প্রেমময় ঈশ্বরকে ভালোবাসা




“ভালোবাসো”—এই কথাটি বহু ধর্মে সর্বোচ্চ কর্তব্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি ভালোবাসা আদেশ দিয়ে জাগানো যায়? শুরুতে মনে হয়, এটি যেন একরকম সামাজিক শিষ্টাচার—একটি ধারণাকে, একটি অদেখা সত্তাকে, একটি নামমাত্র প্রতীকের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন। হৃদয়ের গভীর টান ছাড়া, সেটি কি সত্যিই প্রেম, না কি কেবল অনুকরণ?

ঈশ্বরকে কেবল ভয়ে নয়, ভক্তি বা সামাজিক কর্তব্যবোধে নয়, বরং প্রকৃত ভালোবাসা থেকে ভালোবাসা উচিত। যখন ঈশ্বরকে কঠোর বিচারক বা শাস্তিদাতা রূপে কল্পনা করা হয়, তখন ভালোবাসা ভয়ের আড়ালে ঢেকে যায়। কিন্তু যখন ঈশ্বরকে অন্তরের আলোর উৎস, প্রেম ও করুণার নিখুঁত সত্তা হিসেবে অনুভব করা যায়, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হৃদয় থেকে ভালোবাসা জন্ম নেয়। একজন প্রেমময় ঈশ্বরকে ভালোবাসা—ভয় বা কর্তব্য থেকে নয়, বরং কৃতজ্ঞতা ও অন্তরের টান থেকে।

প্রশ্ন জাগে—যাকে চেনা হয়নি, তাকে কীভাবে ভালোবাসা সম্ভব? যদি ঈশ্বর কেবল ভয়প্রদ, নজরদার এক শাসকের রূপে কল্পিত হন, যিনি ভুলত্রুটির শাস্তি দেন অনন্ত যন্ত্রণার অগ্নিতে, তাহলে সেই ঈশ্বরের প্রতি “ভালোবাসা” আসলে ভয়ের ছদ্মবেশ।

কিন্তু একটা সময় আসে, যখন অন্তরে আলো জ্বলে ওঠে। জাগরণের মুহূর্তে অনুভূত হয়—ঈশ্বর দূরে নয়, অন্তরেই অবস্থান করছেন। তখন ভালোবাসার নির্দেশ আর কৃত্রিম লাগে না। তখন এটি শুধু এক স্মরণবাণী—কোথায় ফিরে যেতে হবে, কার সান্নিধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত আসলে ভাসছে।

সেই জাগ্রত অবস্থায় ভালোবাসা কোনো কর্তব্য নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্ত কৃতজ্ঞতা—যেন জীবনের প্রতিটি শ্বাসে অপরিসীম করুণা ও সৌন্দর্য ধ্বনিত হচ্ছে। ভালোবাসা তখন এক প্রার্থনা নয়, বরং স্বাভাবিক প্রবাহ, যেখানে হৃদয় আর আলোর মধ্যে আর কোনও বিভাজন থাকে না। ঈশ্বরকে ভালোবাসা জোর করে আসে না; জাগরণের পর উপলব্ধ হয়—ঈশ্বর আসলে নিজ হৃদয়েরই নিবাস।