শূন্য থেকেই সব




যখন আমরা বলি ‘শূন্য’, তখন তা শূন্যকেই বোঝায়। এর মানে, কোনো কিছুর সঙ্গে কারও কথোপকথন হচ্ছে না, শূন্যই নিজেকে প্রকাশ করে ভাষার আকারে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, উত্তরও আসতে পারে আপনাআপনিই। কিন্তু এই প্রশ্নোত্তর কোনো তর্ক নয়, কোনো চূড়ান্ত অবস্থান নয়, এমন কোনো সত্য নয়, যা “জ্ঞান” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এখানে একমাত্র যা আছে—তা হলো আপেক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গির উত্থান ও লয়, যা কেবল আপেক্ষিক হিসেবেই থাকে।

যে-কোনো গ্রহণ বা অগ্রহণ—যা-ই ঘটুক না কেন—তার কোনো আসল অর্থ নেই। কারণ গ্রহণ বা অগ্রহণ মানেই দ্বৈততা, যেখানে একটি “অবস্থা” আরেকটির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। এই বর্ণনা কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায় না, কোনো মতবাদ ভাঙতেও চায় না। শূন্য—এ কেবল এক ধ্বনি, যা শূন্য থেকে উঠে আসে, শূন্য হিসেবেই, কিন্তু একই সঙ্গে সব কিছুর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে।

অনেকে ভাবে—স্বাধীনতা পাওয়া যাবে, যদি আমি “গ্রহণ করি”; যদি আমি সব কিছুকে মেনে নিই, তাহলেই দড়ির শেষে, রেখার শেষে আমি মুক্ত হব। কিন্তু এ ধারণা কেবল আরেকটি স্বপ্ন, যেখানে মনে হয়—শর্ত, conditioning ঝরে পড়লেই স্বাধীনতা স্পষ্ট হবে।

কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে—স্বাধীনতা কোনো প্রক্রিয়ার শেষে নয়, না কোনো প্রয়াসে, না কোনো কর্মে, এমনকি কর্মহীনতার মধ্যেও নয়। স্বাধীনতা সর্বদাই বিদ্যমান, সব কাহিনির ওপারে, সব বর্ণনার বাইরে। অতএব, স্পষ্ট করে বলা যায়—এখনই, যেমন আছে, তা-ই স্বাধীনতা।

এই প্রকাশ অনেকসময় আক্রমণাত্মক বা ভ্রান্ত শোনাতে পারে, আবার কখনো তীব্র, উগ্র, জ্বালাময়ী বলে মনে হতে পারে, কখনো কোমল, শীতল, করুণাময়, প্রেমময়, আবার কখনো নিরাসক্ত, শূন্য, সব কিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু এগুলো সবই ব্যাখ্যার ছাঁচ। এক শক্তি অন্য শক্তিকে টার্গেট করছে বলে মনে হয়, কিন্তু সেটাও কেবল স্বপ্নের খেলা, এক “অবস্থান”-এর ভ্রম। আসলে এর কোনো “দিক” নেই। এ একদম দিকহীন, অবস্থানহীন।

সব কিছু যেমন আছে, তেমনই আছে। এখানে কিছুই বদলানোর দরকার নেই, কিছুই সংশোধনের প্রয়োজন নেই। যতদূর এই দেহের প্রসঙ্গ আসে বা থাকে—এ কোনো গোষ্ঠী বা মতবাদে সায় দেয় না—যেখানে নিজের “সত্য” চাপিয়ে দিতে হয় অন্যের ওপর, অন্য কণ্ঠকে চেপে বসে। আসলে এই দেহ কখনও কোনো মতবাদের সঙ্গেই যুক্ত নয়। এ কেবল এই মুহূর্তেই প্রকাশিত হচ্ছে—শব্দের স্রোত, বর্ণনার জোয়ার হিসেবে।

এই প্রকাশের কোনো উদ্দেশ্য নেই। না উন্নত করার, না পরিবর্তন করার, না সাহায্য করার। কারণ এখানে এমন কেউ বা কিছু নেই—যাকে উন্নত করতে হবে, যাকে সাহায্য করতে হবে, যাকে সমৃদ্ধ করতে হবে। এ কেবল—যা আছে, তা-ই। এ একটি গান—যা গাওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো শ্রোতার জন্য নয়।

কোনো কর্তা নেই, কোনো করণ নেই। শুধু শূন্য থেকে ভাষা প্রকাশ পায়। প্রশ্ন-উত্তর, গ্রহণ-অগ্রহণ—সবই দ্বৈততার ভ্রম। স্বাধীনতা কোনো দূরের গন্তব্য নয়, কোনো দড়ির শেষে নয়—এখনই, এই মুহূর্তে। প্রকাশ বহুরূপে আসতে পারে: তীব্র, কোমল, প্রেমময় বা নিরাসক্ত। কিন্তু সবই কেবল আপাত ভ্রম। এই দেহ কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নয়, কেবল প্রকাশের বাহন মাত্র। এখানে কোনো উদ্দেশ্য নেই। কেবল যা আছে, তা-ই আছে—যেন এক গান বাজছে, যার আসলে কোনো শ্রোতা নেই।