কাশ্মীর শৈব দর্শনে, এই অন্ধকার ও দীপ্তি হলো প্রকাশ ও বিমর্শ-এর যুগল অবস্থা। শিব হলেন প্রকাশ—বিশুদ্ধ আলোকচেতনা, আর কালী হলেন বিমর্শ—আত্মচিন্তা ও জ্ঞানের গতি। যখন চেতনা নিজেরই গভীরে প্রবেশ করে, তখন তাকে অন্ধকার বলে মনে হয়, কিন্তু সেই গভীর নিস্তব্ধতার মধ্যে থেকেই জ্ঞানের বজ্রঝলক উত্থিত হয়। অভিনবগুপ্ত বলেন, “অন্ধকারং ন তমঃ, প্রজ্ঞারোপঃ”—অন্ধকার কোনো নৈরাশ্য নয়, বরং জ্ঞানের গর্ভাবস্থা। তাই কালীর চারপাশের অন্ধকার হলো ব্রহ্মচেতনার অন্তর্নিহিত বিশ্রাম, আর তাঁর বজ্রদীপ্ত দৃষ্টি সেই চেতনার আত্মবিমর্শনের মুহূর্ত—যেখানে শিব ও শক্তি একে অপরকে চিনে নেন।
শাক্ত দর্শনে, অন্ধকার মানে দেবীর মহামায়া, আর বজ্রালোকে দীপ্তি মানে তাঁর মহাজ্ঞান। তিনি নিজেই আবরণ এবং প্রকাশ—নিজেই ছায়া ও আলোক। এই দুইয়ের ঐক্যেই দেবী চিরন্তন। সাধকের জন্য এটি গভীর প্রতীক—ধ্যানের প্রথম স্তরে মন অন্ধকারে ডুবে যায়, চিন্তা ও ইন্দ্রিয় নিস্তব্ধ হয়; কিন্তু ঠিক সেই নিস্তব্ধতার ভেতরেই বজ্রের মতো জ্ঞানের ঝলক আসে—এক মুহূর্তে জীব নিজের সত্য স্বরূপে জেগে ওঠে। তাই তন্ত্র বলে, জ্ঞানের আলোকে জন্ম দিতে হলে মনের অন্ধকারে প্রবেশ করতেই হয়।
মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায়, এই অন্ধকার ও বজ্রালোকে দীপ্তি মানুষের psychic illumination—অবচেতনের গভীর স্তর থেকে উদ্ভূত সচেতনতাবোধের প্রতীক। কার্ল ইয়ুং এই অভিজ্ঞতাকে বলেছিলেন the flash of individuation—যেখানে আত্মা অবচেতনের ছায়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হঠাৎ নিজের অন্তর্গত আলো উপলব্ধি করে। এই বজ্রালোকে দীপ্তি কোনো যুক্তিনির্ভর জ্ঞান নয়; এটি এক অস্তিত্বগত জাগরণ, যা আসে অন্ধকারের মধ্য দিয়েই। কালী সেই শক্তি, যিনি এই রূপান্তরের পথ দেখান—অন্ধকারের মধ্য দিয়ে, আলোয় নয়।
কালীর অন্ধকার ও বজ্রালোকে দীপ্তি একত্রে চেতনার দ্বৈত অথচ অদ্বৈত প্রকৃতিকে বোঝায়—অন্ধকার ছাড়া আলো অর্থহীন, আর আলো ছাড়া অন্ধকারের গভীরতা অচেনা। তিনি শেখান, অবিদ্যা শত্রু নয়—এটি জ্ঞানের জননী। তাঁর বজ্রালোকে দৃষ্টি সেই মুহূর্তের প্রতীক, যখন আত্মা নিজের অন্তর্গত অন্ধকার ভেদ করে ব্রহ্মরূপে জেগে ওঠে। এই কারণেই কালী চিরকাল “কৃষ্ণজননী”—অন্ধকারের গর্ভে জন্মদাত্রী আলো।
কালীর সঙ্গে যুক্ত বাঘ, সিংহ বা হাতি—এই প্রাণীগুলি শুধুমাত্র অলঙ্কারিক বা পৌরাণিক উপাদান নয়; এগুলি মানুষের অন্তর্গত প্রবৃত্তি ও শক্তির প্রতীক। তন্ত্রশাস্ত্র এই পশুগুলিকে মনস্তত্ত্বের রূপক হিসেবে ব্যবহার করে বোঝায়, কীভাবে দেবীচেতনা (শক্তি) আমাদের আদিম প্রবৃত্তিগুলিকে রূপান্তরিত করে নিয়ন্ত্রণে আনে, দমন নয়, বরং উচ্চতর চেতনার স্তরে উন্নীত করে।
অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিতে, বাঘ, সিংহ ও হাতি—এই তিনটি প্রাণী মানুষের “প্রকৃতি”-র তিনটি স্তরের প্রতীক। বাঘ প্রতিনিধিত্ব করে রজোগুণ—গতি, আকাঙ্ক্ষা ও আক্রমণ; সিংহ প্রতিনিধিত্ব করে সত্ত্বগুণ—প্রভা, সাহস ও স্থিতি; আর হাতি প্রতিনিধিত্ব করে তমোগুণ—জড়তা, শক্তি ও স্থায়িত্ব। কালী এই তিন গুণের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। তিনি এই গুণগুলিকে বিনাশ করেন না, বরং তাঁদের অন্তর্গত শক্তিকে শুদ্ধ চেতনায় রূপান্তরিত করেন। শঙ্করাচার্য যেমন বলেছেন, “গুণত্রয়াতীতঃ সঃ”—পরম চেতনা তিন গুণের ঊর্ধ্বে; কালী সেই অবস্থারই প্রতীক। তাই তিনি এই পশুগুলির উপর দাঁড়ান বা তাদের বশে রাখেন—যা বোঝায়, চেতনা যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে প্রবৃত্তি নিজেই তার সহযোগী শক্তিতে পরিণত হয়।
কাশ্মীর শৈব দর্শনের ব্যাখ্যায়, এই পশুরা স্পন্দ-র (চেতনার কম্পন) তিন রূপ—যেখানে চেতনা নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় (svātantrya) স্থূলরূপে প্রকাশিত হয়। বাঘ হলো সেই উগ্র শক্তি, যা চেতনার বহির্মুখ প্রবাহ—সৃষ্টি ও কামনা; সিংহ হলো স্বাতন্ত্র্যের আত্মবিশ্বাস—শিবচেতনার স্থিতি; আর হাতি হলো অভ্যন্তরীণ দৃঢ়তা—যেখানে চেতনা নিজেকে স্থির রাখে। দেবী এই তিনের উপর অধিষ্ঠিত, কারণ তিনি শিবচেতনার বিমর্শ-শক্তি—যিনি জানেন, কীভাবে প্রতিটি শক্তিকে তার স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে হয়। অভিনবগুপ্তের ভাষায়, “শক্তিঃ প্রকোপে ন দোষায়, প্রসাদে মুক্তিপ্রদা”—শক্তি যখন অবচেতনভাবে প্রবৃত্তির রূপ নেয়, তখন তা বন্ধন; কিন্তু যখন দেবী-চেতনার অধীন হয়, তখন তা মুক্তির শক্তি।
শাক্ত দর্শনে, বাঘ, সিংহ ও হাতি হলেন দেবীর বাহন—তাঁর শক্তি-বাহন (śakti-vāhana) বা চেতনার বাহক। দেবী কখনও বাঘের উপর, কখনও সিংহের উপর আর কখনও হাতির মস্তিষ্কের উপর বিরাজমান। বাঘ কামনা ও ভয়ের জয়ের প্রতীক; সিংহ অহং ও ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের প্রতীক; আর হাতি দমন করা শক্তির পুনর্জাগরণের প্রতীক। কালী তাদের উপর আসীন, কারণ তিনি প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক, যিনি জানেন, প্রতিটি প্রবৃত্তিই দেবত্বের একেক দিক—শুধু তার সচেতন ব্যবহারেই মুক্তি নিহিত।
মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বাঘ, সিংহ ও হাতি মানুষের তিন প্রকার প্রবৃত্তির প্রতীক। বাঘ মানে তীব্র আবেগ ও আগ্রাসন—আমাদের অন্তর্গত ক্রোধ, কামনা ও বেঁচে থাকার লড়াই। সিংহ মানে আত্মবিশ্বাস, কর্তৃত্ব ও অহং—যা সঠিক নিয়ন্ত্রণে শক্তি, কিন্তু অজ্ঞান অবস্থায় বন্ধন। হাতি মানে অবচেতনের গভীর শক্তি—ধীর, স্থির, কিন্তু একবার মুক্ত হলে অপরিমেয় ক্ষমতা সম্পন্ন। কালী এই তিন শক্তির অধিষ্ঠাত্রী—তিনি আমাদের শেখান, প্রবৃত্তিকে দমন করলে তা দানব হয়, কিন্তু চেতনার অধীনে আনলে তা দেবশক্তিতে পরিণত হয়।
কালী যখন বাঘ, সিংহ বা হাতির উপর বিরাজ করেন, তখন তিনি মানুষের অন্তর্জগতে এক গভীর যোগিক প্রক্রিয়া প্রকাশ করেন। তিনি জানান—প্রবৃত্তিকে অস্বীকার কোরো না, তাকে জানো; শক্তিকে ভয় কোরো না, তাকে সজাগ করো। বাঘের হিংস্রতা, সিংহের অহং, হাতির জড়তা—এই তিনই যখন দেবীর পদতলে সমর্পিত হয়, তখন তা পরিণত হয় মুক্ত চেতনার সোপান। এই কারণেই কালীর প্রাণীবাহনগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—“নিয়ন্ত্রণ মানে দমন নয়, জাগরণ; শক্তির শত্রু নয়, তার দেবত্ব চিনে নেওয়া।”
কালীর প্রতীকী পরিসরে পেঁচা বা শকুনকে প্রায়শই মৃত্যুর দূত বা অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, যা মানুষের মনে ভয় ও অশুভের ধারণা জাগিয়ে তোলে। তবে, তন্ত্র এবং গভীর দার্শনিক ব্যাখ্যায় এই পাখিগুলির তাৎপর্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা কেবল স্থূল অর্থে মৃত্যু বা ধ্বংসের প্রতীক নয়, বরং এগুলি আসলে গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক অর্থ বহন করে, যা সাধারণত সাধারণের দৃষ্টির আড়ালে থাকে।
পেঁচা, তার নিশাচর স্বভাবের জন্য, অন্ধকার বা অজ্ঞতার প্রতীকী পরিসরে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির প্রতীক। এটি সেই জাগ্রত দৃষ্টিকে নির্দেশ করে, যা বাহ্যিক চাকচিক্য বা দিনের আলোর ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে গিয়ে সত্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম। পেঁচা অন্ধকারের মধ্যেও স্পষ্ট দেখতে পায়, যা আত্মিক সাধনার ক্ষেত্রে আত্ম-উপলব্ধি এবং প্রচ্ছন্ন সত্যকে উন্মোচন করার ক্ষমতাকে বোঝায়। এটি কেবল জাগতিক জ্ঞান নয়, বরং আত্মিক সচেতনতা (awareness)-এর প্রতীক, যা আমাদের ভেতরের অন্ধকার দিকগুলিকে আলোকিত করে।
অন্যদিকে, শকুনকে সাধারণত পচন ও বিনাশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা জীবনের ক্ষণস্থায়িতা এবং নশ্বরতার স্মারক। তবে, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে শকুন পরিবর্তনের সতর্কতা (transformative alertness)-এর প্রতীক। শকুন মৃতদেহ ভক্ষণ করে পরিবেশকে পরিষ্কার রাখে, যা পুরাতন, অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকারক বিষয়গুলিকে ত্যাগ করে নতুন ও শুদ্ধতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীকী রূপ। এটি রূপান্তর এবং পুনর্জন্মের প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে—যেখানে একটি চক্রের সমাপ্তি নতুন কিছুর সূচনা করে। এই পাখিটি আমাদেরকে শেখায় যে, মৃত্যু বা ধ্বংস কেবল একটি শেষ নয়, বরং এটি একটি পরিবর্তনের সুযোগ, একটি নতুন সূচনার পূর্বাভাস।
কালী প্রসঙ্গে পেঁচা বা শকুনকে নিছকই মৃত্যুর দূত হিসেবে না দেখে, বরং সচেতনতা এবং পরিবর্তনের শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে দেখা উচিত। এই পাখিগুলি সেই জাগ্রত দৃষ্টিকে উপস্থাপন করে, যা অন্ধকারের মধ্যেও সত্যের উপস্থিতি শনাক্ত করে এবং জীবনে অপরিহার্য রূপান্তরকে স্বাগত জানায়। তারা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভয় বা অজ্ঞতা কাটিয়ে উঠলে আমরা গভীরতর জ্ঞান এবং আত্মিক উপলব্ধির দিকে অগ্রসর হতে পারি। এই প্রতীকগুলি কালীর ধ্বংসাত্মক রূপের আড়ালে থাকা সৃষ্টি ও রূপান্তরের চিরন্তন প্রক্রিয়াকে উদ্ভাসিত করে।
অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিতে, পেঁচা ও শকুন উভয়ই সেই সাক্ষীচেতনা (sākṣī-cetanā)-র প্রতীক, যা মৃত্যুর মধ্যেও নির্বিকার, পর্যবেক্ষক ও অক্ষয়। শঙ্করাচার্য “দ্রষ্টা-দৃশ্য-বিভাগ” ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন—“দ্রষ্টা ন তদ্ভিন্নো যঃ”—যে দর্শক কখনও দৃশ্যের সঙ্গে অভিন্ন হয় না, সে-ই আত্মা। পেঁচা রাত্রির নিঃশব্দ পর্যবেক্ষক, আর শকুন দূর থেকে মৃত্যুর চিহ্ন দেখে উপস্থিত হয়—দু-জনেই আমাদের শেখায়, সত্যিকারের জ্ঞান কোনো আলোতে নয়, অন্ধকারে টিকে থাকার মধ্যেই পরিপূর্ণ হয়। তাই তারা অবিদ্যার রাত্রিতেও সজাগ ব্রহ্মচেতনার প্রতীক—যেখানে মৃত্যু নয়, সাক্ষী-ভাবই চূড়ান্ত বাস্তব।
কাশ্মীর শৈব দর্শনের ব্যাখ্যায়, এই পাখিগুলি বিমর্শ-শক্তির (vimarśa śakti) প্রতীক—চেতনার সেই দিক, যা সর্বদা নিজেকে প্রত্যক্ষ করে, এমনকি ধ্বংস ও বিলয়ের মধ্যেও। শৈবতত্ত্বে বলা হয়, চেতনা কখনও বিনষ্ট হয় না; কেবল তার প্রকাশরূপ বদলায়। শকুন তাই “রূপান্তরের প্রহরী”—যে জানে, মৃত্যু মানে আরেক রূপে জন্ম, আর পেঁচা হলো “নিশাচর জ্ঞানদৃষ্টি”—যে অন্ধকারেও দেখে, কারণ তার চোখ বাইরের আলো নয়, অন্তরের চেতনার আলোয় জ্বলে। এই দুই-ই দেবীচেতনার কার্য—যিনি একদিকে ধ্বংসের মাধ্যমে লয় ঘটান, অন্যদিকে সেই লয়ের গভীর থেকে নতুন সৃষ্টির আভাস দেন।
শাক্ত দর্শনে, পেঁচা ও শকুন হলো দেবীর মায়া ও জ্ঞান-শক্তির যুগল প্রতীক। পেঁচা নির্দেশ করে নিঃশব্দ অন্তর্দৃষ্টি—যে চুপচাপ সব দেখে, তবু ভয় পায় না; আর শকুন নির্দেশ করে ত্যাগ ও বিচ্ছেদের জ্ঞান—যে মৃত ও ক্ষয়িষ্ণু দিককেও প্রত্যাখ্যান না করে, গ্রহণ করে প্রকৃতির ছন্দ হিসেবে। তাই দেবীর এই বাহকেরা আমাদের শেখায়—রূপান্তর সর্বদা ক্ষয় থেকে জন্মায়, আর সত্যিকারের জাগরণ ঘটে তখনই, যখন আমরা মৃত্যুর সান্নিধ্যেও সজাগ থাকতে পারি।
মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায়, পেঁচা ও শকুন মানুষের অবচেতনের দুই দিকের প্রতীক। পেঁচা মানে self-awareness—অন্ধকার মানসিক প্রদেশে প্রবেশের ক্ষমতা, যেখানে মানুষ নিজের ভয়, আকাঙ্ক্ষা ও অপরাধবোধের মুখোমুখি হয়। শকুন মানে transformation through loss—অর্থাৎ, যেসব অভিজ্ঞতা আমরা হারাতে চাই না, সেগুলির মৃত্যুর মধ্য দিয়েই নতুন অন্তর্দৃষ্টি জন্মায়। কার্ল ইয়ুং বলেছিলেন, “In the shadow of death, consciousness is born”—কালী সেই অভিজ্ঞতার দেবী, যিনি এই দুই পাখিকে নিজের সঙ্গে রাখেন, যেন মানুষ বুঝতে শেখে—অন্ধকারের প্রতিটি কোণেই নতুন আলো জন্ম নিচ্ছে।
পেঁচা ও শকুন কালীচেতনার ভয়ংকর নয়, বরং জাগ্রত প্রতীক—তারা মৃত্যু ও পরিবর্তনের সীমান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের স্মরণ করায়, মৃত্যুও কেবল এক রূপান্তর, আর অন্ধকারও এক গর্ভ, যেখানে নতুন চেতনা জন্ম নেয়। তাঁরা দেবীর নিঃশব্দ প্রহরী—অবিদ্যার গভীরে জ্ঞানের সজাগ উপস্থিতির প্রতীক।
কালীর প্রতীকতত্ত্বে সাপ বা নাগ এক অত্যন্ত গভীর এবং বহুমাত্রিক দার্শনিক প্রতীক। এটি শুধু ভয় বা বিপদের প্রতীক নয়—বরং চেতনার গুপ্ত শক্তি, কুণ্ডলিনী (Kuṇḍalinī)—যে-শক্তি সুপ্ত অবস্থায় মানুষের মেরুদণ্ডের মূলভাগে ঘুমিয়ে থাকে এবং জাগরণের মাধ্যমে আত্মাকে ব্রহ্মসচেতনতার সাথে একীভূত করে। কালী, যিনি শক্তির আদিম রূপ, সেই কুণ্ডলিনী শক্তির জীবন্ত প্রতিমূর্তি। তাঁর গলায় বা হাতে সাপের উপস্থিতি দেখায়—তিনি শক্তির স্রোতের নিয়ন্ত্রক ও জাগরণশক্তির উৎস।