যৌক্তিক ভিত্তির দুর্বলতা: একটি বিষয়কে প্রমাণ করতে হলে তাকে বাইরের কোনো নিরপেক্ষ প্রমাণের উপর নির্ভর করতে হয়। যেমন, কোনো বস্তুর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য আমরা তাকে পর্যবেক্ষণ করি, বা তার কার্যকারিতা দেখি। কিন্তু যখন প্রত্যক্ষ নিজেই নিজের পার্থক্য এবং স্বতন্ত্রতা প্রমাণ করার জন্য নিজের উপর নির্ভরশীল হয়, তখন সেই প্রমাণটি তার যৌক্তিক ভিত্তি হারায়।
অদ্বৈতবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা: অদ্বৈত বেদান্ত এই আত্মাশ্রয় দোষের মাধ্যমে দ্বৈতবাদীদের যুক্তিকে খণ্ডন করে। অদ্বৈতবাদীরা মনে করেন, যদি জগৎ এবং জ্ঞানকে পৃথক সত্তা হিসেবে দেখা হয় এবং তাদের পার্থক্যকে প্রত্যক্ষের একটি গুণ হিসেবে ধরা হয়, তবে এই পার্থক্য প্রমাণের জন্য যে-যুক্তি দেওয়া হয়, তা শেষ পর্যন্ত নিজের উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে দ্বৈতবাদীদের দ্বারা প্রস্তাবিত জগৎ ও জ্ঞানের পৃথক অস্তিত্বের ধারণাটি একটি স্ব-বিরোধী যুক্তিতে পরিণত হয়।
অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে, পরম সত্তা ব্রহ্ম অদ্বৈত এবং জ্ঞানও সেই ব্রহ্মেরই প্রকাশ। সেখানে জ্ঞাতা, জ্ঞেয় এবং জ্ঞান—এই ত্রিবিধ ভেদের চূড়ান্ত সত্যতা নেই। যখন ভেদের উপর জোর দেওয়া হয় এবং সেই ভেদকেই প্রত্যক্ষের একটি বিশেষণ হিসেবে দেখা হয়, তখন সেই ভেদ জ্ঞান নিজেই নিজের প্রমাণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই নির্ভরশীলতা একটি দুর্বল ভিত্তি তৈরি করে, যা চূড়ান্ত সত্য উপলব্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করে। দ্বৈতবাদীদের প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং নির্ণায়ক জ্ঞানের ব্যাখ্যায় যে ‘আত্মাশ্রয় দোষ’ বিদ্যমান, তা-ই তাদের যুক্তির দুর্বলতাকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে। এটি অদ্বৈত বেদান্তের দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বৈতবাদ-বিষয়ক সমালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
এই যুক্তির ধরন কোথা থেকে এসেছে? এটি আসলে অদ্বৈত বেদান্তের বিতর্কমূলক গ্রন্থগুলির (যেমন খণ্ডনখণ্ডখাদ্য, চিত্সুখী, অদ্বৈতসিদ্ধি) প্রচলিত কৌশল। এঁরা দেখাতে চান—যতই দ্বৈততার পক্ষ সমর্থনে নানা তত্ত্ব (সৃষ্টি-প্রক্রিয়া, কার্য-কারণ তত্ত্ব, “অসৎ-কারণবাদ” ইত্যাদি) দাঁড় করানো হোক না কেন, শেষপর্যন্ত সবগুলোতেই তর্কগত অসংগতি ধরা পড়ে। সহজভাবে, এখানে আলোচ্য বিষয় হলো—যদি জ্ঞান আর জগতকে আলাদা ধরা হয়, তবে পার্থক্য জানাতে হলে প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু যে-প্রমাণ আনা হচ্ছে (প্রত্যক্ষ), তা নিজেরই অস্তিত্ব ও ভিন্নতা দেখাতে গিয়ে আত্মাশ্রয় দোষে পড়ে যায়। তাই দ্বৈতবাদ টিকতে পারে না।
এই অনুচ্ছেদটি অদ্বৈত বেদান্তের সমালোচনামূলক পদ্ধতির উৎস এবং এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে। অদ্বৈত বেদান্তের প্রধান লক্ষ্য হলো ব্রহ্মের একত্ব প্রমাণ করা এবং জগতের বহুত্বকে মায়া বা অবিদ্যার ফল হিসেবে দেখানো। এটি করার জন্য অদ্বৈতী দার্শনিকরা অন্যান্য দর্শন, বিশেষ করে দ্বৈতবাদী দর্শনগুলির যুক্তিকে খণ্ডন করেন। শ্রীহর্ষের ‘খণ্ডনখণ্ডখাদ্য’, চিৎসুখের ‘চিত্সুখী’ এবং মধুসূদন সরস্বতীর ‘অদ্বৈতসিদ্ধি’ এই ধারারই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এই গ্রন্থগুলিতে কঠোর যুক্তি ও বিশ্লেষণ ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে যে, দ্বৈতবাদী দর্শনগুলি যতই সৃষ্টিতত্ত্ব, কার্য-কারণ তত্ত্ব, বা অন্য কোনো তত্ত্ব দিয়ে জগতের সত্যতাকে প্রমাণ করার চেষ্টা করুক না কেন, তাদের যুক্তি শেষ পর্যন্ত আত্মবিরোধিতা বা যৌক্তিক ত্রুটিতে ভোগে।
মূল বক্তব্য হলো, যদি কেউ জ্ঞান (consciousness) এবং জগৎকে (world) দুটি পৃথক সত্তা হিসেবে দাবি করে, তবে তাকে এই পার্থক্যের সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু যখন তারা প্রত্যক্ষকে প্রমাণ হিসেবে হাজির করে, তখন এই প্রত্যক্ষ নিজেই নিজের অস্তিত্ব এবং স্বতন্ত্রতা প্রমাণ করতে গিয়ে ‘আত্মাশ্রয়’ দোষে পড়ে যায়। অর্থাৎ, প্রমাণটি নিজের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা একটি যৌক্তিক ত্রুটি। এই কারণে, অদ্বৈত বেদান্তীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, দ্বৈতবাদ বা জগতের পৃথক অস্তিত্বের ধারণা যৌক্তিকভাবে টিকে থাকতে পারে না। তাঁদের মতে, ব্রহ্মই একমাত্র সত্য এবং জগৎ হলো ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি প্রতীয়মান সত্তা, যা অবিদ্যা বা অজ্ঞানতার ফল। যখন এই অবিদ্যা দূর হয়, তখন ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয় এবং জগতের বহুত্ব বিলীন হয়ে একত্ব প্রতীয়মান হয়।
আমরা জ্ঞান এবং জ্ঞানের বস্তু, অর্থাৎ জ্ঞাতা (বিষয়) এবং জ্ঞেয় (বস্তু)-এর মধ্যেকার সম্পর্কের একটি গভীর বিশ্লেষণ করছি। প্রশ্ন উঠছে যে, একটি পাত্র এবং সেই পাত্র সম্পর্কে আমাদের যে-জ্ঞান, তাদের মধ্যে কি কোনো মৌলিক পার্থক্য আছে? যদি আমরা বলি, এই পার্থক্যটি ‘বিষয়-অংশ’ (subject-portion) দ্বারা গঠিত, যার অর্থ হলো, জ্ঞান তার নিজস্ব বস্তুর থেকে আলাদা, তাহলে বেশ প্রণিধানযোগ্য যৌক্তিক সমস্যা দেখা দেয়।
প্রথমত, যদি ইন্দ্রিয়গুলি কোনো বস্তুর (যেমন পাত্র) এবং তার গুণের (যেমন পাত্রের আকৃতি, রং ইত্যাদি) সংস্পর্শে আসার ফলেই ‘নির্দিষ্ট জ্ঞান’ (বিশেষ জ্ঞান) তৈরি হয়, তবে এই পার্থক্য (পাত্র এবং পাত্রের জ্ঞান ভিন্ন) আগে থেকেই বিদ্যমান থাকতে হবে। এর কারণ খুবই সরল: যদি জ্ঞানের গঠনের আগে এই পার্থক্যটি না থাকে, তবে ইন্দ্রিয়গুলি এই পার্থক্যের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে না। ফলস্বরূপ, কোনো সুনির্দিষ্ট জ্ঞানই তৈরি হতে পারবে না। জ্ঞান কেবল তার বিদ্যমান বস্তুর উপর আলোকপাত করতে পারে, কিন্তু যদি বস্তুর অস্তিত্ব এবং জ্ঞানের মধ্যেকার পার্থক্যই অনির্বচনীয় হয়, তবে জ্ঞান তার নিজস্ব সীমানা কীভাবে চিহ্নিত করবে? এটি একটি পূর্বাবধারণার প্রশ্ন: জ্ঞান কি নিজের গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেই নিজের বস্তু থেকে তার পার্থক্যকে ধারণ করে, না কি এই পার্থক্য জ্ঞান তৈরির পূর্বে স্বাধীনভাবে বিদ্যমান থাকে?
পূর্বাবধারণা (Sanskrit: pūrvābhyupagam, বাংলায় প্রচলিত অর্থে পূর্বধারণা বা preconception) বলতে বোঝানো হয়—কোনো আলোচনায় প্রবেশের আগেই একটি নির্দিষ্ট ধারণা, শর্ত বা অনুমানকে আগে থেকেই মেনে নেওয়া। ভারতীয় দর্শনের তর্কপদ্ধতিতে “পূর্বাবধারণা” মানে হলো—যে মত বা নীতি প্রতিপক্ষ বা বিতর্ককারী আগে থেকেই মেনে নিয়েছে, সেটিকে সামনে এনে তর্ক করা। অনেকসময় “পূর্বাবধারণা” বলতে এমন একটি pre-supposition বোঝানো হয়, যা প্রমাণ ছাড়াই আলোচনার প্রাথমিক শর্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কেউ যদি আলোচনা শুরু করার আগেই ধরে নেয়—“আত্মা আছে”—তাহলে এটি একটি পূর্বাবধারণা। ন্যায়-দর্শনের বিতর্কে প্রমাণ হিসেবে যখন বলা হয়—“তুমিই তো আগে বলেছিলে যে, দেহ নশ্বর”—তখন সেটিও পূর্বাবধারণা হিসেবে ধরা হয়। পূর্বাবধারণা কখনো বিতর্কের ভিত্তি হয়, কখনো যুক্তির সীমাবদ্ধতা তৈরি করে।
দ্বিতীয়ত, যদি আমরা এই যুক্তি দিই যে, এই পার্থক্য জ্ঞানের আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল, কিন্তু তা কেবল ‘অজানা’ ছিল—তাহলে এটি আরও গভীর একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করে। যদি জ্ঞান নিজে যা ছিল না, অথচ জ্ঞানের আগে বিদ্যমান ছিল, তা একবার গঠিত হয়, তবে জ্ঞান দ্বারা কীভাবে উপলব্ধি করা যেতে পারে? এই যুক্তি একটি যৌক্তিক অসংগতির (logical inconsistency) দিকে নিয়ে যায়। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, জ্ঞান নিজেই তার নিজস্ব পার্থক্যগুলি স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারে না, যেমনটি প্রথমত দাবি করা হয়েছিল। যদি পার্থক্যটি অজানা থাকে, তবে জ্ঞান কীভাবে তাকে উদ্ঘাটন করবে? এটি অনেকটা এমন যে, একটি আলোর উৎস নিজেই নিজের অন্ধকারকে উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করছে। জ্ঞান যদি তার নিজস্ব বস্তু থেকে নিজেকে আলাদা করতে না পারে, তবে তার কার্যকারিতা বা মৌলিক স্বকীয়তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
এই আলোচনা মূলত জ্ঞানের প্রকৃতি, জ্ঞানের উৎপত্তির প্রক্রিয়া এবং জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়ের মধ্যেকার অদ্বৈত বা দ্বৈত সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে। এটি ভারতীয় দর্শনের ‘অদ্বৈতবাদ’ এবং ‘দ্বৈতবাদ’ সম্পর্কিত বিতর্কের গভীরতার ইঙ্গিত দেয়। অদ্বৈতবোধের কর্মশালায়, এই ধরনের মৌলিক প্রশ্নগুলিই আমাদের চিন্তাভাবনাকে আরও শাণিত করে তোলে। জ্ঞান কি কেবল একটি নিষ্ক্রিয় প্রতিফলক, না কি এটি সক্রিয়ভাবে নিজের বস্তু এবং নিজের সত্তাকে নির্মাণ করে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর আমাদের বাস্তবতা এবং সত্যের উপলব্ধি সম্পর্কে মৌলিক ধারণাকে পুনর্নির্মাণ করতে বাধ্য করে।
অন্য জ্ঞান প্রকাশের ক্ষেত্রে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা: যখন আমরা প্রস্তাব করি যে, “এক জ্ঞান অন্য জ্ঞানকে প্রকাশ করে”, তখন প্রাথমিকভাবে এটি একটি যৌক্তিক সমাধান বলে মনে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান জ্ঞান অতীত জ্ঞানকে আলোকিত বা প্রকাশ করতে পারে—যেমন, আমি এখন যা শিখছি, তা আমাকে পূর্বে অর্জিত জ্ঞানকে নতুন করে বুঝতে সাহায্য করে। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি গুরুতর দুর্বলতা আছে: এটি জ্ঞানের স্ব-প্রকাশমান চরিত্রকে (নিজেকে নিজে প্রকাশ করার ক্ষমতা) সময়ের উপর নির্ভরশীল করে তোলে। এর অর্থ দাঁড়ায়, জ্ঞান নিজেকে কেবল বর্তমানেই প্রকাশ করতে সক্ষম, অতীতে বা ভবিষ্যতে নয়। এই সীমাবদ্ধতা জ্ঞানের মৌলিক, সহজাত স্ব-প্রকাশের প্রকৃত প্রকৃতিকে দুর্বল করে দেয়। জ্ঞান যদি কেবল বর্তমানের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে তার সর্বজনীনতা ও কালহীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে, যা অদ্বৈত বেদান্তের মূল ধারণার পরিপন্থী।
স্ব-প্রভিতার কালহীন প্রকৃতি: এর বিপরীতে, অদ্বৈত বেদান্তের মূল বক্তব্য হলো, জ্ঞানের স্ব-প্রকাশ সময়ের সীমাবদ্ধতা দ্বারা আবদ্ধ নয়। জ্ঞানের স্ব-প্রভা (নিজেকে জানানোর সহজাত ক্ষমতা) সমস্ত অস্থায়ী প্রসঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। এটি অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ—যে-কোনো সময়ের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অতীতে উপলব্ধ বিষয়গুলির জ্ঞান, ভবিষ্যতে উপলব্ধ বিষয়গুলির জ্ঞান (যেমন, কোনো ভবিষ্যৎ ঘটনার পূর্বাভাস বা পরিকল্পনা), এবং বর্তমানে অর্জিত জ্ঞান—সবই একই মৌলিক স্ব-প্রকাশ প্রদর্শন করে। জ্ঞানের অপরিহার্য প্রকৃতি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না; এটি শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয়। উদাহরণস্বরূপ, একবার একটি পাত্র দেখা হলে, তার ধারণাগত অস্তিত্বে এটি চিরকাল একটি পাত্রই থাকে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে তার মৌলিক 'পাত্রত্ব' পরিবর্তিত হয় না। এটি সত্তার অদ্বৈত ধারণার একটি মূল ভিত্তি।
কেবল অস্তিত্বের অপর্যাপ্ততা: একটি সাধারণ যুক্তি হতে পারে, “একটি পাত্র এবং একটি পাত্রের জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যটি বিশুদ্ধভাবে অস্তিত্বে (যদিও অজানা) বিদ্যমান ছিল। ইন্দ্রিয়গুলি এই পার্থক্যের সাথে সংযুক্ত হয়েছিল এবং সেই সংযোগ থেকে পরে জ্ঞান তৈরি হয়েছিল।” এই যুক্তিটি আসলে একটি দাবি বা বিবৃতি মাত্র, যার কোনো শক্তিশালী সমর্থনকারী প্রমাণ নেই। যদি আমরা কেবল বলি যে, “অস্তিত্ব ছিল” এবং এর সপক্ষে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ উপস্থাপন না করি, তবে সেই অস্তিত্বকে অপ্রমাণিত এবং অসত্য বলেই গণ্য করা হয়। এটি দ্বৈতবাদীদের একটি প্রচলিত যুক্তি, যা অদ্বৈতবাদীরা খণ্ডন করে দেখান যে, অপ্রমাণিত অস্তিত্বের দাবি একটি দুর্বল ভিত্তি। জ্ঞান যদি কেবল অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তার সত্যতা অনিশ্চিত থেকে যায়।
দ্বৈতবাদের সমস্যাগুলির সারাংশ: অদ্বৈত বেদান্ত দ্বৈততার ধারণা (জ্ঞান এবং জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে পৃথক অস্তিত্ব) যাচাই-বাছাই করে দেখায়, এটি যৌক্তিকভাবে টেকসই নয়। এর প্রধান তিনটি সমস্যা নিম্নরূপ:
পূর্বপার্থক্য: যদি দাবি করা হয়, জ্ঞান এবং জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে পার্থক্যটি আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল, তবে তা প্রমাণ করা কঠিন। এই দাবিটি প্রমাণের অভাবে ভিত্তিহীন বলে বিবেচিত হয়। পার্থক্য যদি স্বতঃসিদ্ধ না হয়, তবে এর অস্তিত্ব কেবল অনুমানের উপর নির্ভরশীল থাকে।
পার্থক্যের স্ব-প্রকাশ: যদি বলা হয়, জ্ঞান তার নিজস্ব পার্থক্য প্রকাশ করে (অর্থাৎ, জ্ঞান নিজেই নিজেকে এবং তার পার্থক্যকে উদ্ভাসিত করে), তবে এটি 'আত্মাশ্রয় দোষ' বা স্ব-নির্ভরতার ত্রুটির দিকে নিয়ে যায়। অর্থাৎ, জ্ঞান তার নিজের অস্তিত্ব এবং নিজের পার্থক্য প্রমাণের জন্য নিজের উপরেই নির্ভর করে, যা একটি চক্রাকার যুক্তি।
অন্য জ্ঞান দ্বারা প্রকাশ: যদি যুক্তি দেওয়া হয় যে, অন্য কোনো জ্ঞান এই পার্থক্যটি প্রকাশ করে (যেমন, একটি জ্ঞান অন্য জ্ঞানকে প্রমাণ করে), তবে এটি 'সময়-নির্ভরতা' প্রবর্তন করে। এটি জ্ঞানের কালহীন ও স্বয়ম্ভূ প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক। জ্ঞান যদি প্রকাশের জন্য অন্য জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে তার স্ব-প্রভা ক্ষুণ্ন হয় এবং এটি একটি অন্তহীন পশ্চাদপসরণ (regress) সৃষ্টি করে।