ভাবনা: একশো তেরো।
……………………………………..
মেয়েটা এমন ছিল না কখনোই। এতো বোকা, এতো ঠুনকো, এতোটা পাগল!?
কখনোই না কখনোই না! যারা ওকে চেনে, তারা জানে।
নিজেকে নিজের কি কখনো ঈর্ষা হয়?
মেয়েটার আজকাল খুব হয়। হারিয়েযাওয়া নিজেকে সে সত্যিই আর কোথাও খুঁজে পায় না। পেতে হলে যে কিছু সময়কে ভুলে যেতে হবে—খুব খুব খুব সুন্দর কিছু প্রিয় সময়, প্রিয় মুহূর্ত।
ওদের ভুলে যাওয়া…….অসম্ভব!!!
ওদের ছাড়া মেয়েটা বাঁচবে কীকরে?
সমস্যাটা হল, ওদের নিয়েও মেয়েটা আর বাঁচতে পারছে না।
তবু দিনগুলো কেটে যায়। বিশাল বড়-বড় একেকটা দিন, কীভাবে যেন প্রতিটি মুহূর্তই উবে যায়! দিন কেটে যায়, জীবন কেটে যায়। এটাই নিয়ম।
প্রতিদিন কারণে অকারণে নিজেকে নিয়ে এতো বিরক্তি যুক্ত হয় মেয়েটার জীবনে! সময় কখনোই একইরকম থেকে যায় না, হারিয়েযাওয়া সময়ও কখনো ফিরে আসে না, যে সময় এই মুহূর্তে সত্য, তাকে নিয়েই জীবনে বাঁচতে হয়। এইসব এমন কিছু কঠিন তত্ত্বকথা নয় যে বোঝা দায়। অথচ এই সহজসরল ব্যাপারগুলিই মেয়েটার ঘিলুতে গাঁথে না কেন? মেয়েটা আগেও কি এমন বোকা ছিল? সহজকে নিতে পারতো না সহজে? জীবন কি আগেও কাটত এমন খুঁড়িয়ে?
‘হারানোর ভয়’ ভীষণ জঘন্য এক অনুভূতি। আর যা পেলামই না, পাবোও না কখনো, তা হারানোর ভয় মানুষকে একেবারে অসহায় করে দেয়। সে ভয়ে কখনো-কখনো মানুষ এমন কথা বলে ফেলে, এমন কিছু করে ফেলে, এমনকি এমন কেউ হয়েও যায়, যা সে একদমই নয়!
আশেপাশের পরিচিত মানুষজন মেয়েটার এই বদলেযাওয়া নিয়ে খুব বিরক্ত হয়, কী সব অভিযোগ করে, ‘বদনাম’…….!? হ্যাঁ, হয়তো তাও করে ফেলে। হায়! কখনো সময় করে ওই মানুষগুলি ভেবে কেন দেখে না হৃদয়ে কতোটা কষ্ট জমে গেলে কেউ এতোটা বদলে যায়!
হাতটা মাথায় একটু রেখে সান্ত্বনা দেবার মানুষ কমে যাচ্ছে। যুক্তিতর্কের দেয়াল ভেঙে কাউকে বোঝার চেষ্টা করবে, এমন কাউকে আজ আর পাওয়া যায় না। অতো সময়ই বা কোথায়? বড্ডো ব্যস্ত এক পৃথিবীতে অসহায় বেকার মানুষগুলি বাস করে। ওদের অনেক দুঃখ। এই ব্যস্ত পৃথিবীতে দুঃখীরা বড্ডো বেকার, বেকাররা বড্ডো দুঃখী।
পরিচিত পুরোনো মুখগুলি ব্যস্ত হয়ে যায়। ব্যস্ত আমি, ব্যস্ত তুমি, ব্যস্ত সে। আমরা বড় ভাল আছি, না?
এক স্মৃতিই আজীবন বেকার থেকে যায়। একটা চাকরি হবে, চাকরি? ছোটোখাটো হলেও চলবে। স্মৃতির জন্য একটা চাকরির খুব দরকার! ওর কোনো কাজ নেই, তাই ও বড্ডো জ্বালায়। স্মৃতিকে একটা চাকরি দেবে, চাকরি? ছোটোখাটো হলেও চলবে। সবার চাকরি আছে, শুধু স্মৃতিরই কোনো চাকরি নেই। ও বাঁচবে কীকরে? তাই ও মাথায় থেকে যায়, জ্বালায়, বড্ডো জ্বালায়।
মেয়েটা বিড়বিড় করে, করেই যায়……
জড়িয়ে ধরো, খুব করে জড়িয়ে ধরো। ভীষণ নিবিড়ভাবে; এতোটাই, যেন হৃদকম্পনও বন্ধ হয়ে যায়।
যন্ত্রণা হচ্ছে আমার…….প্রচণ্ড যন্ত্রণা। খুন করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে সবকিছু—এমনকি সবকটা জড় পদার্থকেও।
আমার পাশে জড়িয়ে ধরার কেউ নেই; আমার সামনে খুন করার কেউ নেই, কিছুই নেই। আজ আমি বড় একা।
ভাবনা: একশো চৌদ্দ।
……………………………………..
আমার কী যেন হয়েছে। আসলে আমার একটা চেঞ্জ দরকার। ভীষণ দরকার। আমি যে পৃথিবীটায় বাস করতাম, অনেকদিন হল তা আর আমার নেই। আমি যা পেতে চাই, এখনকার পৃথিবী থেকে তা আর কিছুতেই পাবার নয়। তবুও বাঁচছি। মানুষ কীভাবে জানি বেঁচে থাকে। এক নতুন পৃথিবীতে আমি বেঁচে আছি, আমার পুরনো পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরে। কী লাভ? আমি খুব ভাল করে বুঝতে পারছি, আমাকে এই অদৃশ্য পৃথিবীটাকে বিদায় দিতে হবে। যে নক্ষত্রের দিকে তাকালে আকাশের সব তারা কোথায় যেন হারিয়ে যায়, তার অসীম তেজে চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে পড়ে। সে তীব্র দীপ্তির দিকে না তাকানোতেই চোখের মঙ্গল। যে অস্তিত্ব নিজেকে নিজের মাঝে ধরে রাখতে পারে না, সে অস্তিত্বের আর কী-ই বা দাবি থাকে?
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। তুমি চলে গেলে। বিশ্বাস করবে না হয়তো, সেদিন কবুল করে নিয়েছিলাম তোমাকে। দূরে থাকো, তবু তোমরা শান্তিতে থাকো। বস্তুত বিয়ের মাধ্যমে মানুষ মানুষকে কাছের করে পায়, আর আমি দূরের করে পেয়েছিলাম তোমাকে। হাসছ, না? ভাবছ, দূরের করেও পাওয়া যায় নাকি? আহা, যায় তো! এই যে দেখছো না আমাকে? তোমার কষ্ট আর বিপদগুলো কেমন আপন করে আগলে নিই ভীষণ যত্নে; সবসময়ই নেবো যদি না নিজেকে আড়াল করো কখনো। বিনিময়ে কী পাই? চোখভরা জল গো প্রিয়, চোখভরা জল। এটাই জীবন আমার। মেনে নিয়েছি। শুধুই শাস্তি বরাদ্দ ছিল আমার এই জীবনে। তাইতো এই পৃথিবীতে আসার পর থেকে কেবল কষ্টরাই সঙ্গী হয়েছে সবসময়ই। বাঁচবো গুনে-গুনে ততদিনই, যতদিন না শাস্তিপূরণ হয়।
হাসছি। সত্যিই হাসছি। চোখ বিকৃত দেখাচ্ছে? ও কিছু নয়, আমার চোখটাই অমন। সত্যি বলছি, কাঁদছি না একটুও। চোখ লাল হয়ে আছে, চোখ বেয়ে পানি গড়াচ্ছে? ও কিছু নয়। আমি ভাল আছি। খালি চোখে সবকিছু দেখতে পাই, চশমা লাগে না মোটেও। এইতো বেশি, তাই না, বলো? আমার জন্য ভেবো না। চোখের নিচে কালশিটেটা? ও অনেকদিন থেকেই আছে! নতুন কিছু নয়। ভেবো না আমার জন্য। দুঃখ আমার বিশ্বস্ত সঙ্গী আজীবনের। খুব খুব খুব বিশ্বস্ত—আমার অনুভবের চাইতেও, আমার নিঃশ্বাসের চাইতেও বিশ্বস্ত। আমি অনেক কম ভুগেছি অন্য অনেকের চেয়ে। আজ যখন ব্যাংকে গিয়েছিলাম ইউটিলিটি বিল দিতে, তখন যে লোকটা উনার কেটেযাওয়া তিনটি অদৃশ্য আঙুলের ডানহাতটা নিয়ে সাবলীলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যার থেকেযাওয়া বুড়ো আঙুলটা ধরে ছিল উনার ছোট্ট মেয়েটি, উনার চেয়েও কি আমার কষ্ট বেশি হবে, বলো? সুন্দর অবয়বে নাহয় আল্লাহ্ আমাকে না-ই বা পাঠালেন, তাই বলে পঙ্গু করে তো আর পাঠাননি! এও যে অনেক বড় পাওয়া। আমি পঙ্গু হয়ে বাঁচলেই বা কার কী এসে যেত? তাই না, বলো? তোমাকে পাইনি, দুঃখ করি না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যে যাকিছুর যার যোগ্য, তার ভাগ্যে তাকিছু লিখে দিয়েই তাকে দুনিয়ায় পাঠান। দুনিয়াতে আসার সময় তুমি আমার ভাগ্যে লেখা ছিলে না, মেনে নিয়েছি।
তোমায় যা লিখেছি, তোমার মঙ্গলের জন্য যাকিছু করেছি, তার সবকিছুই শুধু তোমায় অতোটা পাওয়ার দাবিতে; তুমি কাছে থাকলে হয়তো আরো অনেককিছুই করতে পারতাম তোমার জন্য। আর সে দাবি যদি তোমায় দূরে ঠেলে দেয় আরো, তবে সেই হয়তো ভাল। আল্লাহ্ যা করেন, ভালোর জন্যই তো করেন। হয়তো আমার এই অসীম কষ্টের মধ্যে কোনো মঙ্গল লুকানো আছে, যা আমি এখন দেখতে পাচ্ছি না। আমি যেমনই থাকি, তুমি যেভাবে সুখে থাকো, তা-ই যেন আল্লাহ্ করেন। দূরেই নাহয় থাকলে, তবু ভাল থেকো। আর কিছু চাই না।
ভাবনা: একশো পনেরো।
……………………………………..
জানি, এই ছোট চিঠিটাও তোমার পায়ের কাছের ডাস্টবক্সটিতে আশ্রয় পাবে। তবুও লিখছি। ভেবো না তোমায় লেখার লোভটা সামলাতে পারছি না তাই লিখছি, লিখছি আমার অনুভূতিটা মাথা থেকে বের করে দেয়ার জন্য। ভাবনাগুলো কাগজে রেখে দিতে বড় হাল্কা লাগে।
সেদিন তোমার চোখে আমি আমাকে দেখতে পাইনি। চোখ আর আয়নাকে এক ভাবতাম। আমি কী বোকা, না? যার মনের ঘরেই আমি নেই, তার চোখের আয়নায় কীকরে থাকব, বলো? মনে আছে, বছরখানেক আগের কোনো এক ডিসেম্বরের কথা…….লাল সোয়েটারটা আছে এখনো? একজন অজানা অচেনা তিথিকে তুমি বাংলোয় একান্তে ডেকেছিলে, সেই ডিসেম্বরের এক শীতের বিকেলে…….জানো, রেস্টুরেন্টে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সেই পুরনো তিথিকেই দেখতে পেয়েছি, যে তোমার লাল সোয়েটারটা বাংলো থেকে ফেরার সময় সঙ্গে আনতে চেয়েছিল। বিশ্বাস করো, এই এতদিনের ভালোবাসা আর মায়ায় যে তিথি তোমায় জড়িয়ে রেখেছে, সে হারিয়ে গেছে। সেই তিথিকে সেদিন আমি কোথাও পাইনি। প্রথমদিনের নিছক মোহের খেলায় মত্ত তিথিকে তো আমি প্রথমদিনেই কবর দিয়ে দিয়েছি। তবে কেন সে আবারো ফিরে এলো এতদিন পর? কেন তোমার চোখের তারায় আমি আর আমাকে পাই না আমার মতো করে? দিনের পর দিন স্বার্থহীন ভালোবাসার যে চেনা সমুদ্দুরটা আমার ভেতরে বসবাস করছে, তোমার চোখ, তোমার ইশারা আমার সে সমুদ্রকে শুকিয়ে ফেলেছে, আমার নিজের অস্তিত্বের কাছে আমাকে একেবারে মিথ্যে অর্থহীন করে দিয়েছে। আমি বড্ডো দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। নিজেকে অবিশ্বাস করা যায়? তাই বলে অতোটা? তুমি জানো না, কখনো জানবেও না এই নিজেকে অবিশ্বাস করা, নিজেই নিজের কাছে অচেনা হয়ে যাওয়া—কী ভীষন যন্ত্রণার। কষ্ট হয়, অনেক কষ্ট! বোঝো?
আমার জানা নেই কত শরীরের সম্পূর্ণ স্বাদ তুমি নিয়েছো। তাই বুঝি কারো সাথে স্রেফ পাশাপাশি বসে থাকা, চোখের ভাষায় নিজেকে চিনতে চাওয়া, একটু হেসে আধটু স্পর্শ—এসব কোনো হিসেবের মধ্যেই ধরো না তুমি। কিন্তু সত্যি বলছি, আমার কাছে প্রিয় মানুষের সঙ্গ পাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়, যেরকম করে তুমি ভাবো। তাইতো তোমায় অনুরোধ করেছিলাম, আমায় নিয়ে তোমার প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমীকরণটা জানাতে। জানাওনি। অবশ্য, আমি তোমার উত্তরের আশা করে বসে আছি, এমনও নয়। মানুষ বড্ডো ছেলেমানুষ হয়! উত্তর আসবে না জেনেও মানুষ নিজের মনের মধ্যেই কত কী উত্তর ভেবে বসে থাকে! যার যেরকম করে বাঁচতে ইচ্ছে করে আরকি! আমি তোমায় জিজ্ঞেস করেছিলাম, আজকের সন্ধ্যাটা দারুণ না? কিছু বলোনি, শুধু টেবিলের কোণায়থাকা গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে একটু হেসেছো। হয়তো ভাবছিলে, তিথিটা কী বোকা! তাই না? যে সাগর পেরিয়েছে সেই কবে, তার কাছে কিনা জানতে চাইছে জলে পা ভেজাতে কেমন লাগে! হায় কী নির্বোধ!
রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর ওয়েটারকে কিছু টাকা বকশিস দিতে দিতে হয়; ভদ্রলোকের কালচারে, টোটাল বিলের অন্তত টেন পার্সেন্ট—এই সিলি ম্যানারটাও আমি জানি না বলে তোমার মনে হয়েছে? ওয়াশরুমে ছিলে, আমি এর মধ্যে বিলটা দিয়ে দিলাম। বেরিয়ে আসার সময় রেস্টুরেন্টের একটা বয় তোমার পিছু নিলো, আর অমনিই তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করে ফেললে, টিপস্ দিয়েছি কিনা! আমায় বড্ডো বোকা গেঁয়ো আনকালচারড্ ভাবো, না? ঠিক আছে, নাহয় জিজ্ঞেস করেছোই, কিন্তু আমি অবাক হয়েছি কীসে জানো? আমি যখন তোমার প্রশ্নে অবাক হয়ে তোমাকে বললাম, ‘আশ্চর্য’—তখন তুমি আবারো আমাকে জিজ্ঞেস করলে, উত্তর দাও! ইয়েস? অর নো? এর মানেটা কী দাঁড়াল? তুমি ধরেই নিয়েছিলে, আমি আসলে টিপস্ দিইনি, অথচ, ‘আশ্চর্য’ বলে ব্যাপারটা এড়াতে চাইছি। রাইট? শুভ, তোমার দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে ইচ্ছে করছে, আশ্চর্য! রাগ কোরো না, একবার ভেবে দেখতো, খাওয়ার শেষে তোমায় কেউ শুধোচ্ছে, টিপস্ দিয়েছো তো? ওইসময় কেমন লাগবে তোমার?
একটা কথা মনে রেখো, আমি তোমার কাছে বেহায়া মানে এই নয় যে, পুরো পৃথিবী এবং আমার নিজের কাছে আমি বেহায়া। তুমি আমায় বেহায়া ভাবো, ঠিক আছে। কিন্তু বিশ্বাস কর, তিথি বেহায়া নয়, তিথির একটাই দোষ: তিথি শুভকে ভালোবাসে।
আমি ব্যক্তিত্বহীন কিংবা নির্লজ্জ নই, আমি শুধু ভালোবাসার উপরে ব্যক্তিত্ব কিংবা লজ্জা—এদের কাউকেই কখনো যেতে দিতে চাই না। এই যাঃ!
ভাবনা: একশো ষোলো।
……………………………………..
সক্কাল-সক্কাল ভাসমান রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে দিয়ে গেলে খুব মজা লাগে। দেখি, ফুটপাতের অর্ধেকটা দখল করে জীবনের রমরমা আয়োজন বসে গেছে। এক বিশাল তেল চিটচিটে তাওয়াতে গরমাগরম পরোটা ভাজতে থাকে একজন, আরেকজন সমানে হাঁকতে থাকে: খাইয়া যান লইয়া যান গরমাগরমমম্………পাশের ছোট্ট তাওয়ার মাঝখান থেকে একের পর এক ডিমভাজি পরোটার প্লেটে চালান হতে থাকে। পিচ্চি-পিচ্চি সেয়ানা রেস্টুরেন্ট বয়দের ব্যস্ত ছুটোছুটিতে আর হাঁকডাকে রেস্টুরেন্টে জীবনের ঢল নামে। খাবার অর্ডার করে সরু-সরু বেঞ্চিতে অপেক্ষা করছে মানুষজন। কারো-কারো চোখে তখনো ঘুম, সেই ঘুমের ঘোরেই নাস্তা সেরে চায়ের অপেক্ষায় থাকে, গরম চায়ে ঠোঁট ছোঁয়ালেই বুঝি সে ঘুম ভাঙ্গবে যেন! কেউ আবার চেয়ারে পা তুলে আরামসে বসে আছে যেন এক্কেবারে নিজের আপন বাসাখানা! আশেপাশের সবাই ওর আপন মানুষ। কেউ-কেউ এক্ষুনিই পৃথিবীর সব কাজ শুরু করে দেবে! গত আধাঘণ্টা ধরে ওদের হাতে এক সেকেন্ডও সময় নেই। খাবারটা তাড়াতাড়ি দেয়ার জন্য অহেতুক হৈচৈ বাধায় ওরা। তাড়াহুড়ায় চা ডেলিভারি গিয়ে হাত থেকে কাপটা ফেলে মিজান চড় খায়, রমিজ মিয়ার বিড়ি আনার সময় তিনপিস্ আটআনা মেরে দিয়ে সেলিম ফুর্তিতে থাকে, ফেরতপাওয়া ৩টাকা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলার সময়ও কাস্টমারের হাত থেকে রফিকের লোভী চোখজোড়া সরে না।
ষাইট রাখেন, ৪৮ হইসে, থার্টিফাইভ—-এইসব ননস্টপ চিল্লাচিল্লিতে এই সকাল-সকালই রেস্টুরেন্টের খালার মাথাটা গরম হয়ে যায়।
কখন খাবার টেবিলে আসবে…….কিছু লোভ! লোভ! চোখ, গরম পরোটা, ডালসবজি, ডিমভাজি, দুধচা কিংবা লিকারচা—সব মিলিয়ে একটা মজার ঘ্রাণ রেস্টুরেন্ট থেকে ভেসে আসে।
এই কামাইল্যা! তোর নাম কী?
স্যার, যা মঞ্চায় ডাকেন!
ক্যান? তোর নাম নাই?
না স্যার, আমাগো কোনো নাম হয় না। যে নামে খুশি ডাকেন, অসুবিধা নাই।
হেহেহে দামি একখান কথা কইসস…..যা এককাপ কড়াপাতি লিকারচা নিয়া আয়!
নামহীন কামাল চা আনতে দৌড়ে যায়। সত্যিই তো, ওদের আবার নাম কীসের? যে যা দয়া করে ডাকে, সে নাম দিয়েই তো ওদের জীবন দিব্যি কেটে যায়। ওরা এমনি করে ভাল থাকে। এই নামহীন কামালরা এই ছোট্ট রেস্টুরেন্টে এই ভোরবেলাতেই টেনেহিঁচড়ে জীবনের উৎসব নামায়। থাকুক কষ্ট, থাকুক দুঃখ, থাকুক দারিদ্র্য—তবু, জীবন সুন্দর।
ভাবনা: একশো সতেরো।
……………………………………..
গতকাল সন্ধ্যা পৌনে আটটা থেকে বৃষ্টি ঝরছে, এখনো ঝরেই যাচ্ছে। এই ভেজা-ভেজা আবহাওয়ায় ভেজামন নিয়ে বিছানা ছাড়লাম। ব্যাল্কনিতে উঁকি দিতেই ভেজাবাতাসের ঝাপটা, বাইরে তাকাতেই ভেজারাস্তা আর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। এসবকিছু মনটাকে আরো কেমন করে দেয়! দেয় না, বলো? মেঘ ডাকছে, ডেকেই যাচ্ছে দীর্ঘ আর ধীর লয়ে। মেঘের এমন ছন্দ বুঝিয়ে দেয়, আজকের সমস্তটা দিন এভাবেই যাবে।
ও আচ্ছা, বলা হয়নি, আজ ঘুম ভাঙতেই দেখি, ঘুমের ওপারে বৃষ্টির জলে ভেসে যাচ্ছে একটা চিঠি, নীল কাগজে রুপোলী অক্ষরে লেখা, লেখাটা তোমার হাতের। না আর কারো নাম নয়, তোমার চিঠির সম্বোধনে যে নামটা সবচেয়ে মানানসই, সে নামটাই আছে। স্বপ্নে আমি তোমার চিঠিটা পড়ছি, তোমার আর স্বাগতার একজোড়া হাসিখুশি মুখ নেপথ্যে ভাসছিলো, সিনেমায় যেমনি দেখায় ফ্লাশব্যাকে। কী সুন্দর চিঠির ভাষা, শব্দের গাঁথুনি! কাউকে এমন চমৎকার চিঠি তোমার পক্ষেই লেখা মানায়। একটা উপহারের উল্লেখ ছিলো চিঠিতে, সোনার চেইনে ঝোলানো সবুজ পাথরের লকেট। ভালোবাসার অপূর্ব চাপরাশ। লিখেছো, যদি ওটা পর, তবে বুঝবো তুমি রাজি। ভয় পেয়ো না, সম্বোধনে আমি ছিলাম নাগো, আমার স্বপ্নেও আমি স্বেচ্ছাচারী হতে পারি না—এতোটাই অসহায় আমি! এর চাইতে দুঃখের আর কী আছে? চিঠিটা পড়া শেষ হওয়ারর আগেই কোত্থেকে এক দমকা হাওয়া এসে চিঠিটা হাত থেকে কোথায় যেন উড়িয়ে নিয়ে গেল; এরপর আর কিছু ভাবতে পারিনি, চিঠি হারানোর কষ্টে ঘুম ভেঙে গেছে।
এসবের কোনো মানে হয়? কোনো মানে-নেই স্বপ্ন দেখার কী মানে? বাইরে বৃষ্টির গতি বাড়ছে, বেশ ঝিরিঝিরি হাওয়ায়-ওড়া বৃষ্টি। বৃষ্টির শরীর উড়ে-উড়ে জায়গাবদল করে। দেখতে দারুণ লাগে।
এই আলোআঁধারি ভোরে
ভেজাডানার পাখিগুলোতে মিলে
সাঁতরে আকাশ, মেঘ সরিয়ে
অমন মিষ্টি মধুর সুরে
কী বলে যায় কিচিরমিচির স্বরে।
ওদের মনে কী খেলে যায়
আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে।
তাদেরও কি ঘুমজড়ানো চোখে
খুব আদরে প্রিয় কাউকে
ডাকতে ইচ্ছে করে?
যে ‘শুভ সকাল’ বললে তোমার ভাল লাগবে, এমন কেউ ভোরের স্নিগ্ধ ভালোবাসায় তোমায় জড়িয়ে নিয়ে বলুক—“শুভ সকাল!”
নীরব অভিমানের আকাশছোঁয়া পর্বতটা এই ইকটুকুন ভালোবাসায়ও গভীর সাগরতলে ডুবে যায়……গাছের যে শুকনো মচ্মচে পাতাটা দারুণ ঝড়েও ঝরে না, সে পাতাটাই আবার ছোট্ট একটা পাখির পালকের আধো ঝাপটার ক্ষীণ দাপটেই ঝরে পড়ে………ওই ওইটুকুন পাখিটাই ভালোবাসা!
শুনে একটুও কষ্ট পাবে না জেনেও যাকে কষ্টের সব কথা বলে ফেলতে ইচ্ছে করে প্রায়ই, কিন্তু কখনোই বলা হয় না, এমন অসীম অভিমানই ভালোবাসা।
জানো, ইদানিং আর অভিমানও হয় না। মাঝে-মাঝে ইচ্ছে করেই জীবনের ছাতাটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিই। বৃষ্টিতে কান্না পোড়াই, রোদে সুখকে ভেজাই। বৃষ্টি কিংবা রোদ—দুইই আমার আপন।
আকুলতায় আর আপ্লুত হই না।
উদাসীনতায় কখনো কষ্ট খুঁজি না।
নীরবে নিভৃতে শুধুই দেখে যাই।
সাগরের লোনাজল প্রবল বেগে বারবার তীরে আছড়ে পড়ে, একগাদা বালিকে বুকে টেনেহিঁচড়ে এনে নিজেকেই ঘোলাটে করে। সত্যিই তো, বালির দোষ কী তাতে?
মাঝে-মাঝে নিজেকে নিজের কাছেই বড্ডো একঘেয়ে লাগে। তখন ইচ্ছে করে, নিজেকে নিজের কাছ থেকেই চিরমুক্তি দিয়ে দিই।
ভাবনা: একশো আঠারো।
……………………………………..
রাস্তার পাশে জুতার একটা মস্ত বড় শোরুম। বাইরের দিকে কাঁচের দেয়ালঘেরা চারকোণো জায়গাটায় ইসসস্ কত্তগুলা বেলুন! মন চাচ্ছে, একটা একহাত লম্বা চিকন সূচ গ্লাসের চিপা দিয়ে ঢুকিয়ে চামেচামে একটা-একটা করে সবকটা বেলুন ফুটো করে দিই। কেউ আবার দেখে ফেলবে নাতো? ধুরর্! প্রশ্নই আসে না! এক্কেবারে নিপাট ভদ্রমানুষের মতো দাঁড়িয়ে থেকেই সবগুলো বেলুনের বারোটা বাজাতে পারবো আমি! কেউ টেরই পাবে না! মুহাহাহা…….
কিন্তু হায়, ওই যে শব্দ! বেলুন তো শব্দ করে ফাটবে! শব্দহীনভাবে বেলুন ফুটানো যায় না?
জীবনের অনেক ব্যাপারও ঠিক এমনি করেই শব্দে এসে আটকে যায়। নাহলে জীবনে কতকিছুই তো করা হয়ে যেত!
কী আর করা! অগত্যা বেলুনগুলি ফুটো করার প্রবল ইচ্ছেটা মনে চাপা দিয়ে সোজা হাঁটা দিলাম।
আহ্ বেলুনগুলি! আহ্ জীবনের ইচ্ছেগুলি!
একটা দিন শুধু একটিবারের জন্যই আসে। প্রিয় মানুষটিকে রোজ যেমন অনেক কিছু বলতে কিংবা অনেককিছু লিখে জানাতে ইচ্ছে করে, তেমনই কখনো-কখনো অন্তত একটা দিনের জন্য হলেও বিরক্ত না করে থাকতেও ইচ্ছে করে। নিজের হাতদুটোকে নিজেই চেপে ধরি আর কোনো-কোনো দিন প্রিয়কে একটুও না জ্বালিয়ে কোনো না কোনোভাবে পার করে দিই। কিন্তু সত্যিই যখন দিনটা পার হয়ে যায়, একটা দিন শুধুই একটিবারের জন্যই আসে—এটা ভাবতেই মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়। যে দিনটাতে প্রিয় মানুষকে কিছু বলা হয়নি, সে দিনটা তো আর কখনোই ফিরে আসবে না, কিছু বলার বা লেখার দ্বিতীয় কোনো সুযোগ আমি কখনোই পাবো না, একদিনের সুযোগ তো আরেকদিন কখনো আসে না। আমার সেদিনের কথাগুলি বাসি হয়ে যাবে, আমি কেন বাসি ফুল দিয়ে আমার প্রাণের দেবতার পুজো করবো? প্রিয় বিরক্ত হলে হোক। আমি ওকে জ্বালাবোই। সে প্রিয়ই যদি হবে, তবে আমার প্রেমটা ঠিকই বুঝে নেবে আর আমার এতটুকু জ্বালা সহ্য করবে না?
না, সবসময় অমনটা করা যায় না। তবু জীবন মানিয়ে নেয়। জীবনের নাম মহাশয়, যা সওয়াবেন তা-ই সয়। শুকনো ফুলকে ভালোবাসতে শিখে গেলে তাজা ফুলের সুবাসের তৃষ্ণায় আর মাতাল হয়ে থাকতে হয় না। যে অপেক্ষার কোনো শেষ থাকে না, সে অপেক্ষার প্রথম প্রহর আর শেষ প্রহর—দুইই তো একই, না? যে বন্ধ দরজার তালার কোনো চাবিই ছিল না কোনোকালে, এমন দরজায়ও প্রাণের অস্তিত্ব থাকে—কীসের প্রতীক্ষায় জানি সে দরজা স্থির হয়ে থাকে অনন্তকাল। যে পাহাড়ে ভালোবাসা থাকে, মায়া থাকে, মমতা থাকে, বেঁচেথাকার শক্তি থাকে, এমন একটা পাহাড় চোখের সামনে থেকে হঠাৎ মরীচিকার মতো ‘নেই’ হয়ে গেলে, কষ্ট হয় খুব…….কিন্তু, যে পাহাড়টা সত্যিকার অর্থে নেই, এমনকি কখনো ছিলও না, কেবলই কল্পনায়, ভালোবাসায় আর মায়ায় অমন একটা মিথ্যে আস্ত পাহাড়কে বিশ্বাস দিয়ে আঁকড়ে ধরে চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখাটা নিশ্চয়ই আরো অনেকবেশি কষ্টের। জীবন কখনোবা সুখকে না পেয়ে কষ্টকেই আপন ভেবে ভালোবাসতে শুরু করে।
নিজেই নিজেকে বোঝাই—
রাগ কোরো না মানুষ,
হঠাৎ কখন যাবে উড়ে
জীবন নামের ফানুস।
জীবন থমকায়, তবু থামে না। জীবন হচ্ছে সেই সকালটার প্রতিচ্ছবি যে সকালটা দুপুরকে ফাঁকি দিয়ে স্বপ্নময় রাতের দেখা পেতে চায়; এর জন্য যা যা করা দরকার, করেও ফেলে; হায়, রাত এসে যায়ও যদি, স্বপ্নটা তবু সত্যি হয়ে আসে না।
ভাবনা: একশো উনিশ।
……………………………………..
ক্লাস চলছে, চারিদিকে টিস্যুপতন নীরবতা। আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবচাইতে রাগী ম্যাম দুর্বোধ্য উচ্চারণে ইংরেজিতে এমন দ্রুত লেকচার দিচ্ছেন যে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার যে ঘুম পাচ্ছে, তা নয়, তবে আমি প্রাণপণে চেষ্টা করছি চোখেমুখে একটা ঘুমঘুম ভাব নিয়ে আসতে যাতে ম্যামকে অসহ্য না লাগে। অ্যালকোহলে বুঁদ হয়ে মানুষ যেমনি করে দুঃখ ভুলে জীবনকে সহজভাবে নেয়ার চেষ্টা করে, তেমনি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গিয়ে স্টুডেন্টরা বিরক্তি ভুলে ক্লাসকে সহজভাবে নেয়ার চেষ্টা করে। অনেক চেষ্টার পরও কিছুতেই ওরকম ভাবটাব আসছে না, বরং মাথায় IR নিয়ে একটা কবিতা প্রসব করে ফেলেছি—
ওরে ভার্সিটি, বুকে নিয়ে তুই IR,
করেছিস আমায় Fire!
তুই যদি তুই না হতিস, Dear,
কসম খোদার, করতাম থোড়াই Care!
অতি ফালতু, চতুষ্পদ (পড়বেন না, চতুষ্পদী) কবিতা, তবু এটাই মাথায় নাচছে। মনে হচ্ছে, এই কবিতা মুখ দিয়ে কোনোভাবে একবার বেরিয়ে গেলে ম্যাম সাথে-সাথেই আমাকে ধরেবেঁধে আমার হাতে একখানা নোবেল প্রাইজ ধরিয়ে দিয়ে একটা বিরল কাব্য-প্রতিভাকে চিরতরে গলাটিপে মেরে ফেলবেন।
ক্লাস চলছে, হাজার বছরের পুরনো সেই ক্লাস। ম্যামের সব মূল্যবান কথাই মাথার পৌনে তিনহাত উপর দিয়ে যাচ্ছে।
ভাবছি, জীবনের অনেককিছুই যদি এমনি করে মাথার উপর দিয়ে চলে যেত, তবে কতোই না ভাল হতো! জীবনকে বুঝতে গিয়ে আমরা জীবনের বারোটা বাজিয়ে দিই।
প্রিয়, আপন মানুষের জন্য মৃত্যুকামনা করা—বড় বেশি যন্ত্রণার। এমন অভিজ্ঞতা কারোরই না হোক। আমার এক বন্ধু প্রায়ই বলে, “আব্বুর জন্য দোয়া কর যাতে তাড়াতাড়ি মারা যান।” আমি জানি, কতটা কষ্ট থেকে বন্ধু একথা বলে। ওর আব্বুর অমন মৃত্যুযন্ত্রণা চোখে দেখা যায় না! উনি মারা গেলেই বরং শান্তি পেতেন। যাকে আল্লাহ্ নিয়েই যাবেন, তাকে নেয়ার আগে কেন এতোটা কষ্ট ভোগ করান, সে প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাই না। উনাকে দেখে বুঝি, মৃত্যু খুব সহজ নয় যে চাইলেই পাওয়া যায়।
আপনি কাউকে ভালোবাসেন, সেও আপনাকে ভালোবাসে। এমন ভালোবাসায় আপনি কষ্ট পাবেন, সেও কষ্ট পাবে।
আপনি কাউকে ভালোবাসেন, কিন্তু সে আপনাকে ভালোবাসে না। এমন ভালোবাসায় অনুভূতির উভমুখী প্রবাহের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও আপনি কষ্ট পাবেন।
এর মানে কী দাঁড়াল? ভালোবাসা হল, এমন এক সুখ কিংবা এমন এক দুঃখ, যা কখনোই অনুভূতির একমুখী বা উভমুখী প্রবাহপ্রকৃতির উপর নির্ভর করে না, যে ভালোবাসে, তার মধ্যে কিছু দুঃখ সতত প্রবহমান থাকবেই। এটাই তার নিয়তি। অনেক মানুষের ভিড়ে সে স্তব্ধ হয়ে যায়। তার ভেতরেথাকা সবসময়ের একা ‘আমি’টা আরো বেশি করে তাকে জাপটে ধরে। অনেকগুলি ছুটেচলা পায়ের স্রোতের বিপরীতে সে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে, চারপাশের মানুষ দেখে আর ভাবে, এই যে কতশত মানুষ—ছুটছে তো ছুটছেই, জীবনের প্রয়োজনে, এমনকি অপ্রয়োজনেও; কখনো জীবন্ত, কখনোবা প্রাণবন্ত। ও দেখে আর আপনমনে প্রশ্ন করে, আচ্ছা, এরা সবাই কি সত্যিই জীবিত? না জানি কতজন মৃতও! কী বিচিত্র সব কারণে ছোট্ট একজীবনে মানুষ কতবার যে মরে! মৃতরা কিন্তু ঠিকই জানে, ওরা মৃত। সেই খোঁজ আর কেউ জানে না, আর কারো পক্ষে তা জানা সম্ভবও নয়।
মানুষের বেঁচে থাকার দায় যদি হতো কেবলই প্রতি মুহূর্তের নিঃশ্বাসের, তবে মানুষ বেঁচে যেত! ওরকম নয় বলেই মানুষের যতো কষ্ট।
আচ্ছা প্রিয়, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি বলে এই ম্যামের ক্লাসে নিজেকে জোর করে ৫০ মিনিট আটকে রাখার কষ্ট আর তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি বলে তোমার নেশায় নিজেকে জড়িয়ে রাখার কষ্ট—একই কষ্ট?