আপনি কি জানেন, পৃথিবীতে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে এক জন করে মানুষ আত্মহত্যা করছে? সংখ্যাটা বছরে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ! প্রতিবছর প্রায় আট লাখ মানুষ ভেবেচিন্তে, সুস্থমস্তিষ্কে এবং দীর্ঘসময় ধরে করা নানা পরিকল্পনার মাধ্যমে একদিন হুট করে নিজেকে খুন করে ফেলে! ভাবা যায়? যে কর্তালোকটি দশজনের সংসার একা সামলাতে পারে, সে মানুষটির কাছে যখন নিজের ওজন সহ্যক্ষমতার দ্বিগুণ মনে হয়, তখন সে ক্লান্ত হয়ে যায়। মানুষ পিঁপড়ার মতন---নিজের চেয়েও দশগুণ ভারী ওজন বহন করতে পারলেও নিজের ওজনটাই কেবল বইতে পারে না। একজন আত্মহত্যা-করা মানুষের পেছনে দায়ী কারা জানেন? আমরাই। হ্যাঁ, আমরাই! যখন খোঁড়া লোকটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে দেখে আপনি বলে ওঠেন, "তুই তো খোঁড়া, দৌড়োতে পারিস না!", তখন তার মাঝে দৌড়োতে না পারার আক্ষেপ আপনাআপনিই জমে যায়। যখন কেউ চোখে কম দেখে বলে হাসতে হাসতে আন্ধা আন্ধা ডেকে ঠাট্টা করেন, তখন সে নিজেকে অপূর্ণ ভাবতে শুরু করে। যখন কারও অগাধ বিশ্বাস আপনি বালির মতন গুঁড়িয়ে দেন, সে নিজেকে একা ভাবতে শুরু করে। মানুষ ও প্রকৃতি একটা জায়গায় একই চরিত্রের। ওদের কেউই নিজেকে অপূর্ণ ভাবতে চায় না। যখন কারও বলা বিষণ্ণতার সাতকাহনকে আপনি ন্যাকামো বলে উড়িয়ে দেন, কারও মনখারাপের গল্পগুলোকে নিতান্তই তুচ্ছসামান্য গণ্য করে "শালা ছ্যাঁকা খেয়েছে!" বলে হাসতে শুরু করেন, তখন মানুষটির ভেতর জমে থাকা দুঃখরা দ্বিগুণ হয়ে পাথরের মতন জমে যায়। নিজের মস্তিষ্কের ভেতর এই জমে যাওয়া দুঃখের ভারে মানুষ ক্রমেই পিষ্ঠ হয়ে যায়। তখন ধীরে ধীরে সে আত্মহত্যাকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে। এভাবেই আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোকে এককদম এককদম করে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে দিই। হ্যাঁ, আমরাই এগিয়ে দিই নিপুণ খুনির মতন করে! আপনার যে উচ্ছ্বল বন্ধুটি হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেছে, তার খোঁজ নিন। আপনার যে কাছের মানুষটি হঠাৎই সবার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, তার খবর নিন। আপনার সৃষ্টিশীল কাছের মানুষটি হঠাৎই যদি ছবিআঁকা, গল্পলেখা, ছবিতোলা কিংবা নাচ-গান করা ছেড়ে দেয়, তার সান্নিধ্যে যান; দেখবেন, মানুষটার ভেতর ভয়ানক কিছু ঘটে গেছে। মানুষটি হয়তো বিষণ্ণতায় ভুগছে। মানুষটির ভেতর হয়তো প্রবল তুফান বয়ে যাচ্ছে। একটু সহযোগিতা পেলে আপনার কাছের মানুষটি হয়তো আত্মহত্যার মতন চরম সিদ্ধান্ত থেকে এককদম পিছিয়ে আসবে। তার কাঁধে হাত দিয়ে যখন বলবেন, "আমি আছি তো, ভয় পেয়ো না!", মানুষটি তখন আরেকবার নিজেকে সুযোগ দেবার কথা ভাববে। সময়মতো প্রতিরোধের সুযোগ পেলে ঘুর্ণিঝড়ও হেরে যায়। শক্ত করে ধরে টেনে তোলার একটা হাত পেলে চোরাবালির ফাঁদ থেকেও কেউ উঠে আসতে পারে। একটু নির্ভরতার আশ্বাস পেলে আপনার কাছের মানুষটিও হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। মানুষ মোমের মতন, আদর পেলে একেবারে গলে যায়। ভালোবাসার উষ্ণতা পেলে না-ফোটা ফুলটাও কী আশ্চর্যভাবে ফুটে যায়!