বড়ো পাপ

আপনার সন্তান, অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ কিংবা কোনো প্রিয়জনকে যদি কখনো দেখেন, হা-হা-হো-হো করে প্রাণ খুলে হাসছে, তাহলে ভুল করেও তাকে হাসি থামাতে ধমকাবেন না।

কেন? বলছি।

এই প্রাণখোলা হাসিটা একদিন আপনাআপনিই মিলিয়ে যাবে। একদিন হাসার মতন হাজার কারণ থাকলেও সে আর হাসবে না। জীবন তাকে এমন সব ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে যে, সেদিন সে হাসতেই ভুলে যাবে।

তার চেয়ে বরং পৃথিবীর রূঢ় বাস্তবতা না-বোঝা প্রিয় কিংবা অবুঝ মানুষটাকে ইচ্ছেমতো হাসতে দিন কঠিন বাস্তবতা বুঝে ওঠার আগেই।

এ পৃথিবী বিদঘুটে এক যুদ্ধমহল। যতদিন মানুষ অবুঝ থাকে, বাস্তবজ্ঞানহীন থাকে, পৃথিবীটা ততদিনই তার জন্য সুখের।

তারপর একদিন একদিন করে তার চোখে গড়ে-ওঠা রঙিন পর্দারা সরতে থাকবে, সে একটু একটু করে হাসি ভুলতে বা থামাতে শিখবে।

সে দেখবে, পৃথিবীতে যা-কিছু রঙিন দেখা যায়, তার বেশিরভাগই মূলত মরীচিকা। সে জেনে যাবে, পিচঢালা যে-রাস্তাটিকে সে ভীষণ মসৃণ ভেবেছিল, সে পথে হাঁটতে গেলে বার বার হোঁচট খেতে হয়।

একদিন গাছের ছালের মতন করে দুঃখরা তার চারপাশ ঘিরে ফেলবে। সে অবাক হবে, কখনোবা নির্বাক হয়ে যাবে। বুঝে নেবে, এই দুনিয়া সেই দুনিয়াটা নয়, যে-দুনিয়ার ছবি সে মনে এঁকে রেখেছে।

তার চেয়ে বরং তাকে এখন হাসতে দিন, প্রাণ খুলে দৌড়োতে দিন। আজকের এই হাসিখুশি মানুষটা হয়তো আগামী পাঁচ-দশ বছর পর হাসতে চাইলেও হাসবে না। কারণ, সেদিন জীবন তার কাছ থেকে হাসার সবকটা কারণ একটু একটু করে কেড়ে নেবে।

একদিন তাকে হয়তো খুব করে চেয়েও হাসাতে পারবেন না। নয়তো দেখবেন, সে আপনার দিকে মেকি একটা মুচকি হাসি ছুড়ে দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে, আর আপনি পেছন থেকে তার চলে যাওয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থেকে অনুশোচনায় ভাববেন…একদিন এই মানুষটার খিলখিল-করা হাসিটুকু নির্দয়ভাবে কেড়ে নিয়েছিলাম।

একজন মানুষ অল্প-বয়সে হাসতে পারল না আপনার ভয়ে, বেশি-বয়সে হাসতে পারল না জীবনের ঘায়ে; ভাবুন, মানুষটার সারাজীবনের হাসিহীনতার সমস্ত দায়‌ই কিন্তু আপনার! আপনিই বলুন, আপনার চেয়ে বড়ো পাপ পৃথিবীতে কে, কোথায়, কবে করেছে?!