১। লাবণ্য কি রূপ, চাপা পড়ে দুই-ই কঠিন মাটির তলে, ভালো যত কাজ, বেঁচে থাকে ওরা নিজেদেরই গুণবলে।
আহা, ধন্য সে-জন, প্রিয়তমা যার রমণীর শিরোমণি, ভগবান তার বন্ধু জেনো, যখন জীবিত থাকে ধনী।
এ জীবনে হারিয়েছি যা, তার বুঝতে পারি না কিছু, পৃথিবীতে বুঝি আর কেউই নেই আমার সমান নিচু!
২। হঠাৎ করেই এল জীবনে অসীমের পথে ডাক, বুঝিনি কখনও, মৃত্যু এমন করে দেয় নির্বাক! এর বেদনা যে কী, এক বোঝে সে অভাগাই, হায়, প্রিয়জন যার বিনা বিদায়েতে হুট করে চলে যায়!
৩। হারিয়ে তুমি যাওনি গো আমার মনে, জেগে থাকো ঠায় নির্ঘুম তারার মতো; এক তুমিই আছ আমার প্রতিটি ক্ষণে, হায়, শুধু মৃত্যুদেয়াল বাধায় বাধা যত!
৪। এ হৃদয়ে মৃত্যু যতটা ঝরিয়েছে রুধির, তার দাগ মুছবে বলো কীসে? পুরোনো যা স্মৃতি, আসে ফিরে ফিরে, তবু ওরা মৃত্যুতে যায় কি মিশে?
৫। ওরা ভাবে, তোমায় আমি গেছিই বুঝি ভুলে! কেন ভাবে? এই যে দেখে হাসি ঠোঁটের কোণে! ওরা বোঝেই তো না, কতটা লুকিয়ে রাখি ব্যথা! হাসির তলে কত যে অশ্রু পড়েছে চাপা মনে!
যায় কি আর ভোলা? শুধু যায় না কিছু বলা!
৬। এবার শান্তিতে বাঁচো, হে প্রিয়তম! জীবনের সকল যাত্রা শেষ! ভুল বোঝাবুঝি, কাছের মানুষ তোমায় দেবে না কখনও ক্লেশ! পৃথিবীতে যত যা-ই করেছ, প্রতিদানে তার পেলে কেবলই ব্যথা; বড়ো ভালোবাসি, তাই বিরহে তোমার কাঁদি অঝোরে বসে একা।
৭। মধুর স্মৃতিতে রয়ে যাবে জেনো আমাদের সব দিন, তুমি বা আমি, থাকব না যে-ই, সে শুধবে মরণঋণ।
৮। বেদনার ক্ষত সওয়া যায় আর কত? নিজেই নিজের মৃত্যু ডেকে করেছি মাথানত। থাকো; চললাম আমি বিশ্রাম নিতে… ক্লান্তি এত যায় না বওয়া, তুমিই গেলে জিতে!
৯। স্বামী গেল তার, ছেলেও গেল; নিয়তির ও-ঘায়ে কাঁদেনি সে তবু শোকে। স্বর্গ হতে স্বয়ং ভগবান নেমে এল, এ-ক্ষত সারাতে পারবে না কোনো লোকে!
১০। ভাষা কখনো পারে কি বলতে, অশ্রু কখনো পারে কি দেখাতে… যার হারায়, জানে এক সে-ই, কত যে রুধির ঝরে হৃদয়েতে! ভাষা কি অশ্রু, প্রকাশে ব্যর্থ, ব্যথা কী যে তার, হারায় যে প্রিয়রে! যাকে ছেড়ে সে বাঁচেনি কখনও, তাকে হারিয়ে বাঁচে সে কী করে!
১১। হে নিথর সমাধি! তোমায় বড়ো বিশ্বাস করে রাখতে দিয়েছি আমার প্রাণের মানুষ ধরে! নিজহৃদয়ের গোপন কবরে ঘুমিয়ে রয়েছে সে, আশায় ফুরোয় আয়ু, কবে ঘুমোব তার পাশে!
১২। ফিরে যাও, ওগো, কেঁদো নাকো আর কবরের পাশে বসে, যাইনি তো চলে, রয়েই গেছি; বলো, পাও না আমায় কীসে? আমি ভালোই আছি, ভেবো না অত; আঁধার কাটুক আলো, কীভাবেই সে খারাপ থাকে, যাকে তুমি বাসো এতটা ভালো?
১৩। এ জীবনে ছিলে যতদিন, বুঝিনি কী ছিলে তুমি! নিলে অকালে বিদায়, সরল পায়ের নিচে ভূমি! মূল্য তোমায় দিইনি কখনও, ছিলে যে-দিন পাশে, সব হারিয়ে বুঝেছি সবই, আজ শূন্যতা ভরে আশে!
১৪। ছিল অত জ্বালা, ছিল অত ক্লেশ—বুঝিনি তা কখনও, ছিলে হাসিমুখে শত কষ্ট সয়েও—ছিল অশ্রু লুকোনো!
এসেছিলে ঘরে প্রতিমা হয়ে, হায়, রাখিনি পুজোয়… অভিমানে তাই বুঝি ঠিকানা খুঁজেছ ছাইয়ের ধুলোয়!
১৫। সন্ধ্যা নামে, আঁধার হয়ে আসে, মন বলে, থাকি তোমার পাশে। কবরের গা…আহা, সে যে অশ্রু দিয়ে মাখা! ফিরে আসতে যদি...চোখে এই স্বপ্নই আঁকা!