লে ট্রু (১৯৬০) বা ‘দ্য হোল’ জ্যাক বেকেরের শেষ কাজ, শুটিং শেষ হবার মাত্র দুই সপ্তাহ পর তিনি মারা যান। আইএমডিবি’তে এ দারুণ ছবিটার রেটিং ৮.৫। মূল গল্পের নাম দ্য ব্রেক, লেখক হোজে জিওভান্নি। পরিচালক ছবিটিকে পুরোপুরিই বাস্তবানুগ রাখতে চেয়েছেন, তাই অভিনেতা হিসেবে নেয়া হয়েছে কিছু অপেশাদার লোককে, সাথে আবহটাকেও এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা দেখলে কোনোভাবেই বানোয়াট কিছু মনে হয় না। গল্পটি জেল থেকে পালানোর গল্প। সিনেমায় পালানোর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে রাখা হয়েছে রলাঁ ডারব্যান্টকে, যার প্রকৃত নাম জ্যঁ কেরডি। তিনি ছিলেন লেখক জিওভান্নির সহকয়েদি এবং ১৯৪৭ সালে তিনি সত্যিই জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ছিলেন পেশায় মেকানিক, তাঁর জীবনের ১২ বছর জেলেই কেটেছে। সিনেমাটি শুরু হয় তাঁরই বয়ানে। সিনেমায় তাঁর সাথে একই কক্ষের বাসিন্দা আরও চারজন কয়েদির চরিত্রে অভিনয়কারীদের কেউই পেশাদার অভিনেতা নন। তাঁদের দুইজন ছিলেন পরিচালকের ছেলে জ্যঁ বেকের যে ভলিবল টিমে খেলতেন, সেই টিমের খেলোয়াড়।
স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত ক্লদ গ্যাস্পার্ড একজন চমৎকার মার্জিত মানুষ। তাকে এক সেল থেকে অন্য সেলে স্থানান্তরিত করা হয়। নতুন সেলে বাকি চারজনের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়, সে সবার সাথে খাবার শেয়ার করে খায়, তার আচরণ ও মনোভাব সহযোগিতাপূর্ণ। অনেক ইতস্তত করার পর তার সেলমেটরা তাকে জানায়, ওরা সবাই পালানোর প্ল্যান করছে। ওরা পাঁচজন মিলে ওই সেলের এককোণার ফ্লোরটাইলস তুলে খুঁড়তে শুরু করে। ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ দিয়ে ওরা সুয়ারেজ সিস্টেমে পৌঁছবে, সেখান থেকে উঠে ম্যানহোল দিয়ে পালাবে। এটাই ছিল ওদের প্ল্যান। হোজে জিওভান্নিকে ১৯৪৮ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল, পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় তিনি ১৯৫৬ সালে আরও ৮ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করার পর মুক্তি পান। ১৯৫৭ সালে তিনি গল্পটি লেখেন, এবং বেকেরের সাথে গল্পটিকে সিনেমায় রূপ দেন। জিওভান্নি কেরডিসহ জেল থেকে একাধিকবার পালানোর চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন। ব্যর্থ হওয়াতে ভালই হয়েছে, কারণ যদি তিনি পালাতে পারতেন, তবে তিনি মুক্ত হয়ে তাঁর ভাইয়ের খুনিকে খুন করতেন এবং জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে ডাকাতি পেশাতেই ফিরে যেতেন। তখন আবারো পুলিশ তাঁকে অ্যারেস্ট করে জেলে ঢুকিয়ে দিত।
সিনেমার কাহিনিটি পুরোপুরিই অথেনটিক। সিনেমায় দেখানো হয়েছে কেরডি টুথব্রাশের মাথায় আয়না লাগিয়ে পেরিস্কোপ বানায়, সেটি সেলের আইডোরে ঢুকিয়ে ওরা দেখে নেয় কখন বারান্দায় গার্ড কিংবা অন্যকেউ আসছে, এবং সে অনুযায়ী নিজেরা সতর্ক হয়ে যায়। বালিঘড়ি বানানোর প্ল্যানটাও কেরডির। এক বোতল থেকে আরেক বোতলে সমস্ত বালি পড়তে সময় নেয় আধাঘণ্টা, সেটা মাথায় রেখে ওরা সময়ের হিসেব করে। প্রকৃত ঘটনায়ও কেরডি এমন দুটো কাজের যন্ত্র উদ্ভাবন করেছিলেন নিজেদের প্রয়োজনে। এমন-কী সেলের কোণায় টাইলস সরিয়ে কনক্রিটের ফ্লোর খুঁড়ে ভূগর্ভস্থ প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করার ঘটনাটিও সত্যিই ঘটেছিল। টাইলস সরিয়ে কনক্রিটের ফ্লোর ভাঙার কাজটি কেমন, তা জানতে পরিচালক সত্যিসত্যি ফ্লোর ভেঙে দেখেছিলেন। প্রতিটি সূক্ষ্ম কাজকেই তিনি যতটা সম্ভব বাস্তবানুগ করে তুলেছিলেন। অত্যন্ত অসুস্থ শরীর নিয়ে কেউ অতোটা কষ্ট করে এমন দারুণ ছবি বানাতে পারেন, এটা ভাবলেও অবাক হতে হয়। মুভিটি দেখার সময় ওই পাঁচজন কয়েদির নিয়তির জন্য আমাদের মনে কোনো সমবেদনা কিংবা ব্যথা কাজ করে না, বরং ওদের অদম্য সাহস, ধৈর্য ও নিষ্ঠার প্রতি এক ধরনের সমর্থন কাজ করে। মুক্তির পর এ মুভি সাফল্যের মুখ দেখেনি, মুভিটি দর্শক-সমাদৃত হয়েছে অনেক পরে।
এ সিনেমায় কোনো মিউজিক নেই, অপ্রয়োজনীয় কোনো ডায়লগ নেই, দৈর্ঘ্যের অনাবশ্যক বৃদ্ধি নেই। পাঁচজন কয়েদি তাদের কাজটাই পুরো সিনেমায় করে যায়—জেল থেকে পালানোর পথটা তৈরি করা। ওদের এই উদ্দেশ্যকে ঘিরেই সিনেমার কাহিনি সামনের দিকে হেঁটেছে। অন্যান্য সিনেমায় যেমনটা দেখি, কারারক্ষীরা কয়েদিদের বেশ নির্যাতন করে, ওদের ঠিকমতো খেতে দেয়া হয় না, নানান দুর্ব্যবহারের শিকার হতেই হয়, এ সিনেমায় তেমন ক্লিশে কিছু নেই। এ সিনেমায় কারারক্ষীরা তাদের যা কর্তব্য, তা-ই করে গেছে, কয়েদিদের প্রতি ওদের ঘৃণা কিংবা ভালোবাসা, কোনোটাই নেই। পরিচালক এখানে কারারক্ষীদের ভিলেন বানিয়ে কয়েদিদের দিকে দর্শকদের সেন্টিমেন্ট টেনে নেয়ার কোনো চেষ্টাই করেননি। এ সিনেমায় কয়েদিরা তাদের প্রাপ্য কোনো অধিকার থেকেই বঞ্চিত নয়। ফলে আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ হয়ে থাকে জেলের পরিবেশ, জেল কর্তৃপক্ষ, কিংবা কয়েদিদের অবস্থার উপর নয়, বরং জেল থেকে পালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য পাঁচটা মানুষ কী করছে, তার উপর।
ওরা কীকরে আশেপাশের টুকিটাকি জিনিস দিয়েই চাবি, বাতি, গাঁইতি, বালিঘড়ি বানিয়ে ওদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা আমাদের মুগ্ধ করে। ওদের সাথে আমরাও অপেক্ষা করতে থাকি, কখন ওরা বাইরে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করতে পারবে। ওরা খুঁড়তেই থাকে নিরলসভাবে, পালানোর পথ খুঁজে যায় রাতের পর রাত। পুরো কাজটাই ওদের করতে হয় খুব গোপনে, কারারক্ষীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে, কৌশলে। এই প্রক্রিয়া এগোয় খুবই সাবলীল ভঙ্গিতে, ওদের এই কাজটা দেখতে দেখতে বিরক্তি ধরে যাওয়ার কথা, তবু সততা নিয়ে বলতে পারি, এক মুহূর্তের জন্যও সিনেমাটি দেখতে একটুও বিরক্ত লাগে না, গল্পের মেজাজটা ছবির নির্মাণে অতটাই সাবধানে সাজানো। মুভিটা দেখার সময় সবচাইতে বেশি চোখে পড়ে ওই পাঁচজন কয়েদির মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, সবাইই অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিদিন কাটাচ্ছে, ওদের চিন্তাভাবনা ও আচরণও কীকরে জেল থেকে পালানো যায়, সেটাকে কেন্দ্র করেই। কেরডির অভিনয় দেখে চমৎকৃত হতে হয়। সেই চৌদ্দ বছর আগে যেমনি করে সুড়ঙ্গ বানিয়ে তিনি জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, সে কাজটিই এতো বছর পর তিনি এতটা নিখুঁতভাবে অভিনয়ে নিয়ে এসেছেন!
দুইজন ওয়ার্ডেন একটা মাছিকে ধরে মাকড়শার দিকে ছুঁড়ে দেয়। মাকড়শা মৃত্যুর প্রতীক। দুইজন কয়েদি ওদের দিকে উঁকি মেরে দেখে আর ভাবে, ওরা কী করছে! ওরা কিছু বুঝতে পারে না। এটা নিয়ে ওরা আর ভাবেই না। কোথায় কী ঘটছে, সবকিছুকে পাত্তা দেয়ার কী আছে? নিজের দুর্ভাগ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচতে হবে। এটাই জীবন! একটা উদ্দেশ্যকে ঘিরে ওই পাঁচজন মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য সফল করতে ওরা এতটাই আন্তরিক যে ওদের লক্ষ্য ক্রমেই স্বপ্নে রূপ নেয়। সে স্বপ্ন মুক্ত হওয়ার স্বপ্ন। বন্দিত্ব থেকে মুক্তির দিকে যে যাত্রা, সেটাই এ মুভির মূল উপজীব্য। স্বাধীনতা পেতে হলে কিছু মূল্য দিতে হয়। সে মূল্যটাই ওরা দিয়ে এসেছে গভীর নিষ্ঠার সাথে। সবচাইতে বড়ো যে মূল্য ওদের দিতে হয়েছে, তা শ্রম নয়, নিষ্ঠা নয়, বরং নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস ও ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষা। শেষ পর্যন্ত মুক্তি মিলবে কি না, তা ওদের কেউই জানে না। মুহূর্তের দাবিতে কতকিছুই তো ঘটে যায়, যেগুলির উপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
কোনো এক রাতে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজটা শেষ হল। ওরা এখন চাইলেই ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে প্যারিসের রাস্তায় উঠে যেতে পারে। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে দুইজন করে যেত, বাকি তিনজন রুমে শুয়ে থাকতো। দুইজনের শোয়ার জায়গায় বিশেষ কায়দায় কম্বলের নিচে এমন ব্যবস্থা করে রাখা হতো, যাতে সেলের দরোজার ফুটো দিয়ে ওয়ার্ডেনদের কেউ দেখলেও কিছু বুঝতে না পারে। যে দুইজন সেই ভোররাতে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে রাস্তা দেখেছিল, ওরা চাইলেই সঙ্গীদের ফেলে পালিয়ে যেতে পারত খুব সহজেই। ওরা তা করলো না। বরং সেলে ফিরে সবাইকে এ খুশির খবরটা দিলো। সবাই মিলে ঠিক করলো, সেদিন রাতেই ওরা পালিয়ে যাবে। তবে ওদের মধ্যে একজন থেকে যাবে, পালাবে না। ও যদি পালিয়ে যায়, তবে পুলিশ গিয়ে ওর মাকে ধরে নিয়ে আসবে, এমন একটা ভয় থেকে সে ওই সেলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রাত নামল। ওদের এখন পালানোর কথা। হঠাৎ ওদের মধ্যে একজন পেরিস্কোপ দিয়ে দেখল যে কারারক্ষীরা ওদের সেলের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কী হল? ওদের পরিকল্পনা কে ফাঁস করে দিলো?
সেইদিন গ্যাস্পার্ডকে কারাপ্রধান ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তার স্ত্রী অভিযোগ তুলে নিয়েছে। এখন যদি ম্যাজিস্ট্রেট তার কেসটি ডিসমিস করে দেয়, তবে সে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে। তা না হলে তাকে জেলে আরো থাকতে হবে। কিছু সুবিধা পেতে কিংবা কারা কর্তৃপক্ষের সহানুভূতি পেতে সে হয়তোবা প্রিজন ডিরেক্টরকে তাদের প্ল্যানের কথা বলে দিয়েছিল। মুভিতে এ দৃশটি দেখানো হয়নি, তবে পালিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে যখন ওরা ধরা পড়ে গেলো, তখন কারারক্ষীরা সবাইকে রুম থেকে বাইরে নিয়ে পোশাক খুলিয়ে হাত বেঁধে রাখলেও গ্যাস্পার্ডকে নেয়নি। ডারব্যান্ট তার দিকে তাকিয়ে ঘৃণাভরে বলে ‘পুওর গ্যাস্পার্ড!’ মজার ব্যাপার হল, যে দুইজন ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে প্যারিসের রাস্তায় পৌঁছে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে গ্যাস্পার্ড একজন। সে চাইলেই সেইদিন ভোররাতে পালিয়ে যেতে পারত। তা না করে সে সেলে ফিরে এসেছে সবাইকে সাথে নিয়েই পালানোর জন্য। অথচ যেইমাত্র সে তার সম্ভাব্য মুক্তির কথা জানতে পারল, সেইমাত্র সে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসল! সে কেন করলো একাজ? বাইবেলে জুডাস ৩০টি রূপার টুকরার বিনিময়ে যিশু খ্রিস্টের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, অথচ জুডাস ছিল যিশুর সবচাইতে কাছের ১২জন শিষ্যের অন্যতম। একইভাবে নতুন সেলে স্থানান্তরিত হবার পর থেকে পূর্ণ বিশ্বস্ততার সাথে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সেখান থেকে পালানোর রাস্তা বের করার কাজটা বাকি চারজনের সাথে একই উদ্যমে করলো, পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও বাকিদের ফেলে পালাল না, অনায়াসেই কর্তৃপক্ষের অগোচরেই বাকিদের সাথে পালিয়ে যাওয়ার সব সুযোগই হাতের মুঠোয়………আর তখনই সে কিনা এমন বেইমানি করে বসল?
ওরা যে পালাতে পারে, এরকম কোনো সন্দেহ কারারক্ষীদের মনে আসেনি। যদি আসতো, তবে ওই ছোট্ট সেলটি খুঁজে কোণার ওই গর্তটি বের করা কঠিন কোনো কাজ ছিল না। তার মানে, ওদের কাছে কেউ না কেউ ওদের পরিকল্পনাটি ফাঁস করে দিয়েছিল। এমন হতে পারে, এই যে কারাপ্রধান গ্যাস্পার্ডকে ডাকলেন, সেটা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার স্ত্রী মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার খবরটিও মিথ্যা। মাঝেমধ্যে কয়েদিদের মধ্যে বেছেবেছে কাউকে ডাকা হয়, তাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে ভেতরের নানান তথ্য বের করা হয়। এই মাইন্ড গেমটার সাহায্যে গ্যাস্পার্ডকে কৌশলে ফাঁদে ফেলা হয় এবং হয়তো বলা হয় যে যদি সে তাদের কোনো তথ্য দিয়ে সাহায্য করে, তবে তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে রাজি করানো হবে। এমন সব স্নায়বিক চাপপ্রয়োগের মাধ্যমে তার কাছ থেকে কথা বের করা হয়েছে। আচ্ছা, পাঁচজনের মধ্যে গ্যাস্পার্ডকেই বেছে নেয়া হল কেন? একদিন গ্যাস্পার্ড ভিজিটরস রুম থেকে তার সেলে ফেরার সময় মনের ভুলে তার পুরনো সেলে চলে যাচ্ছিল। কারাপ্রধান সেদিন ব্যাপারটা দেখেছিলেন। মানসিকভাবে অন্যদের তুলনায় গ্যাস্পার্ড কিছুটা বিচলিত ও উদ্বিগ্ন, এটা হয়তো কারাপ্রধানের মনে এসেছে।
গ্যাস্পার্ড যে দুই ঘণ্টা ডিরেক্টরের রুমে ছিল, সে দীর্ঘ সময়ে সে ওদের কাছে পরিকল্পনাটা ফাঁস করে দেয়ার পাশাপাশি ওদের খোঁড়া সুড়ঙ্গের পুরো পথটাও দেখিয়ে দিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার রাতে যখন ওয়ার্ডেনরা সবাই ওদের রুমে আসে, তখন মেঝের কোণার সুড়ঙ্গমুখ থেকে একজন ওয়ার্ডেন মাথা বের করে নিচেথাকা অন্যদের বলে এই পথে উপরে না উঠে পেছনের সোজা পথে উপরে উঠতে। অর্থাৎ, ওরা যদি পালানোর চেষ্টাও করতো, তবু ওরা ধরা পড়ে যেত, কেননা গ্যাস্পার্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওরা আগেই মেঝের নিচের ভূগর্ভস্থ স্থানে অবস্থান নিয়েছিল। একাজ করে গ্যাস্পার্ডের কী লাভ হল? বাকি চারজনকে যখন পরনে কেবল অন্তর্বাস রাখতে দিয়ে হাত দেয়ালে রেখে দাঁড় করিয়ে রাখা হল, তখন গ্যাস্পার্ডকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটা সলিটারি সেলে। গ্যাস্পার্ডের মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই, কোন আইনেই-বা সে মুক্তি পাবে? অন্যদিকে অন্যান্য কয়েদিরা সেই রাতের পর থেকে নিশ্চয়ই গ্যাস্পার্ডকে আর ভাল চোখে দেখবে না, স্বাভাবিকভাবেই তাকে একঘরে হয়ে থাকতে হবে। সবই বুঝলাম। তবু মনে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। গ্যাস্পার্ড কিন্তু আদতে বেইমান প্রকৃতির মানুষ ছিল না। ওরকম হলে সে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে অন্যদের ফেলে সহজেই প্যারিসের রাস্তায় গিয়ে উঠতে পারত। তাছাড়া পালানোর রাস্তা যখন বের করে ফেলেছেই, তখন সেই রাতে জেল থেকে সবাই মিলে পালানো ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবু সে কেন এমন বিশ্বাসঘাতকতা করে বসল? কৌশলী, সৌম্যদর্শন, অমায়িক কারাপ্রধানের নার্ভটেস্টের সূক্ষ্ম ফাঁদে কেন পা দিলো?