বেদে যে-কর্মকাণ্ড বিধৃত হয়েছে, যেগুলির ফল কোনো নির্দিষ্ট সময়ে দৃশ্যমান নয়, সেগুলির ফল অদৃশ্য (imperceptible); কিন্তু কামনা প্রভৃতি দ্বারা উদ্দীপ্ত স্বাভাবিক ক্রিয়াগুলি দৃশ্যমান ফল দেয়। সুতরাং, “সংগ্রহণী” নামে যজ্ঞ করা আর সেবা করা— উভয়ই যদি কোনো গ্রামের প্রাপ্তির উপায় হয়, তবে এর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। শাস্ত্রের কার্যকারিতা কেবল এখানেই সীমিত যে, এটি লক্ষ্যপ্রাপ্তির উপায় হিসেবে নির্দেশ দেয়। উল্লেখ্য, ‘সংগ্রহণী’ হলো বৈদিক যজ্ঞ, যা বিশেষত অগ্নিহোত্রর পরবর্তী আচারগুলির মধ্যে গণ্য হয়। এটি শ্রৌতযজ্ঞ অর্থাৎ বেদবিধান-সংগত যজ্ঞ। এর উদ্দেশ্য হলো অন্ন, ধনসম্পদ, গ্রাম বা সংসারধর্মের রক্ষার্থে ফললাভ। অর্থাৎ, সংগ্রহণী যজ্ঞের মাধ্যমে গৃহস্থ জীবনের ভৌত সমৃদ্ধি ও স্থায়িত্ব কামনা করা হয়। যেমন সংগ্রহণী যজ্ঞ আর সেবা উভয়ই ফল দিতে পারে, তেমনি স্বাভাবিক কাজ আর যজ্ঞ—দুটোই কামনালাভের উপায় হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে—যদি কেউ অধিক ফললাভকামী হয়ে থাকে, তবে সে সেবাও করে, আবার সংগ্রহণী যজ্ঞও করে—হয় একইসাথে, নয়তো একটার পর আরেকটা। তাহলে সংঘাত কোথায়? অতএব, যদি বলা হয়—দৃশ্যমান ফল উৎপন্ন করে, এমন সব ক্রিয়া নিষিদ্ধ, তবে ভুল হবে; কেননা, বেদের বিধি-বাক্যসমূহের উপর ভিত্তি করেই যা যা আচার-অনুষ্ঠান হয়, সেগুলিও বাতিল হয়ে যাবে। এর কারণ, যে-ব্যক্তি ধনসম্পদ অর্জন করেনি, তার জন্য অর্থসাপেক্ষ যজ্ঞাদি সম্পাদন সম্ভব নয়—অর্থাৎ উপায় না থাকলে শাস্ত্রবিধান পালনও সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, দৃশ্যমান ফলদানকারী ক্রিয়া আর অদৃশ্য ফলদানকারী ক্রিয়ার মধ্যে কোনো ভেদ নেই, যদি উভয়ই কামনা দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যসাধনকারী হয়। এটি এভাবে বোঝানো যায়—ধরুন, কেউ স্বর্গকামী। তার স্বাভাবিক কামনা-প্রসূত কার্যকলাপ বিদ্যমান। তখন বিধি-বাক্য তাকে এক বিশেষ উপায় নির্দেশ করে (যজ্ঞ), যাতে সে তার কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারে। কিন্তু এখানে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য রয়ে গেল—উভয়েই তো আসক্তিজনিত, জগৎকেন্দ্রিক। তাহলে কোন যুক্তিতে বলা হবে, শাস্ত্রবিধৃত আচার আত্মজ্ঞানলাভে সহায়ক, আর স্বাভাবিক কামনাজাত কর্ম তার পরিপন্থী?
বাস্তবে, কামনার টান মনকে একইভাবে টানে—উভয় ক্ষেত্রেই।
আর যদি বলা হয়—শাস্ত্রবিধৃত যজ্ঞাদি আসলে কাঙ্ক্ষিত ফলের উপায় নয়—তাহলে আগে যেমন বলা হয়েছিল—সমগ্র জীবজগতের জন্ম-মৃত্যু কার্যকারণশূন্য হয়ে যাবে; এবং তখন ঋষি জৈমিনির প্রতিপাদিত নীতি—যজ্ঞই লক্ষ্যপূর্তির কারণ (কর্মমীমাংসা বা পূর্বমীমাংসা))—তা ভেঙে পড়বে। যেহেতু দুই ধরনের ক্রিয়াই (স্বাভাবিক ও শাস্ত্রবিধৃত) একই ফল উৎপন্ন করার কারণে পরস্পরবিরোধী বলে ধরা হয়—তাই যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে, একটিকে (অর্থাৎ স্বাভাবিক ক্রিয়া) অপসারিত করতে হবে—এই যুক্তি একেবারেই টেকে না, এমনিতেই খণ্ডন হয়ে যায়।
জৈমিনি বলেছিলেন → “ধর্মঃ জ্ঞেয়ঃ চোদনা-লক্ষণঃ।” অর্থ: ধর্ম হলো সেই কাজ (কর্ম), যা বেদবাক্যের injunction (চোদনা = বিধিবাক্য) দ্বারা নির্দেশিত। তাই তাঁর মতে ধর্ম বা লক্ষ্যপূর্তির উপায় হলো যজ্ঞ, দান, হোম ইত্যাদি বৈদিক আচার। জৈমিনি মনে করেন, যজ্ঞই ফল দেয়, কিন্তু → ফল তাৎক্ষণিক নয়, বরং অদৃষ্ট (অদৃশ্য পুণ্য) আকারে সঞ্চিত হয়। পরে, সেই অদৃষ্টই ভোগ্যফল (যেমন—স্বর্গলাভ, ঐশ্বর্য ইত্যাদি) প্রদান করে।
মীমাংসায় যজ্ঞফল প্রদানের জন্য আলাদা ঈশ্বর-সত্তার প্রয়োজন ধরা হয়নি। জৈমিনি বলেন—যজ্ঞ নিজ শক্তিতেই ফলদায়ক (অদৃষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে)। জ্ঞান নয়, কর্মই মুখ্য—তাঁর মতে বেদান্তের মতো আত্মজ্ঞান মুক্তির একমাত্র পথ নয়। বরং যজ্ঞই কাম্যফল (যেমন স্বর্গ, সুখ, ঐশ্বর্য) অর্জনের সঠিক উপায়। ঋষি জৈমিনির প্রতিপাদিত নীতি হলো→ “যজ্ঞই লক্ষ্যপূর্তির কারণ।” এর কারণ—যজ্ঞ বেদবাক্যে বিধানকৃত কর্তব্য, যজ্ঞ অদৃষ্ট সঞ্চয় করে, আর সেই অদৃষ্টই পরবর্তীতে ফল (যেমন স্বর্গলাভ) দেয়।
যুক্তি দেওয়া হয়, যজ্ঞসংক্রান্ত injunction (বিধান) জ্ঞানলাভে সহায়ক, কারণ এগুলো কামনাকে ভোগের দ্বারা নিঃশেষ করে—“যখন হৃদয়ে আসক্ত সব কামনা ঝরে যায়, তখনই মানুষ অমর হয় এবং এখানেই ব্রহ্ম লাভ করে” (কঠ উপনিষদ, ২।৩।১৪)। কিন্তু এটি ভুল; কারণ, কামনা কখনও ভোগের মাধ্যমে নিঃশেষ হয় না; বরং শুধুমাত্র বিচারবুদ্ধি (viveka) দ্বারা নিঃশেষ হয়—যে-বিচারের জন্ম হয় কামনার দোষ নিয়ে চিন্তন করার ফলে।
মন কামনায় স্পর্শিত হলে কী হয়? মন যদি সামান্যতমও কামনার ছোঁয়া পায়, তখন সেটি সেই কামনার টানে আবদ্ধ হয়ে যায়। যেমন একজন চোর গোপনে মালপত্র নিয়ে যায়, তেমনি কামনা মনকে “চুরি করে” নেয়—মন আর স্বাধীন থাকে না।
এ নিয়ে শাস্ত্র কী বলে? মনুস্মৃতি (২।৯৪): “কামনা কখনও ভোগের দ্বারা শেষ হয় না।”➝ মানে, যত বেশি ভোগ করবে, কামনা ততই বাড়বে। যোগসূত্রভাষ্য (২।১৫): “কামনা ও ইন্দ্রিয়শক্তি—ভোগের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়।”➝ মানে, কামনা মেটাতে চাইলে বরং নতুন কামনা আরও জেগে ওঠে। এর মানে কী দাঁড়ায়? যদি বৈদিক যজ্ঞ-বিধানগুলোকে কাম্যফল লাভের উপায় হিসেবে ধরা না হয়, তাহলে মানুষ ধীরে ধীরে কামনা ছেড়ে দেবে। তখন সে আত্মজ্ঞানের আশ্রয় নেবে। আত্মজ্ঞান স্বভাবতই সব দুঃখকে শান্ত করে দেয়।
কিন্তু যদি বৈদিক বিধানকে ভোগের উপায় ধরা হয়? তখন মানুষ ভাববে: “যজ্ঞ করলে স্বর্গ পাবো, গবাদি পশু পাবো, ইত্যাদি।” এভাবে সে ভোগের দিকে আকৃষ্ট হবে। এই ভোগ মনকে আরও বেঁধে রাখবে, মুক্ত হতে দেবে না। তখন সে আত্মজ্ঞানকে আর ভালো লাগবে না। কারণ আত্মজ্ঞান তো সমস্ত কামনাকে শান্ত করে দেয়। যদি যজ্ঞ ও আচার-কর্মকে কামনার ফল লাভের উপায় ভাবা হয়, তবে কামনা আরও বাড়বে আর মন আটকে যাবে। যদি এগুলোকে ফললাভের উপায় না ভাবা হয়, তবে কামনা কমবে আর আত্মজ্ঞান আসবে—ফলে দুঃখ শেষ হবে।
ধরুন, কারও মিষ্টি খাওয়ার প্রবল ইচ্ছে আছে। মন কামনায় স্পর্শিত হলো। সে ভাবে: “আজ একটা রসগোল্লা খাব।” এখানে মন কামনায় ধরা পড়ল। ভোগ করলে কী হয়? সে রসগোল্লা খেল। কিন্তু খাওয়ার পর মিষ্টির লোভ কমলো না। বরং সে ভাবে: “কাল আবার খাব।” কামনা নিঃশেষ না হয়ে উলটো আরও বাড়ল। এটাই শাস্ত্রের উক্তি। যদি কেউ তাকে বলে: “তুমি সব ছেড়ে দাও, শান্তিতে থাকো,” তখন সে শুনতে চাইবে না, কারণ তার মন এখন ভোগের আনন্দে আসক্ত। অন্যদিকে, যদি সে ভাবে: “রসগোল্লা খেয়েই শান্তি পাওয়া যাবে না। এই লোভের শেষ নেই। এতে বরং বাড়তি কিছু রোগের সৃষ্টি হবে আর ভোগান্তি বাড়বে। আসল শান্তি তো ভেতরে।” তখন ধীরে ধীরে তার কামনা কমবে। আর মন আত্মজ্ঞান বা অন্তরের শান্তির দিকে যাবে। ফলে দুঃখ থেকে মুক্তি আসবে।
শাস্ত্রপাঠ করে আত্মার আনন্দ সম্পর্কে জানা যায়, কিন্তু সরাসরি তার অভিজ্ঞতা-লাভ করা যায় না। তাই সেটা কখনোই ভোগজনিত কামনার আকাঙ্ক্ষাকে হ্রাস পর্যন্ত করতে পারে না—নিঃশেষ করা তো দূরের কথা। সুতরাং কামনা-নাশের একমাত্র উপায় হলো বিচারবুদ্ধি (viveka), কিন্তু বিধানগুলো উলটো কাজ করে—ভোগে প্ররোচিত করে।
আবার একটি যুক্তি দেওয়া হয়েছিল—বেদ সর্বত্র কোনো-না-কোনো ভেদ (ভ্রম) অস্বীকার করে। যেমন—“যে স্বর্গকামী, সে যজ্ঞ করুক”—এই injunction বা বিধি-বাক্য আসলে, শরীরই আত্মা—এই ধারণাকে নাকচ করছে। কিন্তু এটিও ভুল। কারণ ওই বিধির আসল উদ্দেশ্য এটা নয়। ওই বাক্য, আত্মা শরীর থেকে ভিন্ন—এই সত্য বোঝানোর উদ্দেশ্যে উচ্চারিত হয়নি। যদি বলা হয়—না হলেও পরোক্ষভাবে সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তবে সেটা হবে এরকম—হাতির পায়ের ছাপ দেখে হাতির অস্তিত্ব অনুমান করা, অথচ হাতিকে সামনেই দেখা যাচ্ছে!
বাস্তবে শরীর, ইন্দ্রিয় ইত্যাদি আত্মা নয়—এই অস্বীকার সরাসরি উচ্চারিত হয়েছে উপনিষদের বাক্যে: “এটি স্থূল নয়, সূক্ষ্ম নয়…” (বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ৩।৮।৮)। অতএব, পরোক্ষভাবে ধরে নিতে হবে—যজ্ঞসংক্রান্ত বৈদিক বিধি-বাক্যের দ্বারা নির্দেশিত নানান উপায়ের পেছনে ছুটে ছুটে কামনার যে শক্ত গিঁট তৈরি হয়, সেটার দায়ও আসলে বেদের ওপর বর্তায়।
সহজভাবে বললে: কামনা ভোগে নিঃশেষ হয় না, বরং বিচারবুদ্ধি দিয়ে হয়। যজ্ঞের বিধি-বাক্য মানুষকে ভোগে টেনে নিয়ে যায়, তাই কামনা বাড়ায়। আত্মা শরীর নয়—এটা আলাদা করে উপনিষদেই সরাসরি বলা আছে; যজ্ঞ-বিধানের কাজ সেটা নয়। বরং যজ্ঞ-সংক্রান্ত বিধি-বাক্যসমূহ কামনার গিঁটকে আরও শক্ত করে।
যেহেতু কামনা, যেমন পূর্বেই বলা হয়েছে, কখনও ভোগের দ্বারা নিঃশেষ হয় না; যেহেতু যজ্ঞ-সংক্রান্ত বিধানগুলি তাদের উল্লিখিত ফলের দ্বারা পূর্ণ হয়; এবং যেহেতু এগুলিকে অন্য কিছুর (অর্থাৎ আত্মজ্ঞান) সঙ্গে যুক্ত করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই—অতএব দ্বিতীয় মতটিও গ্রহণযোগ্য নয়। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, যজ্ঞসংক্রান্ত বিধি-বাক্য এবং জ্ঞানসংক্রান্ত বিধি-বাক্য—উভয়ের একটিই লক্ষ্য আছে, তবে সব যজ্ঞই জ্ঞানের সঙ্গে মিলিত হয়ে যাবে; কিন্তু এটি অসম্ভব।
যাঁরা এই সম্পর্কটিকে উলটে দিয়ে (অর্থাৎ জ্ঞানকে যজ্ঞের অধীন করে) বলেন, জ্ঞান ও যজ্ঞের একটিই লক্ষ্য, তাঁদের অবশ্যই প্রমাণ দেখাতে হবে, কীভাবে জ্ঞান যজ্ঞের অধীন হয়। যেমন—“চালের দানা ছিটানো হয়”—এই শাস্ত্রবাক্যের দ্বারা চালের দানা যজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত বোঝা যায়। সেখানে দেখা যায়, যজ্ঞে ব্যবহার করা না হলে চাল ছিটানো অর্থহীন; তাই প্রসঙ্গগতভাবে বা প্রকরণ দ্বারা (যখন কোনো শব্দ, বাক্য বা বিধি-বাক্যের অর্থ নিয়ে সন্দেহ হয়, তখন তার অর্থ নির্ধারণের একটি উপায় হলো প্রকরণ বা প্রসঙ্গ দেখা, যা নির্ধারণ করে কোনো বাক্যের আসল উদ্দেশ্য কী।) বোঝা যায় যে, চাল ছিটালে তা উক্ত যজ্ঞের অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফলপ্রদ হয়।
আত্মজ্ঞান কখনও কর্মকাণ্ড (কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ)-এর মধ্যে বলা হয়নি; আর আত্মা কোনোদিনই যজ্ঞের সঙ্গে অবশ্যম্ভাবীভাবে যুক্ত নয়। সুতরাং আত্মজ্ঞানকে যজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত বলা ভুল। অতএব, যেহেতু আত্মজ্ঞান অন্য কোনো প্রত্যক্ষ ফলের উৎপাদক নয়, তাই যে-শ্রুতি এ দ্বারা ফললাভের কথা বলে, তা কেবল স্তুতিবাচক বাক্য নয়; বরং এর নিজস্ব ফল আছে। আর তাই আত্মজ্ঞানের জন্য যে-ব্যক্তি যোগ্য, তিনি যজ্ঞকর্মের যোগ্য ব্যক্তি থেকে ভিন্ন।
আপত্তি: এভাবে ভাবা যেতে পারে—যেহেতু শ্রুতি বাক্য—“সে আর এখানে ফিরে আসে না” (ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৮।১৫।১)—বর্তমানকালে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং যেহেতু এটি কোনো কামনার সঙ্গে যুক্ত নয়, তাই যে-ফল হবে, তা টেক্সটের শব্দ পরিবর্তন করে জানাতে হবে; এবং তা তখনই সম্ভব, যখন টেক্সটে ফলের প্রত্যাশা থাকবে। কিন্তু যখন দৃশ্যমান ফল থাকে, তখন সেই প্রত্যাশা থাকে না। এখানে “সে” বলতে বোঝানো হয়েছে— যিনি আত্মস্বরূপকে প্রত্যক্ষ করেছেন, ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করেছেন। “এখানে” বলতে বোঝানো হচ্ছে এই সংসারচক্র, পুনর্জন্মের ক্ষেত্র, জন্ম–মৃত্যুর আসা–যাওয়া। “ফিরে আসে না” মানে হলো— জ্ঞানী আত্মা আর পুনর্জন্মে আবদ্ধ হয় না, কর্মের দ্বারা চালিত হয়ে দেহ ধারণ করতে আসে না।
অন্য দেহে ভোগের জন্য ফল জন্ম দেয়, এমন কার্যকলাপে নিযুক্ত হওয়াই জ্ঞানসংক্রান্ত বিধানের দৃশ্যমান ফল। কর্মফল (যা আমরা করি—সৎ বা অসৎ, সচেতন বা অচেতন সব কাজের ফল) সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয় না। অনেকসময় বর্তমান জীবনে তার সম্পূর্ণ ফলভোগ সম্ভব হয় না। তখন সেই সঞ্চিত কর্মফল (সংস্কার বা সঞ্চিত কর্ম) পরবর্তী জন্মে বা “অন্য দেহে” ভোগের জন্য প্রকাশ পায়। অর্থাৎ— এক জীবনের কর্মফল অন্য দেহে জন্মের কারণ হয়ে ওঠে। এ অনেকটা বীজ ও গাছের মতো—আজ বীজ বপন করলে, অনেকসময় তাৎক্ষণিক ফল হয় না। পরে যখন পরিবেশ–সময়-সূচি মেলে, তখন বীজ অঙ্কুরিত হয়ে গাছ হয় ও ফল দেয়। একইভাবে, কর্মের বীজও সাথে থাকে—উপযুক্ত দেহ পেলে ফল প্রকাশিত হয়।