই অন্তর্মুখী গতি, যেখানে সমস্ত প্রকাশ আবার অন্তরে লীন হয়, যেন সাগরের ঢেউ আবার সাগরেই ফিরে যায়। ত্যাগ বা বিলয়ের প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপ হলো সংহার, যেখানে সৃষ্টি সম্পূর্ণরূপে তার উৎসে ফিরে যায়। এটি মহাজাগতিক বিলয়ের পর্যায়, যখন সমস্ত নাম ও রূপ বিলীন হয়ে যায় এবং শুধুমাত্র পরম সত্তা অবশিষ্ট থাকে। এই সংহার একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া, যা নতুন সৃষ্টির পথ খুলে দেয়। এটি কোনো ধ্বংসের প্রতীক নয়, বরং রূপান্তরের একটি অপরিহার্য অংশ। এই স্পন্দনই চক্রাকার প্রকৃতির সম্পূর্ণতাকে নিশ্চিত করে, যেখানে যা প্রকাশিত হয়েছে তা আবার অপ্রকাশিত অবস্থায় ফিরে যায়, অনন্তকালের এই নৃত্য চলতে থাকে।
১০. সমরস্য বা অনুত্তর (The Tenth Pulsation: Harmony/The Ultimate): দশম স্পন্দন হলো সমরস্য বা অনুত্তর, যেখানে সব কম্পন, সৃষ্টি ও সংহার মিলিয়ে চেতনা নিজ পরম ঐক্যে বিশ্রাম পায়; এটাই শুদ্ধ শিবত্ব, পরাশক্তির নিজস্ব শান্ত-চেতনা। এটি দশটি স্পন্দনের চূড়ান্ত পর্যায়, যেখানে সমস্ত দ্বৈততা, বিভাজন এবং কর্ম সম্পূর্ণরূপে লীন হয়ে যায়। এখানে সৃষ্টি এবং সংহারের লীলা তার পরম শান্তিতে ফিরে আসে। এই অনুত্তর অবস্থা হলো পরম শিবত্ব, যেখানে শিব এবং শক্তি অভিন্ন হয়ে ওঠে। এটি সমস্ত অভিজ্ঞতার ঊর্ধ্বে একটি অবস্থা, যেখানে কোনো কম্পন নেই, কোনো পরিবর্তন নেই, কেবল পরম, অসীম এবং অদ্বৈত চেতনা বিরাজমান। এটিই সেই অবস্থা, যা শাক্ত ধর্মে কালী রূপে প্রকাশ পায়–যিনি সৃষ্টি, স্থিতি এবং লয়ের ঊর্ধ্বে সকল স্পন্দনের উৎস এবং বিলয়স্থল। এটিই পরম শান্তি এবং পরম আনন্দ, যা সমস্ত অস্তিত্বের চূড়ান্ত সত্য।
অভিনবগুপ্ত ও উৎপলদেব এই দশ স্পন্দনকে কেবল সৃষ্টিতত্ত্ব নয়, সাধনার অভ্যন্তরীণ পথ হিসেবেও দেখিয়েছেন। যোগী যখন নিজের অন্তরের স্পন্দ অনুসরণ করেন, তখন ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে এই দশ স্তরের কম্পন উদ্ভাসিত হয়—প্রথমে সচেতনতা, পরে ইচ্ছা, পরে প্রকাশ এবং ক্রমে বিলয় ও ঐক্য। পরাশক্তির এই দশ স্পন্দনই মহাশক্তির দশ রূপ—যা শাক্ত তত্ত্বে দশ মহাবিদ্যা, আর মনস্তত্ত্বে দশ আদি-রূপ (archetype) হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। এগুলির মধ্যেই অন্তর্নিহিত আছে সৃষ্টি ও মুক্তির পূর্ণ বৃত্ত—যেখানে একেই বলা হয় “স্পন্দচক্র”—চেতনার নিজস্ব অনন্ত নৃত্য।
কাশ্মীর শৈবদর্শনের দৃষ্টিতে চেতনা কোনো স্থির সত্তা নয়; এটি এক অবিরাম প্রবাহ, যা নিজের মধ্যেই সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার, তিরোভাব ও অনুগ্রহের নিত্য লীলা সম্পন্ন করে। এই চেতনার অন্তর্গত গতি, ক্রমপদ্ধতিতে ধাপে ধাপে আত্মপ্রকাশ করে—যেমন সময়ের প্রবাহে ভোর থেকে রাত্রি পর্যন্ত আলোর রূপান্তর ঘটে, তেমনি চেতনারও দশটি অন্তর্গত রূপান্তর বা “আদিরূপীয় মাত্রা (archetypal dimension)” রয়েছে। এই দশ স্তরই কাশ্মীর শৈবতত্ত্বে দশ কালী বা দশ যোগিনী রূপে প্রতিভাত—যারা আসলে এক অনন্ত চেতনার দশটি কম্পন। এগুলি কোনো বহির্জাগতিক দেবতা নয়; বরং মানবচেতনার অন্তর্নিহিত শক্তির প্রতীক।
“আর্কিটাইপ” (Archetype) শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে—“arche” মানে “আদি”, আর “typos” মানে “রূপ” বা “ছাঁচ”। অর্থাৎ আর্কিটাইপ বলতে বোঝানো হয় এমন এক আদি মানসিক ছাঁচ বা চেতনার মৌল নকশা, যা সমগ্র মানবজাতির মনস্তত্ত্বে গভীরভাবে স্থিত। এটি কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়; বরং মানুষের চেতনার গভীরতম স্তরে থাকা সেই সর্বজনীন প্রতিমূর্তি বা শক্তি, যা সময়, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম—সব সীমার ঊর্ধ্বে।
সুইস মনোবিজ্ঞানী কার্ল ইউং (Carl Jung) প্রথম এই ধারণাকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, মানবমনের একটি স্তর আছে, যাকে বলা হয় “collective unconscious”—সমষ্টিগত অবচেতন। এই স্তরে এমন কিছু চিত্র, প্রতীক ও শক্তি চিরকাল বিদ্যমান থাকে, যেগুলি সমস্ত মানবজাতির অভিজ্ঞতার অংশ, যেমন “মাতা”, “নায়ক”, “মৃত্যু”, “অন্ধকার”, “আলো”, “পুনর্জন্ম”—এগুলি কেবল রূপক নয়, বরং গভীর মানসিক শক্তির প্রতীক, যেগুলি আমাদের চিন্তা, অনুভূতি ও আচার-আচরণকে নির্ধারণ করে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে “Archetypal Dimension” বা “আদি-রূপীয় মাত্রা” বলতে বোঝানো হয় চেতনার সেই গভীর স্তর, যেখানে এই মৌল ছাঁচগুলি সক্রিয় থাকে। এটি কোনো ভৌত স্থান নয়, বরং এক অন্তর্গত অস্তিত্বক্ষেত্র—চেতনার এমন এক পরিসর, যেখানে ব্যক্তিগত মন মিলেমিশে যায় সর্বজনীন মনের সঙ্গে। এই স্তরে প্রবেশ করা মানে নিজের সীমিত আত্মপরিচয়ের গণ্ডি ভেঙে এমন এক অভিজ্ঞতার দিকে এগোনো, যেখানে ব্যক্তি হয়ে ওঠে বিশ্বচেতনার প্রতিধ্বনি। এই মাত্রাতেই মানুষ নিজের মধ্যে আবিষ্কার করে জন্ম, মৃত্যু, ভয়, প্রেম, রাগ, ত্যাগ, আনন্দ, শূন্যতা ও ঐক্যের মতো মৌল অভিজ্ঞতাগুলির আদিরূপ।
দর্শনের দৃষ্টিতে, অদ্বৈত বেদান্ত ও কাশ্মীর শৈব দর্শন এই ধারণাকে এক গভীরতর বাস্তব রূপে প্রকাশ করেছে। অদ্বৈত বেদান্ত বলে—চেতনা (চিত্) নিজে নিজেই আত্মপ্রকাশমান। সে এক, কিন্তু নিজের লীলায় নানা-রূপে বিকশিত হয়ে নিজের প্রতিফলন দেখে। এই আত্মবিম্বন থেকেই সৃষ্টি, অভিজ্ঞতা ও মুক্তি—এই তিন প্রবাহের উদ্ভব। কাশ্মীর শৈব দর্শনে এই চেতনা বলা হয় “সংবিত” (saṃvit) বা “পরাশক্তি” (Parāśakti)—যিনি নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় (svātantrya) নিজেকে বহু রূপে প্রকাশ করেন। এই প্রকাশের স্পন্দন বা কম্পনকে বলা হয় “স্পন্দ” (Spanda)। এই স্পন্দই কখনো জ্ঞান, কখনো ইচ্ছা, কখনো কর্ম, কখনো আনন্দ, কখনো শূন্যতার রূপ নেয়।
চেতন দশমহাবিদ্যার দশ রূপ বা দশ ক্রিয়া প্রকাশ পায়, যা ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের এক অবিচ্ছেদ্য ধারা। এই দশটি স্তর শুধুমাত্র বাহ্যিক প্রকাশ নয়, বরং চেতনার গভীরতর আত্মোপলব্ধির এক সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া।
প্রথম রূপ হলো দৃষ্টি বা জ্ঞান (জ্ঞানশক্তি)—এই স্তরে চেতনা প্রথম নিজের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করে, যেমন এক দর্পণ তার নিজস্ব প্রতিবিম্বকে দেখে। এটিই "আমি আছি" এই প্রাথমিক আত্মবোধের জন্মস্থান, যা সকল সৃষ্টির মূল ভিত্তি। এই জ্ঞান থেকেই সকল দ্বৈততা এবং বহুত্বের সূত্রপাত হয়, যেখানে জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় ভিন্ন হলেও অবিচ্ছেদ্য। এটি সত্তার প্রথম স্পন্দন, যা মহাবিশ্বের সকল অস্তিত্বের প্রাথমিক স্ফূলিঙ্গ।
দ্বিতীয় রূপ সংকল্প বা ইচ্ছাশক্তি (ইচ্ছাশক্তি)—চেতনা যখন কেবল নিজের অস্তিত্ব জানে না, বরং কিছু সৃষ্টি করার আকাঙ্ক্ষায় আন্দোলিত হয়। এই ইচ্ছাই অসীম সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রেরণা দেয়। এটি ব্রহ্মার সৃষ্টিকারক ইচ্ছার মতো, যেখানে অব্যক্ত শক্তি ব্যক্ত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়। এটি শুধু একটি সরল ইচ্ছা নয়, বরং মহাজাগতিক এক পরিকল্পনা, যা বহুত্বের বীজ বপন করে।
তৃতীয় রূপ অধ্যাস বা অভিক্ষেপ (ক্রিয়াশক্তি)—এই স্তরে চেতনার সংকল্প বা ইচ্ছা বহির্জগতের রূপ ধারণ করে। এটি বিমূর্ত পরিকল্পনা থেকে মূর্ত প্রকাশের দিকে যাত্রার স্তর। এই স্তরেই অবয়বহীন ধারণা বাস্তব জগতে প্রতিবিম্বিত হয়, যেমন একটি বীজ থেকে অঙ্কুরের জন্ম হয়। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে বিশুদ্ধ চেতনা বস্তুজগতে নিজেকে অভিক্ষিপ্ত করে, যা আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান সকল কিছু সৃষ্টি করে।
চতুর্থ স্তর উপলব্ধি (অনুভব)—এখানে চেতনা নিজের সৃষ্টিকে মন ও ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করে। এটি কেবল দেখা বা ছোঁয়া নয়, বরং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সকল তথ্যের মাধ্যমে বস্তুজগতের সঙ্গে এক গভীর সংযোগ স্থাপন। এই উপলব্ধি দ্বারাই চেতনা তার সৃষ্টির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে, যা তাকে পরবর্তী স্তরের দিকে চালিত করে। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে স্রষ্টা তার নিজের সৃষ্টিকে একজন পর্যবেক্ষক হিসাবে নয়, বরং একজন অভিজ্ঞতাকারী হিসাবে দেখে।
পঞ্চম স্তর গ্রহণ বা আসক্তি (আশক্তি)—এই স্তরে জ্ঞাতা বা আত্মা বস্তুর সঙ্গে একাত্ম হতে চায়, যা তার নিজের সৃষ্টি। এই আসক্তিই জীবাত্মার পার্থিব জগতে আবদ্ধ হওয়ার প্রধান কারণ। এটি জাগতিক সুখ-দুঃখের কারণ, যেখানে আত্মা বিষয়বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাদের সঙ্গে নিজের পরিচয় স্থাপন করে। এটি একধরনের বন্ধন, যা আত্মাকে তার মূল স্বরূপ থেকে বিচ্যুত করে।