শুধু তুমি মানো আর আমি মানি--
আমাদের ঈশ্বর…সে তো একটাই জানি!
এ আকাশ…তোমার আমার, তবু
বেছে বেছে সংঘাতটাই ওরা আনে!
বাইবেলে লুকানো চিঠিগুলো…
ওরাও জানে সেসবের কথা!
যখন আমি হই শ্রদ্ধায় আনত।
কিংবা তুমি জোড়হাতে প্রণাম ঠুকো ঠাকুরচরণে,
দেখিনি ওদের যিশুকে বলতে--
এই ভগবান আমার…বলেনি তো সেও--
এই ছেলেটি আমার…শত্রু যে তোর!
ওকে ছুঁলে জাত চলে যাবে নগদে এখুনিই!
হস্ত-পদ-মুণ্ডুওয়ালা এরা কারা…
খায় রক্ত, মাখে রক্ত,
এমনি করেই স্বর্গে যে যায় প্রতিনিত্য!
এরাও মানুষ? এদেরও দেখি ধর্ম আছে,
ফাঁকা-খুলিতে বড়াইও আছে…
শুধু নেই যে মনুষ্যত্ব!
ওদের শরীরে যে বয় ওদেরই মায়ের রক্ত,
জানে কি তা ওরা?
ওরা যতবার মাকে ডাকে দেবী বলে,
ততবার আমি ডুবি বিস্ময়ে…মনে এসে যায়,
মানুষের গর্ভে কী করে এমন কুকুর জন্ম নিল!
<--nextpage-->
তবে কি ছিল সে মায়ের কুকুরের সাথে সহবাস?
তবে সত্যি কি ওদের দোষ কোনও নেই?
নির্দোষ এক মা-ই কেন-বা দোষী হবেন?
পাপী তবে সেই দূষিত বীর্য,
যার ভেতরে ছিল ঘুমিয়ে পুরুষের বেশে
এমনই এক বিরাট পশু, বিকট দানব!
…আমি কখনও দুঃখগুলোকে প্রশ্রয় দিই না। ওদের বসতে দিই না কখনও আমার মাঝে। যদি ওগুলো কোনও ছিদ্র পেত, তাহলে ভেতরে ঢুকে শেষ করে দিত আমাকে। দুঃখযন্ত্রণা কেবলই দুঃখীর ব্যাধি। ওগুলোকে কখনও বসতে দিতে নেই, ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হয়। মন খারাপ ছিল, কিছু ব্যাপার দেখে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ জমছিল, ওসব ভেবে একটা কবিতা লিখছিলাম। হঠাৎ তোমার কথা মনে এল, আর কবিতা লিখতে ইচ্ছে করল না, তোমাকে লিখতে ইচ্ছে করল…
আমি জানি, ওভাবে আগ বাড়িয়ে ডেকে ডেকে, সেধে সেধে কেউ দেয় না কখনও। ভাগের টুকুই দেয় না, আবার খুশি হয়ে বাড়তি…যার অঢেল আছে, সে পারে দিতে, দেয় কিছু ছিটেফোঁটা পথের কুকুরদের, এতে কিছু টেরও পায় না ওরা। ভাগের টুকরোটা কাছে গিয়ে যেচে যেচে হাত পেতে চেয়ে আনতে হয়, নয়তো দাতা নিজেই ওগুলো পকেটে পুরে রাখে আবার। কখনও-সখনও আবার ছিনিয়েও আনতে হয়, যারা ওসব পারে না, তাদের নিজের অংশ বলে কিছু থাকে না, সেধে-যেচে ঘরে বয়ে নিয়ে এসে তাদের কেউ দিয়ে যায় না। যার ঘরে কিছু হাত ভরে নিয়ে গেলে যাবার সময় তার হাতটা খালি যাবে না, তার ঘরে বয়ে নিয়ে যায় সবাই, তাকে রাখে মাথায় তুলে…ততদিন পর্যন্ত, যতদিন হাত ভরাবার অজুহাতটুকু থাকে। যারা ওসব পারে না, তারা অভিযোগ-অনুযোগ, ন্যায়-অন্যায় বিচার করতে থাকে…তবে ওসবে কী হয়? আছে নাকি ন্যায় বলে কিছু, অন্যায়ই-বা কী? আর দাতা…সে দান করে করে একসময় তার নিজেকে বাঁচানোই তো দায় হয়ে পড়ে! যে দাতা নিজের অংশটুকু আগে সরিয়ে না রাখে, তার আবার নিজের বলে কী থাকে? অত দান কেউ করে নাকি! অমন দান আদৌ করতে চায় কেউ! যে যত দেয় সে তত পায়…এইসব লেখা আছে কোথায় কোথায় যেন…কিন্তু বাস্তবে কই পায়? আদৌ কি পায়? বরং যে যত পায়, তার আরও চাই, নির্লজ্জের মতো, বেহায়ার মতো শুধু চাই চাই, নাই নাই…চলতেই থাকে। ওদিকে দাতা দিয়ে দিয়ে শূন্য হয়ে পড়ে রয় দুর্বল হয়ে। শুনেছি, প্রকৃতি নাকি কোনও শূন্যস্থান পছন্দ করে না। অবশেষে দুর্বল আর সবলের যুদ্ধ। সবলেরা প্রথমে জেতে, দুর্বলেরা শেষে। আমি জানি, আমি বোকার মতো আচরণ করি, কিন্তু জানি না কীভাবে কথা বলতে হয়, আমি কীভাবে বললে তুমি কথা রাখবে…আমি সত্যিই বুঝি না।
কখনওই কোনও কারণেই আমাকে ভুল বুঝো না। আমার কাছে ভালোবাসা সস্তা কিছু না। আমি সারাজীবন একটা মানুষকেই ভীষণ ভালোবেসে কাটিয়ে দিতে পারি। আর ভালোবাসায় সব সময় বদল হয় না। যে মানুষটার একটা টেক্সটের জন্য আমি সব সময় অপেক্ষা করে থাকি, সে মানুষটাও সামান্য একটা টেক্সট করার সময়ও পায় না! মাঝে মাঝে অপেক্ষা করতে করতে তোমার উপর এত্তো রাগ হয়, তখন ইচ্ছা হয়, তোমার মাথায় ১ বালতি পানি ঢেলে দিয়ে আসি, না হয় তোমাকে বাথরুমে আটকে রাখি।
এমন কর কেন তুমি?
ধরেও রাখছ না, আবার ছেড়েও দিচ্ছ না…তোমার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছা হয়, আর তোমার সময়ই হয় না!
আমার কাছে, তুমি--সে তো এক নেশার নাম!
আমার যখন যা মনে আসে, আমি সেটা তখনই বলে দেবো, কারণ আমার মাথায় এগুলো জ্যাম হয়ে থাকে, তা ছাড়া এত কথা কষ্ট করে মনে রাখা যায় না। আর মনের কথা বলে দেওয়াই তো ভালো!
চারটা কথা ছিল।
১. আমি কখনও কোনও কথায় বা কাজে বলেছি বা প্রমাণ করতে চেয়েছি যে আমি মেধাবী?
আমি মোটেই মেধাবী নই, ছিলাম না কখনও। ছোট থেকেই আমি ভীষণ বোকা আর হাবা টাইপের একটা মেয়ে। পড়াশোনায় অনেক ভালো রেজাল্ট অথবা উপস্থিত বুদ্ধি, কোনওটাই কখনও ছিল না আমার। বিশ্বাস না হলে বাসার কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার।
২. আমি কি সত্যিই কোনও মানসিক সমস্যায় ভুগছি? জানতাম না।
৩. এর জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া প্রয়োজন? কিন্তু আমি তো কখনও কোনও সমস্যা ফিল করিনি।
৪. আমি ডিপ্রেশনে আছি?
৫. ছোট থেকে আজ পর্যন্ত ছোট-বড় কোনও কারণেই কখনও একটা গ্লাস পর্যন্ত ভাঙিনি, সেখানে কারও গায়ে হাততোলা আমার পক্ষে অসম্ভব একটা ব্যাপার।
৬. আমি কারও উপর কখনও রাগি না। আমার ভেতরে রাগ আছে, কিন্তু তার কোনও বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
তোমার কিছু টেক্সট পড়ে উপরের কথাগুলি মাথায় এসেছে, লিখে ফেললাম। ইচ্ছে হলে রিপ্লাই দিয়ো।
I love you. I don’t want to hide any of my feelings from you, that’s why, I said everything. You can do whatever you want with those written words. I just want to let you know who I am. If you take it otherwise, then I am really very much sorry. Please forgive me.
খুব ইচ্ছে হয় সবাইকে বিশ্বাস করতে। সবাইকে না হলেও অন্তত কিছু মানুষের উপর, কিছু সম্পর্কের উপর আস্থা আনতে ইচ্ছে হয়। খুব ইচ্ছে হয় সব কিছু--পেছনের সবটা ভুলে গিয়ে, নতুন করে সবাইকে বিশ্বাস করতে শিখি, কিন্তু আমি পারি না। কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না, তাই আমার অসম্ভব কষ্ট হয়, কিন্তু ভেতরটা আর কিছুতেই সায় দেয় না কাউকে বিশ্বাস করার ব্যাপারে। কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না আমি। এমনকি, মাঝে মাঝে যে দুজন মানুষের জন্য এই পৃথিবীর আলোটুকু দেখতে পাচ্ছি, তাদেরও মনে হয়…ওরাও বুঝি আমায় ঠকিয়ে দেবে, ওরা আমায় ঠকাচ্ছে, ভেতরে ভেতরে চালাকি করছে, আমাকে ঠকাবার ফন্দি করছে। নিজের উপর ছাড়া আর কারও কথায় কাজে আর আস্থা পাই না। কিন্তু খুব করে চেষ্টা করি, জোর করে নিজেকে দিয়ে অনেক কিছু করাই, জোর করে নিজেকে বলি, আমি যা ভাবছি আসলে তা সত্যি নয়, মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়, সুযোগ দিতে হয়, মানুষের প্রতি ভালোবাসা রাখতে হয়, কিন্তু বারেবারে কেন জানি না সবাই ঠকিয়ে যায়। তার পর আবার আমি নিজেকে বলি…আর না আর না! আমার অভিজ্ঞতা দিনে দিনে আরও পোক্ত হয়। ভেতর থেকে আমারই এক সত্তা বলে ওঠে…আর নয়, আর পেছনের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না, আর বোকামি করা যাবে না, কারও হাসির পাত্র হওয়ার সময় আর নেই, আর কারও কাছেই খেলনা হয়ে যাওয়া যাবে না। ওরা আমাকে নীতি কথা শেখায়, ভালো-মন্দ শেখায়, ঠিক-ভুল শেখায়, ন্যায়-অন্যায়ের বাণী শোনায়। মনে হয় যেন পৃথিবীসুদ্ধ অন্যায় একমাত্র আমিই করে বসে আছি, আমাকেই পৃথিবীর সবচেয়ে ত্যাগী আর দানশীল হতে হবে, আমাকেই পৃথিবীসুদ্ধ মানুষকে বুঝতে হবে, তাদের কষ্ট লাঘবের একমাত্র যে গুরুদায়িত্ব, তার সবটাই আমার, আমি আসলে হিংসুটে, সবাইকে দিতে জানি না, শেয়ার করতে জানি না, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত আমি, আমাকে সব আবার নতুন করে শিখতে হবে, আমার আসলে অনেক ভুলভালো শিক্ষা হয়ে গেছে। ওরা আমাকে ছাড় দিতে শেখায়--নিজেদেরটা ঠিক রেখে!
আসলে আমার হয়ে বলার তো কেউ নেই। আমার প্রাপ্যটা কে দেবে বুঝে? খুব ইচ্ছে হয়, সব কিছু ছেড়েছুড়ে আবার বিশ্বাস করি। অবিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে কষ্ট হয় তো! ভুলে যাই না আর একটিবার! কী হয় ভুলে গেলে? কী হয় অতীতের কিছু অধ্যায় কিছু অভিজ্ঞতা মুছে ফেললে? কী হয় ওদেরকে আবার একটা সুযোগ করে দিলে? আমরা সবাই-ই তো মানুষ, ভুল তো মানুষেরই হয়, আমি তো আর খারাপ নেই। ভালোই তো আছি। আমার তো যা আছে, তা-ই অনেক। আমি তো অল্পেই খুশি। এভাবে চলে যায় তো আমার। একটু কষ্ট হলেও ওদের ভালোথাকার জন্য অতটুকু মানিয়ে নিতে কষ্ট নেই তো আমার। আমার অজুহাতে যদি আরও কিছু মানুষ ভালো থাকে, সুখে থাকে, তা হলে কী হয়? আমার আসলে ছাড় দিতে ইচ্ছে হয়, প্রচুর ইচ্ছে হয়। আমার যে সে-দিনগুলোতে খুব কষ্ট হয়েছিল! আমি বুঝি, অন্ধকারে হাতড়ে কাউকে না পেলে কতটা অসহায় আর একা লাগে। কষ্টটা একঢোঁকে গিলে ফেলতেও তো শক্তি লাগে, সে-শক্তি কি থাকে সবার? হয়তো থাকে, না-থাকলেও একসময় ঠিকই চলে আসে। না আসত যদি, তবে এত লোক বেঁচে আছে কী করে? আমি আসলে চাই না আমার মতো কষ্ট করে করে, না পাওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কেউ একটু একটু করে মরে যেতে থাকুক। আমি জানি কতটা ভয়ানক সে আঁধার গলিটা! আমার ইচ্ছে হয় যারা কষ্টে থাকে তাদের ওসব থেকে আগলে রাখতে, কিন্তু যখন দেখি কষ্ট ফুরোতেই, ঘা শুকোতেই ওরা কেমন উল্টো পথ চলতে শুরু করে, আমায় শেখাতে আসে উচিত-অনুচিত কী, ঠিক-ভুল কেমন, কোথায় কোনটা করলে ভালো হয়, কোথায় কোনটা না করলেও হতো…এইসব ওরা আমাকেই শেখায়, তখন নিজের উপরেই ভীষণ হাসি পায়। বলতে ইচ্ছা হয়, দেখলি তো আবার তো সেই গলিতেই হাঁটলি! বারণ করেছিলাম…বলেছিলাম, অত বিশ্বাসের ফাঁকাবুলি আওড়াতে নেই…মিলে গেল তো?
খুব খুব কষ্ট হয় যখন চাইলেও আর আগের মতো এগুতে পারি না। কে যেন পেছন থেকে জাপটে ধরে বলে, খবর্দার! অনেক হয়েছে শিক্ষা, ওপথে আর নয়, আর ওপথে যাওয়া যাবে না, কিচ্ছু নতুন নেই ওপথে, এবার ভিন্ন পথ ধরো। ওসব ছাইপাঁশ আদিখ্যেতাটা এবার ছাড়ো। নিজের শাসনে নিজেই আটকা পড়ে যাই। আর ইচ্ছে হয় না। কী দরকার ওসবের! আর তো মাত্র কটা দিন, ঠিক পার হয়ে যাবে। জীবন কাটাবার জন্য বিশ্বাস লাগবেই, কে বলেছে? আর যা-ই হোক, অন্তত কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বাস না রেখেই দিব্যি ভালো থাকা যায়। হ্যাঁ, দায়িত্ব তো আছে, যে মানে, তার সব জায়গাতেই দায়িত্ব পড়ে যায়; যে মানে না, তার কোথাও কোনও দায়িত্ব নেই। যার দায়িত্ব আছে, তার ভুলও আছে; যার দায়িত্ব নেই, তার কোনও ভুল নেই।…ওসব নাহয় বোঝা যাবে কম আর বেশি, কিন্তু মন থেকে আর কিছু করা যাবে না। মনের সমাপ্তি দিলাম এই মনেই। নিজের বিশ্বাসটুকু নিজের কাছেই বেঁধে রাখলাম, অন্তত নিজেকে যেন আর কখনও অবিশ্বাস না হয়। নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলেই হলো। একটা জীবনে এইটুকুই যথেষ্ট। আমি যে কীসের মধ্যে আছি, আসলে তার কিছুই বলা হয়নি এখনও। শতভাগের এক ভাগও না। ওসব বলা যায় না। বলতে গেলে কিছু কথায় বর্ণমালা ফুরিয়ে যায়। হিসেবি জীবনে বড্ড বেহিসেবি আমি।
আচ্ছা, আমি তোমাকে মেসেজ পাঠালে তুমি দেখ না কেন? মোবাইল সবসময় সাইলেন্ট করা থাকে, তাই? তা হলে আমি কী করব, বলে দাও। আমি কি এখন থেকে তোমাকে শুধু মেসেঞ্জারেই মেসেজ পাঠাব? তোমার মোবাইলে কল এলে দেখা যায়, স্ক্রিনের উপর চলে আসে, ভাইব্রেটেড হয়। মেসেজ এলে তুমি সত্যিই খেয়াল করতে পার না তৎক্ষণাৎ। তবে তুমি মেসেঞ্জার বেশি চেক কর, এটা সত্যি। আমি কি তা হলে এখন থেকে শুধু মেসেঞ্জারেই মেসেজ দেবো?
তুমি আমাকে অযথাই বেশি বড় বানিয়ে ফেল কেন মাঝে মাঝে? আমার ভীষণ অসুবিধা হয় এতে। আমি আসলে তোমার কাছে অবুঝ থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মাঝে মাঝে কেন তুমি ধরেই নাও আমি খুব বুঝি সব কিছু? আমাকে দিন-দুনিয়া না-বোঝা সহজ একটা পিচ্চি মেয়ে মনে করলে আমার খুব ভালো লাগত। তোমার কাছে বড় হয়ে যাওয়া মানে অনেক কিছু বুঝে নেওয়ার ঝামেলা। এটা আমার উপর চাপ সৃষ্টি করে।
দূরে থাকলে দূর থেকে কাছের মানুষকে ভুল বোঝাটা খুব সহজ। খুব অল্প সময়েই অনেক বড় দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। সামান্য একটা কথা…লিখে দিলে একরকম মনে হয়, আবার ঠিক সেই কথাটিই যখন মুখে বলা হয়, তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন শোনায়। এজন্যই অন্তত কণ্ঠস্বর শুনে কথাবলাটা কখনও কখনও ভীষণ জরুরি। আরও ভালো হয়, মানুষটার সামনে থাকলে, সামনাসামনি কথাটা বললে। চোখের এক ধরনের জাদু আছে, সে জাদুর প্রভাবে একজন মানুষ আর একজন মানুষকে চট করে ভুল বুঝে ফেলতে পারে না। একটা সম্পর্ক, সে যেমনই হোক, সেটা টিকিয়ে রাখতে অন্তত একটা মিনিমাম সময় দিতে হয়। বিপরীত মানুষটাকে তাকে বোঝার জন্য সময় দিতে হয়। দুজন যখন দুজনকে সম্পূর্ণ বুঝে ফেলে, তখন একটা সময় সব ক্ষেত্রে তাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। নয়তো ভুল বোঝাবুঝির পাহাড় জমে গেলে তখন একদিনের বোঝাপড়ায় কিছুই আর ফিরে আসে না। যে পাহাড় ধীরে ধীরে একটু একটু করে তৈরি হয়, সেটা ভাঙতেও ততটাই সময় লাগে। এই ভুলবোঝার পাহাড়, যা প্রতিদিন একটু একটু করে জমে, সেটিকে একদিনের কথায় কি ভেঙে ফেলা যায়? আমার কাছে মনে হয়, ভালোবাসার সম্পর্কে কখনওই কিছু লুকোনো উচিত না। একেবারে কিছুই না। কেননা যে সত্যিই ভালোবাসে, তার কখনও কিছু ছাড় দিতে অথবা মেনে নিতে খুব একটা কষ্ট হয় না। কারও অন্ধকার কিছু আমি সহজে মেনে নিতে পারছি না, তার মানে আমি আসলে তাকে ভালোবাসতেই পারিনি এখনও, কেবলই তার আলোকিত দিকটাকে ভালোবেসেছি। অনেক সময় দেখা যায়, খুব সাধারণ একটা বিষয়, যেটাতে আসলে লুকোবার কিছুই নেই, তার পরও…শুধুই জানাবার প্রয়োজন নেই, এমনটা ভেবে জানানোর ব্যাপারে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে শুধু শুধু অকারণেই একটা অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। কী দরকার অযথা এসব দূরত্ব সৃষ্টি করার? বলেই দিই না আসল কথাটা? আমি সম্পর্ক করতে চাই, সে-সম্পর্ক থেকে ভালোবাসা চাই, যত্ন চাই, তার কাছ থেকে গুরুত্ব পেতে চাই, আমি আমার সম্পর্কের নিরাপত্তা চাই, অথচ একটা ইগো ধরে রাখি…ভাবি, সব কিছুই কেন জানাতে হবে? সবটা কেন পরিষ্কার করে বলতে হবে? ও তো আমার যোগ্যই না কোনও দিক থেকেই, শুধু ভালোবাসি অথবা ও ভালোবাসে বলে ওর সব অযোগ্যতা মেনে নিয়েছি। আমি তো বাধ্য নই কাউকে কৈফিয়ত দিতে, কেন আমি কৈফিয়ত দেব? আমি কি কারও খাই না পরি? আমার নিজের একটা স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছা-অনিচ্ছা আছে, সবটাই কেন তাকে বুঝতে দিতে হবে? কেন তাকে অত গুরুত্ব দিতে হবে? সব কিছু কেন অত ভেঙে বলতে হবে? যখন তাকে সব কিছু জানাব, তখন তার কাছে আমার ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে, আমার সবটা কেন সে জানবে?
আরে বাবা, যে তোমার যোগ্যই না, তার প্রতি অযথা দরদ দেখাতে কে বলেছে? বরং এমন কিছু মনে যখন আসে, তাকে ওই মুহূর্তেই ছেড়ে দেওয়াটাই বড় যোগ্যতা। কারণ অনেককেই বলতে শুনি, ও তো আমার যোগ্যই ছিল না, শুধু ভালোবাসতাম বলে অথবা ও আমাকে ভালোবাসতো বলে ওর সব দোষ আর সব অযোগ্যতা স্বীকার করেও ওকে মেনে নিয়েছি। এটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কী? কেউ তার সব কিছু অন্য কাউকে জানাতে বাধ্য নয়, তবে হ্যাঁ, প্রসঙ্গটা যখন দুজনের সম্পর্কের সাথে জড়িত, তখন অবশ্যই জানানোর প্রয়োজন আছে। যে-কোনও সম্পর্কে একটু দূরত্বও সে-সম্পর্কের ভালোবাসা, আস্থা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, মমতা সব কিছু নষ্ট করে দেয়। আর ওসব ছাড়া যে ভালোবাসা, তাকে ভালোবাসা বলে না, কেননা যাকে ভালোবাসি, তার প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভরসা থাকাটা খুব জরুরি। তা না হলে আমাদের নিজেদের ভেতরে সম্পর্কের বিশ্বাসের প্রতি যে ভিত রয়েছে, সেটিও নষ্ট হতে থাকে ধীরে ধীরে। আমরা টের পাই না, এটা প্রথম প্রথম টের পাওয়া যায় না, ক্ষতিটাও বোঝা যায় না প্রথমে, কিন্তু পরে সব কিছু যখন আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়, তখন আমরা টের পাই আমরা কী হারিয়েছি। সম্পর্ক কখনও বড় কোনও অজুহাতে ভাঙে না, সম্পর্ক ভাঙে এসব ছোট ছোট ভুলের কারণে। সম্পর্ক জিনিসটা কাচের চুড়ির মতো, হাতে নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ানো যায়, কিচ্ছু হয় না, আবার একটু আঘাতেই ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। যে সময়ে যে ভুল বোঝাবুঝিটা তৈরি হয়, সেটা তখনই পরিষ্কার করে ফেলতে হয়, তখনই দুজনকেই যার যার অবস্থান থেকে পরিষ্কার করে বলার সুযোগ দিতে হয়। আমরা অনেক সময় ভেবে নিই, অত বুঝিয়ে বলার কী আছে? ও ঠিকই সব বুঝে নেবে! অথবা এত সামান্য একটা বিষয় আবার অত খুলে বলার কী আছে? এ তো সবাই বোঝে! হ্যাঁ, সবাই বোঝে কিন্তু সেই মুহূর্তে হয়তো মানুষটা চাইছে তুমি তাকে একটু বুঝিয়ে বল। যে-কোনও কথার অর্থ ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে কথাটা কার কাছ থেকে আসছে, কীভাবে আসছে, কোন পরিস্থিতিতে আসছে--এসবের উপর, কথাটার উপর নয়।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন মানুষ যতই যুক্তিবাদী, বুদ্ধিমান অথবা সরল স্বভাবের হোক না কেন, ঠিকঠিক ঠকবেই। কেননা সম্পর্কের বেলায় আমরা সবাই অন্যকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিই, নিজেকে কখনও ওখানে দেখতে চাই না। আমরা ভাবি, আমাদের কোনও ভুল হতে পারে না, এমনকি ভুলেও না। ভুল যতটা না ভুলে হয়, তার থেকেও অনেক বেশি হয় ভুল হবে না, এই অন্ধবিশ্বাসে। এর মানে এই নয় আমরা শুধুই অন্যকে জিতিয়ে দিচ্ছি, এর অর্থ, আমাদের সব সময় হারা অথবা জেতার প্রশ্নে যাবারই প্রয়োজন নেই। সম্পর্কের ক্ষেত্রে হার-জিতের প্রসঙ্গ চলে এলেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা ও দূরত্ব। সম্পর্কটা টিকে থাকে…দুজনের সব ভুলত্রুটি সত্ত্বেও, দুজন দুজনকে চায়, এমন একটা শর্তে। আবার অনেক সময় শুধু দূর থেকে কণ্ঠস্বর শুনেই বিপরীত মানুষটাকে, তার মনের কথাগুলোকে বোঝা যায় না। কিছু কথা চোখের দিকে তাকিয়েও বুঝে নেওয়া যায়, তার জন্য অনেক সময় কোনও শব্দেরই প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু দূর থেকে সম্পর্ক চালাতে হয় যাদের, তাদের ওখানেই ভুলটা হয়ে যায়। আসলে যে বলে অথবা লিখে বোঝায়, সে তার মতো করে বলে বা লিখে, কিন্তু যে মানুষটা শোনে বা পড়ে, সে যখন শোনে বা পড়ে, তখন সেও ঠিক তার মনের মতো করেই কিছু একটা বুঝে নেয়। এখানে দুজন মানুষের বোঝার আর বোঝানোর অনেক বড় একটা গ্যাপ থেকেই যায়। দুজন মানুষের চিন্তা কখনও সম্পূর্ণ এক হয় না, কিছুটা তো পার্থক্য থাকেই।
আবার কখনও কখনও অনেক বড়ো ভুল বোঝাবুঝিও আলতো স্পর্শে ঠিক হয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষ যখন তার ভালোবাসার মানুষকে কাছে নিয়ে শুধু একটা ‘সরি’ বলে অথবা বলে দেয়, আমি ওভাবে বলিনি কিছু, তুমি ভুল বুঝো না, লক্ষ্মীটি--তখন আর বাড়তি রাগের সুযোগই থাকে না। ইচ্ছে হয়, মানুষটাকে অযথা আর জখম না করি। লোকে বলে, কথায় কথা বাড়ে…হ্যাঁ, কথায় কথা বাড়ে ঠিকই, তার থেকে বেশি…ভুল কথায় তিক্ততা বাড়ে। একটা সম্পর্ককে ভেঙে দেওয়ার জন্য অথবা একটা সম্পর্ককে পুরোপুরি অনুভূতিহীন করে ফেলার জন্য এই তিক্ততাটুকুই যথেষ্ট। সম্পর্ক ভালোবাসায় যতটা বাঁচে, তার চাইতে বেশি বাঁচে স্বস্তিতে। আমরা সব কিছুকে গুরুত্ব দিই, অথচ মানুষের কাছ থেকে তার সর্বোচ্চটা পেতে গেলে যে তার মনের গুরুত্বটা আগে দিতে হয়, সেটা অনেক সময়ই ভুলে যাই। অনেক সময় অনেক মানুষকেই দেখি, বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রী কোনও কারণে রেগে থাকলে অথবা পারিবারিক কোনও বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে স্বামী তাকে অনেক ধরনের দামি দামি গিফট দিয়ে রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে, এতে করে সেই স্ত্রী মনে মনে ধরেই নেয় যে আমার স্বামী বুঝতে পেরেছে সে ভুল করেছে, এজন্যই এখন আবার এসব দিয়ে মন ভোলাবার চেষ্টা করছে কিংবা দোষ ঢাকার চেষ্টা করছে। অথচ সেখানে স্বামীর কোনও দোষই ছিল না বরং ঘরের শান্তি বজায় রাখতেই এই পথ বেছে নেওয়া। এটাও কিন্তু এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেও এটা এক ধরনের কপট-নাটক ছাড়া আর কিছু নয়।
আসলেই এ পথ সঠিক পথ নয়, স্ত্রীকে গিফট অন্য সময় দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু তার ভুলকে প্রশ্রয় দিয়ে কখনওই না। স্ত্রীরা এমন একটা জাতি, যারা প্রকৃত অর্থে যতটা না বাঁদর, তার চেয়ে বেশি বাঁদর হয় স্বামীর প্রশ্রয়ে। স্ত্রীদের সব কিছু দিয়ে আবার সেই সাথে চাপে রেখে বোঝাতে হয়, তার প্রতি ভালোবাসার জায়গায় আর ভুল সহ্য করার জায়গায় সে এক নয় এবং ভুলের ক্ষেত্রে কখনওই তাকে কিছু না বলেই চুপচাপ ছাড় দেওয়া হবে না। এটা প্রথম দিন থেকেই বুঝিয়ে দিতে হয়, না হলে আর কখনওই সে সাহস হয় না। কখনও কখনও বরং আগে থেকেই তার সাথে কথা বলে পরিষ্কার করে বলে নেওয়া উচিত সে তার জন্য কী কী কতটা ছাড় দিতে পারবে, কেননা একজন স্বামী একই সাথে কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও বাবা, এবং আরও অনেক দায়িত্ব মাথায় নিয়ে তাকে চলতে হয়। স্ত্রীরা অধিকাংশ সময়ই এসব বোঝে না। সব কিছুই স্বামীর পক্ষে করা সম্ভব নয়, এমনকি কখনও কখনও চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না। কিন্তু এরও শেষ আছে। অনেক সময় এটি সহ্যের বাইরে চলে যায়…এতটাই যে, কখনও কখনও জীবন-মরণের প্রশ্ন আসে, তখন বাধ্য হয়ে আলাদা হবার সিদ্ধান্ত চলে আসে। যারা পারে তারা আলাদা হয়, যারা পারে না তারা একে অপরের কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেঁচে থেকে চেষ্টা করে যায় জীবনটা পার করে দেওয়ার। বড়ই যন্ত্রণার ওরকম দিনযাপন! আসলে আমরা যখন ভালোবাসাকে অনেক কিছুর সাথে মিশিয়ে ফেলি, তখনই এমন হয়।
ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, বিশ্বাস করি, সবই ঠিক আছে, কিন্তু সে যা বোঝাচ্ছে বা বলছে, তার সবটাই ঠিক আছে কি না এটাও ভেবে দেখা উচিত। তার ভুলগুলো শুধরে দিলে একটা সময় সে বুঝবে, ওসব ভুলভালো একে বোঝানো যাবে না, ইচ্ছে করলেই যা খুশি তা করা যাবে না। এসব বোঝাতেই অনেক সময় চলে যায় প্রথমে, কিন্তু পরে একটা সময় আর কিছু না বোঝালেও চলে। আসলে যে-কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি--সম্পর্ককে সময় না দিলে সম্পর্কে ফাটল ধরে, মরচে পড়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিপরীত মানুষটাকেও বুঝতে হবে তার ভালোবাসার মানুষটা আসলেই কি সময় দিতে চাইছে না, না কি কোনও কারণে সময় দিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে দূর থেকে এটা বোঝা মুশকিল যে আসলেই মানুষটা চাইছে না, না কি চাওয়া সত্ত্বেও পারছে না। তখন বিপরীত মানুষটাকেই আবার বুঝিয়ে দিতে হয় আসলে সে পারছে না, না কি দিতে চাইছে না, অথবা কেন দিতে চাইছে না, কতটা দেবে বা কতটা দেবে না…দূরত্বের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যোগাযোগ রক্ষা করে চলাটা। দূরে থাকার কারণে সব সময় সাথে থেকে সময় দেওয়া যায় না বলেই বিভিন্ন রকমের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, যা কাছাকাছি থাকলে তেমন একটা হয় না। কাছে থেকে যা বোঝানো যায়, যতটা বোঝানো যায়, দূর থেকে তার সিকিভাগও সম্ভব হয় না। এজন্য দুজনেরই দুজনকে বুঝে আর ছাড় দিয়ে চলা উচিত। এমনকি কিছু কিছু সমস্যা আছে, যেগুলো কাছে থাকলে কখনও তৈরিই হয় না। দুজন মানুষ একসাথে থাকলে কতক্ষণই আর রেগে থাকা যায় যদি তাদের মধ্যে ভালোবাসা থাকে? আর ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তবে সেক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে সেটা হয়তো রূপ বদলায়, কিন্তু কখনও মলিন হয় না। যেখানে ভালোবাসার অভাব, সেখানেই বাইরের রঙের প্রয়োজন পড়ে। বয়স বাড়তে পারে, কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে কখনও বুড়ো মনে হয় না, বরং মনে হতে থাকে, সেই প্রথম যেভাবে তাকে দেখেছিলাম, সে যেন আবার তেমনই সুন্দর হচ্ছে দিনদিন। তখন নতুন করে তারই প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয়। ধীরে ধীরে মনে হতে থাকে, আমার জন্য এই মানুষটাই বরং ভালো, অন্যরা কেমন যেন! এক্ষেত্রে সবচাইতে বড় ভূমিকা শান্তির, ভালোবাসার নয়। যে মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু শান্তিতে বাঁচতে দেয় না, সে মানুষটার প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আমার ভালোবাসা ধীরে ধীরে কমে আসবে, একসময় তা বিতৃষ্ণায় রূপ নেবে। ভালোবাসি যাকে, তাকে যদি সত্যিই কিছু দিতে চাই, তবে তা হতে পারে তাকে তার মতো করে শান্তিতে থাকতে দেওয়া, স্বস্তিতে বাঁচতে ও বাড়তে দেওয়া।
আমি এও দেখেছি, যারা শুরুতেই একটা সম্পর্কে সুখী থাকে না, তারাই জোর করে সে-সম্পর্কটি চালিয়ে যেতে যেতে বয়সের শেষের দিকে এসে আবার অতীতকে স্মরণ করতে থাকে, ভাবতে বসে…কেন যে একে তখন মেনে নিয়েছিলাম, অমুক আমাকে খুব পছন্দ করত…আমিও করতাম, তার পর হুট করে এখানে এসে ফেঁসে গেলাম, গোটা একটা জীবন ভুল মানুষের সাথেই কেটে গেল! অথচ যারা সত্যিই একে অপরকে, পরস্পরের মনকে, নিজেদের সব দিক দেখেই প্রথম থেকেই সঙ্গীর পুরোটাকে মেনে নিয়ে সাথে চলার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তারা জীবনের শেষদিনটা পর্যন্ত বলে যায়…ভাগ্যিস, সে পাশে ছিল, না হলে এত দিনে যে আমার কী হতো কে জানে! ও-ই তো সবকিছু আগলে রেখেছে। কিছু ভালোবাসায় ভালোবাসার মানুষটির কাছে নিজের প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকে, ওরা দুজন চলার পথে একে অপরের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে, আর কিছু ভালোবাসা সময়ের সাথে সাথে কেমন যেন দায়ে পরিণত হয়, টেনে বয়ে বেড়াতে হয় বলেই আর কিছু করার থাকে না। কিছু ভালোবাসায় ইচ্ছে হয় শেষ পর্যন্ত এই মানুষটাকে নিয়েই যেন বাঁচতে পারি। ভালোবাসার কোনও স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই, কোনও নির্ধারিত পথও নেই। ভালোবাসা শেষপর্যন্ত ভালোবাসার রঙেই রঙিন। যে মানুষটাকে ভালোবাসি, ইচ্ছে হয়, সে সব সময় একটু কোনও ছুতোয় হলেও চোখের সামনে থাকুক, আর যে সম্পর্কটি শুরুই হয় দায় থেকে অথবা সময়ের আবর্তনে বোঝা হয়ে যায়, সারাক্ষণই মনে হতে থাকে, কখন সে একটু চোখের সামনে থেকে আড়ালে যাবে, কখন একটু শান্তিতে নিজের মতো করে সময় কাটাব, এমনকি মন এমনও বলে বসে…কবে যে মরব, সে-দিন রক্ষা! যে ভালোবাসা সময়ের সাথে সাথে এর প্রয়োজনীয়তা হারায়, পরিবর্তিত হয়, সেটি কখনও ভালোবাসা হতে পারে না, হয়ও না কখনও, সে নিছক সময়ের প্রয়োজনে তৈরি হয়, একে ভালোবাসাই বলা যায় না। ভালোবাসা নিজেই একটা অদৃশ্য কমিটমেন্ট--হয়তো কখনও কাগজে হয়, নয়তো হয় মনেই।
আচ্ছা, আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে? তোমার সাথে আমার আসলেই কি কোনও সম্পর্ক আছে? থাকলে সেটা কী? আমি এই দুদিন সারাক্ষণই বিষয়টি অনুভব করতে চেষ্টা করেছি--আসলেই কেউ আছে কি না…কাছে কিংবা দূরে, অন্তত এমন কেউ, যে আমাকে নিয়ে একটু হলেও চিন্তা করে, অথবা আমার জন্য প্রার্থনা করে যেন আমি ভালো থাকি, আমার মাথার উপর থেকে ওই কালো কালো মেঘগুলো যেন সরে যায়। আমি খুঁজে পাই না কাউকেই, এমনকি আমি অনুভবও করতে পারি না। আমি এসব নিয়ে কখনও তোমাকে কিছু লিখতে চাইনি এবং আমি এও চাই না, এসব অন্য কেউ জানুক, কেননা কেউ জানলেও আমার কোনও অবস্থারই ভালো কি মন্দ কোনও পরিবর্তন আসবে না, বরং হাসিঠাট্টার জন্য কিছু নতুন মানুষের উদয় হবে। আমি কারও সহমর্মিতা, করুণা পছন্দ করি না, ওগুলো আমার কাছে অপ্রয়োজনীয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমাকে ওরা সবাই কেমন একা আর একঘরে করে রেখেছিল। ডিভোর্সের পর থেকে আমার মায়ের সমান বড় বোন (যাকে আমি আসলেই শ্রদ্ধা করি, এজন্য করি না যে তিনি আমার জন্য শ্রদ্ধা পাবার মতো কিছু করেছেন, বরং এজন্য করি বড় বোন হিসেবে এটা তার প্রাপ্য।) আর দুলাভাই একমাস ওদের মোবাইলে আমাকে বিজি করে রেখেছিল বিভিন্ন কিছু বলে বলে যাতে আমার কোনও প্রয়োজনে আমি ওদের কাছে না যাই। আমি যাইনি, আমাকে যেতে হয়নি। আমার ভাই-ভাবী সব সময় নোংরা কথা শুনিয়ে দিত যে সব দোষই আমার, আমার শ্রদ্ধেয় বাবা আমার ডিভোর্স হয়ে যাবার মাসখানেক পর বলেছিলেন, ছেলে তো ভালোই ছিল, শুধু একটু কিছু কিছু বিষয় একটু মেনে নিলেই তো সংসার করতেই পারতে! আসলে তোমাদের মেয়েদের আজকাল অনেক চাহিদা! অথচ বিয়ের পর আমি তাদের কাছ থেকে কিছু চাওয়া তো অনেক দূরের কথা, কখনও আমার ছোট্ট কোনও প্রয়োজনীয় জিনিসও পাইনি।
বাসায় তখন সারাক্ষণই পড়ে থাকতাম, মা ভাবতেন, মেয়ে তো সারাজীবন এখন এ বাসাতেই থাকবে, সুতরাং তিনিও কথায় কথায় কথা শুনিয়ে দিতে ছাড়তেন না। বাসার লোকজনের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনও বিষয় নিয়েও সামান্য কথা কাটাকাটি হলে ওরা সবাই মুখ খুলে বলেই দিত…আমি যদি এত কিছু বুঝি, তা হলে সংসার করতে কেন পারলাম না, ছেলে ভালোই ছিল, বরং আমারই বেশি জেদ! ফুপি-ফুপা তো কখনও খোঁজই নিতেন না। ওদিকে আমার আপন দুই চাচা সব সময়ই এই ভয়ে থাকতেন…আমি ফোন করলেই হয়তো খরচের জন্য টাকা চেয়ে বসব! যখন বুঝতে পারলাম তাদের ধারণা, তখন চাচাতো ভাইবোনগুলোর সাথে কথা বলার জন্য বুক ফেটে গেলেও ভুলেও ফোন করতাম না…আবার যদি ভয়টয় পেয়ে যায়! অবশ্য প্রথম দিকে উনারা আমার ফোন রিসিভই করতেন না, যখন দেখতেন আমি ফোন দিয়েছি, তখন আমার বাবাকে ফোন করে একবার শিওর হয়ে নিতেন আমি আসলে কেন ফোন করেছি, কোনও কিছু চাইবার উদ্দেশ্যে, না কি এমনিতেই…তার পর বাবা যখন জানাতেন এমনিতেই খোঁজ নেওয়ার জন্য ফোন করেছিলাম, তখন তাঁরা কলব্যাক করে কথা বলতেন। আমি আসলে ডিভোর্সের আগে এই সব চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি জানতাম আমার এসব সহ্য করতে হবে, হবেই হবে। আমাকে যে অনেক ধৈর্য্য ধরে একা একা এই পথ পাড়ি দিতে হবে, সে আমি জেনেই এসেছিলাম। শুনেছি, যে সন্তান বেশি অসহায় থাকে, সে সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের আলাদা একটা জায়গা থাকে, বাবা-মা সেই সন্তানকে বেশি আগলে রাখেন, আর আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল পুরো উল্টোটা। ওরা তখন আমাকে ওদের মনমতো চালাতে শুরু করে দিল। আমার মনে আছে, ওরা আমাকে হাতখরচটাও দিত না, এমনকি কোনও টিউশনিও করতে দিত না যাতে অন্যেরা কিছুতেই জানতে না পারে যে ওরা আমাকে কোনও খরচ দেয় না। ওদের এসব চালাকি আমি ধরতেই পারতাম না, কেননা তখনও মনটা খুব সহজ করেই সব কিছু হিসেব করত।
আমাকে এই একটা ঘরে বন্দি করে নিজের ঘরেই আমাকে একঘরে করে রেখেছিল ওরা। এমনকি কেউ একটু কথাও বলত না, আমাকে নিয়ে মন খারাপ করা তো দূরের কথা! ওরা ভেবেই নিয়েছিল, আমি সারাজীবন এমন দুর্বল আর অসহায় থাকব, ওদের কথায় উঠবস করব, ওদের ছাড়া আমি চলতেই পারব না। ওদের ধারণা ছিল, বাইরের কেউ আমার সাথে কথা বলবে না, আমার কোনও দিন বন্ধু হবে না। এগুলো যখন চোখের সামনে ভাসতে থাকে, তখন আমি আসলে ওরকম কিছু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাগরে আনন্দে ভেসে যাবার কোনও কিছু খুঁজে পাই না, বরং আমার কবরখোঁড়ার মানুষদেরকেই চোখের সামনে দেখতে পাই। এ জীবনে অনেক কিছু ভুলে যাওয়া যায়, কিন্তু ভুলে থাকা যায় না, যতই আমি মন থেকে ওদের ক্ষমা করে দিই না কেন, আমি চাইলেও ওসব ভুলে থাকতে পারি না। আসলে ভালোবাসার অনুভূতিটা জোর করে আনা যায় না। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা এগুলো যখন মন থেকে আসে, তখন এই ভেতরটাই একা একা নিজের অনুভূতি জানাতে থাকে, ওগুলো তখন সাজাতে হয় না। আমি পারব না অমন করে কিছু লিখতে বা বলতে। যা আমি দেখিনি অথবা অনুভব করতে পারছি না, তা ভাবতেও আমার মন বিদ্রোহ করে ওঠে, আমার খুব কষ্ট হতে থাকে। তবে আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং আমার কারও কাছেই বিন্দুমাত্র প্রত্যাশা নেই। আমার যা চাইবার, আমি স্রষ্টার কাছে চাইব, কেননা আমার তো বেঁচে থাকারই কথা ছিল না, এত কিছুর মাঝেও আমি বেঁচে আছি, ভালো আছি, এটাই আমার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
আমার বাবা একটু ধার্মিক মানুষ, সব সময়ই তিনি পরকালের ভয় দেখাতে থাকেন, শেষদিনের ভয় দেখান, কেয়ামতের ভয় দেখান। তিনি বলেন, কেয়ামতের দিন যেদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, সেদিন কেউ কাউকে চিনবে না, সবাই যার যার চিন্তায় দৌড়াতে থাকবে। সেদিন বাবা-মা তাদের সন্তানদের চিনবে না, ভাই বোনকে চিনবে না, আত্মীয়রাও কেউ কাউকে চিনবে না। সেদিন সবাই যার যার নিজের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে। আমি মনে মনে এটাই ভেবে অবাক হই, এসব দেখার জন্য কি কেয়ামতের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে হয়! চোখের সামনেই তো এসব ঘটতে দেখছি! নাকি এখন প্রি-কেয়ামত চলছে! এখন আমার ভালোবাসার অনুভূতি শুধু একটা জায়গাতেই কাজ করে, আর কোনও কিছু নেই আমার, যা নিয়ে কিছু লেখা যায়। ওসব লিখতে গেলে আমাকে আগে উপলব্ধি করতে হবে, আমি যেদিন পারব সেগুলো উপলব্ধি করতে, সেদিন আমি লিখবই। আমি এখনও ততটা মহৎ মনের মানুষ হতে পারিনি। আমি এখনও সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষকে ভালোবাসতে পারিনি। আমি আজও কিছু মানুষকে ভয় পাই। এজন্য না যে ওরা আমার ক্ষতি করে দেবে, বরং এজন্য যে ওদের কিছু আচরণ এখনও মাঝে মাঝে আমাকে জখম করতে থাকে। তবে আমি ধীরে ধীরে এসবের ঊর্ধ্বে চলে যাচ্ছি। হয়তো খুব জলদিই পুরোপুরি অমন হয়ে যাব। আমি আগের মত আর ছিঁচকাঁদুনে নেই, এটা বুঝতে পারি। যেখানে আমার চোখের জলের কোনও মূল্য নেই, সেখানে আমি চোখের জল ফেলি না। এসব মেনেচলা আমার কাছে সহজ।
আচ্ছা, তুমি মনখারাপের কবিতা কেন লিখ? আমি সহ্য করতে পারি না! আমি তো তোমাকে এত এত ভালোবাসি, তা হলে তুমি মনখারাপের কবিতা কেন লিখ? আমি তোমাকে আরও অনেক ভালোবাসব, তুমি যেভাবে চাও, আমি সেভাবেই চলব, তবুও তুমি মন খারাপ করে থেকো না। আমার সহ্য হয় না। আর আমি যদি তোমাকে ভালো না বাসলে তোমার মন ভালো থাকে, তা হলে আমি তা-ই করব।
আমি যে আজকাল কবিতা লিখছি না, এসব আবোলতাবোল কথা লিখছি, এতে কি তোমার বিরক্ত লাগছে? আচ্ছা, তুমি কি কখনওই মিস কর না আমাকে? কখনওই কি কথা বলতে ইচ্ছা হয় না আমার সাথে? আমি তোমাকে এত মিস করি, কিন্তু তুমি আমাকে একটুও সময় দাও না। আমার খুব খারাপ লাগে।
আমি জোর করে কিচ্ছু চাই না তোমার কাছে। তুমি আমাকে ফোন দিয়ো না। আমি রাগ করব, কষ্ট পাব, এসব ভেবে, মন থেকে না এলে, কখনওই কিছু কোরো না আমার জন্য। আমি তো তোমাকে ফোন দিতে পারি না, তুমি জানো। আমি শুধু জানতে চাইলাম। স্বেচ্ছায় কোনও কিছু করতে ইচ্ছে না হলে কিছুই কোরো না, সেটাই আমার ভালো লাগবে। আমি কখনও এভাবে জোর করে কারও কাছ থেকে কিছু আদায় করিনি, কখনও করবও না। আমার কোনও কিছু হাত পেতে নেওয়ার অভ্যেস নেই। যদি তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা থাকত, তা হলে এত দিন কথা না বলে তুমি নিজেই কখনও থাকতে পারতে না। তোমার কাছে আমার চাইতে কেন হবে? যেহেতু আমার তোমাকে ফোন করার কোনও অপশন নেই, সেহেতু তুমি নিজেই ব্যাপারটা বিচার করে দেখো। তোমার উপর রাগ করে বলছি না, সে সাহস আমার নেই, হবেও না কখনও। জোর করে আমি তোমার ঘাড়ে চেপে বসতে পারব না। তার চেয়ে আমি বরং আমার সব ভালোবাসা মনেমনেই রাখব। আমার যে-কোনও কষ্ট সহ্য করার অভ্যেস আছে। আমি পারব। আমি শুধুই জানতে চেয়েছি তোমার অনুভূতির কথা, আমি তোমার কাছে ফোনের আশা করিনি। আমার কথায় কিছু মনে করলে আমি সরি সোনা, কিন্তু আমি কথা চেপে রাখতে পারব না। তুমি আমার কোনও কিছুতেই কিছু মনে কোরো না, প্লিজ!
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় নিজের মাথাটাকেই ফাটিয়ে ফেলি। কেন যে আমি সম্পূর্ণ একা চলতে পারি না! এবার আমি সম্পূর্ণ একা চলেই ছাড়ব নয়তো মরব। এই তোমাকে সাক্ষী করে রাখলাম। এ জীবনে তুমি না-থাকলে আমার কী কী হতো না, সে-তালিকা বেশ লম্বা…কোনও একদিন পারলে সেই প্যাঁচালটা লিখব। আমাকে সেদিন লিখে পাঠালে: তুমি খোলস থেকে বের হও।…কেন লিখলে ওটা?
জানো, একটা সময় না তোমার বড় বড় লেখা দেখলে, কী যে রাগ আর কষ্ট হতো আমার! না না…ভালোলাগা বা না-লাগার জন্য নয়। অনেক বড় কোনও লেখা দেখলেই মনে হতো, মানুষটা এই হাজার হাজার শব্দ লিখছে, এখান থেকে দুচারটা শব্দ কম লিখে আমার মেসেজের উত্তরটা যদি দিত, তা হলেই তো কতগুলো রাত আমি কষ্ট আর কান্নার হাত থেকে বেঁচে যেতাম! ‘বিশ্বাস’ শব্দটার সাথে তুমি জড়িয়ে ছিলে। আমার কাছে বিশ্বাস মানেই তুমি। এখনও আছ, থাকবে মৃত্যু পর্যন্ত। সেই তোমাকে যেভাবে ভালোবেসেছি, আর কাউকে বাসার প্রয়োজন হয়নি। আমি চাইওনি তুমিও আমাকে ভালোবাস। আমি জানিও যে তুমি আমাকে ভালোবাস না। পাওয়ার জন্য বাসিনি, না পেয়েও অনেক কিছু পেয়েছি। কাউকে সত্যিকারের ভালোবেসে ফেললে মনের মধ্যে অনেক শান্তি আর শক্তি পাওয়া যায়। সেটাও তো কম না। তুমি কিছু বোলো না, প্লিজ। এমনি করে চুপই থেকো। সেই ভোর থেকে চোখ দিয়ে শুধু জল ঝরছে। সরি বিরক্ত করার জন্য। তোমাকে খুব লিখতে ইচ্ছে করছিল, তাই…
গতরাতে স্বপ্ন দেখলাম, কোনও এক অচেনা পুরুষের সাথে বিয়ে হয়েছে আমার, যাকে চিনিও না, জানিও না, আর ভালোবাসা তো দূরের কথা! লোকটা আমাকে নিয়ে ঘুরছে, সাথে আছে তার পুরো পরিবার। লোকটা কীভাবে যেন ধীরে ধীরে আপন হতে চাইছে…আমি শুধুই মন থেকে ভাবছি তোমার কথা। তার সাথে ঘুরতে গেছি, সেখানেও তুমি মনজুড়ে মিশে আছ। যাক বাবা, এত কিছু স্বপ্নেই দেখেছি, বাস্তবে সাহস হয় না এত কিছু ভাবারও। তোমাকে একতরফা ভালোবেসে তো অনেক ভালো আছি, অনেক সুখে আছি। তোমাকে পাব না জেনেও তো ভালোবাসি। কেন জীবনে পাশে একজনকে লাগবেই? তুমি নেই, তবুও তো তুমি মিশে গেছ আমার সব জায়গায়। আমি তো চাইনি তুমি ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে…আমি তো চেয়েছি শেষপর্যন্ত তুমিই থেকে যাও। পরিবারের কাছে, পরিবারের সুখের কাছে, তাদের চাওয়া-পাওয়ার কাছে মাথানত করে হার মেনে আমাদের কত কী করতে হয়! জোর করে হয়তো একদিন আমাকে কারও কাছে বিয়ে দিয়ে দিবে…যাকে চাইনি কখনও, তাকেই মেনে নিতে হবে। জানি, আমার লেখায়, আমার ভালোবাসায় তোমার কিছুই এসে যায় না। তুমি বুঝিয়েছ তা-ই আমাকে সব সময়। আচ্ছা, আমি তো চুরি, ডাকাতি, খুন করিনি, আমি তো শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি। এতে খারাপটা কী, বলো তো? জীবনে কখনও তোমার ক্ষতি করিনি, শুধু চুপচাপ ভালোবেসে গেছি।
জানো, স্বপ্নটা দেখার পর থেকে ইচ্ছে করছে তোমাকে সামনে বসিয়ে রেখে কিছুক্ষণ কাঁদি…আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি…এর বাইরে আর কোনও কারণ নেই। আমার না প্রায়ই ইচ্ছে করে তোমাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাই, যেখানে কোনও কষ্ট, কোনও খারাপ কিছু, কোনও খারাপ কথা, কোনও আঘাত তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। যেখানে থাকবে না কোনও খারাপ মানুষ। যেখানে থাকবে শুধু আমার মতো করে তোমায় ভালোবাসতে-জানা-মানুষ। তোমার কবিতায়, তোমার লেখায় তাদের ছবি আরও সুন্দর করে ফুটে উঠবে। সেখানে থাকবে শুধুই ভালোবাসার মানুষ। তোমাকে সত্যি সত্যি লুকিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে এই খারাপের রাজ্য থেকে।
সেখানে তুমি শুধু লিখবে…আর আমি তোমার লেখা পড়তেই থাকব আর দেখব তোমাকে। এরকম নানান কথা ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে যায়…তুমি আমার নও, অন্য কারও--তোমার পরিবারের, তোমার সন্তানের, তোমার ভালোবাসার মানুষের। কিন্তু আমার যে তোমাকে লুকিয়ে ফেলতে খুব ইচ্ছে করে। আমার কেন জানি ভয় হয়। তোমায় না পেয়েও হারাবার ভয়, তুমি যদি কখনও বিপদে পড়, তোমাকে সে-বিপদ থেকে উদ্বার না করতে পারার ভয়। সবচেয়ে বড়…তোমাকে ভালোবাসতে না পারার ভয়!
এই যে দ্যাখো, ঘুম ভেঙেছে, এখনও ফ্রেশ হইনি। তোমাকে নিয়ে যে ভাবনাগুলো আসে, তা সহজেই চলে আসে লেখায়…শুধু তুমিই আস না! আচ্ছা, আমার যত দোষ, যত ভুল…সব ক্ষমা করে দিয়ো। আমার কোনও কিছুই যখন তোমার না, এই আমিই যখন তোমার না, তখন আমার দোষ আর ভুলগুলোও ঝেড়ে ফেলে দিয়ো। আমাকেই যেখানে কোনও জায়গায় রাখোনি, সেখানে আমার অপরাধগুলোকে রেখে কী হবে, তাই না? আচ্ছা, বলো তো…থাক, কিছু বলতে হবে না।…এই, শোনো না…ভালোবাসি!
তোমার লেখা পড়ার সময় মাঝেমাঝে এমন লেগেছে যে আমার হয়ে তোমাকে পড়ছি, আবার কখনও মনে হয়েছে, তোমার হয়ে আমাকে পড়ছি। তোমাকে মেসেজ দিয়েছি কয়েক ঘণ্টা আগে মেসেঞ্জারে। মেসেজ দেখোনি। ভাবলাম, সে বুঝি বিরক্ত হয়, তাই দেখে না…তাই তো আর বিরক্তও করি না! একটা কথা জানিয়ে রাখি…আমি সত্যিই ভালো নেই। তবু বেঁচে তো আছি…ভাবি, এ-ইবা কম কীসে?
তোমায় চিঠি পাঠাতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কীভাবে পাঠাব! তুমি তো ফোনে তেমন কথাও বল না আমার সাথে, তাই বাধ্য হয়ে এখানে লিখি!
আচ্ছা, আমি কি কখনও কিছু চেয়েছি তোমার কাছে? এই যেমন ভালোবাসা, সময়, কিংবা চেয়েছি এমন যে তুমি আমায় মেসেজ পাঠাও বা তুমি আমায় ফোন দাও বা তুমি আমার সাথে দেখা কর…কিছুই তো চাইনি! আমি তোমাকে তোমার সব কিছু নিয়েই ভালোবেসেছি, মানে তুমি যেরকম, যেমন, যা আছ…তার সবটুকুকে মেনে নিয়েই! তোমার কাছে কোনও প্রত্যাশা ছিল না…সততা নিয়ে বলছি, কখনওই না!
হ্যাঁ, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, একটা আশা ছিল মনে আর সেটা হলো…তুমি কিছু পার না পার, অন্তত আমার ভালোবাসাটা বুঝবে। এটাই আশা ছিল, কিন্তু বিশ্বাস করো, ইদানীং ওটাও কমে গেছে, কারণ আমার কেমন যে লাগে আমি কাউকেই বলে বোঝাতে পারি না। কেমন জানি ওলটপালট হয়ে গেছে জীবনটা! আমার ভাবতে ভালো লাগে, তুমি আমার সবচেয়ে বড় শক্তি, তুমি আমায় সবচেয়ে বেশি ভালোবাস। শুধু এইটুকুই নয়, তোমার পর আর কেউই এতটা বাসবে না, এটা বিশ্বাস করেই বাঁচতে ইচ্ছে করে। খুব কঠিন বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে সময়।
খুব ইচ্ছে করে (মনে মনে) দশটা মিনিট তোমার বুকে মাথা রেখে খুব চিৎকার করে কাঁদি। খুব ইচ্ছে করে…কিন্তু আমি কখনও বলিনি তোমাকে। হয়তো এটা আমার অন্যায় আবদার তোমার কাছে।
আমার একটা স্বপ্নের কথা বলি আজ তোমাকে…আমার খুব ইচ্ছে, আমাদের দুজনের নামে এমন একটা কিছু করা, যেখান থেকে সমাজের অসহায়, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ উপকার পাবে। এটাই আমার ইচ্ছা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ইচ্ছেটা মনের মধ্যে লালন করছি, কখনও কাউকে বলিনি। কেউ জানে না এটা, শুধু আমি আর আমার ঈশ্বর জানতাম এত দিন, আর আজ তুমি জানলে। আজ কেন জানি না, তোমাকে বলে ফেলেছি। না-বললেও ওটা করে ফেলতাম চুপিচুপি, তুমি জানতেও পারতে না। সত্যিই আমি কাজটা করব। কোনও কাজ না করে কাউকে বলতে হয় না, আর এ ধরনের কাজ তো করেও কাউকে বলতে হয় না। কিন্তু তোমাকে না বলে থাকতে পারি না। কিছুই না বলে থাকতে পারি না! এমন কেন হয়?
কিচ্ছু চাই না তোমার কাছ থেকে! ভালো থাকো তোমার ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে।
আচ্ছা, আর একটা কথা…তোমার লেখায় সব সময়ই সবার জায়গা হয়। কখনও কি আমার জায়গা হয়েছে? উঁহু, হয়নি। তোমার লেখায়ও না, তোমার মনেও না, কোথাও না…আমার জায়গা তোমার কোনও কিছুতেই হয়নি কখনও। জানি, হবেও না। লাগবে না কিছুই, প্রিয়! এইই শোনো না…ভালোবাসি!
কোথায় আছ তুমি? কী হয়েছে তোমার? ফেসবুকে আস না কেন? তুমি আমাকে ফেসবুকে একলা রেখে চলে গেলে? দেখো, খুব চিন্তা হচ্ছে আমার। তুমি ঠিক আছ তো?
এই ছেলে, তুমি আমার হাতের চুড়ি হবে?