কাজ, সচেতন প্রয়াস, অবিরাম তার প্রয়োগ—এসবই সফলতার রহস্য। “ছোটো! ছোটো!”—এটাই সফলতার প্রথম নীতি। কাজ ছাড়া তুমি কখনও সফল হতে পারবে না। অলস মানুষ টিকতে পারে না “অস্তিত্বের সংগ্রাম”-এ। এখানে এমন একটি প্রশ্ন আসে, যা প্রায়ই বেদান্তের বিরুদ্ধে তোলা হয়। প্রশ্ন হলো—তাহলে কীভাবে অবিরাম শ্রমকে মেলানো যাবে বেদান্তে বর্ণিত আত্মার অদ্বিতীয়, নির্লিপ্ত, শুদ্ধ প্রকৃতির সঙ্গে? বেদান্ত কি তবে অলসতা আর নিষ্ক্রিয়তার দিকে ঠেলে দেয় না—যেহেতু এটি শিক্ষা দেয় ঈশ্বরীয় আত্মার বিশ্রাম ও শান্তির উপলব্ধি, আর প্রচার করে সংন্যাস (অন্তরের আসক্তি ত্যাগ)? এই আপত্তি মূলত কাজ ও সংন্যাসের প্রকৃতি সম্পর্কে ভুল ধারণা থেকে এসেছে।
কাজ কী? বেদান্ত-মতে, গভীর বা তীব্র কাজই হলো বিশ্রাম। এ এক আপাতবিরোধী, চমকপ্রদ উক্তি। সত্যিকার কাজ আসলে বিশ্রাম। এটাই বেদান্তের শিক্ষা। সবচেয়ে বড় কর্মীকে লক্ষ্য করো—যখন সে তার কাজের মাত্রার চূড়ায় পৌঁছেছে, যখন সে তার সর্বোত্তমটা দিচ্ছে—অন্যদের চোখে সে প্রচণ্ড পরিশ্রম করছে, কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে দেখলে—সে কোনো কর্তাই নয়।
সত্যিকার কাজ সম্পন্ন হয় তখনই, যখন “আমি কাজ করছি”—এই আত্মজোর-দেওয়া কর্মীই বিলীন হয়। শরীর যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে চলে, মন এতটাই কাজের মধ্যে মগ্ন হয়ে যায় যে, “আমি কাজ করছি” ধারণাটি একেবারেই বিলীন হয়ে যায়। ভোক্তার ক্ষুদ্র অহম্বোধ সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়, কৃতিত্ব-লাভের ক্ষুদ্র আত্মবোধও অনুপস্থিত থাকে। এই অবিরাম কাজ অজান্তেই তোমাকে পৌঁছে দেয় সর্বোচ্চ যোগে।
একজন কবি তখনই অনুপ্রাণিত হন, যখন তিনি ক্ষুদ্র আত্ম বা অহংকারের ধারণার ঊর্ধ্বে থাকেন, যখন তাঁর মনেই থাকে না: “আমি কবিতা লিখছি।” যে-কোনো মানুষকে জিজ্ঞেস করো—যে গণিতের কোনো কঠিন সমস্যার সমাধান করেছে—সে বলবে, সমস্যার সমাধান হয় তখনই, যখন “আমি করছি” এই ধারণা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকে। মানুষ যত বেশি ক্ষুদ্র অহম্ বা ছোটো আত্ম-এর ঊর্ধ্বে উঠতে পারে, তার কাছ থেকে ততই গৌরবময় কাজ বেরিয়ে আসে। বড়ো কাজের মানুষ চেতনার স্রোতে চলে—সময়টাকে উপভোগ করে, ছোটো কাজের মানুষ কাজের স্রোতে চলে—দায়িত্বটাকে পালন করে।
এভাবেই বেদান্ত শিক্ষা দেয়—নিষ্ঠার সঙ্গে কাজের মাধ্যমে ক্ষুদ্র অহংকারকে অতিক্রম করে নিজেকে হারিয়ে ফেলা সেই অজানা, অবর্ণনীয় নীতিতে, যাকে বেদান্ত বলে সত্য আত্মা—আত্মান বা ঈশ্বর। যখন একজন চিন্তক, দার্শনিক, কবি, বিজ্ঞানী কিংবা যে-কোনো কর্মী এমন এক বিমূর্ত অবস্থায় পৌঁছে যান এবং এমন ত্যাগের উচ্চতায় আরোহন করেন যে, তাঁর ভেতরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনো চিহ্ন আর অবশিষ্ট থাকে না, তখনই বাস্তব জীবনে বেদান্ত উপলব্ধ হয়। তখনই ঈশ্বর—মহান সঙ্গীতজ্ঞ নিজের হাতে মানুষের দেহ-মন নামক যন্ত্র তুলে নেন এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে দেন মহিমান্বিত কম্পন, সুমিষ্ট সুর, মনোহর সিম্ফনি। বাইরে থেকে দেখে মানুষ বলে—“আহা, তিনি কতই-না অনুপ্রাণিত!” কিন্তু তাঁর ভেতরে কোনো আমি বা আমার নেই—না কর্তার চিহ্ন, না ভোগীর ছায়া। এটাই হলো বাস্তব জীবনে বেদান্ত উপলব্ধি। আর এইভাবেই সফলতা আসে—অজান্তেই বেদান্তকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার ফলে।
বেদান্ত বলে, শরীর তোমার আত্মা নয়। তুমি কি দেখো না—যখন তুমি মহিমার চূড়ায় থাকো, তোমার শ্রেষ্ঠ অবস্থায় থাকো, তখনই বাস্তবে তুমি এই সত্য উপলব্ধি করো—তখন শরীর ও মন তোমার কাছে তীব্র পরিশ্রমের মাধ্যমে অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। একটি গ্যাস বা তেলের প্রদীপের কথা ভাবো। তার আলো কত গৌরবময়, কত দ্যুতিময়, কত চমৎকার, উজ্জ্বল ও দীপ্তিময়। কে দেয় এই প্রদীপকে মহিমা আর জ্যোতি? তা হলো: নিজের অধিকারে যা আছে, তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে নিরন্তর কাজের মধ্যে ডুবে থাকার চেতনা। প্রদীপ যদি তার সলতে ও তেল বাঁচাতে চায়, তবে প্রদীপ নিভে অন্ধকার হয়ে যাবে—এ যে সম্পূর্ণ ব্যর্থতা, কোনো সফলতা নয়। সফলতার জন্য প্রদীপকে জ্বলতে হবে, তার সলতে ও তেল নিঃশেষ করতে হবে। এটাই বেদান্তের শিক্ষা।
তোমাকে সফল হতে হলে, সমৃদ্ধ হতে হলে, তোমার নিজের কাজের মাধ্যমে, প্রতিদিনের জীবনের মাধ্যমে নিজের শরীর ও পেশী জ্বালাতে হবে, প্রয়োগের গনগনে আগুনে তাদেরকে দাহ করতে হবে—তাদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতেই হবে। নিজের শরীর ও মনকে ভোগ করতে হবে, তাদের জ্বলন্ত অবস্থায় রাখতে হবে; দেহ-মনকে ক্রুশবিদ্ধ করতে হবে, কাজ করতে হবে, ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও আবার কাজ করতে হবে—তবেই আলোর দীপ্তি তোমার ভেতর দিয়ে ছড়াবে। কাজ আসলে অন্যকিছু নয়, কেবল তোমার সলতে ও তেল পোড়ানো; অন্যভাবে বললে, এই কাজ আসলে কিছু নয়, কেবল তোমার দেহ-মনকে প্রবাহে পরিণত করা—তোমার নিজস্ব চেতনার দৃষ্টিতে কার্যত তা বাহ্যিক কিছুই নয়।
সব সমৃদ্ধি ও সফলতা আসে, যখন তুমি বেদান্তকে বাস্তব জীবনে ধারণ করো। নিরবচ্ছিন্ন কাজ, নিরবচ্ছিন্ন শ্রম—এটাই সংসারী মানুষের জন্য যোগ। তুমি পৃথিবীর কাছে তখনই সবচেয়ে বড়ো কর্মী, যখন নিজের কাছে তুমি কোনো কর্মী নও।
সব ধরনের বিভ্রান্তিকর বাসনা ও প্রলোভনের সবচেয়ে কার্যকরী এবং উত্তম ওষুধ হলো কাজ। বিশ্বস্ত কাজের সঙ্গে যে ইতিবাচক আনন্দ মেলে, সেটাই মুক্তির একটি স্ফুলিঙ্গ—অবচেতন আত্ম-উপলব্ধি। এটি তোমাকে শুদ্ধ রাখে, কলুষমুক্ত রাখে, আর তোমাকে ঈশ্বরের সঙ্গে এক করে রাখে। এই সুখই হলো কাজের সর্বোচ্চ ও নিশ্চিত পুরস্কার। নিজের স্বার্থপর উদ্দেশ্য দিয়ে এই চমৎকার, স্বর্গীয় সম্পদকে কলুষিত কোরো না। কোনো পুরস্কার বা প্রশংসা কখনোই এত কল্যাণকর বা স্বস্তিদায়ক হতে পারে না, যতটা হতে পারে বিশ্বস্ত কর্মের সঙ্গে সঙ্গে প্রবাহিত তৎক্ষণাৎ আনন্দ।
একবার একটি পুকুর আর একটি নদীর মধ্যে ঝগড়া হলো। পুকুর নদীকে বলল—“ওহে নদী, তুমি ভীষণ মূর্খ—তোমার সমস্ত জল আর সমস্ত সম্পদ সাগরে ঢেলে দাও। সাগরের জন্য তোমার জল ও ধন ব্যয় কোরো না। সাগর অকৃতজ্ঞ, সাগরের এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি যতই তোমার সঞ্চিত ধনরত্ন সাগরে ঢেলে দাও না কেন, সাগর আজ যেমন লবণাক্ত, তেমনি লবণাক্তই থাকবে; আজ যেমন তিক্ত, তেমনি তিক্তই থাকবে; সাগরের নোনাজল কোনোদিন পালটাবে না। ‘শূকরের সামনে মুক্তো ফেলো না।’ তোমার সব ধনরত্ন নিজের কাছেই রাখো।”
এটাই ছিল জাগতিক জ্ঞান। এখানে নদীকে উপদেশ দেওয়া হলো: ফল ভেবে কাজ করো, পরিণাম বিচার করো, পরিণতির দিকে নজর দাও। কিন্তু নদী ছিল এক বেদান্তী। এই জাগতিক জ্ঞান শোনার পর নদী উত্তর দিল—“না, ফলাফল বা পরিণতি আমার কাছে কিছু নয়; ব্যর্থতা বা সফলতা আমার কাছে কিছু নয়; আমাকে কাজ করতেই হবে, কারণ আমি কাজকে ভালোবাসি। আমাকে কাজ করতেই হবে, শুধুই কাজের খাতিরে। কাজই আমার লক্ষ্য, সক্রিয় থাকা আমার জীবন। আমার আত্মা, আমার আসল আত্মান, সে-ই শক্তি। আমাকে কাজ করতেই হবে।”
নদী তার কাজ চালিয়ে গেল, নদী চলল সাগরে কোটি কোটি গ্যালন জল ঢালতে। অথচ কৃপণ, হিসেবি অর্থনীতির পুকুর শুকিয়ে গেল তিন-চার মাসেই; হয়ে উঠল দুর্গন্ধময়, স্থবির, পচা আবর্জনায় ভরা। কিন্তু নদী রইল সতেজ ও নির্মল, তার চিরন্তন ঝরনাধারা কোনোদিনই শুকিয়ে গেল না। নীরবে ও ধীরে ধীরে সাগরের পৃষ্ঠ থেকে জল উঠল, গিয়ে পূর্ণ করল নদীর উৎসধারা; বর্ষা আর মৌসুমি বায়ু নীরবে, অদৃশ্যভাবে সেই জল নিয়ে এল, আর নদীর উৎসকে চিরকাল সতেজ রাখল।
ঠিক এইভাবেই বেদান্ত শেখায়—পুকুরের মতো সঙ্কীর্ণ নীতিতে না চলতে। ছোটো, স্বার্থপর পুকুরই ভাবে ফলাফল নিয়ে—“আমার আর আমার কাজের কী হবে?” কিন্তু তোমার কাজ হোক কেবল কাজের খাতিরে; কাজ করতেই হবে তোমাকে। তোমার কাজই হোক তোমার লক্ষ্য। আর এইভাবে বেদান্ত তোমাকে মুক্ত করে চিন্তিত, অস্থির ফলাকাঙ্ক্ষা থেকে। এটাই সেই কামনা থেকে মুক্তি, যা বেদান্ত প্রচার করে।
পরিণতি নিয়ে চিন্তা কোরো না, মানুষের কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা কোরো না, তোমার কাজের প্রশংসা হবে কি না বা কঠোর সমালোচনা হবে কি না, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না। তুমি যা করছ, তা ফলপ্রসূ হবে কি না, তা-ও ভেবো না। কাজ করো শুধু কাজের জন্য। এভাবেই তোমাকে মুক্ত হতে হবে কামনা থেকে; কাজ থেকে নয়, বরং আকাঙ্ক্ষার অস্থিরতা থেকে। এভাবেই তোমার কাজ হয়ে উঠবে সত্যিই মহিমান্বিত।
মানুষ বলে—“প্রথমে যোগ্য হও, তারপর চাও।” কিন্তু বেদান্ত বলে—“শুধু যোগ্য হও, চাওয়ার দরকার নেই।” “যে পাথর দেয়ালের জন্য উপযুক্ত, তাকে কোনোদিন পথে ফেলে রাখা যায় না।” তুমি যদি সত্যিই যোগ্য হও, তবে এক অপ্রতিরোধ্য দৈব নীতির দ্বারা সব কিছু তোমার কাছে নিজে থেকেই আসবে। প্রদীপকে কখনোই পতঙ্গদের নিমন্ত্রণ করতে হয় না; পতঙ্গরা নিজেই প্রদীপের আলোয় ছুটে আসে। যেখানে কোনো সতেজ ঝরনা আছে, মানুষ নিজেই সেখানে ছুটে যায়; ঝরনাকে মানুষের জন্য কোনো চিন্তা করতে হয় না। যখন চাঁদ ওঠে, মানুষ নিজ থেকেই বেরিয়ে আসে—চাঁদের আলোয় ভিজতে।
শেকল থেকে বেরিয়ে আসো! আঘাত করো! কাজ করো—যাতে তুমি উপলব্ধি করতে পারো দেহের অসারতা আর সত্যিকারের আত্মার চূড়ান্ত বাস্তবতা। এভাবে, যখন তুমি প্রবল কার্যকলাপের শীর্ষে পৌঁছোবে, তখনই স্বাদ পাবে নির্বাণ ও কৈবল্যের—অসীমের সঙ্গে আত্মার একাত্মতার পূর্ণ মুক্তি, যোগের লক্ষ্য।
যখন তুমি নিজের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাবনা আর অহংকারকে শ্রমের ক্রুশবিদ্ধতায় উৎসর্গ করবে, তখনই সাফল্য তোমাকে খুঁজে নেবে, আর অভাব হবে না প্রশংসাকারীর। খ্রিস্ট বেঁচে থাকতে মানুষ তাঁকে গ্রহণ করেনি, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হতে হয়েছিল; তার পরেই তিনি পূজিত হলেন। “সত্যকে মাটিতে চাপা দিলেও, তা আবার উঠবে।” কোনো বীজ ধ্বংস না হলে, তার রূপ-আকৃতি ভেঙে না গেলে, কখনোই অঙ্কুরিত হয় না, বাড়ে না। তাই সাফল্যের দ্বিতীয় মূল উপাদান হলো আত্মত্যাগ—ক্ষুদ্র সত্তার ক্রুশবিদ্ধতা, সংযম।
সংযম মানে সন্ন্যাস নয়। সবাই চায় সাদা, ঝকঝকে, দীপ্ত, উজ্জ্বল হতে। কীভাবে তুমি গৌরবময় হবে? জিনিসপত্র সাদা হয় কেন? সাদা জিনিসগুলোকে লক্ষ করো। কী তাদের এত সাদা করে তোলে? বিজ্ঞান বলে, সাদার রহস্য হলো সংযম—এর চেয়ে আলাদা কিছু নয়।
সূর্যের রশ্মিতে যে সাতটি রং আছে, তারা নানা বস্তুর উপর এসে আঘাত করে। কিছু বস্তু বেশিরভাগ রং শোষণ করে রেখে দেয় এবং কেবল একটি রং প্রতিফলিত করে। সেই রংকেই আমরা বস্তুটির রং বলি—আসলে যে-রং বস্তুটির নেই, সেটাই দেখা যায়। তুমি যে গোলাপটিকে গোলাপি বলছ, সেটাই হলো সেই রং, যা গোলাপের নিজস্ব নয়। যে-রংগুলো সে নিজের মধ্যে টেনে নিয়েছে, সেগুলোই তুমি গোলাপে দেখছ না। কত অদ্ভুত!
কালো বস্তু সব রং শোষণ করে নেয়, কিছুই ফিরিয়ে দেয় না—কিছুই ত্যাগ করে না, কিছুই প্রতিফলিত করে না—তাই কালো বস্তু অন্ধকার, কালো। সাদা বস্তু কিছুই শোষণ করে না, কিছুই দাবি করে না, সব ত্যাগ করে। তার মধ্যে কোনো স্বার্থপর মালিকানা নেই—তাই সে সাদা, ঝকঝকে, দীপ্ত, উজ্জ্বল।
ঠিক তেমনি, তুমি যদি গৌরবময় আর সমৃদ্ধ হতে চাও, তবে তোমাকে হৃদয়ের গভীর থেকে উঠতে হবে স্বার্থপর মালিকানার ঊর্ধ্বে। সবসময় দাতা হও, দয়ালু হও।
তোমার প্রতিটি কাজকেই করো পবিত্র। স্বার্থপর উদ্দেশ্যই তোমার কাজ আর জীবনকে জাগতিক বা “অপবিত্র” করে তোলে। আকাঙ্ক্ষাহীন কাজই হলো সর্বোচ্চ সংযম বা উপাসনার প্রতিশব্দ। এইভাবে সমগ্র বিশ্ব হয়ে ওঠে তোমার পবিত্র মন্দির, আর তোমার জীবন হয় নিরবচ্ছিন্ন এক ভজনগীতি।
ঘুঘু কিংবা বুলবুলি যদি পাইনগাছের ডগায় বসে, তবে সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই ঝরে পড়ে মধুর গান—গানের পাখি কি বুঝতে পারে যে, সে অমন করে গাইছে? তেমনি তোমার মন যদি থাকে আসল আত্মায় নিবিষ্ট, তবে সেখান থেকেও স্বাভাবিকভাবেই, সহজে, অনায়াসে ঝরে পড়বে মধুরতম সুর।
বেদান্ত তোমার সামনে এই উচ্চতর রহস্য উন্মোচন করে—এটা আর কিছু নয়, বরং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্যে থাকা, ঈশ্বরত্বের সঙ্গে সুর মিলিয়ে থাকা—আর বাস্তবে তোমার অন্তর্নিহিত আত্মা বা ঈশ্বরের মধ্যে বাস করা, আর ক্ষুদ্র অহম্ বা স্বার্থপর কামনার ঊর্ধ্বে ওঠা। এভাবেই কাজ হতে পারে বিস্ময়কর—যখন তুমি ব্যবহার করতে শেখো তোমার ভেতরে লুকিয়ে-থাকা সব আলো আর শক্তির রহস্যকে।