ভাবনা: নয়শো এগারো ……………………………………………………… এক। তুমি কি জানো, এখন তোমাকে আর ভালোবাসি না, এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি তোমাকে আমি বরফজমা খণ্ডের মতো মায়া করি, এটাও তিতা বাস্তবতা। কাগজ-কলম নিয়ে দিস্তার পর দিস্তা লিখে ফেলতে পারতাম, যদি কিনা একটু সময় দিতে! খুব সুন্দর করে পাশে থেকে তোমার ভালোবাসা না পেয়েও তোমায় নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে অনেকটা সময় থেকে যেতে পারতাম, যদি তুমি আমায় একটুও বুঝতে! প্রিয়, অবহেলায় কোনও জিনিসই ভালো থাকে না। না মানুষ, না ঘরে পড়ে-থাকা অব্যবহৃত কোনও জিনিস। আমায় বেশি কিছুও দেবার দরকার ছিল না, শুধু একটু করে সময় দিলেই আমি ভীষণ খুশি হয়ে যেতাম। দামি গিফট আমার পছন্দ না, তার চেয়ে তোমার কাছ থেকে পাওয়া সময়ই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি দামি। হয়তো আমার আর তোমার আর কখনও কথা হবে না। যেদিন বুঝতে পারবে, আমি কী ছিলাম তোমার জীবনে, সেদিন যেন আমার কাছে ভুল করেও না আসতে হয় তোমাকে, আমার প্রার্থনা রইল। দুই। আম্মু আমাকে বলছিলেন তোমার কথা, আমি যেন শবেবরাতের হালুয়া নিয়ে তোমার অফিসে দিয়ে আসি। বার বার বলছিলেন। আচ্ছা, বলো তো, আম্মুকে কী বলব? তোমার সঙ্গে ঝগড়া? কথা বলা অফ...এইসব? তুমি আমাকে পছন্দই করো না...কোনটা? শোনো, ঝগড়াটা ইনবক্সে হয়, দরজা-জানালা বন্ধ কোনও রুমে হয়, কিন্তু সেখানে কাদা ছোড়াছুড়ি হয়। না কখন হয়, জানো? যখন দেখবে, তোমাকে কেউ পছন্দ করে ঠিকই, কিন্তু তোমার সম্মানটা যেন কোনোভাবেই বাকিদের কাছে নষ্ট না হয়, সেই কথাটাও সে মাথায় রেখে চলে। সেটাই আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা একটা মানুষের প্রতি আরেকটা মানুষের। আমার মায়ের সঙ্গে তোমার কিছু হয়নি। আমার সঙ্গেই তো সমস্যা? আচ্ছা, আমি দূরে আছি, ভেবো না সেটা নিয়ে। মুরুব্বিদের সাথে আমাদের কোনও সন্তানেরই রাগ, অভিযোগ বা অভিমান নেই; আশা করি, আমার মায়ের সঙ্গেও নেই। উনি আমাকে বললেন, ছেলেটা এই শবেবরাতে আছে, আগামী বছর বাঁচি কি না কে জানে! তখন তো হালুয়া রান্না করে খাওয়াতে পারব না। আর ব্যস্ত থাকে সে, বাসায় আসার সময়ও নেই। আমাকে বলছেন দিয়ে আসতে তোমার অফিসে। এখন বলো তো, আমি কী করব? লোক দিয়ে পাঠাব আগামীকাল? না কি আমি নিয়ে আসব? আমার প্রতি রাগ, ঘৃণা আজীবন রেখে দাও, আমার মায়ের প্রতি রেখো না। কষ্ট পাবেন তিনি অনেক। তোমার উত্তর যথারীতি পেলাম না। আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কারণ আমার মা এইবার বলেছিলেন খাবার নিয়ে যেতে। তোমার চুপ করে থাকাটাকে কী ধরে নেবো? তোমার আগ্রহ নেই? ওকে, ফাইন! আমি অনেক বার তোমার কাছে ছোটো হয়েছি, এইবার আমার মায়ের কথা বলেছিলাম। তুমি ওঁর সঙ্গেও, আমার সঙ্গে যেইভাবে আচরণ করো, সেটাই করলে! তুমি চুপ করে থেকে চাইছ, আর যোগাযোগ না হোক, তাই তো? আচ্ছা, তবে তা-ই হোক! যে মানুষটা আমার মাকেও ছোটো করে, তার সঙ্গে যোগাযোগ না-ই থাকল! ভালো থেকো। চুপ করেই আজীবন থেকো। সমস্যা নেই। আমার মনটা এত ছোটো না, তাই হয়তো বার বার সেধে সেধে কথা বলি। কিন্তু এইবার আমার মায়ের কথা বলেছিলাম, তোমার আচরণ দেখে আমি শকড! যদি পারো, কারও মুখের হাসির কারণ হয়ে থেকো। অল্প কিছু দিনের জন্য না, বেশি দিনের জন্য হাসির কারণ হয়ে থেকো। আমি আমার মায়ের কাছে ছোটো হয়ে গেলাম। অথচ এই তোমার জন্য আমি আমার জীবনে অনেকের সঙ্গে ঝগড়া করে সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়েছি। মানুষকে প্রশ্রয় দাও, আশ্রয় দাও, সব কিছুই দাও, সেটা নিয়ে কথা বলার আমি কেউ না। কিন্তু আমার সামান্য একটা আবদারও রাখতে পারলে না! তিন। আচ্ছা, এই যে নিজেকে ভীষণ ভীষণভাবে দামি আর আমাকে অবহেলিত হতে দেখছ প্রতিনিয়ত, তোমার কি একটুও ভয় হয় না? কখনও যদি তোমার প্রিয় মানুষ তোমার সঙ্গে এই আচরণ করে, যেটা তুমি আমার সঙ্গে করছ... একসময় আমার তোমাকে হারিয়ে ফেলার একটা ভয় ছিল; এখন আর ভয় নেই। যেই মানুষটা আমার অনুভূতির কোনও মূল্যই দিতে জানে না, সে হারিয়ে গেলেই কী আর না গেলেই-বা কী! আমার তোমাকে ভালোবাসতে কখনোই তোমায় লাগেনি। তেমনি তুমি কাছে থাকার পরও যেভাবে এড়িয়ে চলো আমাকে, এটা আমার মাথায় রেখে দেবো। তুমি ভুল করেও ভেবে বসো না, তোমায় আজও ভালোবাসি। আমি এখন সত্যিই ভালোবাসি না। কেন, জানো? যে শাস্তিটা তুমি আমায় দিয়েছ কাছে এসে, এটা আমি ডিজার্ভ করি না মোটেও। আমি ভালোবাসতে-জানা মেয়ে, যার কারুরই ভালোবাসা লাগে না, কিন্তু তুমি কী যে একটা বিষয় নিয়ে, না কী নিয়ে জেদ করে আমার সঙ্গে জিতে থাকতে চাইছ, তা ঈশ্বরই ভালো জানেন। এতটা কঠোর না হলেও পারতে। ভালো থেকো। চার। অনেক কিছুই লিখে আনসেন্ড করে দিলাম। আসলে আমার উচিতই না লেখা। লিখবে কারা, জানো? যারা কোনও মুহূর্ত পেয়েছে, যারা মাসে এক বার করে হলেও ফোনকল পেয়েছে, যারা দেখা পেয়েছে কিংবা অন্তত একটা সকাল বা বিকেল পেয়েছে। যেখানে কিছুই নেই, সেখানে আমি কী নিয়ে লিখব, ভেবে দেখেছ কখনও? যেখানে তোমার আমার কথাটুকুও হয় না, কিছু বলোও না আমাকে, সেখানে আমি আমাদের কী নিয়ে লিখব, ভেবে দেখেছ? যেখানে তুমি ভুলেও কোনও কিছুতেই রাখো না আমায়, সেখানে অযথা লেখার কিছু নেই। এর চাইতে নিজের সমস্ত কথা অন্য কোনও পেইজে লেখা ভালো। কোনও একটা কারণ থাকতে হয়। এতদিন লিখেছি এবং সেই লেখার পেছনে কারণ ছিল, তোমায় নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতাম। হ্যাঁ, এই একটি কারণেই লিখতাম। এখন আর এইসবের প্রয়োজন নেই। এখন লিখবে কারা, জানো? ওই যে সেই সুন্দরীর কথা তুমি আমার কাছে বলো অথবা যে মেয়েটা বলে, আমার তো ওঁর সঙ্গে অনেক বার দেখা হয়েছে...এরা থাকবে এখন থেকে। কারও জন্য জায়গা ছাড়ছি না; আসলে আমার ভালোবাসার প্রয়োজন তোমার নেই। যাদের ভালো লাগে, তাদের সঙ্গে থেকে যাও। আমার সঙ্গে তোমার এই এতটুকুই পরিচয় ছিল বা এতটুকুই কথা ছিল। একটা কথা কি জানেন, যে-কোনও কিছুর পেছনে কারণ থাকে, কিন্তু আমার ভালোবাসার পেছনে কোনও কারণ ছিল না। আপনি দেখার চোখ দিয়ে আমাকে দেখেননি, কারণ আপনি আমার বেলায় অন্ধ ছিলেন, আপনার দেখার চোখ বন্ধ ছিল আমার বেলায়। তা সত্ত্বেও কিন্তু আমি রোজ ভালোবেসে গিয়েছি, খোঁজ নিয়েছি এবং চিঠি লিখে গিয়েছি। এখন অন্য কেউ লিখবে, হুঁ? নিঃস্বার্থভাবেও ভালো সে-ই বাসবে! ভাবনা: নয়শো বারো ……………………………………………………… এক। তুমি হয়তো বলে বসবে মনে মনে, মেয়েটা মনের মধ্যে পৃথিবীর সব অভিযোগ রেখে দিয়ে আমাকে ভালোবাসে। দেখো, অভিযোগ ছিল বা আছে যা, তা কিন্তু ভালোবাসার চাইতে বড়ো না। আবার ভালোবাসার মানুষটার কাছেই আমাদের সামান্য একটু চাওয়া থাকে, যা আকাশকুসুম কিছু না এবং চাইলেই মানুষটা তা দিতেই পারে। হ্যাঁ, তুমি হয়তো এরপর বলবে, তুমি আমাকে ভালোবাসো না, তবে কেন তা দেবে?! তা-ও অবশ্য ঠিক। সত্যিই তো, কেন দেবে! একটা বিষয় কী, জানো? এ পৃথিবীতে এমন কিছু ‘কেন’ আছে, যেগুলোর কোনও উত্তর হয় না। আমাকে তোমার ভালো লাগে না, এটা একটা কেন-র উত্তর। আবার তোমাকে আমি ভালোবাসতাম...কেন বাসতাম---এই কেন-টার আবার উত্তর নেই। আচ্ছা, তুমি যে বললে পরশুদিন…হয়তো আমাকে ইঙ্গিত করেই বুঝিয়েছ, যে মানুষ সুন্দরের প্রশংসা করতে জানে না এবং ভালোকে ভালো বলতে জানে না, সে আসলে ভালো না। এবং আমাকে তাচ্ছিল্য করে আরও বললে, আমিই একমাত্র ভালো মানুষ এখানকার! এই দুইটা কথায় আমি সত্যিই ভীষণ ভীষণ ভীষণ আঘাত পেয়েছি মনে। তুমি সত্যিই জানো না আমি কেমন! আমাকে চেনোই-বা কতটা! সুন্দর তো ভেতরে থাকে, বাইরে না। আমি অসুন্দর তাকেই বলি, যার ভেতরটা অসুন্দর। যা-ই হোক, একটা ডিসিশন নিয়েছি, তুমি জেনে খুশি হবে। আমি তোমার জীবন থেকে, ইনবক্স থেকে অনেক দূরে সরে যাব। তোমার কাছে এখন থেকে সেইসব সুন্দর মানুষকেই রেখো, যাদের দেখতে তুমি পছন্দ করো। আমাকে তুমি অসুন্দর বলাতে কষ্ট পাইনি, ওই মেয়েটা ভালো আর আমিই খারাপ, তোমার এই কথাটা ভাবিয়ে তুলেছে আমাকে! খুব করে সময় চেয়েছিলাম তোমার কাছে, দাওনি। অথচ আমি যখন বললাম, মেয়েটাকে তোমার ওইখানে পাঠিয়ে দিই, তখন অমনিই তুমি বললে, দাও। মানে তার জন্যও তোমার হাতে সময় আছে, কিন্তু আমার জন্য নেই। ঠিক আছে, সমস্যা নেই। তুমি ভালো থেকো। ছোট্ট একটা অভিযোগ রেখে গেলাম, তুমি আমাকে সময় দিলেও পারতে! দুই। তোমাকে অনেক কিছুই বলে ফেলা যায়, লিখে ফেলা যায় এবং রাগও দেখিয়ে ফেলা যায়। শুধু যা বলা যায় না বা বোঝানো যায় না, তা হলো, ঠিক কতটা ভালোবাসি তোমায়... আমাকে তোমার ভালো লাগে না, তাই দূরে থাকার চেষ্টা করো, জানি! কেউ ভালোবাসে না, এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়, মেনে নেওয়া যায়। মেনেও নিই; কিন্তু কেউ আমাকে সহ্যই করতে পারে না, এটা মেনে নিতে একটু হলেও কষ্ট হয়! আমার যে কেমন লাগে, তা তোমাকে বোঝানো যাবে না। এ আবেগ নয়, ভালোবাসা... যে মানুষটা সমস্ত ইগো বাদ দিয়ে, সব কিছু বাদ দিয়ে পাগলের মতো এক তোমাকেই ভালোবেসে যায়, তাকে আর যা-ই ভাবো, সস্তা অন্তত ভেবো না। যে সস্তা, সে সবার সঙ্গেই এরকম করে; কিন্তু আমার হাতে সবার জন্য সময় নেই। আমার জন্য সত্যিই তোমার কাছে সময় নেই, এটা ভাবতেও ভীষণ কষ্ট হয়! এই যে দেখো, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে…তুমি কখনও যদি পারো, সমস্ত অপরাধ আমার ক্ষমা করে দিয়ে আমাকে কিছুটা সময় দিয়ো। না থাক, দিয়ো না সময়...আমি ভুল করে বলে ফেলেছি। অনেক বার বলার পর যে জিনিস দেওয়া হয়, সেই জিনিসটার কোনও দাম থাকে না। দাম থাকে সেই জিনিসটার, যেটা না চাইতেই পাওয়া হয়ে যায়। আমি অপরাধ করেছি বলে মনে হয় না, তবুও যদি তোমার ওরকম মনে হয়, তবে আমার সরি বলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। চলার পথে সাবধানে চলি যেন অন্যের ক্ষতি না হয়। সুন্দর আমার চেহারায় না, সুন্দর যতটুকুই আছে, সেটা আমার মনে। তুমি আমার ভাগের সময়টা অন্য কাউকে দিয়ে দিয়ো। আমি ভিখিরি নই যে হাত পাতব! প্রিয় মানুষটার কাছে আবদার করা আর হাত পাতা কারও কাছে, এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে কিছুটা হলেও! যা-ই হোক, সময় চাইতে চাইতে তোমার মাথা নষ্ট করে ফেলছি। সরি তার জন্য। আসলে নিজের মানুষের কাছে কখনও কোনও কিছু চাইতে হয় না, ওরা তা নিজ থেকেই দেয়। ভুল হয়ে গেছে। সময় লাগবে না। তুমি আমার ভাগেরটা অন্য কাউকে দিয়ো। তুমি এতটা ব্যস্ততা দেখালে আমায়…আর অমনিই আমার ভালোবাসা ঘুমিয়ে পড়ল! তোমার জন্য আমার ভালোবাসা বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকতে পারে না, কেবলই ইনসমনিয়ায় ভোগে, তাই আমার এত কষ্ট! তুমি বার বার যখন জানতে চাইতে কেন আসি তোমার কাছেই, আমি প্রতি বারই বলেছি…ভালোবাসি। আমার প্রতি বারই মনে হয়েছে, আমাকেই তোমার প্রয়োজন! এখন যখন তোমাকে চাইছি খুব করে, তখন তুমি তোমার সুন্দর মুখটা দেখা থেকে আমায় বঞ্চিত করলে! যখন ভাবলাম, আমি খুব বেশি দিন তোমায় না পেলেও অল্প কিছু দিন পেয়ে বেশি দিন ভালো থাকব, ঠিক তখনই তুমি আমায় কত-কী যে বোঝালে! আমার কাছে ফিরে তুমি একদিন আসবে হয়তো! তখন যদি বলো, পাগলের মতো তোমায় ভালোবাসি কি না, তবে উত্তরে বলব, আগে ঠিকই পাগল ছিলাম, কিন্তু এখন সুস্থ হয়ে গেছি। পাগলের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে না। পারবে তো তখন…আমার ওই সুস্থতাকে সহ্য করতে? ভাবনা: নয়শো তেরো ……………………………………………………… এক। আচ্ছা, কাউকে মনে রাখা বন্ধ করতে হয় কীভাবে? তুমি আমাকে এমনভাবে এড়িয়ে চলছ যেন আমি তোমার সবচাইতে কাছের শত্রু! জানো, ভীষণ রাগী ছেলেগুলোকে আমার কাছে ভালোই লাগে! ইচ্ছে করে, অযথা কিছু নিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে এমন কাউকে রাগিয়ে দিই। তারপর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে লিখে ফেলি কোনও কবিতা। হোক না তা যা-তা! ঝগড়া বাধিয়ে সনেটে সনেটে অষ্টকে বাঁধি প্রশ্ন! আদরে, সোহাগে আর ভালোবাসায় মেখে ষটকে দিই তার সমাধান! তার জন্যই হোক রচিত প্রতিদিনই নিত্যনতুন কোনও-না-কোনও গান। থাকুক আমাদের ভেতর হাজারো শত অভিমান! ভালোবেসে কাছে এসে হয়ে যাব এক আত্মা, একটাই প্রাণ! দুই। আমি চেয়েছিলাম, তুমি আমায় ভালোবাসতে না-ইবা পারো, অন্তত একটু করে হলেও বোঝো। তুমি আমার সঙ্গে ঘন ঘন দেখা না-ইবা করতে পারো, মাসে দুই বার অন্তত দেখা করো। আমি চেয়েছিলাম, সবাই ভুল বুঝলেও তুমি অন্তত ভুল বুঝবে না কখনোই আমাকে। আমি চেয়েছিলাম, তুমি আমার ভুলগুলো ধরে শাসন করো। চেয়েছিলাম, তোমার সঙ্গে থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর লেখা দু-জনে মিলে একসঙ্গে লিখতে। চেয়েছিলাম, নিজহাতে রান্না করে তোমার প্রিয় আইটেমগুলো খাওয়াতে। আমি চেয়েছিলাম তোমার কাছে সামান্য একটু সময়, যা তুমি চাইলেই দিতে পারতে। আমি চেয়েছিলাম, তুমি যেমন, ঠিক তেমন করেই আমার কাছে নিজেকে মেলে ধরো, আর তোমার মনের যত কথা বা কষ্ট আছে, সবই আমার কাছে জমা রাখো। আমি চেয়েছিলাম, তোমার ব্যবহার-করা শার্টটা তুমি আমায় দিয়ে রাখো। আমি চেয়েছিলাম তোমার সঙ্গে অনেকটা সময় থেকে যেতে। চেয়েছিলাম, দু-জনের ভেতর কিছু সুখের স্মৃতি থাকুক। আমাদের মধ্যে কিছু থাক না থাক, অন্তত দুঃখের সময় আমরা যেন ঠিকই একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াতে পারি। আচ্ছা, বলো তো, আমার চাওয়াগুলো কি খুব দুর্মূল্য? এইসবের মধ্যে একটাও কি পূরণ করার সামর্থ্য তুমি রাখো না? এর উত্তরটা নিজের কাছে নিজেই দিয়ো, প্রিয়। তিন। আমি নারী, তাই হয়তো অনেক সুন্দর করে ভালোবেসে ফেলতে পারি। পারি শত আঘাতে, কষ্টে, অপমানে, অবহেলায়ও টিকে থাকার শক্তি জড়ো করতে। আমার মধ্যে আছে পুরুষের সমান যে-কোনও কাজ করে যাবার সাহস। হতে পারি বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছে শেষবয়সের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় এবং নির্ভরতার কাঁধ। সংসারের সমস্ত কিছু একহাতে সামলে নিয়েও করে যেতে পারি সমাজের সেবায় যে-কোনও কাজ। সন্তানের জন্য, সংসারের জন্য, মা-বাবার জন্য, ভালোবাসার মানুষটার জন্য, ভাই-বোনের জন্য, বন্ধুর জন্য যে-কোনও ভালো কিছু করে যাবার ইচ্ছে এবং সামর্থ্য রাখে একজন নারী। কেউ একটু ভালো যদি বাসে, তার বিনিময়ে বহুগুণে ভালোবেসে ফেলতে পারে ওরা। আর হাসিমুখে করে যেতে পারে অনেক অনেককিছু। তাই একটাই চাওয়া, ওদের প্রতি সম্মানটা যেন এক দিনের জন্য না হয়। প্রতিদিনই যেন নারীদের প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসা অন্তর থেকে আসে। চার। আমি তোমাকে মেসেজ সত্যিই দিতাম না, যেহেতু আমার মেসেজ দেখার সময় নেই তোমার কাছে এবং আমার সঙ্গে দেখা করারও ইচ্ছে নেই তোমার! যা-ই হোক, সকালে স্বপ্নে দেখলাম, তুমি এসেছ বাসায়। এসে আমার বিছানায় বসলে। চিন্তিত দেখাচ্ছিল ভীষণ। এই যে এত বার জানতে চাইলাম, কী হয়েছে তোমার? বলো। কাউকে বলব না।…আর তুমি বললে, থাক, বাদ দাও। এই যে বাদ দিতে বললে, মনটা কেমন যেন করে উঠল! আমি কিছু করতে পারি না পারি, অন্তত কথা হজম করে রেখে দিতে পারি। কারও মন খারাপ হলে তার মনটা ভালো করতে পারি না পারি, অন্তত মন খারাপের সেই সময়টাতে তার সঙ্গে থেকে যেতে পারি। স্বপ্নটা দেখার পর থেকে চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। তোমার কোথাও আমি নেই! কথা বলার বা বিশ্বাস করে কথা জমা রাখার জন্যও তুমি আমায় উপযুক্ত ভাবো না। অসুন্দর দেখতে আমি, তাই বোধ হয় এমনটা হয়। আচ্ছা, আমার যে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করে তোমায়! আগে কখনও এসব বলিনি। এখন নির্লজ্জের মতোই বলে ফেলি। বাকিদের সময় দেওয়াটা তোমার ইচ্ছে। এক বার হলেও আমার সামান্য এইটুকু ইচ্ছে তো পূরণ করে দিতে পারো। তোমার কাছে সময় নেই, এই কথা যদি ঈশ্বরও নেমে বলে যায় আমাকে, তবুও আমার মেনে নিতে কষ্ট হবে। সময় চাইলেই বের করা যায়, যদি মনে ইচ্ছে থাকে। এই মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। ওকে কিছু একটা তো দাও, যা নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। সময়টাই নাহয় দিলে... পাঁচ। তুমি আমাকে প্রায়ই বলো, আমি তোমার কাছে দুঃখের মার্কেটিং করি। আসল কথা কী, জানো? আমি তুমি ছাড়া আর কারও কাছেই নিজের কথা জমা রাখি না। এটাকে মার্কেটিংও যদি বলো, তবু তুমি ঠিক! কিন্তু আমার কোনও কথাই আমি বাকিদের কাছে বলি না। নিজেকেও মেলে ধরি না। এই যে অসুস্থ ভীষণ, ডাক্তার দেখানো, চেকআপ সব নিজেই করছি; মায়েরটাও। আমি অসুস্থ হলে সেবাযত্ন করার জন্য আমার সন্তান নেই, আমার স্বামীও নেই; আর মা…সে তো নিজেই অসুস্থ! যখন ভীষণ ভীষণ ভীষণ খারাপ লাগে, তখন বলতেও পারি না কাউকে। আমার কেউ নেই এবং আমি কাউকে রাখিও না পাশে। এইবার ডাক্তার বলেছেন, আমার মনে হয়, তুমি নিজের যত্ন নাও না। মেয়ে, নিজের যত্ন নাও, অসুখ অনেক বেড়ে গেছে তোমার…ওঁর এই কথা শোনার পর মনে হয়েছে, কেউ একজন সত্যিটা বুঝতে পারল! নিজের প্রতি এখন নিজেরই মায়া হয়। তোমার প্রতি আমার এক্সপেকটেশন অনেক, তাই না? এইভাবেই ভাবো তুমি, তাই না? ভেবো না। আশা রাখি না কারও কাছেই। তোমার কাছে থাকে শুধুই আবদার, যা পৃথিবীর আর কোনও পুরুষ মানুষের কাছেই করা যায় না। ও হ্যাঁ, আর কারও দিকে তাকানোরই তো সময় নেই আমার। আমার কাছে, তুমি মানে বিশাল কিছু। পুরো পৃথিবীটাই যেন তুমি! অথচ তোমার কাছে আমি কিছুই না! একলা চলতে অভ্যস্ত মানুষও বছরে দু-একবার হাঁপিয়ে ওঠে। তখন মনে হয়, পাশে কেউ থাকলে ভালো হতো। আমার বেলায়ও মনে হয় তেমনটা ঘটে। আমি নিজে যা, তোমাকে দেখাইও তা। যা মুখে আসে সরাসরি বলে ফেলি, মনে জমিয়ে রাখার মতো কিছু নেই আমার। তার চেয়ে বরং তোমার কাছে জমা রেখে দিতেই বেশি শান্তি লাগে। ভাবনা: নয়শো চৌদ্দ ……………………………………………………… এক। তোমার কাছে আবদার করা যায় না, এটা যদি বলো, তখনও আমি বলব, আবদার যা-কিছু, তা এক তোমার কাছেই করা যায়। কারণ আমার সকল কিছুই তোমার উপর দিয়ে যায়। তোমাকে কিছু কথা আরও বলে রাখি, যেহেতু কাছে এসেছ, তাই বলা। এই মেসেজটি দেখার পর আমি মেসেজ ডিলিট করে দেবো। আমি আমার সমস্ত কিছু তোমার কাছে জমা রাখি। হয়তো আমার কাছে তোমাকে সেইফ মনে হয়, তাই। তুমি যদি আমার কথাগুলো কখনও কাউকে বলেও দাও, তবুও কিছু করার থাকবে না আমার। আমি বিশ্বাস করি, সকল কিছুই তোমার কাছে রেখে দেওয়া যায়। কখনও যদি আমার সন্তান হয়, তখন হয়তো তার কাছেই জমা রাখব। সন্তানের কাছে বলেও যাব তোমার কথা। যাকে এতকিছু ভাবি আমি, তার কথা তো কোনও-না-কোনও সময় বলতেই হয় সন্তানের কাছে। আমার জন্য তোমার কিছুই করতে হবে না। চাইছিও না। আমি শুধু তোমায় কিছু কথা বলি, সেগুলোই থেকে যায় তোমার কাছে অক্ষর হিসেবে, কিন্তু আমার আর থাকা হয় না। অবশ্য আফসোস নেই তাতেও! আমার বকবক শুনতে ভালো লাগে না তোমার, জানি…বুঝি। কিন্তু তোমার জন্য একটা মানুষ সুন্দর করে বেঁচে আছে দুনিয়ায়, তোমাকে ভালোবেসে কেউ শান্তিতে থাকে, তোমার কাছে সমস্ত কিছু জমা রেখে কেউ একজন ভালো থাকে, এইভাবেও তো ভেবে দেখতে পারো, তাই না? হয়তো তোমার কিছুই করতে হয় না আমার জন্য, কিন্তু তোমার জন্য কেউ ভালো থাকে, এইভাবে করে ভেবে দেখেছ কখনও? আমি আম্মুর কাছেও অনেকসময় অনেককিছুই বলি না। সে যদি টেনশন করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে, এই ভেবে আর বলি না। তোমার কাছেই বলি। যা-ই হোক, বাদ দাও আমার দুঃখের গল্প। এমনিতেও কষ্ট নাই কোনও; ভালো আছি। কথা কিছু জমা রেখে দিই। তোমার হয়তো অনেকে আছে, আমার আবার এক তুমিই আছ...এখন অবধি। এক তুমি বাদে আমার আর কেউ নেই বলে এমন করছ আমার সঙ্গে; যদি কখনও আমার একটা মানুষ হয়, তখন দেখবে, তোমার খারাপ লাগছে। আচ্ছা, ভালো কথা, উপরের কথাগুলো কোনও অভিযোগ, প্রেম, ভালোবাসা এই সমস্ত কিছুই না। আমি আমার সবকিছুই তোমার কাছে রেখে দিই, তাই বলা। আমি নিজে যা, তোমার কাছেও তা-ই। সত্যিই বলছি, কখনোই কোনও প্যাঁচ মাথায় রেখে তোমার সঙ্গে মিশি না। যা মনে আসে, সেটাও বলে ফেলি নির্দ্বিধায়! আর-একটা কথা মাথায় রেখো। আমার ভেতর আসলেই প্যাঁচ নেই, কিন্তু রাগ আছে। এই রাগটাই অনেকে হয়তো পছন্দ করে না! দুই। তোমায় শান্তি দিতে গিয়ে যদি আমি দূরে সরে যাই, তার বিনিময়ে তুমি কী দেবে আমায়, ভেবে রেখেছ কি? লেনদেন হোক এইবার তোমার আর আমার মধ্যে। যাকে তুমি মিস করে প্রতিদিন ফোন দাও, সে যেই ভালোটা বাসে, সেটা যে তোমার পাত্তাটা পেয়েই বাসে, তা জানো নিশ্চয়ই? আর আমি? কীভাবে ভালোবেসে গেলাম এমন তীব্রভাবে, ভেবে দেখবে এক বার, প্লিজ? যার সঙ্গে দেখা করার জন্য তুমি ছটফট করো, সে দেখা করতে আসে তোমার ওই ছটফটানি দেখেই। আর আমি? এতকাল যে দেখার জন্য অপেক্ষা করে গেলাম দেখা না পেয়েও! এটাও তুমি ভেবে দেখবে এক বার…হুঁ? যাকে তুমি ভালোবাসো, তোমার ভালোবাসা পেয়ে সে তোমাকেও ভালোবাসে, যা দেখে তোমার ভীষণ শান্তি লাগে। আর আমি? তোমার ভালোবাসা না পেয়ে অবহেলা আর খারাপ ব্যবহার সহ্য করে এবং দেখা না করার পরও যে ভালোটা বেসেছি, তাকে তুমি কী নাম দেবে? ভেবে দেখেছ কখনও? আচ্ছা, চলো, বাদ দিই এইসব কথা। আমি চেয়েছিলাম তোমার আয়না এবং ছায়া হয়ে থেকে যেতে, যে আয়নায় তুমি নিজেকে দেখতে পেতে এবং যে ছায়া তোমাকে কখনোই ফেলে চলে যেত না! তুমি আমার এই সামান্যটুকু ইচ্ছেও পূরণ হতে দিলে না...! তিন। ইন্টারমেডিয়েট পাশ করার পর আমি ডাক্তারি পড়তে চাওয়ায় বাবা বলেছিলেন, 'ডাক্তার হলে নাইটডিউটি করতে হবে, মা। আমাদের মতন অভিজাত পরিবারের মেয়েরা তো আর রাত-বিরাতে বাসার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে না...!’ আচ্ছা, ডাক্তারি পড়ার চিন্তা বাদ দিলাম। কিছুদিন পর বান্ধবীর বড়ো বোনের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে ঠিক করলাম ল'তে পড়ব। আইনজীবী হতে চাওয়ার কথা যেই ভাবতে যাব, সেইসময় একবার ছোটো চাচা বাড়িতে এলেন। বিকেলবেলায় একহাতে চা নিয়ে অন্য হাতটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললেন, 'বুঝলি মা, যার নাই কোনও গতি, সে-ই পড়ে ওকালতি!' ছোট্ট আমি সেই কথা শুনে রুমে এসে চুপচাপ বসে রইলাম। এমনকী রাগ করে রাতে ভাতও খেলাম না, সারারাত জেগে রইলাম। এভাবে মন খারাপ করে করে অনেক দিন পার করে দিলাম। হঠাৎ একদিন সকালে রিনির মেসেজ পাই। আমাদের বাড়ির পাশের সরকারি কলেজটাতে নাকি ভর্তি হবার ওইদিনই লাস্ট ডেট। আমি খুব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়েই বাসা থেকে বের হই। ভাবি, আমি পড়ব সরকারি কলেজে!? আই মিন, আমি...!? কিছুক্ষণ পর আবার নিজেই নিজেকে বোঝাই, হ্যাঁ, ভালো মেয়েরা তো বাড়ির ভাত খেয়ে নিজের জেলার কলেজেই পড়ে! খানদানের নাম রাখতে আমি এইটুকু করতে পারব না!? শেষবেলায় কলেজে পৌঁছে দেখি, ফিজিক্স আর ফিলসফি ছাড়া আর কোনও বিভাগেই সিট খালি নেই। আমি আর ফিজিক্সে, কেমিস্ট্রিতে যাব না, ভাই। অনেক হয়েছে। উপায় না পেয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম ফিলসফিতে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অন্তত তিনজনের মুখে শুনলাম, ‘একে তো সরকারি কলেজ, তার উপর আবার দর্শন! এরাও কি পড়াশোনা করবে নাকি!’ সেদিন আমার সেই খালাই ফিলসফিতে পড়া নিয়ে মাকে হাবিজাবি শুনিয়েছিলেন, যার নিজের মেয়ে এবার ফিলসফিতে মাস্টার্স করতে দেশের বাইরে গেল। যে লোকটা আপনার কাছ থেকে টাকা পায়, সেই লোকটা কুশল বিনিময় করার জন্য মেসেঞ্জারে নক দিলে ভুল করেও অনুমান করবেন না যে, সে আপনাকে নক করেছে টাকার জন্য। হ্যাঁ, সে টাকার জন্যই নক করেছে। এটাই সত্য, এখানে অনুমান করার কিছু নেই। সত্য কখনও অনুমান করতে হয় না। যা সত্যও হতে পারে, আবার মিথ্যাও হতে পারে, কেবল তা-ই অনুমান করতে হয়। দেনাদারকে কেউ কুশল বিনিময় করার জন্য নক দেয় না, পাওনা টাকার জন্যই নক দেয়। ভাবনা: নয়শো পনেরো ……………………………………………………… এক। কে সম্মান করল, আর কে সম্মান করল না, এটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাই না। বেয়াদবের পেছনে সময় নষ্ট করার মতো অতটা বেকার সময় বের করা আমার পক্ষে কঠিন। শুধু এটুকুই বুঝি, যে আমাকে সম্মান করে না, আমিও তাকে সম্মান করি না, যদি নেহায়েত বাধ্য না হই। দুই। যাকে প্রশংসা (তোষামোদ নয়) করার মানুষ যত কম, অন্যকে খোঁচা মেরে বা ছোটো করে কথা বলার অভ্যাস তার তত বেশি। তিন। যে কাজটা করলে কোনও লাভ নেই, বরং করে ভুল হলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে, সে কাজটা করার কী দরকার? চার। হুট করে কেউ জিজ্ঞেস করলে তাকে নিজের ভেতরের কথা বলা যায় না। মানুষ দিনরাত একে অপরের সঙ্গে থাকার পরেও নিজের একান্ত কষ্টগুলো পাশের মানুষটার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না। সুখ শেয়ার করতে কিছুই লাগে না, কিন্তু কষ্ট শেয়ার করতে দুই আত্মার মধ্যে ন্যূনতম একটা যোগাযোগ লাগে। পাঁচ। সবকিছুকেই কখনও own করতে নেই। আমি করি না। এতে আমার দুটো লাভ হয়: সময় বাঁচে, দুঃখ কমে। ছয়। আপনি নির্বোধ, তাই এমন কারও কাছ থেকেও প্রত্যাশা করে বসে থাকেন, যে মানুষটা আপনার প্রতি পুরোপুরি প্রত্যাশাহীন। কিন্তু যে মানুষটা আপনাকে চেনেই না, তার কাছ থেকেও প্রত্যাশা রাখেন যখন, তখন আপনাকে আসলে কী বলা যায়? আমার ওয়ালে, ইনবক্সে, ফোনকলে এসে তোমরা যারা প্রত্যাশার ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকো, তাদের মতন কিউট বান্দা কেন এখনও নোবেল পায় না? সাত। মন খারাপ ছিল। রাতের বেলায় ঘুমোতে যাবার আগে অনেকগুলো গল্পের বই নিয়ে বসে ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কোনটা পড়ব। হঠাৎ চোখ পড়ল হুমায়ূন আহমেদের লেখা “পুতুল” বইটার দিকে। বাইরে থেকে মলাট দেখেই মনে হচ্ছিল, এটা সম্ভবত বাচ্চাদের বই। খুলেও দেখি তা-ই। ভাবলাম, এখন বাচ্চাদের বই পড়ে কী হবে? থাক, অন্য বইতে চলে যাই। পরক্ষণেই মনে হলো, আচ্ছা, পড়েই দেখি না একদিন বাচ্চাদের বই! বইয়ের কয়েকটা পৃষ্ঠা পড়ে “পুতুল” নামের বাচ্চাটার জন্য মায়া হচ্ছিল, সাথে এটাও মনে হচ্ছিল, এই বই পড়ে আমার, আর যা-ই হোক, মন ভালো হবে না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ওই বইটাই ধীরে ধীরে আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড়ো সত্যিটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। অন্তু, মরিয়ম আর পুতুল এই ছোট্ট তিনটি বাচ্চার চোখ দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন এ পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সত্যিটাকে, আর তা হচ্ছে “ক্ষুধা”। এক ক্ষুধা ছাড়া যে দুনিয়াতে আর কিছুই সত্যি না, এই বইটি পড়ে আমি আবারও তা-ই শিখলাম। আমাদের প্রধান চাহিদা আসলে ভাত-কাপড় নয়, শুধুই ভাত। কাপড় ছাড়া উলঙ্গ হয়েও একজন মানুষ বাঁচতে পারে, কিন্তু ভাত ছাড়া পারে না। এই ছোট্ট একটা বইকে আমি মনে রাখব। এই বই আমাকে চোখে চোখ রেখে দেখিয়ে দিয়েছে, আমি কত বড়ো অকৃতজ্ঞ! “এটা নাই, সেটা নাই!”-এর ভিড়ে আমি ভুলে যাই, আমার কত কিছুই তো আছে! ধন্যবাদ, হুমায়ূন আহমেদ। আমার জীবনকে, জীবনদর্শনকে আবারও সমৃদ্ধ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আট। তোমার অসীম স্মৃতিশক্তির প্রতি সম্মান রেখেই নারী দিবসে একটা অনুরোধ করছি: যা কখনও ঘটেইনি, তা-ও মনে রাখা বন্ধ করবে, প্লিজ? নয়। নারী দিবসে বিশ্বাসী নই আমি, কারণ আমি মানুষ। এবার বরং মানুষ দিবস আসুক, উদ্যাপন করব নারীতে-পুরুষে, মানে মানুষে-মানুষে মিলে। তবুও যদি একান্ত বাধ্য হয়ে নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানাতেই হয়, তবে প্রথমেই আমি তা জানাব নারীদেরকেই। চাপা গায়ের রং কিংবা ছোটো পদের চাকরি নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার আজই শেষ দিন। কে কারটা খায়! কে কারটা পরে! অন্য কারুর স্বামীর সাথে নিজের স্বামীর তুলনা কিংবা নিজের বান্ধবীর ক্যারিয়ারের সাথে নিজের ক্যারিয়ারের তুলনা করারও আজই শেষ দিন। 'আমার শাশুড়ি আমাকে অত্যাচার করেছে বিধায় আমিও আমার বউকে অত্যাচার করব'-র যুগটা আমাদের মা-শাশুড়িরাই তো ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেছে।তাদের কাছেই তো শিখেছি, কীভাবে এক নারী অন্য নারীর জন্য ছায়া হতে পারে। 'মেয়েমানুষ কি আর এমনি এমনি প্রমোশন পায়!'-এর মতন মুখস্থ বুলিকে যদিও আমরাই, মানে নারীরাই ফিল্ডে নামিয়েছিলাম...ভুলে আর কি...হা হা হা...এবার একেও বিদেয় করার সময় এসে গেছে। আমরা জেনে গেছি, নারীতে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে, পুরুষে-পুরুষে কোনও তুলনা হয় না। তুলনা হয় শুধুই মগজে-মগজে। দশ। আমি পুরুষদের সহ্য করি, নারীদের ভালোবাসি। এগারো। একটা ছেলে খুঁজছি, যে একেবারেই ভেঙে গেছে, ভালোবাসার উপর থেকে যার সমস্ত আস্থাই উঠে গেছে, যে ভালোবাসতে ভুলে গেছে অনেক দিন আগে। যার মনটা ভালো তো নিশ্চয়ই, কিন্তু সে নিজের খেয়াল রাখতেই ভুলে গেছে। যে খুউব রাগী, কথায় কথায় রাগ করে এবং বকাঝকাও করে প্রচুর। দেখতে সে যেমনই হোক, তার শুধু সুন্দর একটা মন থাকলেই চলবে। ভালোবাসা তার কাছে যদি বিলাসিতাও মনে হয়, তবুও অভিযোগ নেই আমার। খুব বেশি বকা দিতে জানে যে, কথায় কথায় শাস্তি দিতে জানে যে, যে বহুকাল আগে হাসতে ভুলে গেছে...এমন একটা ছেলে পেলে আমি আবারও ভালোবাসব। যারা ভালোবাসতে জানে, তাদের সমস্যা তো হবার কথা নয়। দেখা যাক কী হয়! ভালো যদি বাসি তো এইরকমই কাউকে বাসব। ভালোবেসে খুব করে নিঃস্ব হয়ে যাব, তারপর আবারও তাকেই ভালোবাসব। কাঁটা দিলে ফুল দেবো, আঘাত দিলে ভালোবাসা। ভুল বুঝলেও যাব না দূরে, সাথে থেকে মেটাব মনের সকল আশা। ভাবনা: নয়শো ষোলো ……………………………………………………… এক। সকালে উঠে মলত্যাগের বেগ এলে মানুষ যেমনি আগে ব্রাশ করে তারপর মলত্যাগ করে না, বরং মলত্যাগের পরেই ব্রাশটা করে, ঠিক তেমনি চোখের সামনে দুর্জন এবং সুজন থাকলে বুদ্ধিমান মানুষ দুর্জনের আগে সুজনের প্রশংসা করে না। এর কারণ, সে তো জানেই, সুজনের প্রশংসা না করলেও সুজন তার ক্ষতি করবে না, কিন্তু দুর্জনের প্রশংসা না করলে দুর্জন তার ক্ষতি করলেও করতে পারে। দুই। যার জন্য করবেন চুরি, সে-ই বলবে চোর, যদি সেই চুরি তার শান্তি নষ্ট করে। আপনি কেবল তখনই কারও শান্তি নষ্ট করে হলেও তার জন্য চুরি করেন, যখন সেই চুরি আপনার নিজেকে শান্তিতে রাখে। এমন চুরি লোকে নিজের মানসিক প্রশান্তির জন্যই করে, অন্য কারও জন্য নয়। তিন। জসীম উদ্দীনের 'কবর' পড়েননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই কবিতা তিনি কখন লিখেছিলেন, জানেন? যখন তিনি কলেজে (এইচএসসি ক্লাসে) পড়তেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় এই কবিতাটি প্রবেশিকার বাংলা পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়। যাঁরা লেখার সঙ্গে লেখকের জীবনের মিল খুঁজে মরেন, তাঁদের বলি, কলেজপড়ুয়া জসীম উদ্দীনের ছেলে-ছেলেবউ-নাতি এসেছিল কোথা থেকে? চার। সুবিধাবাদী নির্লজ্জ লোক নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতাবানদের জোর করে নিজের আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধব বানায়। শতকরা নিরানব্বই ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ওই লোককে তাঁরা চেনেনই না। পাঁচ। এ পৃথিবীতে এমন মা কি আছেন, নিজের জেদকে জিতিয়ে দিতে গিয়ে যদি নিজের সন্তানের মৃত্যুও হয়, খুব সম্ভবত, তাতেও তিনি খুশি থাকবেন? ছয়। আমি চাই, কোনও নোটিফিকেশন কিংবা রিমাইন্ডার ছাড়াই আমার জন্মদিনটা তার মনে থাকুক। ঘুম ভেঙে রোজ সকালে একটা গুডমর্নিং টেক্সট কিংবা রাতে ঘুমোতে যাবার আগে শুভরাত্রি জানাতে সে ভুলে না যাক। যে অবসাদের কথাগুলো সে কাউকেই বলে না কখনও, যে গোপন দুঃখের গল্প সে কাউকেই শোনায় না ভুল করেও, সেইসব ব্যথার কথা সে শুধু আমাকেই বলুক। বলুক তার যত অপ্রাপ্তির ঘোর, বিষণ্ণতার বেদনা। যে মানুষটিকে কেউ কখনও কাঁদতে দেখেনি, যে চোখের জল সে কাউকেই দেখায়নি আজ অবধি, আমার বুকে মাথা গুঁজে সে মানুষটিই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলুক পরম নির্ভরতায়। কাজলে-ঠাসা আমার দু-চোখ দেখেও সে বুঝে যাক, আজ আমার মন ভালো নেই। আমার খিলখিল হাসির শব্দ শুনেও সে জেনে যাক, গতরাতে খুউব করে কেঁদেছে এই মেয়েটি। আমি চাই, কেউ একজন অন্তত থাকুক, কোনও নোটিফিকেশন কিংবা রিমাইন্ডার ছাড়াই আমার জন্মদিনটা যার মনে থাকবে। এইটুকুও যার মনে থাকে না, সে আমায় ভালোবাসে হয়তো, কিন্তু ঠিক যত্নে রাখে না। ভালো তো বাসতে জানে অনেকেই, সেই ভালোবাসাকে যত্নে রাখতে জানে ক-জন! সাত। Saving someone's soul is much more important than loving them. If your way of loving someone hurts them, it's not love, it's just self-indulgence. The first and last magic-word for life is... Peace... peace... peace... আট। কাউকে প্রতিমুহূর্তে ভালোবাসা যদি অপরাধ হয়, তবে এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো অপরাধীটি আমিই… হ্যাঁ, সেজন্যই তো তোমায় ভুল করেও আমার জীবনে চাইনি, কারণ আমি তোমার জীবনে গেলে যদি তোমার অশান্তি হয়! কীভাবে কাটছে দিন? তুমিহীন প্রতিদিন! আচ্ছা, আপনি কি ভূত নাকি? সবসময় আমার উপর ভর করে থাকেন! আপনার জন্য সকাল সকাল একটা শুভ সংবাদ দিতে এলাম। যে আপনি আমি ছাড়া সবসময় ভালো থাকেন, আমিও সেই আপনি ছাড়া ভালোই থাকব। যে আপনি ভুলেও আমার প্রতি নরম হননি কোনোদিনই, সেই আমিই দীর্ঘ ছয় বছর ভুল মানুষকে ভালোবেসে অযথা কীসব বলে গেছি! ভালোবাসা ভুল হয় না, কখনোই না; ভুল হয় শুধু মানুষটা। জীবনে এক বারের জন্য হলেও আমার প্রতি কঠোর আচরণের জন্য আপনি পস্তাবেন, আমার আত্মা সেদিনই শান্তি পাবে। ভালোবাসেন না, এটা জেনেও ভালোবেসেছিলাম। আমাকে দেখতে পারেন না জেনেও আপনার জন্য ভালোই চেয়েছি। কী কী যে করেছি, সেটা আমার ঈশ্বরই জানেন। কেন বলি এতকিছু, গতকাল সারাদিন ভাবলাম। সত্যিই তো…কই আছি আমি! নেই কোথাও। আমি যদি মারাও যাই, তবু আপনি আমার প্রতি কঠোরই থাকবেন। জানেন? জীবনে এক বার যদি কাউকে তীব্রভাবে ভালোবেসে ফেলেন, তখন দেখবেন, দ্বিতীয় বার আর কাউকে ভালোই বাসতে পারছেন না। যেমন আপনি পারবেন না, তেমন আমিও পারি না। তার পরেও কিন্তু কেউ যদি তীব্রভাবে ভালোবাসে, তাকে আমরা ভালো না বাসলেও এত কঠোর হতে পারি না, কারণ বিশ্বের এত কোটি মানুষের ভেতর মানুষটা কেন আমাকেই ভালোবাসল, সেটাই আগে ভাবি। কেন লিখছি আপনাকে, জানি না। আমার জীবনের যদি কিছুদিন বাকি থাকে, তবে সেই কিছুদিন আমি ঈশ্বরের কাছে চেয়ে আপনার সঙ্গেই কাটাতে চাইব। আমার মনে হয়, আমি দীর্ঘদিন আপনার সঙ্গে কাটিয়েছি। এখন আর নয়। আপনি জিতে গেছেন। অভিনন্দন আপনাকে। আমি হেরে গেছি। খুব খারাপভাবে হেরে গেছি। যদি কখনও মনে হয়, সত্যিই আপনি কঠোর ছিলেন আমার প্রতি, তবে সেদিন যোগাযোগ করতে আসবেন যদি ইচ্ছে হয়। আপনাকে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখিনিও এইসব কারণে: আপনি আমাকে দেখতে পারেন না, কিছু দিলেও নিতে চান না; সবকিছু মিলিয়ে, আপনি আমাকে সহ্যই করতে পারেন না। কিন্তু আপনি যতটা খারাপ ভাবেন আমাকে, ততটা খারাপ শিক্ষা আমার পরিবার আমাকে দেয়নি। আপনার ধারণাও নেই হয়তো আমার পরিবার ও পরিবারের মেয়েদের নিয়ে। আপনাকে ভালোবেসে আমি অনেক ছোটো হয়ে গেছি আপনার দৃষ্টিতে। যা-ই হোক, এটা আমার শেষ চিঠি। যদি কাউকে চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে অন্য কাউকে লিখব, তবে যদি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে অন্য কাউকে ভালো তো বাসতে আর পারব না। আমার ভালোবাসা এত সস্তা না যে দু-দিন পর পর নতুন কাউকে বাসব! তবে আপনাকে আর ভালোবাসতে আসব না। শিওর থাকতে পারেন। যদি আমি নক না দিলে আপনি আমায় ছাড়া থাকতে পারেন, আমিও পারব। এই মাঝদুপুরে চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আর আমি লিখছি। আসি… ভাবনা: নয়শো সতেরো ……………………………………………………… এক। ওরা সবাই মিলে আমার খুব কাছে চলে এল। তাকিয়ে দেখি, ওদের সবার চেহারাই দুঃখের মতো। এই দুঃখের সঙ্গে যে আত্মীয়তা, আমি সেটিকে চিনি। বড়ো অদ্ভুত এ আত্মীয়তা! এ বন্ধন সহজে যায় না ছিঁড়ে। আত্মার খুব কাছে থেকে যায় সমস্ত দুঃখ! দুই। আমাদের জীবনটা ভুলে ভর্তি। তবু আমাদের মনে থাকে না তার কিছুই, যা আমাদের দুর্ভাগ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছিল একসময়। আমরা বার বার ভুলের দিকেই ছুটি। তিন। কিছু মানুষ কখনও সুন্দরের পূজা করতে পারে না, ভালোকে ভালো বলতে জানে না। তাদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে হয়। তাদের বোধশক্তি বরাবরই বড্ড দুর্বল। হয়তোবা তারা কখনও তেমন কোনও দুঃখের সাগরে ডোবেনি, যেখান থেকে কোনোরকমেও ভেসে উঠতে পেরেছে যারা, তারা জানে, সুন্দরকে সুন্দর না বললে সুন্দর কতটা অভিমান করে বসে! চার। যখনই কেউ চোখ বন্ধ করে, তখনই সে তার সবচাইতে প্রিয় কিছুকেই দেখতে পায়। তোমার স্মৃতিগুলি কখনও একটি মুহূর্তের জন্যও আমাকে ছেড়ে চলে যায় না। তোমার কথা মনে এলেই চোখদুটো কীরকম জানি ভিজে ওঠে। তোমার নৈকট্যের কথা ভাবলেই নিজের চারিদিকে একধরনের সুগন্ধ টের পাই। এ-ও কি তবে বিভ্রম? পাঁচ। একটা সময় পর মানুষ আর ভালোবাসেই না কাউকে আসলে, কেবল ভালোবাসা পেতেই চায়, অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। বয়স বাড়লে ভালোবাসা কমে, লোভ বাড়ে; স্নেহের লোভ, মায়ার লোভ, ভালোবাসার লোভ। ভালোবাসতে পারার চাইতে ভালোবাসা পাবার লোভটাই দিন দিন প্রখর হয়। ছয়। যার কাঁধে ভর দিয়ে সাবলীলভাবে হাঁটা যায়, কেবল তাকেই যেমন বন্ধু ভাবা যায়, ঠিক তেমনি একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, তার চোখে, আপনার জন্য বন্ধুর যে সম্মানটা থাকার কথা বা বোঝার মনমানসিকতা রাখা দরকার, সেটা আছে কি না। এর কারণ, বন্ধুর কাছ থেকে আঘাত বা প্রতারণা পাবার চাইতে কষ্টের মনে হয় আর কিছু নেই। ভালোবাসার মানুষটা ছেড়ে চলে গেলেও এত কষ্ট হয় না, যতটা কষ্ট বন্ধু চলে গেলে হয়। বন্ধু তো সে-ই, যে খোঁজ না নিলেও এসে বলবে, খোঁজ নিতে পারিস না, ব্যাপার না! এটা মেনে নিয়েই তো তোকে বন্ধু ভাবি! বন্ধু তো সে-ই, যে আপনার সামনে দোষ ধরলেও পেছনে আপনার সুনাম করে, এবং লোকে নিন্দা করলেও আপনাকে ছেড়ে যায় না। যে লোকটা সবার সামনে আপনার দোষ বের করে, সে কখনও বন্ধু না। বন্ধু সে-ই, যে সবার সামনে আপনার গুণ তুলে ধরে। যে আপনার রাগের সময় চুপ থাকে, কথার পালটা জবাব দেয় না জেতার জন্য, সে-ই তো বন্ধু। হুট করে বন্ধু বানানোর চাইতে বরং নিজের সঙ্গে নিজে একা থেকে যাওয়া অনেক ভালো। সাত। তুমি আমার জন্য অনেক বাহানা তুলে রাখো, আমি সেটা ধরতে পেরেছি। এই যেমন আমি বিজি, সময় পাচ্ছি না, একটু অসুস্থ বলে দেখা হবে না ব্লা ব্লা ব্লা... আমি তোমার সঙ্গে তর্কে জড়াই না। আমি অপেক্ষায় আছি, তোমার বাহানা-ঘেরা এই দেয়াল কবে তুমি ভাঙবে, তার জন্য! তুমি জানো, আমি জোর করে কোনও কিছু করা পছন্দ করি না, এর মানে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না, তেমনটা না। আমি চাই, তুমিই বলো, আজ হাতে সময় আছে ২০ মিনিট; আমি চাই, তুমি অফিস শেষ করে একদিন হুট করে এসে বলো, চা বানাও তো খুব কড়া লিকারের! আমি চাই, অসুস্থ হলে তুমি নিজ থেকেই জানাও তোমার কী কী খেতে মন চাইছে। তোমার আর কী কী লাগবে, মাথা ব্যথা করলে যেন খুব সহজেই বলে ফেলো আমাকে, 'মাথায় একটু ম্যাসাজ করে দেবে?' আমি চাই, তুমি আমার মতো করে না, ঠিক তোমার মতো করেই আমাকে সময়টা দাও। জানি, এই সমস্ত চাওয়া তোমার কাছে গলার কাঁটা মনে হবে, কিন্তু এ-ও মাথায় রেখো, কখনোই এমন কিছু আবদার করে বসব না, যে আবদার মেটাতে গিয়ে তোমার নিজের মনকে কষ্ট দিতে হয়। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি, তাই কষ্ট দিই না। ভালোটা বাসি আমার মতো করে, কিন্তু মাথায় রেখে দিই, আমার আগে যেন সবটা তোমার ইচ্ছে মতোই হয়। পাগলই খাঁটি, জেনো! সুস্থরা তো সবাই নিজেকে আর স্বার্থ নিয়ে চলে! আমার মতন এমন পাগল আর কোথায় পাবে আমি মরলে পরে? আট। কেউ আমাকে বিরক্ত করলে আমি কখনোই তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলি না, বরং তাকে এড়িয়ে চলি কিংবা চরম দুর্ব্যবহার করি। বিরক্তিকর লোকজনকে জীবনে রাখার কিছু নেই। সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করা এই পৃথিবীর সবচাইতে বিশ্রী কাজ। আমি যেহেতু জীবনে কোনোদিনই ইলেকশনে দাঁড়াব না, সেহেতু সবার সাথেই মধুর আচরণ করার কোনও দরকার আমার নেই। নয়। মেয়েরা প্রতারণাকে ভালোবাসা ভাবে, আর ভালোবাসাকে প্রতারণা ভাবে। এ কারণেই মেয়েদের কাছে প্রতারকদের আদর-কদর সবসময়ই বেশি। মিষ্টিকথা ও হাসিমুখ দেখলে গলে যায় না, এমন মেয়ে আপনি খুঁজে পাবেন না। যে মেয়েটা বলে, এমন মেয়েদের ভিড়ে (একমাত্র) সে-ই ব্যতিক্রম, তাকেও তার ওই কথা নিয়েই সঠিকভাবে তেল মেরে দেখুন, সে পটে-মটে ছারখার হয়ে যাবে! সত্য কথাটা সরাসরি বললে মেয়েরা তা নিতে পারে না, খুবই হৃদয়গ্রাহী পথে মিথ্যাটাকে উপস্থাপন করলে মেয়েরা তা গভীরভাবে বিশ্বাস করে বসে থাকে। কটু সত্যের চাইতে ওদের কাছে মধুর মিথ্যার গ্রহণযোগ্যতা অনেক অনেক বেশি। এ জগতের শয়তানগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। দেখবেন, ওদের সবারই হাসিমুখ, মুখের ভাষাও মধুর মতো মিষ্টি। আর ব্যবহার? তা তো এতই চমৎকার যে, মনে হয়, মানুষটা আমার আপন ভাইয়ের চাইতেও আপন! উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেলে ওদেরই ভিন্ন রূপ দেখবেন। আর যারা ওরকম নয়, তাদের তেমন কেউই দাম দেয় না। স্পষ্টভাষীদের মূল্য কম বলেই এইদেশ ভণ্ডদের উর্বর আবাদভূমি। দশ। ক্ষমতাধরদের সামনে আন্তরিকতার অভিনয় করে যেতে হওয়া...কী যে অস্বস্তিকর! এগারো। To help is to suffer. বারো। কীভাবে বুঝবেন, আপনি একজন মাদারফাকার? খুব সহজ। আপনি নিজে যে আকামটা করেছেন বা করেন কিংবা যে আকামটা করার স্বপ্ন দেখেন, সেই আকামটাই অন্য কেউ করলে যদি আপনি তার সমালোচনা করেন, তবে আপনি একজন বিশিষ্ট মাদারফাকার। তেরো। ধৈর্যশীল হওয়া এবং নির্লজ্জ হওয়া এক জিনিস নয়; এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে, ভাই! বুঝতে শিখুন। চৌদ্দ। Better to walk alone than to walk with an irresponsible person. পনেরো। খুব করে চাইলেও যে কাউকেই বন্ধু বানিয়ে ফেলা যায় না। খুব করে চাইলেও যে কারুর কাঁধে হাত রেখে হাঁটা যায় না। ভীষণ পছন্দ করি, শ্রদ্ধা করি, এমন কাউকে বন্ধু বানিয়ে ফেলা যায় না, যদি না তার কাঁধে হাত রেখে সাবলীলভাবে হাঁটা যায়। মানুষকে ভালোবাসা সহজ, কিন্তু বন্ধু বানিয়ে ফেলা খুব কঠিন। ষোলো। অসুবিধে নেই, আমি আমার ইচ্ছেগুলিকে হারিয়ে দিতে জানি, এক ফুঁয়ে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে জানি। সতেরো। ভাব নিতে বেশি কিছু লাগে না, কেবল নিজের সম্পর্কে ভুল ধারণা থাকলেই চলে।