ব্রহ্মরন্ধ্রের বোধপত্র



স্বেচ্ছাদহনের আকুলতায় দগ্ধ প্রণয়ের রেশে, আলো-আঁধারির এই অসামান্য কল্পনার সমাপ্তি ঘটে না কোনো বিগ্রহে বা তীর্থস্থানে—এর আশ্রয় শুধুই নিজ অন্তরাত্মার নিগূঢ় স্তরে।

কী নির্বোধ এই মানবকুল!
ত্রিজগতের সম্যক রহস্যের পুনর্জাগরণ অধিষ্ঠিত কেবল নিজের আত্মবোধে,
যার শক্তির চতুষ্পার্শ্ব সীমার অকল্পনীয় সম্ভ্রম থেকে জন্ম নেয় প্রলয়,
আলোর পরিস্ফুট প্রজ্জ্বলনায় যা ছুঁয়ে যায় সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে।

গভীর প্রণতিতে যে-সত্যকে খুঁজে ফেরে বিশ্বলোক,
তারই অধিবাস রয়েছে নিজের চিত্তের গভীরে।
তার সন্ধান মিলবে তখনই,
যখন আত্মজাগরণের জন্য প্রগাঢ় মনোনিবেশে নিজ চেতনা সম্পূর্ণরূপে জেগে উঠবে।
যার সর্বান্তঃকরণে আত্মদর্শন একীভূত,
সে-ই তার প্রকৃত স্বরূপে অধিষ্ঠিত।

: আশ্চর্য এই শক্তিময় রূপকের উৎসের অন্তর্নিহিত শুদ্ধতা কি তবে কেবল আমার অন্তরেই নিরুদ্ধ?
: নিঃসন্দেহে।

এই অহংবোধ তবে কার তরে?
তৎ-শুদ্ধতম চিত্তের অন্বেষণেও এই বিশ্বলোকে মিলবে না যার সিকিভাগ, যা সিদ্ধিলাভের অন্ত্যেও অপ্রাপ্ত।
তবে কি এই হৃদয়, প্রকৃত জ্ঞানের দারস্থ হবার আকাঙ্ক্ষায়ই উৎসর্গিত?

আত্মবিরোধপূর্ণ অনুভূতির কোনো স্থান নেই
এই অত্যাশ্চর্য সূক্ষ্ম হৃদয়-জাগরণের পথে।
নিজ আত্মার সন্ধানই অদ্বিতীয় পথ,
যার একাগ্রচিত্ত সাধনায় নিজ হৃদয়েই নিহিত রয়েছে বিশ্বস্রষ্টার অনিঃশেষ শক্তির বিস্ময়কর উপলব্ধি।

তবে কীভাবে, এই শ্রেষ্ঠত্বের বিভ্রমে, সংঘাত ও বিভাজন আয়ত্ত করেছে উন্মত্ত মানবজাতিকে?
যদি এই অনিত্য ইহজীবনে আত্মশুদ্ধির দর্শনই দৃষ্টিগোচর হয়,
তবে সৃষ্টির ক্ষণস্থায়ী ইন্দ্রজালে আত্মা কীভাবে বন্ধন গ্রহনে প্রস্তুত?

সত্যতা, সশ্রদ্ধ বাধ্যতা, আত্মোৎসর্গ, অনুরক্তি—
এই সমস্ত অনুভবের মহাপ্লাবনে,
অধিকৃত সত্তা নির্ঘাতভাবে দর্শন লাভ করে সেই অস্তিমান নিরবচ্ছিন্ন শক্তির,
যার অভিজ্ঞানেই শান্তির অভিষ্যন্দ প্রবাহিত হয়।
Content Protection by DMCA.com