ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রে আত্মার ধারণাটি কেবল একটি বিশ্বাস নয়, বরং এটি একটি সুগভীর দার্শনিক অনুসন্ধান, যা অস্তিত্ব, নৈতিকতা এবং জ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কিত মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করে। লেখার শুরুতে আমি তিনটি বিষয় নিয়ে আলাপ করছি—প্রথমত, বেদের আলোকে আত্মার নিত্য, আনন্দময় এবং অবিনাশী স্বরূপের বর্ণনা; দ্বিতীয়ত, নাস্তিক্য মতবাদের, বিশেষত চার্বাক দর্শনের মূল আপত্তির খণ্ডন; এবং তৃতীয়ত, জ্ঞান-অর্জনের প্রামাণ্য পদ্ধতিগুলোর সীমাবদ্ধতা এবং আত্মার অতীন্দ্রিয় প্রকৃতি। ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন ধারার মধ্যকার সূক্ষ্ম সংযোগ এবং বৈপরীত্যের ওপর আলোকপাত করার মাধ্যমে আত্মার ধারণাটিকে একটি নৈতিক কার্য-কারণ নীতির (কর্মবাদ) আবশ্যিক পূর্বশর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে—কেন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান বা অনুমান দ্বারা এই পরম সত্তাকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করব।
উল্লেখ্য, ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে চার্বাক দর্শন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বতন্ত্র নাস্তিক্যবাদী মতবাদ, যা লোকায়ত দর্শন নামেও পরিচিত। এটি ভারতীয় চিন্তাধারার মূল স্রোতের (যেমন বেদ, ঈশ্বর, পরকাল, মোক্ষ ইত্যাদি) বিপরীতে অবস্থান করে এক বৈপ্লবিক এবং ইহজাগতিক জীবনদর্শনের প্রবর্তন করেছিল। এই দর্শন কেবল দার্শনিক আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গেও এর গভীর সম্পর্ক ছিল, কারণ এটি জাগতিক সুখ ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার উপর জোর দিত। নাস্তিক্য ধারার এই দর্শনটির নাম চার্বাক হওয়ার সঠিক ও একক উৎস নিশ্চিতভাবে জানা যায় না, তবে এর উৎপত্তির পেছনে প্রধানত দুটি প্রচলিত মত বা ব্যাখ্যা রয়েছে:
ক. ভোগবাদী জীবনশৈলী থেকে উদ্ভূত অর্থ (Pleasing Words): "চার্বাক" নামটি দুটি সংস্কৃত শব্দাংশের সমন্বয়ে গঠিত বলে মনে করা হয়: চারু (caru): যার অর্থ হলো সুন্দর, মনোহর, বা প্রীতিকর। বাক্ (vak): যার অর্থ হলো কথা বা বাণী। এই অর্থে, চার্বাক বলতে বোঝায় "যারা মনোহর বা প্রীতিকর কথা বলে"। চার্বাক দর্শন যেহেতু সুখবাদ বা ভোগবাদের কথা বলে (যেমন "ঋণ করেও ঘি খাও, যতক্ষণ বাঁচো সুখে বাঁচো"), তাই এই দর্শনটি সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং প্রিয় ছিল। এই কারণেই একে এমন একটি নাম দেওয়া হয়েছে যা সরাসরি এর ভোগবাদী বার্তাটিকে নির্দেশ করে।
খ. প্রতিষ্ঠাতা ঋষির নাম অনুসারে (Founder's Name): দ্বিতীয় মতটি হলো, এই দর্শনটি এর প্রতিষ্ঠাতা বা প্রথম প্রচারক ঋষি চার্বাকের নাম অনুসারে পরিচিত। কিছু ভারতীয় গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায় যে, বৃহস্পতি নামে একজন ঋষি প্রথমে এই মতবাদ প্রচার করেন, এবং চার্বাক ছিলেন তাঁর প্রধান শিষ্য। অথবা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চার্বাক নিজেই এই দর্শনের প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। যে-কোনো প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক ঐতিহ্যের মতো, প্রবর্তকের নামেই সেই বিশেষ ধারাটি পরিচিত হয়ে ওঠার রীতি বিদ্যমান। যেমন—গৌতমের ন্যায় দর্শন বা কণাদের বৈশেষিক দর্শন।
'চার্বাক' নামটি সম্ভবত এর ভোগবাদী ও সরল জীবনবোধের কারণে এসেছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে "মনোহর কথা" বলে মনে হয়েছিল। তবে, এটি একজন প্রতিষ্ঠাতা ঋষির নাম থেকেও আসতে পারে—উভয় ব্যাখ্যাই প্রচলিত। এই দর্শনকে এর জাগতিক এবং প্রত্যক্ষ জ্ঞানবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে লোকায়ত দর্শন (লোক + আয়ত = যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্তৃত) নামেও ডাকা হয়। চার্বাক দর্শনকে সাধারণত নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা এটিকে অন্যান্য ভারতীয় দর্শন থেকে স্বকীয়তা প্রদান করে:
১. মূল ভিত্তি: চরম বস্তুবাদ (Radical Materialism): চার্বাক দর্শনের সবচেয়ে মৌলিক ভিত্তি হলো চরম বস্তুবাদ। এই দর্শন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, জড়বস্তুই একমাত্র সত্য এবং অস্তিত্বশীল প্রতিটি জিনিসই কেবল চারটি মৌলিক উপাদানে (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ—অর্থাৎ পৃথিবী, জল, আগুন, এবং বায়ু) গঠিত। এই চারটি উপাদানকে একত্রে 'ভূত' বলা হয়। চার্বাকরা পঞ্চম উপাদান, অর্থাৎ আকাশকে পৃথক উপাদান হিসেবে স্বীকার করে না, কারণ আকাশকে পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায় না। একইভাবে, তারা আত্মাকেও (চেতনা) একটি পৃথক, চিরন্তন বা অলৌকিক সত্তা হিসেবে অস্বীকার করে। তাদের মতে, যা কিছু আমরা দেখি, স্পর্শ করি, অনুভব করি, তা সবই এই চারটি জড় উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এই বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তাদের দার্শনিক আলোচনার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।
২. জ্ঞানের প্রমাণ—একমাত্র প্রত্যক্ষ (Perception as the Sole Epistemological Tool): চার্বাক দর্শনের জ্ঞানতত্ত্ব (Epistemology) অত্যন্ত সহজবোধ্য এবং সোজাসাপটা। তারা ঘোষণা করে যে, প্রত্যক্ষ জ্ঞানই (যা পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সরাসরি উপলব্ধি করা যায়—যেমন দেখা, শোনা, স্পর্শ করা, স্বাদ গ্রহণ করা এবং ঘ্রাণ নেওয়া) সত্যের একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রমাণ। তাদের মতে, যা সরাসরি ইন্দ্রিয়গোচর নয়, তা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা অসম্ভব বা ভ্রান্তিমূলক। এই কারণে, চার্বাকরা অনুমান (Inference), শব্দ (শাস্ত্র বা প্রামাণিক উক্তি), উপমান (তুলনা) ইত্যাদিকে প্রমাণ হিসেবে কঠোরভাবে অস্বীকার করে। তাদের যুক্তি হলো, অনুমান বা শাস্ত্রের মাধ্যমে এমন কিছু জানা যায়, যা সরাসরি দেখা যায় না (যেমন ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, পরকাল, অদৃশ্য আত্মা)। যেহেতু এই বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করা যায় না, তাই এগুলো সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয় এবং এগুলোর অস্তিত্বও প্রশ্নবিদ্ধ। এই সীমিত জ্ঞানতত্ত্ব তাদের নাস্তিক্যবাদী অবস্থানের একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে।
৩. জীবনদর্শন—ভোগবাদ (Hedonism as the Ultimate Goal of Life): চার্বাক দর্শনের জীবনদর্শন বা নীতিশাস্ত্র (Ethics) হলো কঠোর ভোগবাদ। তারা মনে করে, সুখই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং একমাত্র উদ্দেশ্য। তাদের বিখ্যাত উক্তি, "ঋণ করেও ঘি খাও, যতক্ষণ বাঁচো সুখে বাঁচো", এই ভোগবাদী ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। এর অর্থ হলো, ইহজীবনের সুখই সব কিছু; পরকাল, মোক্ষ বা মৃত্যুর পরের কোনো অস্তিত্বের জন্য বর্তমানের সুখকে বিসর্জন দেওয়া মূর্খতা। তারা মোক্ষ (মুক্তি), ধর্ম, পাপ-পুণ্য, স্বর্গ-নরক, কর্মফল এবং পুনর্জন্মের ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। চার্বাকদের মতে, এই ধারণাগুলো মানুষের মধ্যে ভয় ও লোভের জন্ম দেয় এবং তাদের জাগতিক সুখ থেকে বঞ্চিত করে। জীবন সংক্ষিপ্ত, তাই এই জীবনেই যতটা সম্ভব আনন্দ ও সুখ উপভোগ করা উচিত। তাদের দর্শন মানুষকে ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে ব্যক্তিগত সুখের অন্বেষণে উৎসাহিত করে।
৪. চেতনা বা আত্মার ধারণা (Consciousness and the Soul: An Emergent Property): চেতনা বা আত্মার ধারণার ক্ষেত্রে চার্বাকরা এক অভিনব ব্যাখ্যা প্রদান করে। তারা চেতনা বা আত্মাকে দেহ থেকে পৃথক কোনো চিরন্তন বা অমর সত্তা বলে মনে করে না। তাদের মতে, চেতনা হলো দেহের একটি উপজাত (By-product), ঠিক যেমন গাঁজন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উপাদান একত্রিত হয়ে শরাব বা নেশার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, যখন চারটি মৌলিক জড় উপাদান একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে একত্রিত হয় এবং একটি দেহ গঠন করে, তখন সেই দেহের মধ্যে চেতনার উদ্ভব হয়। এটি একটি গুণ, যা উপাদানের নির্দিষ্ট সংমিশ্রণের ফল। দেহের অস্তিত্বের সঙ্গে চেতনার অস্তিত্ব অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তাই, দেহ মরে গেলে বা ভেঙে গেলে চেতনারও বিলুপ্তি ঘটে—আত্মা বা চেতনা মৃত্যুর পরেও বিদ্যমান থাকে না। এই ব্যাখ্যা ভারতীয় দর্শনের বেশিরভাগ ধারার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, যা আত্মাকে অবিনশ্বর ও দেহ থেকে পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে।
সংক্ষেপে, চার্বাক দর্শন হলো ভারতীয় নাস্তিক্য মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী একটি ধারা, যা সম্পূর্ণরূপে ইহজাগতিকতা, চরম বস্তুবাদ এবং প্রত্যক্ষ প্রমাণভিত্তিক জীবনযাপনে বিশ্বাসী। এটি প্রাচীন ভারতে এক প্রগতিশীল এবং যুক্তিভিত্তিক চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব করে, যা আজও আলোচনার বিষয়বস্তু।
আত্মার সুগভীর আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক ধারণার মূল উৎস হিসেবে বেদ ও উপনিষদ অগ্রগণ্য, যেখানে আত্মাকে একটি নিত্য, শাশ্বত এবং অবিনশ্বর সত্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি এমন এক সত্তা, যা জড়জগতের ক্ষণস্থায়ী বস্তুগুলোর মতো জন্ম, বৃদ্ধি, পরিবর্তন, ক্ষয় বা বিনাশের অধীন নয়। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত, যা হিন্দু ধর্মমতে পরম সত্য বা ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং মোক্ষলাভের উপায় বর্ণনা করে। এই শাস্ত্র অনুযায়ী, আত্মা হলো জীবের অন্তর্নিহিত অমর সত্তা, যা সমগ্র বিশ্বের সত্তা ব্রহ্মের সঙ্গে এক ও অভিন্ন।
বেদের আলোকে আত্মার চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উপলব্ধ হয়েছে: নিত্য, আনন্দময়, জ্যোতির্ময় এবং অবিনাশী। আত্মা নিত্য, অর্থাৎ এর কোনো জন্ম বা বিনাশ নেই। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার শ্লোক (২/২০) এই সত্যকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে: “আত্মার কখনও জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না, অথবা পুনঃপুনঃ তাঁর উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না। তিনি জন্মরহিত শাশ্বত, নিত্য এবং পুরাতন হলেও চিরনবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না”। এই শ্লোকটি আত্মার নিত্যতাকে নিশ্চিত করে এবং দেখায় যে, এটি জড় পদার্থের ছয়টি বিকার—জন্ম, অস্তিত্ব, বৃদ্ধি, পরিণাম, ক্ষয় ও বিনাশ—থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
আত্মা আনন্দময় এবং জ্যোতিঃস্বরূপ। ঋষিগণ ধ্যানের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছেন যে, ব্রহ্মই ঈশ্বর, যিনি জ্যোতিঃস্বরূপ এবং সকলের মধ্যে বিরাজমান। জ্ঞানীর কাছে তিনি ব্রহ্ম, যোগীর কাছে পরমাত্মা এবং ভক্তের কাছে তিনি ভগবান। এই ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধি একই পরম সত্তার ভিন্ন দিককে নির্দেশ করে, যাঁর স্বরূপ আনন্দময় ও চিন্ময়। আত্মা বা ব্রহ্মের সত্তা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই তিন কালেই অবাধিত বা অবিনষ্ট, যা তাকে চিরন্তন করে তোলে।
আত্মার অবিনাশিত্ব ও 'অব্যয়' শব্দের তাৎপর্য বর্ণনা প্রসঙ্গে—"সেই আত্মা সত্যিই অবিনাশী এবং তার স্বরূপ ধ্বংসাতীত," বাক্যের 'অব্যয়' শব্দটি কেন্দ্রীয় গুরুত্ব বহন করে। 'অব্যয়' শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো: যা কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, অপরিবর্তনীয়। ব্যাকরণে, 'অব্যয়' এমন একটি পদকে বোঝায়, যার কোনো পরিবর্তন হয় না—লিঙ্গ, বচন বা কারকভেদে নয়। এই ব্যাকরণগত ধারণাটি আত্মার দার্শনিক স্বরূপের সঙ্গে এক গভীর সমান্তরালতা নির্দেশ করে। যেমন একটি ব্যাকরণগত 'অব্যয়' পদ তার মূল রূপ ও অর্থকে সর্বদা অক্ষুণ্ণ রাখে, ঠিক তেমনি আত্মা তার নিত্য, অনাদি ও অনন্ত স্বরূপকে সময়ের প্রভাবে কখনও হারায় না।
এই সমান্তরালতা থেকে বোঝা যায় যে, 'অব্যয়' শব্দটি কেবল আত্মার অবিনাশিত্বকে নির্দেশ করে না, বরং তার অপরিহার্য অপরিবর্তনীয় প্রকৃতিকেও ধারণ করে। এটি এমন এক সত্তা, যার কোনো অংশ নেই, কোনো গুণ নেই, এবং সে অনন্তকাল ধরে অপরিবর্তিত ও অসীম। এটি আত্মাকে এক নিরাকার এবং অতীন্দ্রিয় সত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে, যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা বস্তুগত কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। উপনিষদ এই ধারণাকে সমর্থন করে, যেখানে আত্মা বা পরমাত্মাকে অতীন্দ্রিয় সত্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বেদান্ত দর্শনে আত্মার এই স্বরূপের উপলব্ধিই 'মোক্ষ' বা আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ। যখন একজন ব্যক্তি এই জ্ঞান লাভ করে যে, তার অন্তর্নিহিত আত্মা প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মের সঙ্গে এক ও অভিন্ন, তখন সে অবিদ্যা বা মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। এই জ্ঞান কোনো বস্তুগত বা লৌকিক জ্ঞান নয়, বরং এটি পরম সত্যের অন্তর্দৃষ্টি, যা কেবল বৈদিক শিক্ষার মাধ্যমে লাভ করা যায়।
বৈদিক দর্শনের আত্মার ধারণার বিপরীতে, ভারতীয় দর্শনে নাস্তিক্য মতবাদ একটি তীব্র আপত্তি উত্থাপন করে। নাস্তিক্য মতের মূল আপত্তি হলো, আত্মাকে জানার জন্য বেদের কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ শরীর ও ইন্দ্রিয়সমূহই আত্মা। এই মতবাদ, যা প্রধানত চার্বাক দর্শনের অনুসারী, বিশ্বাস করে যে, আত্মার অস্তিত্ব স্বতঃসিদ্ধ এবং তা সাধারণ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা ও অনুমান দিয়েই প্রমাণ করা যায়।