বেদের আলোয় অদ্বৈত: সতেরো




অদ্বৈত বেদান্তের মূল দর্শন হলো ব্রহ্মের নিরঙ্কুশ অদ্বৈততা প্রতিষ্ঠা করা—"একমেব অদ্বিতীয়ম্", অর্থাৎ ব্রহ্ম এক এবং অদ্বিতীয়। এই মতবাদ অনুসারে, একমাত্র ব্রহ্মই পরম সত্য বা পারমার্থিক সত্য। জীবাত্মা (Jīvātman) স্বরূপত ব্রহ্ম থেকে অভিন্ন, কিন্তু অজ্ঞানতা (Avidyā) বা মায়ার প্রভাবে নিজেকে দেহ ও ইন্দ্রিয়ের সাথে একীভূত করে। এই ভ্রান্ত পরিচিতি থেকে মুক্তি (Moksha) লাভ করাই মানব অস্তিত্বের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। এটি কেবল একটি দার্শনিক উপলব্ধি নয়, বরং আত্ম-অনুসন্ধানের একটি গভীর আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া।

অদ্বৈত নীতি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শঙ্করাচার্য এবং তাঁর পরবর্তী আচার্যরা দ্বৈতবাদী (Dvaita) ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী (Vishishtadvaita) দার্শনিক ঘরানা থেকে উদ্‌ভূত অসংখ্য যৌক্তিক আপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন। এই আপত্তিগুলোর মুখোমুখি হবার জন্য অদ্বৈত বেদান্ত দুটি প্রধান কৌশল অবলম্বন করে: মিথ্যাত্বের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা এবং সত্তার ত্রয়ী স্তর (Sattā-Traya) স্থাপন। এই দুটি ধারণা অদ্বৈতের জটিল দার্শনিক কাঠামোকে একটি দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করে, যা সমালোচকদের যুক্তিসঙ্গতভাবে খণ্ডন করতে সক্ষম।

মিথ্যাত্বের ধারণা (Mithyātva): অদ্বৈত বেদান্তের মতে, জাগতিক অস্তিত্ব মিথ্যা (Mithyā)। 'মিথ্যাত্ব' শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হলো—যা সত্যে বিদ্যমান নয়, কিন্তু অনুভূত হয়। এই ধারণাটি অদ্বৈতের দার্শনিক ভিত্তি সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর তাৎপর্য অনুধাবন করা জরুরি:

সৎ (পরম বাস্তব) নয়: যদি জগৎ সৎ বা পরম বাস্তব হতো, তবে দ্বৈতবাদ অনিবার্য হতো। কারণ সেক্ষেত্রে ব্রহ্মের অতিরিক্ত একটি স্বাধীন সত্তার অস্তিত্ব স্বীকৃত হতো, যা অদ্বৈতের "একমেব অদ্বিতীয়ম্" নীতির পরিপন্থী।

অসৎ (অস্তিত্বহীন) নয়: আবার যদি জগৎ অসৎ হতো (যেমন বন্ধ্যার পুত্রসন্তানের মতো অস্তিত্বহীন), তবে আমাদের জাগতিক অভিজ্ঞতা অসম্ভব হতো। আমরা প্রতিদিন যে-জগৎকে দেখি, শুনি, অনুভব করি, তার একটি আপেক্ষিক বাস্তবতা রয়েছে।

তৃতীয় বিভাগ: তাই, মিথ্যাত্ব এমন একটি তৃতীয় বিভাগ স্থাপন করে, যা বস্তুকে সৎ এবং অসৎ উভয় ধারণা থেকে রক্ষা করে। এটি দাবি করে যে, জগতের অস্তিত্ব কেবল চেতনার ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু তা শূন্য নয়। এটি একটি মধ্যবর্তী অবস্থা, যা জাগতিক অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা দেয়, কিন্তু ব্রহ্মের অদ্বৈততাকে অক্ষুণ্ণ রাখে। জগৎ ব্রহ্মে অধ্যাসিত হলেও ব্রহ্ম নিজের স্বরূপে অপরিবর্তিত থাকে।

এই প্রেক্ষাপটে, অদ্বৈত পরিণামবাদ (Transformation, যেমন দুধ থেকে দই হওয়া) ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং বিবর্ত-বাদ (Appearance without modification of the substratum) নীতি গ্রহণ করে। পরিণামবাদে, কারণ পরিবর্তিত হয়ে কার্যে পরিণত হয়। কিন্তু অদ্বৈতের মতে, ব্রহ্ম জগৎ সৃষ্টি করলেও ব্রহ্মের নিজের কোনো পরিবর্তন হয় না। এখানে ভ্রম বা অজ্ঞানতা দূর করা হয়, কোনো রূপান্তর ঘটে না। যেমন, দড়িকে সাপ মনে করার ভ্রম দূর হলে দড়ির কোনো পরিবর্তন হয় না, কেবল ভুল ধারণাটি অপসারিত হয়। ব্রহ্মের ক্ষেত্রেও জগৎ ব্রহ্মে অধ্যাসিত হলেও ব্রহ্ম নিজের স্বরূপে অপরিবর্তিত থাকে।

বেদান্তে বিবর্তবাদ হলো একটি দার্শনিক ধারণা, যা বোঝায় যে, অধিষ্ঠান বা উপাদানের কোনো বাস্তব পরিবর্তন ছাড়াই তার মধ্যে অন্য কিছু প্রতিভাত হওয়া। বিবর্তবাদ এবং এর সাথে সম্পর্কিত পরিণামবাদ-এর মূল পার্থক্য তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নিচে দেওয়া হলো:

১. বিবর্তবাদ (অদ্বৈত বেদান্ত):

অর্থ: পরিবর্তন ছাড়া প্রতিভাস (Appearance without change)।
উপাদান: উপাদানের কোনো বাস্তব পরিবর্তন হয় না, কেবল ভ্রান্তিবশত সেটি ভিন্নরূপে দেখা যায়।
উদাহরণ: দড়িকে সাপ মনে করা। এখানে দড়িটি অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু ভুলের কারণে সাপ হিসেবে প্রতিভাত হয়।
মূল বক্তব্য: ব্রহ্ম অপরিবর্তিত, এই দৃশ্যমান জগৎ হলো মায়া-র কারণে সৃষ্ট একটি প্রতিভাস।

২. পরিণামবাদ (সাংখ্য/বিশিষ্টাদ্বৈত):

অর্থ: বাস্তব পরিবর্তন (Real transformation)।
উপাদান: উপাদানটি আসলেই পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন রূপ ধারণ করে।
উদাহরণ: দুধ থেকে দই তৈরি হওয়া। এখানে দুধ সত্যিই দইয়ে পরিবর্তিত হয় এবং দুধের মূল রূপ আর থাকে না।
মূল বক্তব্য: প্রকৃতি (বা ঈশ্বর) সত্যিই জগতে রূপান্তরিত হয়।

সংক্ষেপে, অদ্বৈত বেদান্তের মতে, জগৎ হলো ব্রহ্মের বিবর্ত—অর্থাৎ ব্রহ্ম অপরিবর্তিত থেকেও জগতের মতো দেখা যায়। অন্যদিকে, পরিণামবাদীরা মনে করেন, জগৎ হলো প্রকৃতির পরিণাম—অর্থাৎ প্রকৃতি সত্যিই জগতে রূপান্তরিত হয়েছে।

সত্তার ত্রয়ী স্তর (Sattā-Traya):

অদ্বৈতের দার্শনিক কাঠামোয় বাস্তবতা তিনটি স্তরে বিভক্ত। এই স্তরগুলির পার্থক্য অনুধাবন করা খণ্ডন প্রক্রিয়ায় মৌলিক এবং অদ্বৈতকে বিভিন্ন দার্শনিক বিতর্কে তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে। এই তিনটি স্তর হলো:

১. পারমার্থিক সত্য (Pāramārthika Satya):

লক্ষণ: এটি চিরন্তন অ-বাধিত; এটিই একমাত্র ব্রহ্মের সত্তা। অস্তিত্বের স্থিতি হলো নিরঙ্কুশ (Absolute)।
বৈশিষ্ট্য: এই স্তরে কোনো প্রকার দ্বৈততা বা পরিবর্তন নেই। এটি অপরিবর্তনীয়, অনাদি, অনন্ত এবং স্বয়ংপ্রকাশ। এটি জ্ঞান দ্বারাও বাধিত হয় না, কারণ এটি নিজেই চরম জ্ঞান।
খণ্ডন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার: এটিই চূড়ান্ত সত্য, যা দ্বারা অন্য দুটি স্তর বাধিত হয়। অর্থাৎ, পারমার্থিক জ্ঞান লাভ হলে ব্যাবহারিক ও প্রাতিভাসিক সত্য বিলীন হয়ে যায়। উপনিষদের "সৎ-চিৎ-আনন্দ" (Existence-Consciousness-Bliss) স্বরূপ ব্রহ্ম এই স্তরের একমাত্র বাস্তবতা।

২. ব্যাবহারিক সত্য (Vyāvahārika Satya):

লক্ষণ: যতক্ষণ না ব্রহ্মজ্ঞান হয়, ততক্ষণ এটি বাধিত হয় না। জগৎ, ঈশ্বর, জীব এই স্তরের অন্তর্ভুক্ত।
বৈশিষ্ট্য: এর অস্তিত্বের স্থিতি হলো আপেক্ষিক/প্রাসঙ্গিক (Empirically Real)। এই স্তর আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার জগৎকে ব্যাখ্যা করে, যেখানে কার্যকারণ সম্পর্ক, নৈতিকতা, এবং সামাজিক রীতিনীতি প্রযোজ্য। আমাদের কর্মফল (কর্ম) এবং ধর্ম-অধর্ম এই স্তরেই অর্থপূর্ণ।
খণ্ডন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার: এটি অবিদ্যার অস্তিত্ব, গুরু-শিষ্য সম্পর্ক, এবং জগতের আপেক্ষিক স্থায়িত্ব প্রমাণে ব্যবহৃত হয়। এর মানে হলো, ব্রহ্মজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত এই জগৎ বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয় এবং এর নিয়মগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর থাকে। এটি জীবকে মোক্ষলাভের পথ দেখায় এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

৩. প্রাতিভাসিক সত্য (Prātibhāsika Satya):

লক্ষণ: এ কেবল ব্যক্তিবিশেষের উপলব্ধিতে সত্য এবং সহজেই বাধিত হয়।
বৈশিষ্ট্য: এর অস্তিত্বের স্থিতি হলো ভ্রমকালীন (Apparent)। এই স্তর কেবল ব্যক্তিগত ভ্রম বা স্বপ্নকে নির্দেশ করে, যা অন্য ব্যক্তির কাছে বা জাগ্রত অবস্থায় সত্য নয়। এটি অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী ও ব্যক্তিগত।
খণ্ডন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার: এটি রজ্জু-সর্প (দড়িকে সাপ মনে করা) এবং স্বপ্ন দৃষ্টান্তে অধ্যাসের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন, দড়িকে সাপ মনে করা বা স্বপ্নে কোনো কিছু দেখা, যা জাগ্রত হলে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এটি দেখায় যে, আমাদের ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা বা মনের বিভ্রান্তির কারণে আমরা যা দেখি, তা সবসময় সত্য হয় না।

এই স্তরভেদ সমালোচকদের আপত্তি নিরসনে অত্যন্ত কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ আপত্তিই ব্যাবহারিক স্তরের যুক্তিকে পারমার্থিক স্তরে প্রয়োগের ফল। অদ্বৈত জোর দেয় যে, ব্যাবহারিক সত্য (Vyāvahārika Satya) পরম বাস্তব বা সৎ না হলেও, ব্রহ্মজ্ঞান লাভের আগ পর্যন্ত এটি একটি পর্যবেক্ষণগত বা শিক্ষামূলক সত্য (observational or pedagogical truth)। উদাহরণস্বরূপ, যদিও প্রত্যক্ষ (Pratyakṣa) প্রমাণ দ্বারা আমরা সূর্যোদয় দেখি, যা একটি ব্যাবহারিক সত্য, শাস্ত্রীয় জ্ঞান দ্বারা আমরা জানি যে, সূর্য গতিশীল নয়। জ্ঞান এই প্রত্যক্ষিত গতিকে পরিবর্তন করে না, কিন্তু তার অন্তর্নিহিত সত্য উন্মোচন করে। এর অর্থ হলো, আমাদের ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতাগুলি এক স্তরে সত্য হলেও, গভীরতর দার্শনিক বা শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলির সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হলে এই আপাত সত্যগুলি তাদের বাস্তবতা হারায়।

প্রমাণতত্ত্ব—ইন্দ্রিয় ও ব্রহ্মজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা: অদ্বৈতের একটি দার্শনিক প্রতিস্পর্ধা হলো, ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান (Pratyakṣa) পরম সত্য (Satya Jñāna) প্রতিষ্ঠার জন্য চূড়ান্ত প্রমাণ হতে পারে না। যেহেতু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু (বিষয়) স্বয়ং মিথ্যা (চেতনার ওপর নির্ভরশীল), তাই ইন্দ্রিয়জাত জ্ঞান তার উৎসের (বস্তুর) ওপর নির্ভরশীলতা প্রমাণ করে। ইন্দ্রিয়গুলি বাহ্যিক বস্তুর সাথে যুক্ত এবং সেই বস্তুগুলি অবিদ্যার ফল হওয়ায়, ইন্দ্রিয়জ্ঞান পরম সত্য উন্মোচন করতে অক্ষম।

আত্মার বা ব্রহ্মের জ্ঞান লাভের জন্য অদ্বৈত মূলত শ্রূতি (উপনিষদীয় মহাবাক্য, যেমন তত্ত্বমসি) এবং অর্থাপত্তি (Postulation) বা অনুমানের উপর নির্ভর করে। শ্রূতি হলো বেদান্তের চূড়ান্ত প্রমাণ, যা প্রত্যক্ষ বা অনুমান দ্বারা অপ্রাপ্য জ্ঞান প্রদান করে। অর্থাপত্তি হলো একটি বিশেষ ধরনের অনুমান, যেখানে একটি আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব ঘটনার ব্যাখ্যা করার জন্য একটি অনুক্ত সত্যকে ধরে নেওয়া হয়। এই কৌশলটি অদ্বৈতকে অন্যান্য হিন্দু দার্শনিক ঘরানা, যারা ইন্দ্রিয়লব্ধ বাস্তবতার উপর অধিক নির্ভর করে, তাদের থেকে আলাদা করে। অদ্বৈতের মতে, ব্রহ্মজ্ঞান কেবলমাত্র শাস্ত্রীয় জ্ঞান এবং গুরু-উপদেশের মাধ্যমে উপলব্ধ হতে পারে, কারণ এটি ইন্দ্রিয় বা মন দ্বারা ধারণার অতীত।

অদ্বৈতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক ধারণা হলো অবিদ্যা (Avidyā) বা অজ্ঞানতা। এটিই জীব ও ব্রহ্মের আপাত পার্থক্যের কারণ, এবং এটিই জগতের ব্যাবহারিক বাস্তবতা নিশ্চিত করে। অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং একটি ইতিবাচক, অস্তিত্বশীল শক্তি যা ব্রহ্মকে আচ্ছাদিত করে রাখে এবং জীবকে ভ্রমের মধ্যে রাখে। রামানুজ এবং অন্যান্য বৈষ্ণব আচার্যরা অবিদ্যার এই ধারণার বিরুদ্ধে যে সাতটি প্রধান যৌক্তিক অসামঞ্জস্য (Sapta-vidhā Anupapatti) উত্থাপন করেছেন, তাদের বিশ্লেষণ ও খণ্ডন নিচে দেওয়া হলো, যে-আপত্তিগুলি অবিদ্যাকে তার সমস্ত দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করে:

১। অবিদ্যার ভাবরূপতা (Positivity) এবং প্রমাণ (Proof): অদ্বৈতের একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ হলো অবিদ্যাকে কেবল জ্ঞানের অভাব (জ্ঞান-অভাব) হিসেবে বিবেচনা না করে তাকে ভাবরূপ (positive entity) হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। যদি ব্রহ্ম স্বয়ংপ্রকাশ (Self-luminous) হয়, তবে তার মধ্যে কেবল জ্ঞানের অভাব থাকতে পারে না, কারণ অভাব স্বয়ংপ্রকাশকে আচ্ছাদিত করতে পারে না।

যুক্তি: অর্থাপত্তি বা অনুমান ব্যবহার করে বলা হয়—গভীর ঘুমে (সুষুপ্তি) চেতনা অক্ষুণ্ণ থাকা সত্ত্বেও যদি জগৎ অনুভূত না হয় ('নাস্তি, ন প্রকাশতে'), তবে অবশ্যই চেতনার ওপর একটি আচ্ছাদন (Āvaraṇa Śakti) থাকতে হবে—যা ভাবরূপ অজ্ঞান। জ্ঞান-অভাব এমন আচ্ছাদন দিতে পারে না। বিবরণ স্কুল দাবি করে যে, যখন চেতনার পূর্ণ কারণ উপস্থিত থাকে, তবুও 'ব্রহ্ম নেই, প্রকাশিত হয় না'—এই ধরনের ব্যাবহারিক অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র একটি ভাবরূপ অজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। এই অজ্ঞান হলো এমন একটি ইতিবাচক শক্তি, যা ব্রহ্মকে আচ্ছাদিত করে রাখে এবং জগৎকে প্রক্ষেপিত করে।

২। আশ্রয়ের অনুপপত্তি (Locus Problem: Āśraya Anupapatti): অবিদ্যা কার মধ্যে থাকে? শুদ্ধ, জ্ঞানস্বরূপ ব্রহ্মের মধ্যে? কিন্তু জ্ঞান ও অজ্ঞান একসাথে থাকতে পারে না, যেমন আলো ও অন্ধকার একসাথে থাকতে পারে না। অবিদ্যার সৃষ্ট জীবের মধ্যে? কিন্তু জীব তো নিজেই অবিদ্যার ফল, তাই তার মধ্যে অবিদ্যা থাকতে পারে না। এই আপত্তিটি অবিদ্যার অবস্থান নিয়ে একটি মৌলিক সমস্যা তৈরি করে।