মৃত্যুকে অপেক্ষা করিয়ে

তোমার শোকে আমি হব বিহ্বল,
হব হাজারো প্রেমের সাক্ষ্য-দেওয়া কলেজপ্রাঙ্গণের একমুঠো ঘাস।




কিংবা হতে পারি সদ্যবিবাহিতা নারীর চোখে অশ্রুভেজা কাজল।




তোমার শোকে আমি বৈরাগী হব,
ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাব কোথাও, পরব সাদাথান, খাবো আলুসেদ্ধ।
কিংবা হব হয়তো একজন মুমূর্ষু রোগীই!




তোমার শোকে আমি পাথর হব,
সমুদ্রের উথালপাথাল ঢেউকে আমি সামলে চলব,
আমার সঙ্গে তাল মেলাবে শামুক, নুড়ি, ঝিনুক।




আমি হয়তো কালবৈশাখী ঝড়ই হব।
তোমার শোকে আমি বিপ্লবী হব,
কোমরে গামছা বেঁধে বেরিয়ে পড়ব রাস্তায়,
কপালে মস্ত কালো টিপ থাকবে।




সব ছেড়ে-ছুড়ে একজন উনমানুষও তো হতে পারি আমি!




তোমার শোকে আমি রাস্তার বিলবোর্ড হব;
অবহেলায় ছুড়ে-ফেলা সেই প্রাক্তনের মতন,
যে বছর দশেক পর রাস্তার মাথায় আমার মস্ত বড়ো ছবি দেখে
হতভম্ব হয়ে বসে থাকবে।




কিংবা আমি একজন হব নিশাচর।




তোমার শোকে আমি হব বরবাদ,
কেঁদে ভাসাব সারাবুক, সিগ্রেটের আগুনে পোড়াব জামা,
রাত জেগে ফেলব কালি চোখের তলায়।




কিংবা হয়তো হব গ্রামের একজন সরল-নিরীহ স্কুলমাস্টার,
যাঁর চোখ-মুখ জুড়ে লেপটে রবে মুঠোয় মুঠোয় প্রশান্তি।




তোমার শোকে প্রয়োজনে খুনি হব!
আমার সঙ্গে মতের অমিল হবে যার বিশ্বাসের, মুহূর্তেই তার লাশ ফেলে দেবো।
পেটের ক্ষুধা সইতে-না-পারা ফুলবিক্রেতা মেয়েটাকেও খুন করে
ওর ক্ষুধাবোধটাকে মেরে ফেলব।




কিংবা আমি একজন গায়িকা হব। সুরের তালে ভোলাব, কণ্ঠের জাদুতে মাতাব।
মনে কী যে চলে, তা ভুলেও বুঝতে দেবো না।




তোমার শোকে আমি একজন কবি হব,
লিখে লিখে জন্ম দিয়ে যাব হাজারো সন্তানের।
গুটিকয়েক শব্দই থাকবে আমার সম্পত্তি।
লিখে লিখে নিভিয়ে ফেলব ভেতরের আগুন যত।




নাহয় একজন নরসুন্দর হয়ে অন্যকে সুন্দর করে যাব সারাজীবন।




তোমার শোকে এবার আমি বোবা হব,
আমার চোখ কথা কইবে, হাসি গান গাইবে।
থাকবে না কোনও শত্রু, আমি সবারই প্রিয় হব।




কিংবা হব একজন শাড়িবিক্রেতা।




তোমার শোকে আমি একজন পড়ুয়া হব,
বইয়ে ভুলিয়ে মারব নিজেকে।
একবসায় পড়ে ফেলব হেমন্ত রচনাবলি কিংবা বিনয় মজুমদারের সব কবিতা।




নয়তো অল্প মাইনে-পাওয়া কোনও কেরানি হব।




তোমার শোকে কবিতা লিখব, নিলামে তুলব আমাদের যত স্মৃতি।




তোমার শোকে আমি চিৎকার করে শুনিয়ে যাব
আমাদের বিচ্ছেদের সব গল্প।
সেই গল্প, যেটা তুমি যতটা জানো, তার চেয়ে আমি আরও বেশি জানি,
তুমি লুকিয়ে রেখেছ যতটা বিরক্তি নিয়ে, আমি ততটাই আগলে রেখেছি আমাদের গল্পকে,
তুমি যতটা আঘাত দিয়েছ, আমি ততটাই ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছি।




তোমার শোকে একদিন
এলোচুলে মোমবাতি হাতে এগিয়ে আসবে আমার মৃত্যু,
তবুও আমি থামব না।
তোমার শোকে মৃত্যুকে অপেক্ষা করিয়ে
আমি আমার শেষ কবিতা লিখেই যাব!