বেদ ও ব্রহ্ম: পাঁচ




ভ্রান্ত জ্ঞান (Erroneous cognition) হচ্ছে ভুল ধারণা বা মিথ্যা উপলব্ধি—যেমন: দড়িকে সাপ দেখা। সংস্কার (Impressions): কোনো অভিজ্ঞতা (যদিও ভ্রান্ত) মনের গভীরে একটা ছাপ রেখে যায়—সেই ছাপ আবার ভবিষ্যতে একই ধরনের ভ্রান্তি তৈরি করতে পারে; যেমন: একবার অন্ধকারে দড়িকে সাপ মনে হলে, পরেও অন্ধকারে জড়ানো কিছু দেখলে সহজেই ভয় হবে। এক্ষেত্রে কারণ–কার্য সম্পর্ক এরূপ: ভ্রান্ত জ্ঞান নতুন সংস্কার (impression) তৈরি করে। সেই সংস্কার আবার ভবিষ্যতে নতুন ভ্রান্ত জ্ঞান জন্মায়। ফলে তারা পরস্পরের মাধ্যমে চক্রাকারে কারণ-কার্য সম্পর্ক বজায় রাখে। এখানে “কোনো দোষ নেই”, কারণ কেউ বলতে পারে—“ভ্রান্তির কারণ কী?” যার উত্তর হলো: ভ্রান্তি আর সংস্কার একে অপরের কারণ ও কার্য হিসেবে কাজ করে। তাই আলাদা করে বাইরের কোনো কারণ খুঁজতে হবে না। এতে যুক্তির কোনো ত্রুটি বা “দোষ” থাকে না।

উদাহরণস্বরূপ, প্রথমবার অন্ধকারে ভুল করে দড়িকে সাপ ভাবলেন → এটাই ভ্রান্ত জ্ঞান। এতে মনে ভয় আর ছাপ রয়ে গেল → এটাই সংস্কার। পরে আবার একইরকম কিছু দেখলে পুরনো সংস্কার ভ্রান্তি তৈরি করবে → আবার ভ্রান্ত জ্ঞান হবে। এভাবে ভ্রান্ত জ্ঞান ↔ সংস্কার একটি চক্রে কারণ-কার্য হিসেবে কাজ করে। ভ্রান্তি ও তার ছাপ (সংস্কার) আলাদা কোনো বাইরের কারণ ছাড়াই একে অপরের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়। যেহেতু ভ্রান্ত জ্ঞান ও তার সংস্কারসমূহ কারণ-কার্য সম্পর্ক দ্বারা পরস্পরের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়, তাই যুক্তিগতভাবে এতে কোনো দোষ নেই। সুতরাং, যেহেতু ভ্রান্ত জ্ঞানের অপসারণ জ্ঞানের দ্বারা সম্পাদনীয়, তাই এর (জ্ঞান) জন্য সহায়ক উপকরণের প্রয়োজন।

অদ্বৈত বেদান্তে অজ্ঞতার দুই রূপ—যেগুলো সবসময় একসাথে কাজ করে: অপ্রত্যক্ষতা ও অন্যথা প্রত্যক্ষতা।

১. অপ্রত্যক্ষতা—Non-apprehension বা না জানা—সত্যকে না জানা। এটি মূলত একটি অভাব (absence) অবস্থা—জ্ঞান নেই, তাই কিছুই পরিষ্কার নয়। উদাহরণ: অন্ধকার ঘরে একটা দড়ি আছে। আপনি সেটাকে দেখলেন, কিন্তু চিনতে পারলেন না। এটা হলো “না জানা”—আপনি জানেন না যে, এটি দড়ি। এটি নিজে থেকে ভ্রান্তি তৈরি করে না, কিন্তু ভ্রান্তি জন্মানোর জন্য মঞ্চ তৈরি করে।

২. অন্যথা প্রত্যক্ষতা—Misapprehension বা ভুল জানা—যা নয়, তাকে তা-ই ভেবে নেওয়া। এটি অজ্ঞতার ইতিবাচক দিক—যা ভুল ধারণা সৃষ্টি করে। উদাহরণ: একই দড়িকে অন্ধকারে আপনি “সাপ” ভেবে ফেললেন। এখন কেবল “না জানা” নেই, বরং “ভুল জানা” যোগ হলো। এটি ভয়, আসক্তি, আনন্দ, দুঃখ—সব ভ্রান্ত প্রতিক্রিয়া এর থেকেই আসে।

এ দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক কী? অপ্রত্যক্ষতা = ভিত্তি (ground)। অন্যথা প্রত্যক্ষতা = ফল (superimposition)। প্রথমে না জানা→ তারপর ভুল জানা। একে অদ্বৈত শাস্ত্রে বলা হয়: “অধিষ্ঠান” = দড়ি (সত্য); “আবরণ” = অপ্রত্যক্ষতা (না জানা); “অধ্যাস” = অন্যথা প্রত্যক্ষতা (ভুল জানা = সাপ ভাবা)। আধ্যাত্মিক স্তরে—অপ্রত্যক্ষতা = আত্মাকে না চেনা। অন্যথা প্রত্যক্ষতা = শরীর–মন–ইন্দ্রিয়কে “আমি” ভেবে নেওয়া। এর ফলেই জন্মায় বন্ধন, কামনা, ভয়, দুঃখ। না জানা (অপ্রত্যক্ষতা) একা ভ্রান্তি তৈরি করে না। ভ্রান্তি তৈরি হয়, যখন না জানার ওপর ভুল জানা (অন্যথা প্রত্যক্ষতা) চাপানো হয়।

আমরা অনেকসময় ভ্রান্ত জ্ঞান পাই, যেমন—অন্ধকারে শঙ্খকে রূপা মনে করা। পরে যখন আলোতে দেখি, বা ঠিকভাবে চিনি, তখন শুদ্ধ জ্ঞান জন্ম নেয়—“এটা রূপা নয়, শঙ্খ”। এই শুদ্ধ জ্ঞান (সঠিক উপলব্ধি) আলাদা করে গিয়ে ভ্রান্তিকে “ধ্বংস করার চেষ্টা” করে না। এটাকে সাহায্য করার জন্য কোনো সহায়ক উপাদানও লাগে না। বরং, নতুন জ্ঞান আসা মাত্রই ভ্রান্ত জ্ঞান দূর হয়ে যায়।

শুদ্ধ জ্ঞান একধরনের ইতিবাচক সত্তা (positive entity)—এটি আসল সত্যকে প্রকাশ করে। ভ্রান্ত জ্ঞানও (যেমন “এটা রূপা”) একধরনের ইতিবাচক ধারণা। নতুন জ্ঞান (শঙ্খ) জন্ম নিলেই আগের ভ্রান্তি (রূপা ভেবে নেওয়া) মুছে যায়। “ধ্বংস কোনো শূন্যতা নয়” মানে, ভ্রান্তি দূর হওয়া মানে এই নয় যে, “শূন্য” কিছু হলো। এর কারণ হলো—সঠিক জ্ঞানের উদয়। যদি কোনো কারণ না থাকত, তবে ভ্রান্তি দূর হওয়ার ঘটনাটাই ব্যাখ্যা করা যেত না। ভ্রান্তি আলাদা করে মুছতে হয় না। শুদ্ধ জ্ঞান জন্মালেই ভ্রান্তি নিজে থেকেই মুছে যায়। যেমন, আলো এলে অন্ধকার থাকে না। তাই বলা হয়: জ্ঞানই ভ্রান্তির বিপরীত। অর্থাৎ, যখন সত্যকে সঠিকভাবে জানা যায়, তখন ভুল ধারণা আর টেকে না—এটাই মূল শিক্ষা।

বলা হলো, যজ্ঞই বন্ধনের কারণ; জ্ঞানের দ্বারা এবং কোনো সহায়ক উপাদানের সাহায্যে, যজ্ঞ-জনিত বন্ধন ধ্বংস হয়। এই দাবিটিও ভুল। যতক্ষণ অজ্ঞতা আছে, ততক্ষণ কর্ম-ফল-কর্তা-করণ ইত্যাদি ভেদের সঙ্গে সংসার-অভিজ্ঞতা চলতেই থাকে। কিন্তু যখন বিশুদ্ধ জ্ঞান (যা সমস্ত বহুত্ব থেকে মুক্ত) উদিত হয়, তখন এই কর্ম-ফল-যজ্ঞ ইত্যাদি ভেদ-নির্ভর কার্যকলাপ কীভাবে সম্ভব? অর্থাৎ অদ্বৈত-জ্ঞান উঠলে দ্বৈত ভেদের লেনদেন আর টেকে না।

কিন্তু কেন যজ্ঞকে ‘ভুল-বোধ’/‘সন্দেহ’-এর সমতুল্য ধরা হলো? শ্রুতি বলছে—যজ্ঞও ভ্রান্ত জ্ঞান ও সন্দেহ-এর সমগোত্রীয়/সমতুল্য: “যখন আত্মা দেখা যায়, উচ্চ ও নীচ, তখন হৃদয়ের গিঁট ছিন্ন হয়, সমস্ত সন্দেহ দূর হয়, এবং তাঁর কর্মসমূহ শেষ হয়ে যায়” (মুণ্ডক উপনিষদ, ২।২।৮)। এর ব্যাখ্যা: আত্ম-সাক্ষাৎ হলেই হৃদয়ের গিঁট (বন্ধন) কেটে যায়, সন্দেহ সরে যায়, কর্মসমূহ (যজ্ঞ-সহ) সমাপ্ত হয়। ফলে সহায়ক উপাদান ধরে যজ্ঞকে টেনে জ্ঞানের সঙ্গে জোড়া লাগানোর প্রয়োজন পড়ে না।

যজ্ঞ বন্ধনের কারণ—জ্ঞান তাকে সহায়ক হিসেবে নিয়ে অজ্ঞতা বা অবিদ্যা ধ্বংস করে—এই কাঠামো টেকে না। কারণ অদ্বৈত-বোধ উঠলে দ্বৈত ভেদ-নির্ভর সব কর্ম-কার্য (যজ্ঞ-ফল ইত্যাদি) নিজে থেকেই লুপ্ত হয়। তাই যজ্ঞ এখানে ভ্রান্ত-বোধ/সন্দেহের মতোই—আত্ম-দর্শনে এসবের অবসান হয়।

বলা হয়, জ্ঞানের শুদ্ধতার জন্য অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে; অর্থাৎ, জ্ঞানকে বিশুদ্ধ ও স্থির করতে সহায়ক উপাদান দরকার। কিন্তু এই যুক্তি অকার্যকর। কেন? কারণ, সন্দেহ এবং ভ্রান্ত জ্ঞান হলো জ্ঞানের অপবিত্রতা, কিন্তু যে-জ্ঞান সঠিক জ্ঞানপ্রমাণ (যেমন উপনিষদীয় শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন) থেকে উদিত হয়, সেখানে সন্দেহ বা ভ্রান্তি একেবারেই সম্ভব নয়।

আবার বলা যেতে পারে, আসল কাম্য হলো প্রত্যক্ষ জ্ঞান। এই জ্ঞান শব্দজ্ঞান (শাস্ত্রের জ্ঞান) থেকে ভিন্ন। কেননা, শব্দজ্ঞান এখনও বহুত্ববোধ/ভেদবুদ্ধিকে ধরে রাখে, কিন্তু প্রত্যক্ষ জ্ঞান জন্ম নিলে সব ভেদবুদ্ধি ধ্বংস হয়, আর সেটিই অদ্বৈত-বোধ। এই প্রত্যক্ষ জ্ঞান দিয়েই ব্রহ্ম উপলব্ধ হতে পারে। শব্দার্থের পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে যে-শব্দজ্ঞান জন্মায়, তা দিয়ে ব্রহ্ম উপলব্ধ নয়। তাই এই প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উৎপত্তির জন্য যজ্ঞ, ধ্যান ইত্যাদির প্রয়োজন আছে বলে বলা হয়। সঠিক প্রমাণ থেকে উদিত জ্ঞানকে আর কোনো সহায়ক দিয়ে “শুদ্ধ” করার দরকার নেই, কিন্তু প্রত্যক্ষ ব্রহ্মজ্ঞান, যা সব ভেদ দূর করে দেয়, তা অর্জনের জন্য অনেকেই যজ্ঞ, ধ্যান ইত্যাদিকে প্রস্তুতিমূলক উপায় বলে মনে করেন।

আগের যুক্তি যে, ‘প্রত্যক্ষ জ্ঞান’ তথা ‘বিশেষ জ্ঞান’, শব্দজ্ঞানের থেকে আলাদা, তাই কাম্য—এটিও সঠিক নয়। এই জ্ঞানের বিশেষত্ব কী, যার জন্য এটি কাম্য বলে ধরা হচ্ছে? যদি কেউ বলে, শব্দজ্ঞান (শাস্ত্র থেকে পাওয়া জ্ঞান) যথেষ্ট নয়, তার বাইরে আরেক ধরনের জ্ঞান কাম্য, তাহলে প্রশ্ন ওঠে: সেই বাড়তি জ্ঞানের বিশেষত্ব কী? যদি বলা হয়, এর স্বচ্ছতার কারণে এটি কাম্য, তবে এর কোনো উপকারিতা নেই। কেউ যদি বলে—“না, ওই জ্ঞান বিশেষ, কারণ এটি বেশি পরিষ্কার/স্বচ্ছ।” তাহলে তার উত্তর: জ্ঞানের কাজ “পরিষ্কার বা অস্বচ্ছ হওয়া” নয়; কাজ হলো বস্তু সম্পর্কে জানা। জ্ঞান তো কেবল বস্তুকে জানার জন্যই প্রয়োজন। জ্ঞানের উদ্দেশ্য = বস্তুর জ্ঞান দেওয়া। অতিরিক্ত স্বচ্ছতা কোনো আলাদা উদ্দেশ্য পূরণ করে না।

যখন শব্দজ্ঞান (verbal cognition) জন্ম নেয়, তখন বস্তু জানা হয়ে যায়। শাস্ত্র থেকে শব্দজ্ঞান (যেমন—“তত্ত্বমসि”) আসা মাত্রই আত্মা-ব্রহ্ম জানা হয়ে যায়। তখন আর আলাদা কোনো “স্বচ্ছতর জ্ঞান” খুঁজতে যাবার প্রয়োজন নেই। জ্ঞানের কাজ হলো সত্যকে প্রকাশ করা। শব্দপ্রমাণ থেকে পাওয়া জ্ঞান সত্যকে জানিয়ে দেয়। তাই “আরও পরিষ্কার” জ্ঞান খোঁজা অবান্তর; কারণ সত্য তো একবার জানা হয়ে গেলেই যথেষ্ট।

যদি বলা হয়, জ্ঞান শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ জ্ঞান (direct perception)-এ নিয়ে যায়। সেই প্রত্যক্ষ জ্ঞানে পৌঁছে গেলে জ্ঞাতার সব প্রত্যাশার অবসান ঘটে, তাই এই জ্ঞান কাম্য; তবে প্রশ্ন ওঠে: যদি বস্তু ইতিমধ্যেই জানা হয়ে যায়, তাহলে আর কী প্রয়োজন? আবার নতুন জ্ঞান কেন দরকার? অন্য কোনো জ্ঞানপ্রমাণের (means of knowledge) প্রয়োজন কীসের? কারণ জ্ঞানপ্রমাণের কাজই কেবল বস্তু সম্পর্কে জানা—বস্তু (বা সত্য) একবার জানার পর আবার জানাতে জ্ঞানপ্রমাণের দরকার নেই। যদি কেউ বলে, নতুন জ্ঞানপ্রমাণ দরকার বস্তুটিকে আবার জানার জন্য, তাহলে বলতে হয়: আগের প্রমাণ দিয়েই বহুবার বস্তু জানা সম্ভব, নতুন প্রমাণ খোঁজার কোনো কারণ নেই। স্বাভাবিকভাবেই, ইতিমধ্যেই জানা কোনো বস্তু নিয়ে আবার জানার কোনো কারণ নেই, একবার যথাযথভাবে জানলেই জ্ঞাতার প্রত্যাশা শেষ।

কেউ যদি বলে, একই বস্তুকে জানার জন্য অন্য কোনো জ্ঞানপ্রমাণ (means of knowledge) ব্যবহার করা যায়, তাহলে উত্তর হবে: হ্যাঁ, সেই অন্য জ্ঞানপ্রমাণকে আলাদা করে কাম্য বলা যেতে পারে, কিন্তু যেহেতু বস্তু আগেই জানা হয়ে গেছে, তাই জ্ঞাতার আর কোনো নতুন প্রত্যাশা থাকে না। কেউ আবার বলতে পারে—না, আবার জানার কারণ হলো: বিশেষ এক ধরনের আনন্দ বা অসাধারণ সন্তুষ্টি (exceptional satisfaction) লাভ করা, তার উত্তর হলো: আগের জ্ঞানপ্রমাণ দিয়েই একবার সেই সন্তুষ্টি পাওয়া গিয়েছে, আবার একই জ্ঞানপ্রমাণ দিয়ে জানলে, আবারও সেই সন্তুষ্টি পাওয়া যায়, তাই নতুন কোনো জ্ঞানপ্রমাণ আনার প্রয়োজন নেই।

উদাহরণ দিয়ে বলছি। ধরুন, আপনি আম চেখে দেখলেন → প্রথম কামড়েই আপনি জানলেন, “এটা মিষ্টি আম”। এতে আপনি সন্তুষ্টও হলেন। আবার আরেক কামড় খেলেও একই সন্তুষ্টি মিলবে, নতুন কোনো আলাদা প্রমাণ খোঁজার দরকার নেই। নতুন করে “আম মিষ্টি” জানার জন্য আর আলাদা প্রমাণ লাগে না, কারণ একবার জানাই যথেষ্ট। কোনো বস্তু একবার সঠিকভাবে জেনে গেলে নতুন প্রমাণ (means of knowledge) দিয়ে জানার আর প্রয়োজন নেই। আনন্দ বা সন্তুষ্টি আবার চাইলে, আগের একই জ্ঞানপ্রমাণ দিয়েই সেটা পাওয়া সম্ভব, তাই নতুন জ্ঞানপ্রমাণ খোঁজা অপ্রয়োজনীয়। যদিও একটি বস্তু প্রত্যক্ষ দ্বারা জানা হয়ে গেছে, তবুও অন্য জ্ঞানপ্রমাণ (যেমন অনুমান) দিয়েও তাকে জানা যায়। কারণ সেখানেও সেই অসাধারণ সন্তুষ্টি ঘটে, আর এই বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো ভেদ নেই। তারাও জ্ঞানপ্রমাণ হিসেবে বস্তুর স্বরূপ নির্ধারণ করে।

বলা যেতে পারে—প্রত্যক্ষ জ্ঞান সবসময় নিকটবর্তী কোনো বস্তুকে জানায়। সেই বস্তুতে বিশেষ বিশেষ ধর্ম থাকে—যেমন বর্জনযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, আকার, রং ইত্যাদি। অন্যদিকে, অন্য জ্ঞানপ্রমাণ (যেমন অনুমান বা শব্দপ্রমাণ) সরাসরি নিকটবর্তী বস্তুকে এমন বিশেষ ধর্ম-সহ জানায় না। এর উত্তর হলো—এক্ষেত্রে আমরা শুধু প্রত্যক্ষ জ্ঞানের নিকটতার কারণ খুঁজতে পারি, কিন্তু অন্য কোনো জ্ঞানপ্রমাণ খুঁজতে হবে না। কারণ, বস্তু সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান তো আগেই পাওয়া গেছে, নতুন প্রমাণের প্রয়োজন নেই।