১৬। আজ শুধু নয়, চিরকালই ধরে, ভালোবাসি, মুখে কথা না সরে! বলিনি কখনও, ভালোবাসি কত! দেরি হয়ে গেল, তুমি আজ গত!
১৭। ভালোবাসে যারা, ক্ষয়ে যায় ওরা, মরে ধীরে ধীরে, পৃথিবীর মায়া, আশার বাঁধন…একে একে যায় ছিঁড়ে। জীবন কেবলই জামার ধুলো, সে নিমিষেই পড়ে ঝরে, মরে না তো সে, কাজের ভিড়ে আড়ালেই থাকে সরে। বিদায়ের সুর বেজে গেলে পরে সব ঝড়ই হবে শান্ত, শান্তির তীরে ভিড়বে নৌকো, জীবন দেখবে অনন্ত।
১৮। নিষ্কলুষ তার পবিত্র আত্মা, যেন পাখা মেলে যায় উড়ে, হয়ে চিরজীবী থাকতে চিরকাল ভগবানের হৃদয় জুড়ে। চিরশান্তিতে থাকতে যে চায়, সে শুধু শান্তি খুঁজে ফেরে, ভগবদ্প্রেমে মজলে আত্মা, কেবলই শান্তি এসে ঘেরে।
১৯। চলে যাবে সে সময়ের আগে, এ নিয়তিতে ছিল লেখা, শরীর সুস্থ, প্রাণচঞ্চল; হলো তবু যমের সাথে দেখা। বদলে মনের মানুষ জানি না কখন গাছ হলো কোন ফাঁকে, ওতে ফুল ফোটে না, শুধু সাড়া দেয় পাতা ঝরানোর ডাকে।
২০। অশ্রুধারায় যে-দাগ পড়ে, তা যে গভীর বড়ো, ওঠে না, মন যারে চায়, দূরে গেলে সে, কাছে টানে তারে প্রার্থনা। এখানেই শুয়ে প্রিয় যত মানুষ, ঘুমোয় সবাই আরামে, বন্ধু, প্রেয়সী, পিতা, পিতামহ…এই দেহটিও যেন নামে।
২১। নিয়ে যাও সাথে নয়নের জল, আর যে কিছুই নেই, স্মৃতি কিছু আছে, আর কিছু প্রেম, সম্বল বলতে এ-ই। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, তুচ্ছ ধূলি-ছাই, শোকপঙ্ক্তি দু-এক ছত্র, দরিদ্র আমি, আর কীই-বা দেবো, দিতে পারি এটুক মাত্র।
২২। কবরের পাশে হেঁটে যদি যাই, ভাবি হৃদয়ের সুগভীরে, ধূলি হতে এলাম, ধূলিতে গড়ালাম, ধূলিতেই যাব ফিরে।
২৩। ভয়াল যত দৃশ্য ভাবো, রেখো অন্তরে ভারি যতনে; স্বর্গ হতে হবে বঞ্চিত, যদি না রাখো প্রার্থনা মনে।
২৪। এ ঘরে আজ নিভল প্রদীপশিখা, বড়ো আদরের স্বর থামল চিরদিন; মনমন্দিরে হায় যে-স্থান হলো ফাঁকা, পুরোতে কেউ পারবে না কোনোদিন।
২৫। মৃত্যুতে এত কান্না কীসের? শেষ কি সবই চিরতরে? কোন সে ভাবনায় এত ভারী মন, বিশ্বাসহীন অন্তরে? মরে যায় যারা, বাঁচে ততোধিক, পৃথিবীতে গোপনে, ফেলে যা গেছে, পড়ে থাকে তা-ই, পড়েই পড়ে মনে!
মরুভূমিতে যতই থাক শূন্যতা, কত মানুষ গোরস্থানে! এ বিধাতারই এক বিষাদযাপন, ছোটে সকলেই এই পানে! কবরের কী যায় আসে, তাকে ঘেরেও যদি বিষণ্নতার ছায়া? এ পৃথিবীর মায়াঘেরা সবই, আছে এক ওপারেই সত্যকায়া!
২৬। হায়, জনমে যার পুরোলে না সাধ, তার মরণে কেন দিতে এলে বাঁধ?
২৭। যতই কাঁদো, বওয়াও অশ্রুনদী, আসবে না সে ফিরে, যে গেছে, সে গেছেই; হৃদয়ে কেবলই সান্ত্বনা রবে ঘিরে। কেউ আগে যায়, কেউবা পরে—যাবেই যাবে সকলে, ভগবানে যার বিশ্বাস অগাধ, মৃত্যুযাপন করে সে জীবনবলে।
২৮। এ হৃদয়ে আছে জাগরুক স্মৃতির গভীর রেখা, তুমি নেই, তবু এ দু-চোখে তোমায় যাবে দেখা।
২৯। হঠাৎ সেদিন ঘুমভেঙে দেখি, যমদূত এসে দাঁড়িয়ে দুয়ারে, মুখে তাঁর নিঠুর অচেনা হাসি। কী জানি ভেবে কান্না পেল খুব, মনে এল, হায়, যাই কী করে, আমি যে তোমায় ভালোবাসি!
৩০। ভালো না বেসে থাকতে পারে না যারা, হৃদয় তাদের সোনার চেয়েও দামি; নিজের করে নিয়েছিল বুকে টেনে, থাকে মরণের পরে ওরাই ভীষণ নামি।