অদ্বৈত বেদান্ত একটি সুগভীর এবং সুপ্রতিষ্ঠিত দার্শনিক প্রথা, যার ভিত্তি প্রাচীন শাস্ত্র এবং আচার্যদের নিরবচ্ছিন্ন পরম্পরায় নিহিত। এই দর্শন কেবল তাত্ত্বিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং আত্মিক উপলব্ধির একটি সুনির্দিষ্ট পথও নির্দেশ করে। প্রাচীন অদ্বৈতাচার্য সুরেশ্বর, যিনি শ্রীশঙ্করের প্রখ্যাত শিষ্য ছিলেন, তাঁর ‘নৈষ্কর্ম্যসিদ্ধি’ গ্রন্থ-সহ অন্যান্য রচনায় আত্মাকে 'স্বয়ং-প্রতিষ্ঠিত' (self-established) সত্তা হিসেবে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন। তাঁর মতে, শাস্ত্রের প্রধান কাজ হলো নতুন কোনো জ্ঞান উৎপন্ন করা নয়, বরং বিদ্যমান অবিদ্যার আবরণ দূর করা। শাস্ত্র নতুন কোনো আলো দেয় না, বরং মায়ার অন্ধকার অপসারিত করে সত্যকে উদ্ভাসিত করে। এই মতবাদ অনুযায়ী, সত্য বা ব্রহ্ম আমাদের অন্তরেই বিদ্যমান; শাস্ত্র কেবল সেই আবরণ অপসরণের পথপ্রদর্শক মাত্র।
শঙ্করাচার্যের ভাষ্যসমূহ, বিশেষত ব্রহ্মসূত্র ভাষ্য, গীতা ভাষ্য এবং উপনিষদ ভাষ্য, অদ্বৈত তত্ত্বের মূল ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি যুক্তি ও শাস্ত্রের নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে এই মতবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা পরবর্তীকালে অগণিত পণ্ডিত ও সাধকের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শঙ্করের এই অসামান্য কর্ম অদ্বৈত বেদান্তকে কেবল একটি দার্শনিক মতবাদ হিসেবেই নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অদ্বৈত বেদান্তের ভামতী ও বিবরণ উপশাখার মধ্যে অবিদ্যার আশ্রয়স্বরূপ কার স্বীকার্য, তা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে পাণ্ডিত্যের বিতর্ক বিদ্যমান। ভামতী-শাখা সাধারণত অবিদ্যার আশ্রয় জীব বা অন্তঃস্থিত অন্তঃকরণে ভাবেন, অর্থাৎ অবিদ্যার স্থান জীবগত। অন্যদিকে, বিবরণ-শাখা অবিদ্যাকে ব্রহ্মের উপর আরোপিত বলে দেখে, অর্থাৎ অবিদ্যার আশ্রয় ব্রহ্ম। এই সূক্ষ্ম তত্ত্বগত ভিন্নতা সত্ত্বেও, উভয় শাখাই এই বিষয়ে একমত যে, অবিদ্যা অনাদি (অর্থাৎ এর কোনো শুরু নেই) ও অনির্বচনীয় (যা সৎ বা অসৎ কোনোটিই বলা যায় না)। উভয় শাখাই স্বীকার করে যে, আত্মজ্ঞানপ্রাপ্তির সাথে সাথে অবিদ্যার চিরন্তন বিনাশ ঘটে। আধুনিক পণ্ডিতেরা এই আলোচনাগুলিকে সংক্ষেপে বিবৃত করেছেন, যা থেকে অদ্বৈত তত্ত্বের গভীরতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এই বিতর্ক অদ্বৈত দর্শনের গভীর বিচার-বিশ্লেষণের প্রবণতাকেই প্রমাণ করে এবং দেখায় যে, এই উপশাখাগুলির ভিন্নতা মূলত ব্যাখ্যার সূক্ষ্মতার উপর নির্ভরশীল, কিন্তু মৌলিক সিদ্ধান্তে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
অদ্বৈত দর্শনের পক্ষে অসংখ্য শ্রুতিবাক্য (উপনিষদের মন্ত্র) উদ্ধৃত হয়। উপনিষদে স্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে – "ব্রহ্মণে নানাত্বম্ নাস্তি" (ব্রহ্মে কোনো প্রকার বহুত্ব নেই), যা ব্রহ্মের একত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে। ঋগ্বেদের উক্তি "ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ইয়তে" (ইন্দ্র মায়ার দ্বারা বহু রূপ ধারণ করেন) এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদের "ইন্দ্র ইয়মাত্মা অন্নাদময়ঃ... মায়য়া বহুধা বর্তমানঃ" শ্লোকদুটি গৌড়পাদ ও শঙ্করাচার্য উল্লেখ করে দেখিয়েছেন যে, বহুবিধ আত্মা ও জগতের প্রতীতি কেবল মায়ার খেল মাত্র। আসলে, সর্বত্র এক আত্মা-ব্রহ্মই বিদ্যমান। এই বৈদিক উদ্ধৃতিগুলি অদ্বৈত তত্ত্বের প্রাচীন ও দৃঢ় ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়, যা অদ্বৈতবাদীদের দাবিকে শক্তিশালী করে এবং তাদের মতবাদের শাস্ত্রীয় ভিত্তি সুদৃঢ় করে।
অদ্বৈত বেদান্ত জ্ঞানতত্ত্বে জ্ঞানের স্ব-বৈধতা (স্বতঃপ্রমাণতা) স্বীকার করে, যার ফলে "জ্ঞাতাকে জানাবার জন্য আরেক জ্ঞাতা লাগে"—এমন অনন্ত পশ্চাদপসরণের সমস্যা এড়ানো যায়। অদ্বৈত গ্রন্থগুলো স্পষ্ট করে বলেছে যে, দৈনন্দিন প্রত্যক্ষ (perception) ও অনুমান প্রভৃতি জ্ঞান বৈধ হতে পারে (যতক্ষণ না কোনো উচ্চতর উপলব্ধি দ্বারা সেগুলি খণ্ডিত হয়), কিন্তু সেগুলো অপরিবর্তনীয় পরম সত্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, মৃগতৃষ্ণা বা রজ্জুতে সর্পের বিভ্রমে ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষ প্রাথমিক স্তরে বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও, পরে জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে তা ভুল প্রমাণিত হয়। অতএব, জাগতিক জ্ঞান-মাধ্যমগুলি ত্রুটির বাইরে নয়। অদ্বৈতবাদীরা বলেন, পরম সত্য প্রাপ্ত হয় কেবল আত্মস্বরূপের প্রত্যক্ষ উপলব্ধির দ্বারা, যা শ্রুতি-প্রদর্শিত জ্ঞানযাত্রার চূড়ান্ত ফল। জ্ঞানোদয়ের পর আর কোনো প্রমাণের প্রয়োজন হয় না, কারণ তখন জ্ঞাতা-জ্ঞেয় অভেদ আত্মসাক্ষাৎ ঘটে এবং সত্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিপন্ন হয়। এই যুক্তিগুলি অদ্বৈত দর্শনের মৌলিক ভিত্তি এবং তার অনন্যতা প্রমাণ করে। এটি কেবল একটি দার্শনিক প্রথা নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ জীবনদর্শন, যা মানুষকে মোক্ষলাভের পথে পরিচালিত করে।
অদ্বৈত বেদান্ত হিন্দু দর্শনের একটি সুপ্রাচীন ধারা, যা উপনিষদীয় টেক্সটের ভাষ্য ও দার্শনিক ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই দর্শনের মূল প্রতিজ্ঞা হলো ব্রহ্মের অ-দ্বিতীয়তা (Advaita), আক্ষরিক অর্থে "non-secondness" বা অদ্বৈতবাদ। ব্রহ্মকে এখানে একমাত্র সৎ (Sat, Real Existent) হিসেবে গণ্য করা হয়, যা সকল দ্বৈততার ঊর্ধ্বে। এই একত্ববাদ (monism) অনুযায়ী, জীবাত্মন (individual experiencing self) হলো শুদ্ধ চৈতন্য, যা চূড়ান্তভাবে পরমাত্মন বা ব্রহ্ম থেকে অভিন্ন (non-different)।
অদ্বৈত দর্শনে, জীবনের চরম লক্ষ্য হলো মুক্তি (moksha), যা ব্রহ্মজ্ঞান (vidyā) লাভের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এই জ্ঞান অজ্ঞানতা (avidyā) বা ভ্রান্তি দূর করে, যার ফলে দেহ-মনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার মিথ্যা ধারণা এবং কর্তা হওয়ার ভাব (doership) বিদূরিত হয়। ব্রহ্মজ্ঞানের সারমর্মটি একটি সুবিদিত শ্লোকে নিহিত: "ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ" (Brahman is alone True, the world is error, the individual self is not different from Brahman)। এই শ্লোকটি জীব, জগৎ ও ব্রহ্মের পারমার্থিক অবস্থানকে স্পষ্ট করে দেয়, ভেদের আপেক্ষিকতা প্রমাণ করে। আচার্য শঙ্কর স্বয়ং ঘোষণা করেছেন, "আমি নাম, রূপ এবং কর্মের চেয়ে ভিন্ন। আমার প্রকৃতি সর্বদা মুক্ত! আমি সেই আত্মন, সেই পরম শর্তহীন ব্রহ্ম। আমি বিশুদ্ধ চৈতন্য, সর্বদা অ-দ্বৈত।"
অদ্বৈত তত্ত্ব ব্রহ্ম, জীব এবং জগতের মধ্যেকার আপাত ভেদকে ব্যাখ্যা করার জন্য সত্তার তিনটি স্তর বা সত্তা ত্রয় নির্ধারণ করে—যা এই দর্শনকে অন্যান্য বেদান্ত স্কুল থেকে স্বতন্ত্রতা প্রদান করে।
পারমার্থিক সত্য বা সত্তা (Pāramārthika Satya): এটি একমাত্র চরম, কালাতীত সত্য, যা কোনো জ্ঞান দ্বারা বাধিত (sublated) হয় না। এটি কেবল ব্রহ্ম বা আত্মন (Real)।
ব্যাবহারিক সত্য বা সত্তা (Vyavahārika Satya): এই স্তরে জগৎ, জীব, ঈশ্বর এবং যাবতীয় দ্বৈততা বা ভেদ অনুভূত হয়। এটি অবিদ্যা বা মায়ার উপর নির্ভরশীল। এই বাস্তবতা প্রাত্যহিক জীবনে সত্য বলে গণ্য হলেও, ব্রহ্মজ্ঞানের দ্বারা এটি সম্পূর্ণরূপে বাধিত/বাতিল হয়। এর উদাহরণ হলো জগৎ, জীব, ঈশ্বর, কর্মফল এবং অবিদ্যা। এটি মায়ার কারণে আপাত সত্য (Apparent/Empirical)।
প্রাতিভাসিক সত্য বা সত্তা (Prātibhāsika Satya): এটি কেবল ব্যক্তিবিশেষের জন্য সত্য, ভ্রমমূলক এবং অতি সহজে বাধিত। এর উদাহরণ হলো রজ্জুতে সর্প দেখা বা স্বপ্নে দেখা বস্তু। এটি সম্পূর্ণরূপে ভ্রম (Illusory)।
ভেদ বা দ্বৈততার অভিজ্ঞতাকে যেহেতু ব্যাবহারিক সত্য স্তরের অন্তর্গত করা হয়েছে, এটি অনিবার্যভাবে অবিদ্যা দ্বারা সৃষ্ট এবং আপেক্ষিক। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, ভেদ পারমার্থিক স্তরে টিকে থাকতে পারে না; এটি একটি দ্বিতীয়-ক্রমের বাস্তবতা, যা ব্রহ্মজ্ঞানের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বাতিল হতে বাধ্য। এই মৌলিক শ্রেণিবিন্যাসটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশিষ্টাদ্বৈত বা দ্বৈত বেদান্তের মতো অন্যান্য দর্শনে জীব ও ব্রহ্মের মধ্যেকার ভেদকে নিত্য ও পারমার্থিক সত্য বলে মনে করা হয়।
অবিদ্যা (Avidyā বা অজ্ঞানতা) হলো ব্রহ্ম ও জীবের মধ্যেকার ভেদের মূল কারণ এবং এটি অদ্বৈত মেটাফিজিক্সের কেন্দ্রীয় স্তম্ভ। এটি ব্রহ্মকে আবৃত করে রাখে এবং এই আবরণের ফলেই জীব নিজ স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে না। অদ্বৈত বেদান্ত অবিদ্যার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাকে দুটি প্রধান লক্ষণে চিহ্নিত করে। প্রথমত, অবিদ্যাকে কেবল জ্ঞানের অভাব বলা হয় না, বরং এটিকে ইতিবাচক বা ভাবরূপ অজ্ঞান (Bhāvarūpa) হিসেবে গণ্য করা হয়। দ্বিতীয়ত, অবিদ্যার প্রকৃতিকে অনির্বচনীয় (Anirvachanīya) বলা হয়—অর্থাৎ এটি এমন একটি শক্তি, যা সৎ (real) নয়, কারণ ব্রহ্মজ্ঞান হলে এটি বিনষ্ট হয়; আবার এটি অসৎ (unreal)-ও নয়, কারণ প্রাত্যহিক জীবনে এটির অভিজ্ঞতা হয়, এবং এটি হিত-অহিতের জন্ম দেয়। অবিদ্যার এই ব্যাখাতীত প্রকৃতিই অদ্বৈতকে অন্যান্য দার্শনিক স্কুল থেকে পৃথক করে। অবিদ্যার কালগত অবস্থান হলো অনাদি (beginningless), অর্থাৎ এর কোনো শুরু নেই। তবে এটি স-অন্ত (terminable), কারণ আত্মজ্ঞানের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
অবিদ্যা দুটি মৌলিক ক্ষমতার মাধ্যমে জীবত্ব এবং ব্যাবহারিক জগৎ সৃষ্টি করে।
আবরণ শক্তি (Āvaraṇa Śakti): এই শক্তি ব্রহ্মের প্রকৃত, অখণ্ড স্বরূপকে আবৃত করে রাখে, যেমন মেঘ সূর্যকে ঢেকে রাখে। এই আবরণ শক্তিই নির্দিষ্ট জীব থেকে ব্রহ্মকে আবৃত করে রাখে।
বিক্ষেপ শক্তি (Vikṣepa Śakti): আবরণ শক্তির ফলে আবৃত ব্রহ্মের উপর এই শক্তি মিথ্যা জগৎকে প্রক্ষেপ করে বা ভুল বস্তুর ধারণা জন্ম দেয়, যেমন অন্ধকার বা অজ্ঞানতার কারণে দড়ির উপর সাপ বা জলের রেখা প্রক্ষেপ করা হয়। এই দ্বৈত শক্তির কার্যকারিতা ব্যাবহারিক জগতের সৃষ্টি এবং জীবের দুঃখময় অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করে।
যদিও আদি শঙ্করের ভাষ্যে মায়া ও অবিদ্যাকে অনেক ক্ষেত্রে সমার্থক বলা হয়েছে, শঙ্কর-পরবর্তী অদ্বৈত স্কুলগুলিতে ঈশ্বর ও জীবের উপাধি হিসেবে তাদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য করা হয়।
মায়া (Māyā): এটিকে সমষ্টি উপাধি বা মূলাবিদ্যা (Root Ignorance) বলা হয়, যা ঈশ্বরের (Īśvara) সাথে যুক্ত। মায়া শুদ্ধ সত্ত্বগুণ প্রধান (Śuddha Sattva), এবং ঈশ্বর এই মায়ার নিয়ন্তা (controller)। এই মায়াই ব্রহ্মকে জগতের বস্তুগত কারণ (material cause) রূপে প্রকাশ করে।
অবিদ্যা (Avidyā): এটিকে ব্যষ্টি উপাধি বলা হয়, যা জীবের (Jīva) সাথে যুক্ত। অবিদ্যা হলো মলিন সত্ত্বগুণ প্রধান, যেখানে রজঃ (Rajas) এবং তমঃ (Tamas) গুণগুলির প্রাধান্য থাকে।
অবিদ্যাকে Mūlāvidyā হিসেবে চিহ্নিত করার কারণে এটি সৃষ্টি বা জগৎ প্রপঞ্চের বস্তুগত কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি প্রমাণ করে যে, অবিদ্যা নিছক ব্যক্তিগত ভ্রান্তি নয়; এটি ব্যাবহারিক সৃষ্টিকেও ধারণ করে। এই ধারণাটি উপনিষদীয় বক্তব্য দ্বারা সমর্থিত, যেখানে প্রকৃতিকে (Ajaam) জন্মহীন, বহু প্রজা সৃষ্টিকারী এক শক্তি রূপে বর্ণনা করা হয়েছে, যা অবিদ্যার মৌলিক কার্যকারণ ভূমিকাকে সমর্থন করে।
অদ্বৈত বেদান্তের কেন্দ্রে রয়েছে জীব ও ব্রহ্মের মধ্যেকার ভেদের সম্পূর্ণ অপনোদন এবং তাদের অভেদ প্রতিষ্ঠা। অদ্বৈতমতে, ভেদ ব্যাবহারিক স্তরে অনুভূত হলেও পারমার্থিক স্তরে এর কোনো ভিত্তি নেই। অদ্বৈত সিদ্ধান্ত অনুসারে, সাধারণত তিন প্রকার ভেদের কথা বলা হয়: ১. সজাতীয় ভেদ (একই শ্রেণীর বস্তুর মধ্যে), ২. বিজাতীয় ভেদ (ভিন্ন শ্রেণীর বস্তুর মধ্যে), এবং ৩. স্বগত ভেদ (একই বস্তুর অভ্যন্তরীণ অংশগুলির মধ্যে)। ব্রহ্মের প্রসঙ্গে এই সমস্ত ভেদ অস্বীকার করা হয়। ব্রহ্ম একমাত্র অখণ্ড সত্য। যেহেতু ব্রহ্ম অদ্বিতীয়, ব্রহ্মের সমজাতীয় (সজাতীয়) বা ভিন্ন জাতীয় (বিজাতীয়) আর কোনো সত্তা থাকতে পারে না। একইভাবে, ব্রহ্ম অংশহীন এবং গুণহীন (Nirguna), তাই এর অভ্যন্তরে কোনো স্বগত ভেদও অসম্ভব।