যখন কারও মন খারাপ থাকে, আর তোমার কাছে এসে বলে, 'আমার মনটা একটু ভালো করে দেবে?', তখন ভুল করেও তাকে জাজ করতে বোসো না, তাকে হেয় করে কোনও কথা বোলো না। এত মানুষের ভিড়ে তোমাকেই কেন বেছে নিল সে এমন একটা সময়ে? নিশ্চয়ই এর কারণ আছে। হাতে সময় না থাকলে তাকে সেটা জানিয়ে দিয়ো, কিন্তু তার সঙ্গে ন্যূনতমও রূঢ় আচরণ কোরো না। যখন তোমার বন্ধু তোমাকে ফোন করে এবং ফোনে তার মনের সমস্ত কষ্ট ঝাড়তে থাকে, এর কারণটা হচ্ছে, সে চায়, তুমি তার কথাগুলি চুপ করে শোনো। হয়তো তুমি জানোই না, তখন তাকে ঠিক কী বলা উচিত, কী বললে তার মনটা একটু শান্ত হবে। অসুবিধে নেই। দরকারের সময়, আমরা প্রায়ই, দরকারি কথাগুলি মাথায় আনতে পারি না। তবে আমরা চুপ করে শুনতে পারি, ধৈর্য ধরে হ্যাঁ-হুঁ করতে পারি। তাই ভালো হয় যদি তুমি তোমার বন্ধুটিকে বলতে দাও। সে বলুক, তুমি শোনো। এভাবেই সব ঠিক হয়ে যাবে, তার ভালো লাগবে। জীবনযাপন খুব একটা সহজ কিছু নয়। বাঁচতে গিয়ে খুব বাজে বাজে ঘটনাও আমাদের সহ্য করতে হয়। সবারই জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন একজন বন্ধুর দরকার হয় মনের কথাগুলি বলে ফেলার জন্য। নইলে সেই কথাগুলি মনের ভেতরে থেকে যায় এবং ক্রমেই কষ্ট বাড়ায়। যখন তোমার কোনও বন্ধু তোমাকে ফোন করে, তখন তাকে বলতে দিয়ো। সে যা-ই বলুক, কষ্ট করে হলেও তাকে তখন সময় দিয়ো। সে তার সমস্যার সমাধান চায় না, সে তোমাকে কথাগুলি বলতে চায়, তোমার কাছ থেকে দুটো দয়ার্দ্র কথা শুনতে চায়। এত মানুষ ফেলে তোমাকেই সে বেছে নিয়েছে, কেননা সে তোমার উপর আস্থা রাখে। সব জিনিসের সমাধান হয় না। এমনকী খুব আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেও তুমি অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজেই পাবে না, কেননা সেগুলির কোনও সমাধানই নেই। বন্ধুত্বের মানে পাশে থাকা, বন্ধুর সমস্যাটা পাশে থেকে অনুভব করার চেষ্টা করা। সমাধান করতে পারলে ভালো, করতে না পারলে বন্ধুকে সঙ্গ তো নিশ্চয়ই দেওয়া যায়। ওইটুকুও অনেক। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু পছন্দ-অপছন্দ, মতামত রয়েছে। আমাদের সবারই মধ্যে এমন কিছু অদ্ভুত ব্যাপার আছে, যা আমরা আঁকড়ে ধরে রাখি, অথচ এটা দেখে অন্যরা ভাবে, এ নিয়েও মানুষ চিন্তা করতে পারে! তোমার কাছে যা অনেক কিছু, আরেকজনের কাছে হয়তো তা কিছুই নয়। তুমি যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাচ্ছ, তোমার বন্ধু হয়তো তা নিয়ে কখনও ভাববে না। ভাবনার জায়গাগুলি মানুষভেদে বদলায়। সত্যি বলছি, সমস্যাটা বড়ো কি ছোটো, ওতে কিছু এসে যায় না। সমস্যাটার সমাধান তুমি জানো কি জানো না, ওতেও কিছু এসে যায় না। যদি তুমি তাকে বলতে দাও, তার কথাগুলিকে দাম দাও, আন্তরিকতার সাথে দুঃখগুলি শোনো, তবে তার কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে। সে তার কথাগুলি শেয়ার করে অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে চায়, সমাধান চায় না। সমাধান দেবার কিংবা তার ভুলগুলি ধরিয়ে দেবার মানুষের কোনও অভাব নেই। ওসবের জন্য সে তোমার কাছে আসেনি। আমি জানি, কারও মনের কথাগুলি ধৈর্য ধরে শোনা, তাকে তার মতো করে সময় দেওয়া সহজ নয়। তুমি মনে মনে হয়তো ভাববে, 'আমার কাছে কি তোমার সব সমস্যার সমাধান আছে নাকি? আমি কী করে জানব, তুমি কী করবে কী করবে না! তুমি ওরকম ভুল করতে গেলে কেন?' জানতে তোমাকে হবেও না। তোমার কাছে যে তার সমস্যার সমাধান নেই, এটা সে জানে। সে ভুল করেছে, এটাও তার অজানা নয়। ভুল করেছে বলেই তো সে তোমার কাছে এসেছে, নইলে কি আর আসত? বাইরে থেকে দেখে অনেকসময় বোঝাই যায় না, কোন ভুলটা কার। দূর থেকে দেখে মনে হয় এক, প্রকৃত ঘটনা আরেক। তাই তোমার মতামত চাপিয়ে দেবার জন্য অমন উদ্গ্রিব হয়ো না। সে তোমার দামি দামি রায় শুনতে আসেনি, সে একটু সহানুভূতিপূর্ণ চাহনির আশায় এসেছে, দুটো ভালো কথা শুনতে এসেছে। তোমার মূল্যবান সময় থেকে কিছুটা তাকে দিয়ো, এতেই তার অনেক উপকার হবে। কথা শোনানোর মানুষ অনেক আছে, কথা শোনার মানুষ পাওয়া যায় না। সমাধান দেবার লোকের অভাব নেই, সমস্যা শোনার লোকের বড়ো অভাব। ভুল ধরার জন্য মুখিয়ে থাকে, এমন মানুষ ভূরি ভূরি; কষ্ট করে ওই দায়িত্বটা তোমার না নিলেও চলবে।